আড়ালে ভালোবাসার সংসার

আড়ালে ভালোবাসার সংসার !! Part- 12

অনেকক্ষণ পর বিথী অনুভব করে তার সাথে কিছুই হচ্ছে না তাই মিটমিট করে চোখ খুলে। চোখ খুলতেই সামনে বিধানকে দেখে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থাকে। আর বিধান সে তো এসেছিলো বিথীকে শাস্তি দিতে কিন্তু নিজের ভালোবাসার জাদুতে আবার ঘায়েল হলো। বিথীকে চোখ বন্ধ থাকা ভীত চেহারাটা যে এতো মাধুর্যতা পূর্ণ তা আগে জানতো না।
,
,
বিথীর চোখ খুলে ড্যাবড্যাব করে তাকানো দেখে বিধানের আরও নেশা ধরে যায়। বিধান বিথীর দু চোখে আলতো করে চুমু খায়। বিথী আবেশে চোখ বন্ধ করে নেয়। বিধান তারপর বিথীর দুই গালে, কপালে, থুতনিতে ও ঠোঁটের কোণে চুমু খায়। বিথী এসবে ফ্রীজ হয়ে যায়। ওর মনে হচ্ছে দম বন্ধ হয়ে মারা যাবে অজানা অনুভূতি কাজ করছে মনে।
,
,
বিধানঃ ভালোবাসি। ( বিথীর কানে আলতো করে ঠোঁট লাগিয়ে )
বিথীর হার্ট বিট বেড়ে যায় কথাটি শুনে এবং হুশ আসে কি হচ্ছে তার সাথে। বিথী বিধানের দিকে তাকাতেই দেখতে পায় বিধান তার ঠোঁটের দিকে এগিয়ে আসছে তাই এক ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয় বিধানকে। কারণ বিথী বিধানকে এখনো ভালোবাসতে পারেনি এর জন্য দায়ী সময় ও পরিস্থিতি। ভালোবাসতে জানা লাগে, বুঝা লাগে, মেনে নেওয়া লাগে আর এসবের জন্য সময় লাগে যেখানে ওদের সংসারই তিন দিনের। ভালোবাসা অতটা দায়ি না মূলত বিথী যে বিধানকে এখনো মেনে নিতে পারেনি কারণ বিয়ের দিন থেকেই বিথী এই সম্পর্ক ও সংসার নিয়ে দ্বিধাগ্রস্ত।
,
,
বিধান বিথীর এমন কাজে অনেক রেগে যায় কারণ স্ত্রীর এমন কাজে যেকোনো স্বামীর কাছেই অপমানজনক তাই রাগ উঠার কথাই। বিধান আবার বিথীর কাছে এসে বিথীকে দরজার সাথে চেপে ধরে। বিথী ছুটাছুটি করায় বিধান বিথীর দুহাত নিজের এক হাতের মধ্যে নিয়ে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে এবং অন্য হাত দিয়ে বিথীর গাল চেপে ধরে। আর বিথীর পিচ্চি শরীরের সাথে বিধানের বুরাক ডেনিজের মতো ফিট বডি চেপে ধরে যার কারণে বিথী চাইলেও নড়াচড়া করতে পারছে না।
বিধানঃ এতো তেজ কেন তোর বলতো? আমাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলি! আমাকে! ( দাঁতে দাঁত চেপে )
বিথীঃ নিশ্চুপ! ( অশ্রুসিক্ত তবে রাগী চোখে তাঁকিয়ে আছ বিধানের দিকে )
বিধানঃ কিরে বলছিস না কেন! তোর ওই আশিক দিপ্ত না কি তাকে তো এই নরম শরীরটা দিয়ে জড়িয়ে ধরেছিলি! আর আমাকে নিজের স্বামীর ছোঁয়ায় শরীরে ফোসকা পড়ে! আমার পাশে বসতে চাস না রুহানের পাশে যেয়ে বসিস! বাহ!
বিথীঃ নিশ্চুপ! ( তবে চোখ দেখে মনে হচ্ছে চোখ দিয়ে রক্ত ঝরবে )
বিধানঃ আচ্ছা বল তো কি নেই আমার! বল!
বলে বিধান বিথীকে ছেড়ে আলমারিতে ঠাস করে একটা ঘুসি লাগালো তবে তা বিথীর আড়ালেই। কারণ ছাড়া পাওয়ার সাথে সাথেই বিথী দৌড়ে ড্রেসিংরুমে চলে গেলো। দুজনই কষ্ট পাচ্ছে চোখের পানি ঝরাচ্ছে পার্থক্য একজন দরজার এপারে অপরজন ওপারে। একজন কষ্ট পাচ্ছে ভালোবাসার মানুষের থেকে পাওয়া অবহেলায় আর অপরজন অপমানে।
,
,
বিঃদ্রঃ অনেকেই বলবেন বিধানের দোষ আবার কেউ বলতে পারেন বিথী দোষী তবে আমার মনে হয় পরিস্থিতিটাই দায়ি। কোনো স্বামী ওয়াইফের সাথে অন্য কাউকে সহ্য করতে পারে না এবং কোনো স্ত্রীও স্বামীর সাথে অন্য কাউকে সহ্য করতে পারে না। ইসলামে তো ছেলেদের পরনারীর চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলাও নিষেধ যাকে ইসলামে বলা হয়েছে চোখে পর্দা আর মেয়েদের পরপুরুষের সামনে আসাও নিষেধ। এক্ষেত্রে এতো সমস্যা বিধান ও বিথীর সংসারে যদি বিথীও বিধানকে ভালোবাসতো অথবা বুঝার চেষ্টা করে মেনে নিতো। বিধানের দোষ আছে যদিও তা সামান্য কারণ অনেকেই অত্যধিক রাগী থাকে রাগের মাথায় অনেকটা বলে ফেললেও পরে নিজেই কষ্ট পায় কিন্তু ঐ যে ইগো তার জন্য সরি ওয়ার্ডটি বলা হয় না।
,
,
কিছুক্ষণ পরেই আসরের নামাজের আজান দেয়ায় বিধান কাটা হাত নিয়ে চলে গেলো। বিথীর ওযু ছিলো বিধায় ও ড্রেসিংরুমেই নামাজ পড়লো। সিজদায় আল্লাহর কাছে কাঁদলো। আল্লাহর দরবারে দুহাত পেতে একটু শান্তি চাইলো তবে কারো বিচার চাইলো না। না বাবার না মায়ের না স্বামীর। এটাই হয়তো আল্লাহর তৈরি মমতাময়ী নারী জাতি যা শত আপন মানুষদের থেকে পাওয়া কষ্টের পরও আপনকে পর করতে পারে না। বিথী সালাত শেষ করে ড্রেসিংরুমের থেকে বের হলো। কারণ বিথী এতোটুকু শুনেছে শাশুড়ির থেকে যে বিধান কখনো নামাজ বাদ দেয় না যতই জরুরি কাজ থাকুক। বিথী প্রথমে বিশ্বাস করেনি কারণ আজকালের স্মার্ট ছেলেমেয়েরা আবার নামাজ রোজায় ধ্যান কম দেয় আর বিধানও অনেক স্মার্ট একজন ছেলে। তবে এই কয়েকদিন বিধানের সাথে থেকে বিষয়টি যে সত্য তা হারে হারে টের পেয়েছে।
,
,
যাই হোক বিথী বাহিরে বের হতেই দেখলো পুরো রুম জুড়ে ফোটা রক্ত আবার আলমারির কাচ ভাঙ্গা। বিথীর যা বুঝার সে বুঝে নিলো। এখন বিথীর নিজেরই খারাপ লাগছে বিধানকে ধাক্কা দেয়ায়।
বিথীঃ এমন কি করছিলেন উনি যে ধাক্কা দিলাম! স্বামী উনি আমার আর এটা হক উনার! এর জন্যেই তো এতোকিছু হলো! আসলে সরি বলতে হবে! কিন্তু কি করে বলবো! ( মনে মনে )

চলবে,,,

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *