অবশেষে তুমি আমার

অবশেষে তুমি আমার !! Part- 33

– রাজ খেতে বসছে এমন সময়, আননোন বিদেশী একটি নাম্বার থেকে ফোন আসলো। রাজ অধরা ভেবে ফোনটা রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে একটা মেয়ে বললো,’ আপনি কি মিঃ রাজ?
– জ্বি!
– শুনেন অধরা ম্যাডাম তার বাচ্চা এর্বারশন করতে চাচ্ছে। হয়তো দু’একদিনের মধ্যে বাচ্চা এর্বারশন করে ফেলবে। আর তিয়াসের সাথে বিয়ে করবে
-হ্যালো কে বলছেন।
– আপনার শুভাকাঙ্খী!কথাটা বলেই ফোনটা কেটে দিলো।
– মেয়েটার কথা শুনে রাজের পায়ের তলার মাটি সরে যাচ্ছে। তার অধরা কিভাবে তিয়াসকে বিয়ে করে। আর অধরাকে ছাড়া সে কিভাবে বাঁচবে। আর যে অধরা নিজের বাচ্চাকে বাঁচানোর জন্য পায়ে পড়েছিল আর আজ সেই অধরায় আমাদের ভবিষৎত সন্তানকে নষ্ট করতে চাচ্ছে।
– আনিশা রুমে ঢুকেই দেখতে পেল রাজ খুব চিন্তিত।
– রাজের পাশে এসে বললো,’ রাজ কি হয়েছে ওমন গুমরামুখো হয়ে বসে আছো কেন?
-লন্ডন থেকে ফোন আসছিল!
– সত্যি? অধরা আপু ফোন দিয়েছিল?
– না অধরা নয়।
– তাহলে কে?
– অন্য একটা মেয়ে।

– কি বললো?
– অধরা নাকি আমাদের বেবীটা এর্বারশন করে ফেলবে। আর তিয়াসকে বিয়ে করে নিবে।
– রাজ আমাদের কোথাও কোন ভুল হচ্ছে। আপু না তোমাকে ভালোবাসতো? এখন তোমাকে ঘৃণা করলেও নিজের বেবি কেন নষ্ট করবে? তুমি নেক্সট ফ্লাইটেই লন্ডন যাও অাপুর কাছে।সবকিছু বুঝিয়ে বলো। সাথে আমিও যাবো। আপুর ভুল ভাঙাতে হবে।
– এদিকে পরের দিন সকালে রাজ খবর নিয়ে জানতে পারে তিয়াস লন্ডন চলে গেছে। তিয়াসের লন্ডন যাবার কথা শুনে বুকের ভেতরটা ছ্যাঁত করে ওঠলো! সত্যিই কি তাহলে অধরা তিয়াসের হয়ে যাচ্ছে। না এ হতে পারে না।
– রাজ তার আন্টি ও ত্রিযামিনীকে সব কিছু বুঝিয়ে দিয়ে, ‘ রাতেই আনিশা আর রাজ লন্ডনের ফ্লাইটে উঠল। দু’জন পাশাপাশি বসে আছে। আনিসা বারবার আড়চোখে রাজের দিকে তাকাচ্ছে রাজ ফোনের গ্যালারীতে খুব মনোযোগ সহকারে কি যেন দেখছ।
– আনিশা খেয়াল করে দেখলো,’ রাজ অধরার পিক গুলো খুব মনোযোগ দিয়ে দেখছে।
রাজ একটা কথা বলি?
– হ্যাঁ বলো!
-তোমাদের বেবী হলে নামটা কিন্তু আমি রাখবো? রাখতে দিবে না?
-যদি না দেই?

– আচ্ছা সরি রাজ।
– সরি বলছো কেন? আমাদের বেবী হলে তুমিই নাম রেখো! আচ্ছা আনিসা তোমার বাবা কিছু বলবে না তুমি এক সপ্তাহের কথা বলে মাস ব্যাপী আছো।
– আরে না বাবা ওমন না। আর বন্ধু হয়ে বন্ধুর বিপদে সাহায্য করবো না তো কি করবো?
– আনিশা তোমাকে একটা কথা বলি? যদি
কিছু মনে না করো?
– আরে পাগল তো তুমি? আমি কি মনে করবো? বলো তুমি কি বলবে।
– আনিশা তুমি না একটা ছেলেকে ভালোবাসতে। সে ভার্সিটি লাইফ থেকে। একদিনও তো তাকে দেখালে না?
– দেখাবো একদিন তোমাকে। আমার স্বপ্নের পুরুষটাকে। যে আমার প্রতিটা নিঃশ্বাসে রয়েছে।আমার প্রতিটা শিরায় শিরায় রক্ত কণিকায় যে মিশে রয়েছে।
– কে সে?
– আমার রাজকুমার?
– নাম কী?
– আমার স্বপ্নের রাজকুমার। তার আর কোন নাম নেই। একদিন তোমাকে দেখাবো। এখন চুপচাপ বসে থাকো।আনিশা মনে মনে ভাবছে আমার স্বপ্নের রাজকুমার। আমার ভালোবাসা সব তোমাকে ঘিরেই রাজ। তুমি কি একটুও বুঝো না।
– এদিকে মালয়েশিয়া বিমানবন্দরে ফ্লাইট বিরতি দিলে সেখানে হালকা খেয়ে নেয় দু’জনে। মালয়েশিয়া বিমান বন্দর থেকে সোজা লন্ডনের হিথ্রো এয়ারপোটে বিমান ল্যান্ড করে। এয়ারপোর্ট থেকে বের হতেই রাজের মনে এক শীতল হাওয়া বয়ে যায়। এই ভেবে যে এদেশেই তার কলিজার টুকরা রয়েছে।
– রাজ আর আনিশা এয়ারপোর্ট থেকে ট্যাক্সি করে লন্ডনের বিখ্যাত আইবিস হোটেল গিয়ে উঠে। সকালে লা টেবলের ইংলিশ ব্রেকফার্স্ট করে দু’জন অধরাকে খুঁজতে বেরিয়ে পড়ে। আর অধরাকে পেয়েও যায়।
– অধরার বাসার সামনে আসতেই রাজ চমকে যায়। তার কাছে মনে হচ্ছে না এটা কারো বাসা। মনে হচ্ছে এটা কোন রাজপ্রসাদ। মার্বেল পাথরে নির্মিত বাসার সামনে একটা সুইমিং পোল। সাথে একটা গার্ডেন একটু দূরেই নদী। সবকিছু মিলিয়ে খুব সুন্দর দেখাচ্ছে।
– রাজ এখানে দাঁড়িয়ে থাকবে নাকি বাসার ভেতরে যাবে?
– চলো বাসায় যায়।
– রাজ আর.আনিশা যখনি বাসায় ঢুকতে যাবে তখন সিকিউরিটি বললো, ‘ আপনার ফিঙারপিন্ট দেন। ফিঙারপিন্টে কে কে বাসায় ঢুকতে পারবে সে প্রোগাম করা আছে।
– রাজ আনিসাকে বললো,’ আনিসা আমাদের আর মনে হয় বাসায় যাওয়া হলো না। এমন সময় ইশু কোথায় থেকে যেন গাড়ি করে আসলো। রাজ ইশুকে দেখেই দৌড়ে গাড়ির কাছে গেল। ইশু রাজকে দেখেই গাড়ি থেকে নেমে বিস্ময় ভরা দৃষ্টিতে রাজকে জিজ্ঞেস করলো আপনি এখানে কেন এসেছেন?
– ইশু আমি অধরার কাছে আসছি।
– ভাইয়া আপনি ভুল জায়গায় এসেছেন। আপি আপনার সাথে দেখা করবে না। আপনাকে আপু অনেক হেট করে। প্লিজ আপনি চলে যান এখান থেকে সেটাই ভালো হবো।
– আপু প্লিজ তুমি একটিবার অধরার সাথে দেখা করার সুযোগ করে দাও আমায়? রাজ অনেক রিকুয়েস্ট করার পর সিকুয়েটিকে বললো, উনাদের ফিঙারপ্রিন্ট লাঘবে না। ভেতরে আসতে দাও। রাজ আর আনিসা বাড়ির ভেতরে এসে আরো চমকিত হলো। বাড়ির বাহিরটার চেয়ে ভেতরটা আরো বেশি সুন্দর। বাড়ির ভেতরে অনেকগুলো মেয়ে কোন ছেলে নেই। সবাই ইশু আর অধরার দেহরক্ষী।
– এদিকে প্রায় ঘন্টা খানেক বসে থাকার পর অধরা বাসায় আসলো। অধরা বাসায় এসেই ইশুকে বললো,’ ইশু তিয়াস পরশু লন্ডনে ঘুরতে এসেছে। আর ঘুরতে এসে হোটেল নিয়েছে কেমন লাগে বল? তাই বাসাতেই নিয়ে আসলাম। তিয়াস যে কয়দিন লন্ডনে থাকবে সে কয়দিন আমাদের সাথেই থাকবে।
– অধরার কথা শুনে রাজ আর আনিশা পাশের রুম থেকে বের হতেই রাজ চমকে উঠলো অধরার পাশে তিয়াসকে দেখে। তিয়াস অধরার পাশাপাশি দাঁড়িয়ে আছে।
– অধরা রাজকে দেখেই চুপ হয়ে গেল। সে ভাবতেও পারেনি রাজ এখানে আসবে।
– রাজ অধরার কাছে এসে বললো,’ অধরা কি হচ্ছে এসব?
– কি হচ্ছে মানে? আপনি এখানে কেন? তাও আবার আমার বাসায়?
– অধরা আমি তোমাকে নিতে আসছি।
– আমাকে নিতে আসার আপনি কে?
– কে আবার আমি তোমার স্বামী?
– হাহা নাইস জুক! যেদিন আপনি ডির্ভোস পেপারে সাইন করেছেন সেদিন থেকেই আমার উপর থেকে সকল ধরণের অধিকার হারিয়ে ফেলছেন।
– অধরা আমার ভুলটা কি কোনভাবেই ক্ষমা করা যায় না?
– আপনি তো কোন ভুল করেননি। করেছেন অপরাধ। যাই হোক আপনি এখান থেকে চলে যান।
– অধরা তুমি নাকি বেবি নষ্ট করে দিতে চাচ্ছো? কথাটা কি সত্যি?
– চুপ আমার বেবি নিয়ে কথা বলবি না। ইশু এদের কে ডুকতে দিয়েছে?
– এমন সময় আনিশা এসে বললো, ‘ আপু রাজকে ক্ষমা করে বুকে টেনে নেন। আপনি চলে আসার পর একটা দিনও ঠিকমত ঘুমায়নি। সারাক্ষণ আপনার ছবি বুকে নিয়ে কান্না করছে। আপু আমার আর রাজের মধ্যে কোন সম্পর্ক ছিল না। প্লিজ ভুল বুঝবেন না।
– অধরা আনিশার গালে ঠাস করে চড় বসিয়ে দিয়ে বললো,’হ্যাঁ কোন সম্পর্ক ছিল না। ছিল শুধু হোটেল রুমে ড্রেস খুলে ফেলার সম্পর্ক।
– আপু যা ইচ্ছা বলেন। আল্লাহ তো সব দেখছে?
– বাহ নিজের চোখে দেখা জিনিস কিভাবে অবিশ্বাস করবো? আর রাজ তুই আমার সামনে আসবি না কোনদিন। তোর মুখ আর দেখতে চাই না। পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি যদি কাউকে ঘৃণা করি সেটা তুই? তুই কি মনে করিস তোর ভালোবাসার মন ভুলানো কথা শুনেই আমি সব ভুলে যাবো? ভুলে যাবো তোর অত্যাচার? ভুলে যাবো হোটেল রুমে ব্যবসায় জন্য রেখে আসা তোকে।
– অধরা আমি তোমাকে ব্যবসার জন্য রেখে আসিনি।
– এই চুপ কর। শোন আমি আর তিয়াস বিয়ে করবো। তিয়াস আমাকে ভালোবাসে আর আমিও। আরেকটা কথা ভালোবাসা কি জিনিস সেটা তুই বুঝিস না। তুই জানিস শুধু কষ্ট দিতে!

– অধরা সত্যিই কি আমি ভালোবাসতে পারি না? একটা সুযোগ দাও না।
– এই সিকিউরিটি ভবিষৎতে যেন এরা বাসায় আসতে না পারে। বের করে দাও।
– রাজ আর আনিশাকে জোর করে বাসা থেকে বের করে দিলো। রাজ কাঁদছে। চোখের পানি টপটপ করে পড়ছে। এমন সম রাজের ফোনে একটা ম্যাসেজ আসলো। মেসেজটা দেখেই ফেসবুকের মেসেঞ্জারে একটা ভিডিও দেখে চমকে গেল। তাহলে তাকে আর অধরাকে আলাদা করার গেমটা তিয়াস খেলে ””””
চলবে”’:”’