আমার ক্রাশ বর

আমার ক্রাশ বর সিজন- 2 !! Part- 24

পরেরদিন সকালে অনু রেড়ি হয়ে অফিসের উদ্দেশ্যে বাহির হবে এমন সময় অনুকে ওর মা বলে,”আজ তাড়াতাড়ি বাড়িতে আসবি।
শুনলাম রিমি কে দেখতে না কি আজ সন্ধায় ছেলেপক্ষ আসবে।”
অনু বলে,”তাতে আমি কি করবো? ”
অনুর মা বলে,”তোর কিছু করতে হবে না।
তুই অফিস থেকে রিমি দের বাড়িতে চলে যাস যদি তোর ইচ্ছা হয়।”
অনু বলে, ” আচ্ছা চেষ্টা করবো বলে চলে যায়।”
এদিকে অফিসে ঢুকতে রাজের সাথে দেখা অনুর।
অনু রাজ কে দেখে বলে,”আহারে বেচারা অকালে নাক হারাতে বসেছিল।”
রাজ বলে,”এই মেয়ে তোমার জন্য নাকের ব্যাথায় বাঁচিনা।তার মাঝে আসছো আমার কাটা ঘাঁয়ে নুনের ছিটে দিতে।”
অনু বলে,”এটা তো মাত্র নাকের ব্যাথা কারো হৃদয় ভাঙ্গার কষ্ট আপনি কি করে বুঝবেন। আপনার হৃদয় বলে কিছু নেই।
যদি থাকতো তাহলে আমার রিদি আপুর হৃদয় ভাঙ্গার কষ্ট পাঁচ বছর আগে বুঝতেন। ”
রাজ বলে,”অনু এটা ভুলে যাবে না।

এটা তোমার পারসোনাল গল্প করার স্থান না এখানে তুমি জব করো।”
অনু বলে,”এটাই তো সব থেকে বড় কষ্ট।
যাদের সাথে কাজ করি তার সবাই খুনি।
মানুষের হৃদয়ের ভালবাসার খুন করেছে।”
রাজ বলে,”অনু বেশি বাড়াবাড়ি হচ্ছে কিন্তু। ”
অনু আর কিছু না সোজা আরিয়ানের কেবিনের দিকে চলে যায়।
আরিয়ান কেবিনে প্রবেশ করে দেখে অনু চুপচাপ তার কেবিনের উপরে থাকা ফাইল গুলো সব গুছিয়ে রাখছে।
আরিয়ান অনুকে দেখে বলে,”তা অনু কেমন আছো? ”
অনু বলে,”প্রতিদিন যেমন থাকি তেমন আছি।”
অারিয়ান বলে,”মানে? ”
অনু বলে,”আপনার মন কখনো কেউ ভেঙ্গেছে স্যার? ”
আরিয়ান বলে,”আজব অফিস টাইমে নিজের বস কে এমন প্রশ্ন করার মানে কি? ”
অনু বলে,”সরি স্যার ভুল হয়ে গেছে।”
আরিয়ান চুপচাপ নিজের কাজে মন দেয়।
অনু একটু পর এসে আরিয়ান কে কফি এনে দেয়।
অারিয়ান অনুকে বলে,”আমি আজ অফিস থেকে তাড়াতাড়ি চলে যাবো।তাই অনুকে কিছু ফাইল সামনে এগিয়ে দিয়ে বলে এগুলো কমপ্লিট করে বাড়িতে যাবে তার আগে না।”

একটা নিদিষ্ট সময় পর আরিয়ান অফিস থেকে চলে যায়।
অনু নিজের কাজ করে কমপ্লিট করে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।
অনু বাড়িতে এসে দেখে কেউ নেই।
তারপর অনুর মনে পড়ে আজ তো ঐ বাড়িতে যাবার কথা ছিলো।
অনু তাড়াতাড়ি ফ্রেস হয়ে এসে রেডি হয়ে রিমাদের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।
রিমাদের বাড়িতে ঢুকতেই আবির এসে অনুর মুখে মিষ্টি ঢুকিয়ে দিয়ে বলে,”অভিনন্দন দে রিমিকে ওর বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে।”
অনু মুখের মিষ্টি টা কোনোরকম গিলে বলে,”রিমি আপুর বিয়ে কার সাথে ঠিক হলো! দুলাভাই কোথায়? ”
আবির অনুর সামনে থেকে সরে গিয়ে বলে,”ঐ যে ঐ ছেলেটা তোমার দুলাভাই! ”
অনুর সামনে আর কেউ না আরিয়ান বসে আছে।অারিয়ান কে দেখে তো অনুর পায়ের নিচের মাটি সরে গেছে। অনুর পুরো পৃথিবীটা অন্ধকার হয়ে গেছে।
আরিয়ান অনুকে দেখে বলে,”হাই শালিকা কেমন আছেন?”
অনুর মুখ দিয়ে কোনো কথা বাহির হচ্ছে না সে কি উওর দিবে আরিয়ানের কথার!
এমন সময় রিমা বলে,”কি রে আরিয়ান কে দেখে এমন ভুত দেখার মতো ভয় পাওয়া চেহারা করে রাখছিস কেনো? সবাই তোর এমন চেহারা দেখে কি ভাব্বে বলতো? ”
অনু নিজেকে স্বাভাবিক করার চেষ্টায় বিফল হচ্ছিল তাই।কোনো কথা না বলে সে বাড়ির বাথরুমে চলে যায়।
আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে নিজে বলতে থাকে,অনু একদম কান্না করবি না।
আরিয়ান যদি রিমি আপুকে বিয়ে করে সুখে থাকতে পারে তাহলে তোর সমস্যা কোথায়? কারো সুখের ঘরে কাটা হতে পারিস না তুই।
তোর উচিৎ সবার সুখে নিজেকে সুখী রাখা।

এতে করে তোর মনের মাঝে যতোই ঝড় তুফান বয়ে যাক না কেনো তার আভাস সামনের মানুষ যেনো না পায়।”
অনু একটু পর নিজেকে ঠিকঠাক করে বাহিরে এসে রান্নাঘর থেকে একটা মিষ্টির প্লেট নিয়ে রিমি আপুকে মিষ্টি খাওয়ায় দেয়।
এরপর আরিয়ান কে নিজের হাতে মিষ্টি খাওয়াতে গিয়ে বলে,”দুলাভাই শালিকার হাতে মিষ্টি খাবেন তো? ”
আরিয়ান বলে,”আমার একমাত্র হবু বউয়ের চাচাতো বোন ভালোবেসে মিষ্টি খাওয়াবে তাতে কি আমি না করতে পারি? ”
অনু খুব খুশি হয়ে আরিয়ানকে মিষ্টি খাওয়ায় দেয়।
আরিয়ান তো খুশিতে গদগদ হয়ে সে মিষ্টিটা খেতে শুরু করে।
কিন্তু মিষ্টিটা মুখের ভেতর যাবার পরে বুঝতে পারে এটা মিষ্টি নয় লবনের খনি।
আরিয়ান এখন না পারছে এই মিষ্টিটা বাহিরে ফেলতে না পারছে গিলতে।
কিন্তু সবার সামনে তো আর নিজেকে ছোট করতে পারেনা।

তাই সামনে থাকা পানির গ্লাস হাতে নিয়ে পানি দিয়ে কোনোরকম মিষ্টিটা গিলে ফেলে।
অনু বলে,” দুলাভাই মিষ্টিটা তো খুব টেস্টি তাই না আরেকটা খাওয়াবো প্লিজ না করবেন না!”
আরিয়ান বলে,”মিষ্টির স্বাদ একদম তোমার মত অন্যরকম!”
অনু আবারো আরেকটা মিষ্টি তুলে আরিয়ানের মুখের ভেতর দিয়ে দেয়।
আরিয়ান এই মিষ্টিটাও পানি দিয়ে গিয়ে খায়।
পাশে থেকে রাজ বলে,”এমন সুন্দরি বিয়ান! বিয়ান কি শুধু নিজের দুলাভাই কে খাওয়াবেন? আমার মতো বিয়াইকে কি চোখে পড়ে না? ”
অনু একটা শয়তানী হাসি দিয়ে বলে,”আরে বিয়াই আপনাকে মিষ্টি মুখ করাবো না তা কি কখনো হতে পারে বলেন তো? ”
রাজ তো খুশি হয়ে হা করে থাকে।

অনু তাড়াতাড়ি করে একটা মিষ্টি রাজের মুখে দিয়ে দেয়।
রাজ মুখে মিষ্টি নিয়ে আরিয়ানের দিকে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে থাকে।
আরিয়ান বলে,”দোস্ত আমার শালি খুব ভালবেসে মিষ্টিটা তার বেয়াইকে খাওয়াইসে এখন তুই যদি না খাস তাহলে কেমন দেখায় বলতো চুপচাপ খেয়ে নে দোস্ত। ”
রাজ ও সামনে থাকা পানির গ্লাস নিয়ে পানি দিয়ে গিলতে থাকে।
আবির বলে,”কি রে অনু সবাই মিষ্টি গুলো পানি দিয়ে কেনো খাচ্ছে রে? ”
অনু বলে,”ভাইয়া ভালবাসার স্পর্শ আছে তো মিষ্টিতে তাই মিষ্টি অতিরিক্ত বেশী মিষ্টি হয়ে গেছে তাই।”
এরপর সবাই বলে, “তাহলে ছেলে মেয়ে যখন রাজি শুভ কাজে তখন আমরা আর দেড়ি করে কি করবো? ”
আয়েশা বেগম বলে,”তারপরও ছেলে মেয়েদের নিজেদের জানা বোঝার জন্য একটু সময় দরকার তাই দুইমাস পর আমরা বিয়ের ডেট ফিক্সড করবো।”
এই কথার পর সবাই চলে যায়।



চলবে…..