আড়ালে ভালোবাসার সংসার !! Part- 10
এরপর সেই মেয়েগুলো ও ইফতিকা বেডরুম থেকে চলে গেলে বিথী বেডরুমের ডোর লক করে স্টাডি রুমে যেয়ে পড়তে বসে আবার ভাবনায় ডুব দিলো। তবে এবার আর মনে মনে কিছু বলল না বেশ জোরেই বলল।
বিথীঃ এই মেয়েগুলোর কি হলো কালকেই এতো কথা শুনালো। আর আজ নিজেরা এসে সরি বলল। এদের মাথায় মনে হয় বড় ধরনের সমস্যা আছে! এদের কে রহিম চাচার তেলাপোকার ঔষধ খাওয়ালে ঠিক হয়ে যাবে! হুম তাই-ই করতে হবে!
,
এদিকে ফোনের সিসিটিভি ফুটেজে এসব দেখে বিধান হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাচ্ছে। এমন সময় বিধানের অফিসের স্টাফ এবং ওর বেস্ট ফ্রেন্ড নিহাল আসে। যেহেতু ওর বন্ধু তাই নক না করে ঢুকে বিধানের এ অবস্থা দেখে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে যেন এখনই চোখ কোটর থেকে বের হয়ে আসবে। হঠাৎ বিধানের চোখ নিহালের উপর পড়ায় ও স্বাভাবিক হয়ে বসে।
বিধানঃ কিরে তুই কখন এলি! ( আমতা আমতা করে )
নিহালঃ এই একটু আগে কিন্তু তুই এমন পাগলের মতো হাসছিলি কেন! ( ভ্রু কুচকে )
বিধানঃ ক- কো-কোথায়! ( আমতা আমতা করে )
নিহালঃ তুই কথা ঘুরাচ্ছিস কেন!
বিধানঃ ধুর! আজাইরা কথা না বলে কি জন্য আসছিস তা বল!
নিহালঃ ওহ হ্যাঁ ফাইলে সাইন লাগবে। ( বলে বিধানের দিকে ফাইল এগিয়ে দেয় )
বিধানঃ দে! ( বলে ফাইল পড়ে সাইন করে দিলো )
ফাইল নিয়ে যেতেই বিধান স্বস্তির শ্বাস ফেলল।
বিধানঃ উফফ এই মেয়েটার জন্য যে আর কতো ফাঁসবে! অবশ্য প্রেমে তো ফেঁসেছিই! তাই-ই তো ঐ মেয়েদের শাস্তি দিয়েছি তবে তোমার আড়ালেই! বিথী শাস্তি পাবে বিধান চৌধুরীকে ছোট করার তবে আমার বিথীকে শুধু আমিই কষ্ট দিতে পারি অন্য কেউ না! মোটেই না! ( মনে মনে )
,
,
,
গতকাল রাতে-
ইফতিঃ দেখলে বিধান তোমার বউ কতটা ক্ষেত! সবার সামনেই কেমন দৌড় দিলো! কোনো ম্যানার্স নাই! ব্লাডি ম্যানার্সলেস!
বিধানঃ কে ম্যানার্সলেস তা তো সবাই খুব ভালো করেই জানো! পাথর হিরাকে ছোট করলেও হিরা হিরাই থাকে! ( বাঁকা হেসে )
ইফতিঃ কি বলতে চাইছো! ( ভ্রু কুচকে )
বিধানঃ বিথীকে আগামীকাল সকালেই সরি বলবে! ( শয়তানি হাসি দিয়ে )
ইফতিঃ হোয়াট আর ইউ সেয়িং বিধান! ডু ইউ এভেন আন্ডারস্ট্যান্ডিং! ( কিছুটা চিৎকার করে )
বিধানঃ ডোন্ট শাউট ডিয়ার! যা বলেছি তা করো অর এলজ ইউ অল নো হোয়াট আই ক্যান ডু, রাইট! ( শয়তানি হাসি দিয়ে বলে চলে গেলো )
ইফতিঃ বিথী তোমাকে সরি তো বলতেই হবে বাট আই উইল নট স্পেয়ার ইউ! ( মনে মনে )
বিধান বর্তমানে ফিরে এলো দরজার নকে। দরজায় স্টাফ এসেছে কাজে তাই বিধান কাজে মন দিলো সব ভাবনা ছেড়ে।
,
,
,
বিথীদের বাসায় বিথীর আম্মু মিসেস শান্তা রহমান গতকাল থেকেই মেয়ের চিন্তায় ভুগছেন। গতকাল সারারাত তার বিথীকে নিয়ে ভেবেই কেঁটেছেন। মেয়ের জন্য রাতে তাহাজ্জুদের নামাজে আল্লাহর কাছে কেঁদে কেঁদে দোয়া চেয়েছেন। কিন্তু চাইলেই কি সব ঠিক করা যায়। অবশ্য আল্লাহ সহায় হলো সবই হয়। শান্তা রহমানকে কাঁদতে দেখে বিথীর বাবা বারিদ রহমান এগিয়ে গেলো বারান্দার দিকে।
বারিদঃ কি গো বিথীর আম্মু এভাবে কাঁদছো কেনো!
শান্তাঃ এমনি! ( চোখের পানি লুকানোর চেষ্টা করে )
বারিদঃ আরে তুমি না বললে বুঝবো কি করে! বিথীর সাথে দেখা করার পর থেকেই তোমার মুখটা কেমন বিষণ্ন লাগছিল! তুমি তো আমাকে কিছুই বললে না যে বিথী কেনো আসলো না!
শান্তাঃ আচ্ছা বিথীর আব্বু আমরা বাবুকে ( বিথী ) ওর অমতে বিয়ে দিয়ে কোনো ভুল করিনি তো! ( বলে হু হু করে কেঁদে উঠলো )
বারিদঃ এসব বলছো কেন! কি হয়েছে বলবে তো নাকি!
শান্তাঃ গতকাল বিথীই এখানে আসতে চাই নি! ( বিথীর সাথে হওয়া সম্পূর্ণ কথোপকথন বলল।)
বারিদঃ ও কিছু না রাগের মাথায় বলেছে! তুমি এতো ভেবো না কিছুদিন গেলেই মেয়ের রাগ ভেঙে যাবে!
শান্তাঃ তাই যেন হয় নাহলে আমি নিজেকে কখনো ক্ষমা করতে পারবো না!
বারিদ রহমান স্ত্রীকে সান্ত্বনা দিলেও মনে মনে নিজেই ভয় পাচ্ছেন ও চিন্তা করছেন নিজের মেয়ের জন্য। যতই হোক তার একমাত্র মেয়ে বিথী।
,
,
অন্যদিকে বিথী মিসেস চৌধুরীকে বলে ভার্সিটির উদ্দেশ্যে বের হলো। কারণ কিছুক্ষণ আগেই দিপ্ত ফোন করে বলেছে আজ প্র্যাকটিকাল ক্লাস হবে। মিসেস চৌধুরী বিথীকে গাড়ি নিয়ে যেতে বললেও নেই নিজের করা প্রতিজ্ঞার জন্য বিথী এক প্রকার জোর করেই কোনো গাড়ি নিলো না। বিথী কি আর জানতো এই গাড়ি না নেয়াটাই তার কাল হবে।
তা যাই হোক বিথী একটি রিকশা নিয়ে ভার্সিটির উদ্দেশ্যে রওনা দিলো। ভার্সিটিতে পৌঁছে ক্লাস শেষ করে বাসায় যাওয়ার সময় দেখে বিকাল হয়ে গেছে। আর এ সময় কোনো রিকশা এই এলাকায় পাওয়া যায় না। দিপ্তও বিথীর সাথে দাঁড়িয়ে আছে কারণ এই নিস্তব্ধ এলাকায় একা একজন মেয়েকে রেখে যাওয়া মোটেও নিরাপদ না। অনেক্ষণ রিকশা দাঁড়িয়েও রিকশা পাচ্ছে না।
দিপ্তঃ আজ আমার বাইকে করে চল! কোনো রিকশা নাই এলাকায়!
বিথীঃ হুম! চল!
চলবে,,,