অবশেষে তুমি আমার !! Part- 05
অধরা চা বানাতে বানাতে মাগরিবের নামাযের আযান দিয়ে দেয়। তাই অযু করে, চা বানিয়ে ত্রিযামনীর রুমে রেখে যখন নামাযে দাঁড়ায় এমন সময় ত্রিযামিনী গরম চা অধরার গায়ে ছুড়ে মেরে বলে,’ কিরে রক্ষিতা এটা কিসের চা বানিয়েছিস? নাকি সারাদিন রাজকে কিভাবে পটানো যায় এটাই ভাবিস?
– গরম চা অধরার গায়ে পড়াতে অধরা আল্লাহ গো বলে চিৎকার দিয়ে জায়নামাযে পড়ে যায়!
আর কতো অভিনয় করবি? রাজের সাথে তোর কিসের এতো লুতুপুতু? চরিত্রের ঠিক নাই আবার নামায পড়ে। আর চা বানিয়েছিস নাকি চায়ে বিষ দিয়েছিস মুখে দেওয়া যায় না একদম?
– চা এতটাই গরম ছিল যে, অধরার পিঠে সাথে সাথে ফুসকা পড়ে যায়। অধরা কষ্ট সহ্য করতে না পেয়ে সেন্সলেস হয়ে যায়।
– এদিকে ত্রিযামনী একের পর এক বকা দিয়েই যাচ্ছে অধরাকে। আর শ্রাব্য-অশ্রাব্য গালি তো আছেই।
– ত্রিযামিনীর কথা শুনে তার মা এসে যায়।
– কি হয়েছে মা এতো চিল্লাচিল্লি কেন?
– মা ফ্রিতে অভিনয় দেখে যাও।
– ত্রিযামিনীর মা অধরাকে শুয়ে থাকতে দেখে বললো,’ এমন করলি এখন যদি রাজকে সব বলে দেয়?”
– আরে মা রাজকে বলবে না। বাকিটা আমি দেখে নিবো। এই বলে চলে আসে।
– এদিকে এশার নামাযের আজান শুনে অধরার জ্ঞান ফিরে। জ্ঞান ফিরতেই সন্ধ্যা বেলায় সে দুসহ্য ঘটনা মনে পড়ে যায়। এখানো পিঠে জ্বালা করছে। অধরার এখানে থাকতে মন চাচ্ছে না। কিন্তু তার থাকাই লাগবে। সে যে এক মহা জীবন যুদ্ধে নেমেছে। অধরা আবারো অযু করে মাগরিবের নামায কাযা আদায় করে। সাথে এশার নামায আদায় করে নেয়। এশার নামায পড়ে বের হতেই ত্রিযামিনী অধরাকে বলে সন্ধ্যার ঘটনা যদি সে রাজকে বলে তাহলে তাকে বাসা থেকে বের করে দিবে। ভুলেও যেন রাজকে এসব না বলে।
– অধরা মাথা নাঁড়িয়ে হ্যাঁ সূচক জবাব দেয়।
-রাত নয়টায় সময় রাজ এসে অধরাকে ডাক দেয়।
– অধরা রাজের সামনে গিয়ে দাঁড়াতেই। রাজ বললো,’ আমার জন্য খাবার নিয়ে আসো। ”
– অধরা কিচেন থেকে ঘুরে এসে রাজকে বলে,’ খাবার তো শেষ। রাতে রান্না হয়নি।
– তুই কি করছিস? আরেক ছেলের সাথে কি রোমান্স করছিস?
– বাজে কথা বলেন কেন? বাড়িতে আপনি ছাড়া কোন ছেলে নেই তো। কাঁদো কাঁদো গলায়।
– রাজ অধরার গালে চড় বসিয়ে দিয়ে বললো,’ আমি কি এখন বসে বসে তোকে গিলবো নাকি? আমার অনেক ক্ষুধা পেয়েছে। এই তুই আবার ন্যাকা কান্না করছিস। একদম কাঁদবি না। তোর কান্না দেখলে মেজাজ খারাপ হয়।
– অধরা রাজের কথা শুনে একদম চুপ হয়ে যায়। ভয়ে কাঁপতে থাকে।
– এই তোর কাঁপতে হবে না, যা সেজে আস। আজকে তোকে দিয়ে আমার ক্ষুধা মিটাবো। এই বলে বাসা থেকে বেরিয়ে যায়।
– রাজ বেরিয়ে যেতেই, ইশুর ফোন। অধরা ফোন রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে ইশু বলে ওঠে,’ আপি তোর না রাতে ফোন দিয়ে জানানোর কথা ছিল আমার সাথে দেখা করবি কি না? কিন্তু তুই তো কিছু বললি না?”
– অধরা চোখের পানি মুছে ইশুকে বলে,’ জানিস ইশু আমার বসটা না অনেক ভালো। তাই আমাকে তার চোখের আড়ার হতে দেয় না।’ অধরা বুঝতে পারলো ওপাশে ইশু কাঁদছে।
– এই তুই কাঁদছিস কেন?
– আপু তোমাকে না খুব দেখতে ইচ্ছে করছে। আর আমি যদি মরে যায়য়?
– চুপ একদম বাজে কথা বলবি না। তুই মরে গেলে আমি কাকে নিয়ে বাঁচবো?আমি তোর সাথে দেখা করবো খুব তাড়াতাড়ি।
– আপু আমি জানি তুই অনেক কষ্টে আছিস। দোআ করি তুই সফলকাম হ। আচ্ছা আপু খেয়েছিস?
– অধরা এবার কান্না লুকাতে পাচ্ছে না। কারণ আজ সারাদিনে এক গ্লাস পানি ছাড়া তার পেটে কিছু যায়নি। তারপরেও ইশুকে বললো,’ গলা পর্যন্ত বিরিয়ানী খেয়েছে।
– ইশু আর কিছু না বলে ফোনটা রেখে দেয়।
– ইশু ফোন রাখতেই অধরার মনে পড়ে যায় রাজ বের হওয়ার আগে তাকে সাজতে বলেছে। তাই অধরা ড্রেসিং টেবিলের সামনে নিজেকে সাজাতে ব্যস্ত। চোখের নিচে সরু করে কাজল দিচ্ছে আর ভাবছে প্রতিদিনের মতো আজও তার চোখের কাজলটা লেপ্টে যাবে! মানুষ যেভাবে ড্রাইনিং টেবিলে খাবার সাজায় তেমনি অধরা নিজেকে সাজাচ্ছে রাজের ভোগপণ্য হিসেবে।
– হঠাৎ দরজায় টোকা পড়ল। অধরা গিয়ে দরজা খুলে দিতেই দেখতে পেল রাজের হাতে বিরিয়ানীর প্যাকেট।
– দরজা খুলতে রাজ ভেতরে এসে, প্যাকেট থেকে বিরিয়ানী প্লেটে রেখে খাচ্ছে।
– অধরার খুব ক্ষুধা পেয়েছে। ক্ষুধার যন্ত্রণায় সে কথা বলতে পারছে না। অধরার মন বলছে যদি একবার রাজ খেতে বলতো। কিন্তু না রাজ কোন দিকে তাকাচ্ছে না। নিজের পেট পুজো করছে।
– অধরা বিছানায় গা টা এলিয়ে দিলো। কিছুক্ষণ পর রাজ এসে অধরার পাশে বসে বললো,’ বাড়িতে কুকুর নেই তো। খাবার গুলো নস্ট হবে। তার চেয়ে বরং বাকি বিরিয়ানী তুই খেয়ে নে আমি ড্রেস চেঞ্জ করে আসি। ”
– আপনার বিরিয়ানী আপনি খান। আমাকে কি আপনার কুকুর মনে হয়?
– চুপচাপ খা নয়তো আবার মার খাবি। অধরা কিছু না বলেই খেতে শুরু করে। খেতে খেতে খাবার গলায় আঁকটে যায়। এমন সময় রাজ পাশ থেকে পানির গ্লাস এগিয়ে দেয়।
– অধরা খাবার শেষ করে রাজের দিকে তাকায়।
– কি হলো এভাবে তাকিয়ে আছিস কেন? ভাবছিস তোকে ভালোবেসে খাওয়ালাম? না ভুল ভাবছিস। এখন রেডি হয়ে নে রাতের জন্য। আমি ড্রেসটা চেঞ্জ করে আসি।
– রাজের কথা শুনে অধরার ভয় করতে লাগে। ভয়ে গলা শুকিয়ে যায়। সে জানে না সে কতদিন এভাবে তার সতিত্ব হেফাযত করবে।
– এদিকে রাজ ড্রেস চেঞ্জ করে এসে দেখে, অধরা ঘুমিয়ে গেছে। রাজের খুব রাগ হচ্ছে। এতো তাড়াতাড়ি মানুষ কিভাবে ঘুমিয়ে যায়। কিন্তু ঘুমের ঘরে অধরাকে দেখে রাজের খুব মায় হয়।
– মাঝরাতে অধরার ঘুম ভাঙতেই অধরা দেখে তার গায়ের কাপড় ঠিক নাই! কেমন যেন এলোমেলো।
– অধরার বুকটা ছ্যাঁত করে ওঠে। রাজ তো কিছু করেনি? সত্যিই যদি ওসব করে থাকে ঘুমের ঘরে। যদি বেবি হয়ে যায়। তখন কি হবে রাজ তো আমাকে বিয়ে করবে না। আমার সন্তানের বাবা কে হবে। আল্লাহ সন্তান নিয়ে আমি কই যামু। এই ডেভিল টা আমার সর্বনাশ করে দিলো। তাড়াতাড়ি কাপড় ঠিক করে নেয়। অধরার কান্না আসছে এখন । হঠাৎ মনে পড়ল ছিঃ ছিঃ আমি এসব কি ভাবছি?
কিছু করলে তো বুঝতে পারতাম। কিন্তু যদি ঘুমের পিল খাইয়ে আমার সাথে ওসব করে। এজন্যই তো পানির গ্লাস এগিয়ে দিয়েছিল। এই কারণেই তো বলি এতো ভালোবাসা কই থেকে আসে। বিরিয়ানী খাওয়ানে। গলায় আঁকটে গেলে পানি খাওয়ানো।
এসব ভেবে লজ্জা মাখা দৃষ্টিতে অধরা রাজের দিকে তাকায়। রাজ ঘুমাচ্ছে তার পাশে। অধরার মন চাচ্ছে গলা টিপে মেরে দিতে। কিন্তু না মেরে ফেললে তো জেলে যেতে হবে। মন চাচ্ছে একটা কামড় দেয়। বন্ড ঘুমালে মনে হয় ভাজা মাছ উল্টে খেতে জানে না। কিন্তু জেগে জেগে কাপড় ” থু এসব কি ভাবছি। এমন সময় রাজ অধরাকে জড়িয়ে ধরে বললো,’ ভালোবাসি তোমাকে অনেক। নিজের থেকেও বেশি।” অধরা বুঝতে পারলো রাজ স্বপ্নে আবুল তাবুল ভাবছে। তাই রাজের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিতে চাইল কিন্তু পারলো না। বাধ্য হয়ে রাজের বুকেই ঘুমিয়ে গেল। সকালে অধরার ঘুম ভাঙতেই অধরা চুপিচুপি তার রুমে চলে যায়। রুমে যাওয়ার আগে দেখে যে ত্রিযামিনী বার্থরুমে ঢুকছে। অধরা কালকের সন্ধ্যা বেলার কথা মনে করে বার্থরুমের দরজার সামনে কলার ছাল রেখে রুমে এসে পড়ল।
– কিছুক্ষণ পর বাবাগো -মা গো কোমড় গেল। এ চিৎকার শুনে অধরা বাহিরে এসে দেখে ত্রিযামিনী বার্থরুমের দরজার সামনে পড়ে আছে।
– অধরা দৌড়ে ত্রিযামিনীকে তুলার চেষ্টা করে আর বলে, ‘ কি হয়েছে ম্যাডাম?”
– ত্রিযামিনী কিছু না বলে খুড়িয়ে খুড়িয়ে তার রুমে চলে যায়। ”
– সকালে নাস্তা শেষে রাজ অধরাকে বলে রেডি হয়ে নিতে। আজ বিদেশ থেকে বায়ার আসবে। মিটিং আছে।
– অধরা রেডি হয়ে যখন রাজের সাথে রওয়ানা দিবে এমন সময় রাজের আন্টি রাজকে বলে,’ বাবা কাজের মেয়েটাকে অফিসে না নিয়ে গেলে হয় না? আমাদের ত্রিযামিনীকে তো নিতে পারো।
– আন্টি কি বলো? বিদেশ থেকে ভায়ার আসবে। ত্রিযামিনীকে নিয়ে যাবো কেন? সব কি তোমাকে খুলে বলতে হবে? ত্রিযামিনী কি রক্ষিতা?
– রাজের কথাটা যেন অধরার কলিজায় এসে লাগে। যদি রাজ অধরার বুকে ছুরি চালিয়ে দিতো তবুও হয়ত এতটা কষ্ট লাগতো না।
– কি হলো চলো, দাঁড়িয়ে থাকবে কি এখানে?
– অধরাকে নিয়ে যখন বিদেশী ভায়ারদের সাথে কথা বলে। এমন সময় একজন ভায়ার রাজকে বলে,’ হ্যালো রাজ আমাদের কম্পানির সব কাজ আপনি পাবেন। তবে আপনার একটা ছোট্ট কাজ করতে হবে। তা হলো আপনার সাথে থাকা মেয়েটাকে একটু হোটেলে পাঠিয়ে দিবেন। ”
– হুম অবশ্যই! আজকে আমি ধন্য আপনাদের কোম্পানির এতোবড় কাজ করতে পারছি।
– সন্ধ্যাবেলা আপনার আপ্রায়নের জিনিস আপনি পেয়ে যাবেন।
– লোকটি চলে গেলে, অধরা রাজের পায়ে পড়ে বলতে লাগে,’ প্লিজ আপনি আমার সম্মান ভিক্ষা দেন। আপনি যা ইচ্ছা করেন কিন্তু অন্য কারো হাতে তুলে দিবেন না।”
– হা হা তাই বুঝি উনি ছেলে আর আমি বুঝি ছেলে না মেয়ে? আর শোন ন্যাকামি করবি না এখনি আমার সামনে থেকে চলে যা। আর মনে রাখিস গত কাল যে তিনলাখ টাকা লাগবো তোর সেটা ভুলে যাস না।
– অধরা মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে আছে। কিছু বলতে পারছে না। সে যে এখান থেকে যেতে পারবে না। ”
– সন্ধ্যা বেলা রাজ অধরাকে নিয়ে হোটেলে দিয়ে বের হয়ে আসে।
– অধরার খুব ভয় করছে, লোকটা অধরাকে ড্রিংকস নিতে বলছে। আর অধরার দিকে হিস্র পশুর মতো এগিয়ে আসছে।
– চলবে”””””’