অন্তরালে ভালোবাসা

অন্তরালে ভালোবাসা !! Part- 06

নিশি জোড়ে জোড়ে হাতহাতি বাজাতে থাকে।অন্যরা চুপ হয়ে আছে।শ্বাশুড়ি আম্মা নিশির কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বলে,”
—এই নিশি কেউ হাতহাতি বাজায় না কেন? আমার তো ইনসাল্ট বোধ হচ্ছে।
—দাড়াও মা বলছি।
কাকি আম্মা, চাচি আম্মা আপনারাও বাজান।
সবার হাত উঁচু করে দিয়ে দিয়ে দাঁত কেলিয়ে বলে, হাততালি।

“সকলে একসাথে হাততালি বাজায়।শ্বাশুড়ি আম্মা খুশি হয়ে যায়।তিনি একটা হাসি দিয়ে হাঁটতে গেলে হোচট খেয়ে পরে যায়।উঠে দাড়িয়ে হাঁটতে গেলে বুঝতে পারে হিলটাই ছিঁড়ে গেছে।তিনি নিচু হয়ে হিলটা খুলে ফেলে।তারপর হিলের ফিতা ঘুরিয়ে দূরে ছুড়ে মারে।পার্টির সকলে তার কান্ড দেখে হা হয়ে তাকিয়ে আছে।তিনি অনেক ভাব নিয়ে বলে,”
—অবাক হবার কিছু নেই।এটা বড়লোকদের নিউ ফ্যাশান।
“তারপর হেলে দুলে হেটে সবার মাঝখানে আসে আর বলে,”
—এখন পার্টিতে ড্যান্স হবে।আমি জানি আমার মতোন এতো ভালো এখানে কেউ ড্যান্স করতে জানে না তবুও আজ কমপিটিশন হবে।যদিও আমি হারবো না তবুও আমি ড্যান্স প্রতিযোগীতাই অংশগ্রহণ করবো।আর এই প্রতিযোগীতাই যে জিতবে সে এক লক্ষ টাকা পুরষ্কার পাবে।

“টাকার কথা শুনে সকলের চোখ দুটো বড় বড় হয়ে যায়। সকলে এগিয়ে এসে এসে নিশির কাছে নাম লেখায়। নাম লেখানো শেষ হলে মাইক হাতে নিয়ে শ্বাশুড়ি আম্মা সবাইকে আবার বলে,”
—আমি সকলকে বলেছি এটা একটা বড় পুরষ্কারের প্রতিযোগীতা।সকলে বুঝতেই তো পারছেন যে জিতবে সে লাখপতি হয়ে যাবে।এজন্য প্রতিযোগীতায় সবাইকে নেবো না।যারা নাম লিখিয়েছেন তাদের মধ্যে থেকে বেছে বেছে নাম রাখবো যারা ড্যান্স জানে।

“সকলে এসে আড়ালে শ্বাশুড়ি আম্মার গায়ে হাত বুলিয়ে বলে আমার নামটা লিখিয়ে দে আমি না তোর সই? আর আমি ভালো ড্যান্স জানি।শ্বাশুড়ি আম্মা তাদের শর্ত দেয় চা পানি খাওয়ার জন্য দু’হাজার করে টাকা দিলে তাদের নামটা দিয়ে দেবে আর সবাই লাখপতি হওয়ার লোভে তার শর্তে রাজি হয়ে যায়।তার হাতে চুপিচুপি দু’হাজার করে টাকা গুজে দিয়ে যায়।”

“প্রতিযোগীতা শুরু হবে এমন সময় তিনি মাইকে ঘোষণা দিয়ে বলে,”
—এই প্রতিযোগীতাই একজন একজন করে ড্যান্স করা যাবে না।সবাই একসাথে ড্যান্স করবে।আর তার ভেতর থেকে সিলেক্ট করা হবে।

“সকলে একমত তার সাথে,”
পার্টিতে গান বাজছে,,

Bichhoo mere naina badi zehereeli ankh maare
Kamsin kamariya saali ik thumke se lakh maare

Bichhoo mere naina badi zehereeli ankh maare
Kamsin kamariya saali ik thumke se lakh maare
Note hazaaron ke, khulle chhutta karaane aayi
Husn ki teeli se beedi chillam jalaane aayi

Aayi chikni chameli chhup ke akeli pawwa chadha ke aayi
Aayi chikni chameli chhup ke akeli pawwa chadha ke aayi
Aayi chikni chameli chhup ke akeli pawwa chadha ke aayi
Aayi chikni chameli chhup ke akeli pawwa chadha ke aayi

“গানের ফাঁকে ফাঁকে লাফাতে লাফাতে দাপিয়ে ঝাপিয়ে ল্যাং, গুতা, উষ্টা মেরে সবাইকে ফেলে দেয় শ্বাশুড়ি আম্মা।তারপর কোমড় ঢুলিয়ে ঢুলিয়ে বলে,”
—আমি এখনো ড্যান্স করছি দেখও।পরি নাই কিন্তু।

“নিশি এসে শ্বাশুড়ি আম্মার হাত ধরে উঁচু করে বলে,”
—মা জিতা।সবাই হেরে গেছেন আপনারা।এই এক লক্ষ টাকা পুরষ্কার মায়ের এই নাও মা।

“এবাড়িতে আমরা সবাই একসাথে না থাকলেও ভালোবাসার কোনো কমতি নেই। উনি আমাকে একদম অলস বানিয়ে ফেলছে।এসেছি ধরে কিছু করতেই দিচ্ছে না।রান্না করা তারপর খাইয়ে দেওয়া। এমনকি গোসলটা পর্যন্ত করিয়ে দেওয়া। উনি আমাকে কখনো দু’চোখের আড়াল করছেই না।রাতে ডিনার শেষে উনি আমাকে কোলে করে রুমে নিয়ে আসে। তাকিয়ে দেখি উনার চোখ মুখ বসে গেছে।হয়তো সারাদিনে এতো ধকল সামলাতে গিয়ে ক্লান্ত হয়ে পরেছে।হঠাৎ করে উনি আমার কোলে মাথাটা রেখে শুয়ে পরে।”
—ইশানি আমার মাথাটা একটু টিপে দিবে?
—হুমমমম।

“আমি উনার মাথাটা টিপে দিতে থাকি।আমি উপলব্ধি করি উনার চোখের পানিতে আমার দু’ হাঁটু ভিজে যাচ্ছে।তাহলে কি উনি কাঁদছে? আমি উনাকে টেনে আমার দিকে ঘুরিয়ে নিই, দেখি উনার চোখে পানি।”
—একি আপনি কাঁদছেন?

“উনি চোখের পানি মুছে উঠে বসে আমার গালটা দু’হাত দিয়ে ধরে বলে,”
—ধূর! কাঁদতে কেন যাবো?

“আমি বুঝতে পারলাম উনি হয়তো আমার কাছ থেকে নিজের কান্নাটাকে লুকাতে চাইছে।উনার কস্ট পাওয়াটাও যে অস্বাভাবিক কিছু নয়।এতোগুলো বছর ধরে যাদের আপন ভেবে আসলো আজ তারাই এতো সহজে উনাকে পর বলে দিলো।আমি আর এটা নিয়ে উনাকে কোনো প্রশ্ন করলাম না।উনাকে শুয়ে পরতে বললাম।উনি শুয়ে পরতেই উনার বুকে মাথাটা চেপে ধরে রেখে বললাম আমাকে একটু আদর করবেন?”

“উনি আমাকে জড়িয়ে ধরলো আর আমার মাথায় আর পিঠে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললো ঘুমিয়ে পর।”

“আমি উঠে বসলাম আর উনাকেও টেনে উঠালাম আর উনার গালটা দুইহাতে ধরে বললাম, এভাবে আদর করলে ঘুমা হবে না।”

“উনি একটা মুচকি হাসি দিয়ে আমাকে কাছে টেনে নেয়। আর আমার কপালে আর ঠোঁট আলতো স্পষ্ট ছুঁইয়ে দিয়ে বলে,”
—এখন ঘুম হবে?
—নাহহ!

“উনি আমার শাড়ির আঁচলটা সরিয়ে বুকে একটা ঠোঁটের আলতো পরস দিয়ে বলে,”
—এখন ঘুম হবে?
—নাহহ!

“এবার উনি আমার ব্লাউজের বোতামগুলো খুলতে থাকে।আমার বুক ধুপ ধুপ করছে।আমি উনার হাতটা ধরে বসি।তারপর উনাকে শুইয়ে দিয়ে উনার বুকে মাথা রেখে শুয়ে পরি।আর বলি,”
—ঘুমান।আজ অনেক আদর করেছেন।আর না।

“উনি আমাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পরে।কিন্তু আমার ঘুম হয় না।আমি ভাবি এতো নিষ্টুর কেন আমার শ্বাশুড়ি আম্মা? হোক না উনি তার সতিনের ছেলে।তাই বলে এতোটা অন্যায় করবে উনার সাথে? নাহহ এর একটা শাস্তি ওদের দেওয়া লাগবে।উনাকে আর এভাবে কস্ট পেতে আমি দেখতে পারবো না।উনি তো ওদেরকে ভালোবাসে।নিজের ভাবে।তাই উনার জন্য হলেও একবার শেষ চেস্টা করতে হবে।”

চলবে,,,,,,

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *