অন্ধপ্রেম !! Part- 42
মিনিবাসটা শীতলের কাছে আসতেই রাজ শীতলকে রাস্তার মাঝখান থেকে রাস্তার একপাশে নিয়ে যায়…
শীতল রাজের চোখের দিকে অসহায়ের মতো তাকিয়ে জ্ঞান হাড়ায়…
রাজ শীতলকে নিজের কোলে তোলে নেয় ….
চোখ থেকে টপ টপ করে পানি পড়ছে রাজের…
রোদ হঠাৎ রাজকে বলে শীতলকে বেন্চে শুইয়ে দিতে…
.
.
.
রাজ বাধ্য হয়ে শীতলকে কোল থেকে নামিয়ে দেয়…
রোদ আর সজল শীতলের মাথায় হাত রেখে বার বার ডাকছে…
সজল যখন বার বার ডাকছিলো শীতলকে টাচ করে তখন রাজের খুব মন খারাপ হয় সেই সাথে রাগও হয়…
রাজ নিজের হাত মুঠি করে রাগ কন্ট্রোল করলো নিজের।
সবাই প্রায় শীতলকে দেখছে…
এক সময় শীতলকে দেখার জন্য রাজকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিচ্ছে লোকজন…
সবাই শীতলের জ্ঞান ফিরানোর চেষ্টা করছে …
সবাই শীতলকে দেখছে বাট রাজ তাকে দেখতে পাচ্ছেনা…
রাজ একটা পানির বোতল এনে দূর থেকে রোদকে বললো শীতলের চোখে মুখে পানি দিতে তারপর ডক্টরের কাছে নিয়ে যেতে….
রোদ পানির বোতলটা নিয়ে দূরে ফেলে দিলো….
রাজ শুধু নিজের রাগ কন্ট্রোল করছে…
ইচ্ছে করছে রোদকে দু টুকরো বানাতে…
কিন্তু শীতলের জন্য করছেনা …
শীতলকে এলবার কষ্ট দিয়ে আজকে এই অবস্থায় রাজ…
এরপর নতুন কোনো ঝামেলা বাধালে শীতলকে চিরতরে হাড়াবে রাজ…
ডক্টর চেম্বারের বাহিরে বসে আছে সজল আর রোদ..
শীতলকে ভেতরে ডক্টর দেখছে….
শীতলের জ্ঞান এখনো ফিরেনি…
ডক্টর রাজকে বললো ….আপনার ওয়াইফের লো প্রেশার…তার উপর মানষিক চাপে আছেন…
এভাবে চললে তো উনি মিনিটে মিনিটে জ্ঞান হাড়াবেন…
পারিবারিক যা সমস্যা আছে তা মিটিয়ে নিন…
রাজ শীতলের মাথায় হাত বুলিয়ে বললো…
_জি হ্যাঁ খুব তাড়াতাড়ি মিটিয়ে নেবো…
ডক্টর একটা ইনজেজশন পুশ করতে যাবে শীতলকর তখনি রাজ বললো…
_খুব সাবধান …ওর সুচে ভয় আছে….ওর যেনো কষ্ট না হয়..
(আপনারদের লেখিকারও ইনজেকশনে ভিষন ভয়…ধরে বেধেও কোনো ভাবেই ইনজেকশন দেওয়ানো যায়না আমাকে )
.
.
.
ডক্টর আর রাজ চলে এলো বাহিরে….
রাজের পড়নে এপ্রোন ছিল আর মুখে মাস্ক ছিলো তাই কেউ চিনতে পারেনি তাকে…
.
.
.
রাজ জানালার পাশে দাড়িয়ে আছে …
শীতলকে দেখছে…
শীতল স্লিপিং পিল খেয়ে ঘুমাচ্ছে…
রাজের এখন একটাই কাজ মূল সমস্যা বের করা…
কি হয়েছে শীতলের আর সে কেনো এমন করছে তা বের করতে হবে রাজের….
.
.
.
.
রাজের ময়মনসিংহে একটা বিজনেসের ব্রান্চ আছে…
রাজ অফিসে গেলো…
সেখানে গিয়েই পড়লো আরেক ঝামেলায়…
রাজের এক্সপোর্টের মধ্যে কি যেনো ঝামেলা হয়েছে…
পুরো 10 কোটি লস হয়েছে…
রাজ ক্ষতিয়ে দেখলো এগুলো শীতলের বাবার কান্ড…
রাজ বাকা হাসি দিলো…
_শশুর মশাই তো দেখছি ধনে মারতে চায় আমাকে…
শ্যালক মারছে প্রাণে…বউ মারছে মনে…
পুরো পরিবার আমাকে ধনে প্রানে মনে মারতে চায়….
বাহ বেশ ভালো…
এতো কিছু করছে আমার জন্য এরা….
আমার একটা ভুলের জন্য এতো বড় শাস্তি দিচ্ছে উপরওয়ালা….
.
.
.
ছোট থেকে আমি কোনো জিনিস সহজে পায়নি…আদায় করে নিতে হয়েছে আমাকে…
শীতলের বেলায় তা বাদ যাবে কেনো…
শীতলকেও সহজ ভাবে পাওয়া যাবেনা…..
রাজ চেয়ারে বসে টেবিলের উপর পা রেখে চোখ বন্ধ করে রিলেক্স করছে…
কিভাবে সে শশুর আর শ্যালক কে উচিৎ শিক্ষা দেওয়া যায়…
রাজ হঠাৎ ফোন বের করলো আর ফুলিকে কল দিলো…
ফুলি জানালো শীতল সবার সাথে বসে খাচ্ছে…
রাজ কিছুটা শান্তি পেলো…
ফোন রাখতেই ফোনের স্ক্রিনে শীতলের ছবিটা ভেসে উঠলো ….
হলুদ শাড়িতে কি সুন্দর খোলা চুলে মুক্তোর মতো ঝল ঝল করে হাসছে….
রাজ শীতলের ছবিটাতে চুমো দিয়ে নিজের বুকের মাঝে জরিয়ে ধরলো….
_আহহ কি শান্তি….
শীতলের নামেও তো শান্তি আছে…
.
.
.
দুই দিন হয়ে গেলো রাজ শীতলকে দেখতে পেলোনা…
শীতলকে দেখলে রাজের কষ্ট হবে এটা ভেবে শীতল রাজের সামনে আর আসেনা…
রুম থেকে বের হয়না …
জানালাও খোলেনা…
ফুলি হঠাৎ শীতলের কানে ফোন ধরলো…
শীতল যেই ফোন সরাতে চাইলো তখনি রাজের কনঠ ভেসে আসলো…
_প্লিজজজ বউ ফোন রেখোনা প্লিজজজজ…
আমার একটা কথা শোনো…
আমি কিছু খেতে পাচ্ছিনা…
তোমার হাতের রান্না করা খাবার তোমার হাতে খেতে মন চাচ্ছে আমার….
তুমি রান্না করে লুকিয়ে ছাদে নিয়ে এসো প্লিজজজজ…
আমার খুব ক্ষিধে লেগেছে…
শীতলের প্রান যেনো ধক করে উঠলো…
এখনো রাজ না খেয়ে আছে…
শীতলও কিছুই খেতে পারেনা …শুধু খাওয়ার ভান করে…লুকিয়ে খাবার ফেলে দেয়…
_দেখুন আমি পারবোনা…
আপনি হোটেল থেকে আনিয়ে খেয়ে নিন…
_এতো দিন তো রেস্ট্রোরেন্টের আনা খাবার খেয়েছি অল্প সল্প…
তুমি তো জানো আমি বাহিরের খাবার খেতে পারিনা….
আমার পেটে সমস্যা হয়…
আমার গ্যাস বেড়েছে শীতল…
প্লিজজজ কিছু করো…
আমি না খেয়ে মরে যাচ্ছি তো…
শীতল চুপচাপ চোখের পানি ফেলছে….
রাজ বললো…
_আমি ওয়েট করছি…ফুলি ম্যাডামের সাহায্যে তুমি রান্না করো…
তারপর নিয়ে এসো আমার কাছে…
দুজনে একসাথে খাবো…
তুমি যতক্ষন খাবার নিয়ে না আসবর ততক্ষন আমি এক ফোটা পানিও খাবোনা…
.
.
.
শীতল কিছু বলার আগেই রাজ ফোন কেটে দিলো…
শীতলের রাজের জন্য কষ্ট লাগলেও করার কিছু নেই …
সে কিভাবে রান্না করবে তাও আবার রাজের জন্য…
শীতল বিকালে বসে আছে না খেয়ে… বার বার লুকিয়ে রাজকে দেখার চেষ্টা করছে সে…
ফুলি কয়েকবার বলেছে রাজ ছাদে শুকনো মুখে দাড়িয়ে আছে…
শীতলের কিছু করার নেই…
শীতল লুকিয়ে জানালার পর্দা সরালো অমনি রাজকে দেখতে পেলো…
রাজ সবে শাওয়ার করে শুধু টাওয়াল পড়ে বের হয়ে এসেছে জানালার পাশে…
শীতলকে দেখেই রাজ টেডি হাসি দিয়ে একটা ফ্লায়িং চুমো দিলো…
শীতল লজ্জা পেয়ে ওখান থেকে সরে গেলো…
রাজ হালকা জোরে বললো…
_এক ঘন্টার মধ্যে খাবার না আসলে আমি সরাসরি শশুর বাড়ি চলে আসবো খেতে…
শীতলের চোখ গুলো বড় বড় হয়ে গেলো…
শীতল দৌরে গেলো কিচেনেএ..
দুটো রান্নার মহিলা রান্না করছিলো…
শীতল তাদের জোর করে রান্না ঘর থেকে বের করে দিলো…
শীতল নিজের হাতে রান্না করছে….
ফুলি মাঝে মাঝে সময় বাচানোর জন্য ওটা এটা এগিয়ে দিচ্ছে….
রোদ আর তার বাবা মা ভেবেছে শীতল স্বাভাবিক হচ্ছে তাই রান্না করছে…
তারা ভাবছে রাজকে হয়তো ভুলে যাচ্ছে শীতল….
.
.
.
কিচেন থেকে এলাচির গন্ধ পেলো রাজ…
শীতল কলিজা ভোনা করছে…
কাচা মরিচ দিয়েছে বেশ…রাজ ঝাল ঝাল কলিজা ভোনা খেতে পছন্দ করে…
সেই সাথে রাজের ফেবারিট ডালের ভরা বানালো শীতল….
তারপর পেয়াজ কেটে ভিনেগার দিয়ে পেয়াজের সালাদ বানালো শীতল…
রাজের এই খাবাে গুলো ফেবারিট…
শীতল তাড়াতাড়ি করে এই কয়েকটা পদ তৈরি করলো রাজের জন্য….
রান্নার সুভাসে সারা বাড়িতে মৌ মৌ করছে…
সন্ধ্যার পর শীতল লুকিয়ে ছাদে গেলো…
ফুলি সিরিতে বসে পাহারার কাজে আছে…
শীতল ছাদে যেতেই রাজ এগিয়ে এলো…
রাজ ছাদের পাশে একটা মোম জ্বালালো…
শীতল রাজের দিকে না তাকিয়ে খাবার সার্ভ করছে…
রাজ মুচকি মুচকি হাসছে…
রাজ খাবার দেখে খুশি হলো….
রাজের পিরাপিরিতে শীতল রাজকে খাইয়ে দিচ্ছে…
রাজ এমন ভাবে খাচ্ছে যেনো অনেক দিন যাবৎ না খেয়ে আছে সে…
রাজ চেটে পুটে শীতলের হাতও খেয়ে ফেলছে….
রাজ খাওয়ার সময় শীতলকেও নিজের হাতে খাইয়ে দিলো জোর করে…
শীতলও বেশ খেলো….
রাজ বললো…
_তুমি ঠিক মতো খাওয়া দাওয়া করবে…
তোমার চেহেরার কি হচ্ছে দেখেছো…
খবরদার আজকের পর থেকে খাবার ফেলবেনা লুকিয়ে….
তাহলে আমার থেকে খারাপ কেউ হবেনা…
শীতল রাজের দিকে জিজ্ঞাসা দৃষ্টিতে তাকালো…
রাজ জানলো কিভাবে সে যে এই কান্ড করে…
.
.
.
রাজ দুটো আঙুল দিয়ে ইশারা দিয়ে বললো…
_Watching you Darling wife
আমার নজর তোমার উপর থাকে সব সময়….
(আপনাদের লেখিকাও শীতলের মতো লুকিয়ে খাবার ফেলে দেয়…বাবা মা ভাইদের হাতে খেতে খেতে ভালো লাগেনা…রাজের মতো কেউ তো নেই আমার মতো যে আমাকে জোর করে খাওয়াবে…না খেতে খেতে আজ আমি অসুস্থ)
.
.
.
খাওয়ার পর্ব শেষ হতেই শীতল চলে যেতে নিলে রাজ বললো…
_আরো কিছু খেতে মন চাচ্ছে ডার্লিং…
_সব খাবার তো খাইয়ে দিলাম …
আর কি বাকি আছে…
রাজ ঠোটে হাত দিয়ে বললো….
মিষ্টি খেতে ইচ্ছে করছে আমার….
_কখনোই না…চললাম আমি…
শীতল পা বাড়াতেই রাজ শীতলকে কোলে তোলে নিলো…
তারপর রাজ শীতলের গালে গাল ঘষলো….
শীতলের নিঁশ্বাস বন্ধ হয়ে যাচ্ছে…
রাজ শীতলের ঠোটের কাছে যেতেই ফুলি চলে এলো….
সে জানালো শীতলকে সবাই খুজছেঁ..
রাজ রেগে বললো…
_তুমি আর আসার সময় পেলেনা…
একটা ইমপোর্ট্যান্ট কাজ করছিলাম…..
শীতল কোল থেকে নেমে রাজকে বললো তাকে যেতে দিতে তা না হলে অনেক ঝামেলা হবে….
.
.
.
একদিন রাতে রাজ ড্রাইভ করছে…
হঠাৎ একটা মেয়ে এসে তার গাড়ির সামনে পড়লো….
মেয়েটা বললো তাকে আজকের রাতটুকু আশ্রয় দিতে কারণ কিছু ঘুন্ডা তার পেছনে পড়েছে…
রাজ প্রথমে না করলেও পরে রাজি হলো…
অসহায় একটা মেয়েকে একা ফেলে যাওয়ার কোনো মানে হয়না…
রাজ মেয়েটাকে নিয়ে বাসায় গেলো….
রাজ মেয়েটাকে একটা রুম দেখিয়ে দিলো…..
বাসাটা পুরো অন্ধকার ছিলো….
রাজ শার্টের হাতা ফোল্ড করে জানলার কাছে গেলো শীতলকে দেখতে বাট জানার পর্দা দেওয়া ছিলো…
এটা শীতলের কাজ…
রাজের ইচ্ছে করছে শীতলকে গিয়ে কতক্ষন কামড়াতে যাতে করে ওর শিক্ষা হয়…
.
.
.
রাজ লাইট অন করতেই মেয়েটাকে দেখতে পেলো…
মেয়েটা শীতলের একটা শাড়ি পড়ে আছে….
রাজের ভেজায় রাগ উঠলো…
সে পাশে থাকা পানি খেলো…
পানিটা খেতেই রাজের মাথা ঘুরছে…
সে সামনে শীতলকে দেখতে পেলো…
শীতল রাজকে ধাক্কা দিয়ে বেডে ফেলে দিলো…
তারপর রাজের শার্ট খুলে ফেললো….
রাজের জ্ঞান নেই….
সকালে রোদ শীতলকে একটা সার্প্রাইজ দেওয়ার জন্য শীতলের চোখ কাপড় দিয়ে বেধেঁ ফেললো…..
শীতল বললো…
_ভাইয়া কোথায় নিয়ে যাচ্ছো ???
প্লিজজজ বলো….??
_একটা জিনিস দেখাতে…
দেখলে তুই সত্যিটা বুঝতে পারবি….
শীতলকে রাজ একটা রুমে নিয়ে গেলো….
শীতলেত চোখের কাপড় খুলে দিয়ে রোদ বললো…
_এই হলো তোর উপহার…
ভাইয়ের তরফ থেকে একটা সত্যি উপহার…..
দেখে নে বোন ভালো করে….
শীতল বুকে হাত দিয়ে দাড়িয়ে আছে…..
.
.
.
.
চলবে……..