আড়ালে ভালোবাসার সংসার

আড়ালে ভালোবাসার সংসার !! Part- 16

মামা তো এই কথা শুনে অবাক পড়ে ভাবলেন বিথী নিজের পরিবারের সম্মান রক্ষার জন্য মিথ্যার আশ্রয় নিচ্ছে।
মামাঃ এই মেয়ে তোমার সাহস তো কম না আমার মুখে মুখে তর্ক করো! আবার মিথ্যাও তোমার আব্বি আম্মি জীবনে কখনও ইউকে গিয়েছে নাকি তাই সন্দেহ!
বিথীঃ আমার সাহসের কি দেখেছেন আপনি! বিথী রহমান আমি! আমার সাহস কতটুকু তা জানিনা! এতদিন এ বাড়ির বউ বলে কিছু বলতে চাইনি কারণ আপনি আমার মামা শ্বশুর। বয়সে বড় তবে তাই বলে যে আমি আপনার সব কথা সহ্য করে যাবো ভুলেও তা মনে করবেন না! ( শাসিয়ে বলল )
,
,
,
ডাইনিং রুমে উপস্থিত সবাই তো অবাক কারণ যেই মেয়ে লজ্জায় ও সংকীর্ণতায় মাথা নিচু করে থাকতো সে কিনা প্রতিবাদ করছে তাও এভাবে। সবচেয়ে বেশি অবাক বিধান কিন্তু তার ভালোও লাগছে অন্যায়ের বিরুদ্ধে মায়াপরীর করা প্রতিবাদে।
বিধানঃ উফফ! আজ আমার মায়াবীনিকে মায়াবনের রাজকন্যা নয় বরং বরং রাণি লাগছে! রাগে চোখগুলো বড় বড় করে আছে কত্ত মায়াবী লাগছে। ( মনে মনে )
এসব ভাবতে ভাবতেই বিধানের মিসেস চৌধুরীর দিকে চোখ যায়। মিসেস চৌধুরীর দিকে তাকাতেই বিধান আকাশ থেকে পড়ে কারণ মিসেস চৌধুরী মুচকি হাসছেন।
,
,
,
বিঃদ্রঃ পিঠ যখন দেয়ালে ঠেকে যায় তখন দুর্বলও রুখে দাড়ায় কারণ কোনো বিকল্প থাকে না তখন রুখে দাঁড়ানো ছাড়া। আল্লাহ মানুষকে তার সব বৈশিষ্ট্যের ১ ভাগ দিয়েছেন তা ভালোবাসা হোক আর ধৈর্য্য শক্তিই হোক। অর্থাৎ সহ্যের ও সীমা থাকে কথাটি কিন্তু সত্য। বিথীরও তো সীমা আছে তা লঙ্ঘন হওয়ায়ই সে রুখে দাঁড়িয়েছে। যদিও আমাদের সমাজে নারীকে মানুষ কম এলিয়েন বেশি মানা হয়। কারণ মানুষের কিছু স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য যেমনঃ রাগ, ইগো ইত্যাদি সমাজের মতে নারীদের থাকতে নেই। আবার কিছু বৈশিষ্ট্য যেমনঃ ক্ষমাশীলতা, ধৈর্য্য, মমতা ইত্যাদি সমাজের মতে নারীদের থাকতে হবে সীমাহীন।
,
,
,
অন্যদিকে ইফতিকা এসবে যেনো সুযোগ পেয়ে বসে বিথীকে ছোট করার।
ইফতিকাঃ হাও ডেয়ার ইউ! আমার বাবার সাথে এভাবে কথা বলো!
বলে বিথীকে চর মারতে যায় বিথী চোখ বন্ধ করে ফেলে। ঠাসস! আওয়াজ পায় সকলে কিছুক্ষণের মধ্যে।
বিথীঃ আমার গালে তো করতে চর পড়েনি তাহলে……….
বলে পিটপিট করে চোখ খুলতেই চক্ষু চড়ক গাছ। কারণ বিধান রক্তিম চোখে ইফতিকার দিকে দাঁড়িয়ে আছে আর ইফতিকা গালে হাত দিয়ে আছে।
ইফতিকাঃ বিধান ত-তু-তুমি!
বিধানঃ আমি কি! তোর সাহস কি করে হয় বিথীকে থাপ্পড় মারতে যাওয়ার! রিসেপশনের রাতে কি বলছিলাম মনে আছে! তারপরও বুঝিস নাই! ( চিৎকার করে )
ইফতিকা রাগে লজ্জায় থরথর কাপছে। তাই ইফতিকা আর সহ্য করতে না পেরে দৌড়ে উপরে চলে গেলো। আর বিথী রিসেপশনের কথা শুনে আরেক দফা অবাক হলো।
,
,
,
বিথীঃ তাই তো বলি ঐ মেয়েগুলো আমাকে সরি বলছে কেন হঠাৎ! উনিই তাহলে সব নাটের গুরু! ( মনে মনে )
মামাঃ দেখ আপা কেমন বউ এনেছিস একে তো আমার সাথে বেয়াদবি করলো। তার উপর বিধানকে এমন বশে এনেছে যে ইফতিকাকেই কিনা মারলো!
বিথী মামা শ্বশুর ইফতেখারের এসব কথা শুনে রাগে দুঃখে কেঁদে দিলো। আর বিধান রাগে চোখ এতো লাল হয়ে আছে মনে হচ্ছে চোখ বেয়ে রক্ত ঝরবে।
বিথীঃ মামনি আমি ইচ্ছে করে এমন করেনি! আব্বি আম্মির বিষয়ে আমি কিছু শুনতে পারি না তাই সহ্য করতে না পেরে বলে ফেলেছি! আই’ম সরি! ( ফুপিয়ে ফুপিয়ে কেঁদে )
মিসেস চৌধুরীঃ বিথী মামনি তুই কাঁদছিস কেন! অন্যায়কে প্রশ্রয় দেয়াও অন্যায়। আর তুই তো প্রতিবাদ করেছিস এতে দোষের কিছু নেই বরং সঠিক কাজ করেছিস।
ইফতেখারঃ আপা কি বলছিস……
মিসেস চৌধুরীঃ আমি জানি আমি কি বলছি! একদিনই তোকে বলেছিলাম বিথী এ বাড়ির বউ তার সম্মান করেই তুই কথা বলবি! আর অপমান তুই ওর পরিবারকে করেছিস ও তো শুধু জবাব দিয়েছে! ( গম্ভীর ও রাগী কণ্ঠে )
,
,
,
ইফতেখারঃ আপা তুই সেদিনের আসা মেয়ের জন্য আমাকে কথা শুনাচ্ছিস! আর তোর ছেলে যে আমার মেয়ের গায়ে হাত তুলল! ( ন্যাকা কান্না করে )
মিসেস চৌধুরীঃ বিধান কোনো ভুল করেনি ইফতিকা করেছে। ইফতিকা নিজের বড় ভাবির গায়ে হাত তুলতে যাচ্ছিল যেখানে বড় ভাবি মায়ের সমান। তাছাড়া বিধানের বিয়ে হয়েছে অনেকদিন হলো আমার মনে হয় তোদের এখন নিজের বাড়ি ফিরে যাওয়াই ব্যাটার! ( গম্ভীর কণ্ঠে )
ইফতেখারঃ আপা তুই এই মেয়ের জন্য আমাকে তাড়িয়ে দিচ্ছিস না!
বলে বিধানের মামা ইফতেখার চলে গেলো। বিথীর এখন প্রচন্ড খারাপ লাগছিল আর কান্না পাচ্ছিলো কারণ ওর জন্য মিসেস চৌধুরী ও ইফতেখারের মধ্যে মনমালিন্যের সৃষ্টি হলো। তাই বিথী মিসেস চৌধুরীর সামনে যেয়ে দাঁড়াল।
বিথীঃ আই’ম সরি মামনি! আমার জন্য ফ্যামিলি তে প্রবলেমস হলো! আই’ম রিয়েলি সরি!
বলে কাঁদতে কাঁদতে হিচকি তুলে ফেলছে। বিধান এভাবে কাঁদতে দেখে বিথীকে এক হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরলো। বিধানের বুকে মাথা রেখেই কাঁদছে কারণ কান্নায় বান্দার হুশ নেই।
মিসেস চৌধুরীঃ বোকা মেয়ে এভাবে কাঁদে! তাছাড়া ওরা এ পরিবারের আত্মীয় সদস্য না সো এতো কাঁদার কিছু নেই। পরিবারে সব ঠিক আছে। বিধান তুই ওকে নিয়ে উপরে যা!

চলবে,,,

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *