অন্তরালে ভালোবাসা

অন্তরালে ভালোবাসা !! Part- 07

“সকালে আড়মোড়া ভেঙে চোখ মেলে চেয়ে দেখি উনি আমার সামনে ধোঁয়া ওঠা এক কাপ গরম চা হাতে নিয়ে দাড়িয়ে আছে।আমি ঝটপট উঠে বসি আর ঘড়িতে তাকিয়ে দেখি নয়টা বাজে।একি, আজ আমি সকাল নয়টা পর্যন্ত ঘুমিয়েছি? কথাটা ভাবতেই কতোটা লজ্জা লাগছে যে আমার স্বামী আমার জন্য চা করে এনে না ডেকেই দাড়িয়ে আছে।”

“আমি উনার হাত থেকে চায়ের কাপটা কেরে নিয়ে পাশের টেবিলের উপরে রাখি।আর উনাকে টেনে বিছানায় বসায়।”
—“এটা কেন করলেন আপনি? আমাকে একটা বার ডাকলে কি হতো?”
—“কেন তোমার ভালো লাগে’নি?”
—“এটা ভালো লাগার মতো কাজ? একদম বোকার মতোন কথা বললেন!”
—“কিন্তু ইশানি..”
—“চুপপপপ! একটাও কথা বলবেন না।একদম অলস বানিয়ে ফেলেছেন আমাকে আপনি।লোকে শুনলে কি বলবে? ছিঃ আমার বাবা কি আমাকে এই শিক্ষা দিয়েছে?”
—“এভাবে কেন ভাবছো ইশানি? স্বামীরা কি স্ত্রীদের যত্ন নিতে পারে না? একটু ভালোবাসতে পারে না? এতে খারাপের কি আছে?”
—“তাই বলে এমন ভালোবাসা? শ্বাশুড়ি আম্মা জানলে পাড়ায় পাড়ায় গিয়ে ঢোল পিটিয়ে বলে বেড়াবে।সেটা কতটা অসম্মানে বুঝতে পারছেন আপনি?”

“উনি আমার মুখটা চেপে ধরে বললেন,”
—“এখানে মা নেই।আর মা কখনো জানতেও পারবে না আমি আমার বউকে কিভাবে যত্ন করছি। এখন নাও তো…”

“মুখটা ছেড়ে দিয়ে উনি আমার হাতে চায়ের কাপটা ধরিয়ে দেয়।”
—“চা’টা ঠান্ডা হয়ে যাবে, খেয়ে নাও।”

“আমি আর কিছু বললাম না চুপচাপ উনার দিকে বাঁকা দৃষ্টিতে তাকিয়ে চায়ের কাপে চুমুক দিলাম।”
—“একি চায়ের স্বাদটা এমন কেন?”
—“কেমন?”
—“চিনির বদলে নূন দিয়েছেন নিশ্চয়?”
—“কই আমি তো ঠিকঠাক মতোই সবকিছু দিয়ে বানিয়েছি।”
—“উমমম হুমম! আমার মনে হচ্ছে চায়ের মধ্যে কিছু একটা বাদ পরে গেছে, কিন্তু কি?”
—“কই দেখি দাও তো?”

“উনি আমার হাত থেকে চায়ের কাপটা নিয়ে এক চুমুক দিয়ে দেখে।”
—“একি ইশানি সবই তো ঠিক আছে।”
—“হুমমম ঠিক আছে।দেন এবার আমি খাই।”

“উনার হাত থেকে চায়ের কাপটা কেরে নিয়ে এক নিশ্বাসে পুরো চা’টা খেয়ে নিই।তারপর বলি,”
—“তখন এই চায়ের কাপে আপনার ঠোঁটের ছোঁয়া ছিলো না।এখন ভালো হয়েছে।আহ অমৃত স্বাদ।”
—“আমার ঠোঁটের ছোঁয়াতে তোমার চা অমৃত হয়ে গেল?
—“হুমমমম।”
—“বাবাহ! এখন থেকে তাহলে রোজ সকালে পাবে।”
—“মানে?”
—“মানে বুঝছো না?”
—“না!”
—“রোজ চা পাবে তাই বললাম।”
—“তার মানে রোজ আপনি চা করে খাওয়াবেন আমাকে?”
—“হুমমম।ফ্রেশ হয়ে নিচে চলো তো নয়তো আমার অফিসের দেরি হয়ে যাবে।”

“উনি আমাকে উঠিয়ে ওয়াশরুমে নিয়ে এসে ব্রাশে টুথপেষ্ট লাগিয়ে আমার সামনে ধরে।দাঁত বের করতে বলে।”
—“একি? এটাও কি আপনি করে দিবেন? আমি পারবো দেন?”

“উনি আমার হাতে ব্রাশটা ধরিয়ে দিয়ে চলে যায় আর বলে যায়,”
—“তারিতারি নিচে এসো।তোমাকে খাইয়ে দিয়ে আমাকে অফিসে যেতে হবে।”

“কিছুক্ষণ পর আমি নিচে নেমে দেখি উনি ব্রেকফাস্ট সাজিয়ে টেবিলে বসে আমার জন্য অপেক্ষা করছে।আমি গিয়ে উনার পাশে বসে একসাথে ব্রেকফাস্ট করছি।উনি বলছে,”
—“জানো ইশানি ছোটবেলা থেকেই এভাবে আমি বাড়িতে সবকাজ করতাম! এগুলোতে আমি অভ্যাস্ত।বাবা যখন সব সম্পত্তি আমার নামে করেছে বলেছে সেদিন থেকেই মা বদলে গিয়েছিলো।আমাকে কোনো কাজ করতে দিতো না।কিন্তু আমি ভাবতাম ওটা মায়ের ভালোবাসা।মা তখন থেকেই আমাকে মাথায় করে রাখতো। বাড়িতে তিন-চারটা কাজের লোক রেখেছিলো যেই কাজগুলো আমি করতাম সেগুলো করার জন্য।একটা সময় পর আমি ভেবেছিলাম মা হয়তো নিশু আর তপুর মতোই আমাকে ভালোবাসে।”

“কথাটা বলে, উনি থেমে যায়। আমি তাকিয়ে দেখি উনার চোখে পানি।আমারও চোখে পানি চলে আসে।দু’জনেই চুপপ হয়ে আছি।কিছুক্ষণ পর উনি আমার হাতটা স্পর্শ করে।আমি চেয়ারটা এগিয়ে উনার কাছে গিয়ে বসি।তারপর উনার গালটা ধরে বলি,”
—“আপনি নিজেও জানেন না, আপনি কতটা ভালো।আমি আপনাকে যতোই দেখছি অবাক হয়ে যাচ্ছি।”
—“একটা কথা বলবো ইশানি?”
—“একটা নয় হাজারটা বলুন?”
—“তুমিও আমাকে কখনো ঠকিয়ে চলে যাবে নাতো? আমি জানি তোমার মতোন এতো সুন্দরী একটা মেয়ের স্বামী হওয়ার যোগ্য না আমি।”

“আমি উনার মুখটা চেপে ধরি,”
—“এসব কি বলছেন আপনি? আপনার স্ত্রী হয়ে তো আমি নিজেকে সোভাগ্যবতী মনে করি।মৃত্যু ছাড়া আর কিছুই আপনার কাছ থেকে আমাকে আলাদা করতে পারবে না।”
—“সত্যি বলছো?”
—“হুমমম।কারণ আপনাকে আমি খুব ভালোবাসি।”

“উনি আমাকে জড়িয়ে ধরে অনেকক্ষণ কেঁদেছে।তারপর উনি অফিসে চলে গেলে রুমে এসে ভাবতে থাকি কিভাবে শ্বাশুড়ি আম্মাকে শিক্ষা দেওয়া যায়?”

“ওদিকে শ্বাশুড়ি আম্মা কালকের ঘটনার পর ধুমধাম পিটানি খেয়েছে সকলের কাছে।সবাই শ্বাশুড়ি আম্মাকে ইচ্ছা মতো কেলানি দিয়েছে।এখন সে বিছানায় ভাঙা কোমড় নিয়ে বসে আছে আর ব্যাথায় কাতরাচ্ছে।”
—“ওহহ নিশি আমাকে একটু পানি দিয়ে যা না, ওষুধ খাবো মা।”

“নিশি নিজের রুমে জোড়ে মিউজিক চালিয়ে ড্যান্স করছে।মায়ের কথার আওয়াজ তার কানে পৌঁছাচ্ছে না।শ্বাশুড়ি আম্মা আস্তে করে বিছানা থেকে উঠে নেওলাতে নেওলাতে নিশির রুমে গিয়ে মিউজিকটা অফ করে দেয়।নিশি থেমে গিয়ে পিছনে ঘুরে মাকে দেখে রেগে যায়।”
—“তোমার সাহস তো কম না তুমি মিউজিক অফ করেছো।”
—“আমি ওষুধ খাবো পানি চেয়েছিলাম তোর কাছে।”
—“উঠে যখন এখানে আসতেই পেরেছো তখন নিজেই গিয়ে পানি নিয়ে ওষুধ খাও।”
—“মানে?”
—“মানে বুঝতে পারছো না? এই বাড়িটা এখন আমাদের দুই ভাই-বোনের। এখন থেকে তোমার কোনো হুকুমই আমরা মানবো না।যা ইচ্ছা তাই করবো স্বাধীন ভাবে।যাও এখান থেকে আমাকে ড্যান্স করতে দাও।”

“কথাটা বলে নিশি শ্বাশুড়ি আম্মাকে ধাক্কা দিয়ে তার রুম থেকে বেড় করে দেয়।আর শ্বাশুড়ি আম্মা ভাঙা কোমড় নিয়ে নিচে পরে চিৎকার চেচামেচি করে।কিন্তু কেউ তার কাছে আসে না।নিশিও আবার জোড়ে মিউজিক চালিয়ে তার রুমে ড্যান্স করতে থাকে।হয়তো শ্বাশুড়ি আম্মার চিৎকারও আর তার কানে পৌঁছায় না।”

চলবে,,,,,

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *