অন্তরালে ভালোবাসা !! Part- 03
“আমি রুমে এসে ঘুমিয়ে পরি।ঘুমালে আমার কিছু মনে থাকে না।কানের কাছে আওয়াজ আসে ফকিন্নির বেটি নবাবজাদি হইছোস? বেলা দুপুর গড়িয়ে যাচ্ছে ঘুম থেকে উঠার নাম নাই? আমি ঘুমন্ত অবস্থায় কানে বালিশ চেপে ধরে রাখি।হঠাৎ লক্ষ্য করি আমার বালিশটা কেউ টেনে নিচ্ছে।আমি চোখ মেলে দেখার আগেই কল কল করে এক বালতি পানি কেউ আমার মুখের উপরে ঢেলে দেয়।আমি এক লাফে উঠে বসি।ঘড়িতে চেয়ে দেখি ৯ঃ৩০ টা বাজে।কখন সকাল হয়েছে বুঝতে পারি নি।উনি হয়তো এতোক্ষণে অফিসে বেড়িয়ে গেছে।শ্বাশুড়ি আম্মা আমার এক মুষ্টি চুলে ধরে টেনে আমাকে ফ্লোরে ফেলে দেয়।নিশি এসে গাদিগাদি কাপড় আমার মুখের উপরে ফেলে।”
—নাও ভাবি সব কাপড়চোপড় কেঁচে ধূয়ে সাদে গিয়ে নেরে দিয়ে এসো।
শ্বাশুড়ি আম্মা বলে,
—এটা হয়ে গেলে কিচেনে গিয়ে রান্না করিস।
“আমি হতবাক।বাড়ির বউদের উপর শ্বাশুড়িদের অত্যাচার হয় সেটা আগে শুনেছি কিন্তু সেটা যে এমন হয় তা আজ প্রথম দেখছি।”
—কি হলো কথা কানে যায় নি এখনো বসে আছিস?
“কথাটা বলে শ্বাশুড়ি আম্মা আমাকে একটা চর দিতে যায় পাশ থেকে কেউ এসে মা বলে চিৎকার দিয়ে ওঠে।”
“আমি তাকিয়ে দেখি উনি দাড়ানো। উনাকে দেখে শ্বাশুড়ি আম্মার চোখদুটো একেবারে আবেগি হয়ে গেলো।আমাকে ধরে টেনে উঠাচ্ছে।”
—ওঠো বৌমা ওঠো।এভাবে কেউ কাজ করে? বললাম নতুন বৌ কোনো কাজ করার দরকার নেয়। দেখ না দেখ উদয় তোর বৌ এখানে বসে কাপড় চোপর কাঁচছে।
“উনি এগিয়ে এসে আমাকে ঠেলে নিজের পিছনে রেখে শ্বাশুড়ি আম্মার মুখোমুখি দাড়ালো।”
—আমি সব দেখেছি মা।এমনটা কেন করছো ওর সাথে?
“উনার এমন প্রশ্নে শ্বাশুড়ি আম্মার চোখদুটো নিচে নেমে যায়।তারপর আমি বলি,”
—কাল আপনাকে আমি এটাই বোঝানোর চেস্টা করছিলাম।কিন্তু আপনি কিছুই বুঝতে চাইলেন না।
“কালকের সব ঘটনা খুলে বলার পর উনি শ্বাশুড়ি আম্মার কাছে জানতে চায়।”
—এমনটা কেন করলে মা? ছিঃ মা আমার ভাবতেও লজ্জা হচ্ছে। শুধু শুধু আমি ইশানিকে ভুল বুঝেছি।
—বাহহ উদয় এখন মায়ের চেয়ে বউ বড় হয়ে গেলো?
—কি বলছো মা? তুমি জানো তোমাকে আমি কতোটা ভালোবাসি।
—রাখ তোর ভালোবাসা।এমন দয়ার ভালোবাসা আমার চায় না।
—এটাকে তোমার দয়ার ভালোবাসা মনে হয়?
—হ্যাঁ মনে হয়।কারণ তোর বাবা তার সব সম্পত্তি শুধু তোর নামে লিখে রেখে গেছে আমার সন্তানদের নামে নয়।
—মা এটা তুমি কি বলছো? তাহলে কি শুধু সম্পত্তির জন্য তুমি আমাকে ছেলে ভেবেছো এতোদিন?
—হ্যাঁ তাই! তুই আমার সতিনের ছেলে।আর সতিনের ছেলে কখনো আপন হয় না।তাছাড়াও তুই নিজেই আমাকে কখনো আপন ভাবিস নি।সব তোর অভিনয়।
—এটা তুমি বলতে পারলে মা?
—হ্যাঁ পারলাম।তুই যদি সত্যি আমাকে তোর মা মেনে থাকিস তাহলে প্রমাণ কর তুই আমার ছেলে।
—প্রমাণ?
—হ্যাঁ, প্রমাণ।তোর সব সম্পত্তি আমার নিশি আর তপুর নামে লিখে দিতে হবে তাহলে মানবো তুই আমার ছেলে।আর আমাকে কতোটা সম্মাণ করিস।
“শ্বাশুড়ি আম্মা রুম থেকে বেড়িয়ে গিয়ে একটা দলিল নিয়ে আসে।তারপর সেটা উনার সামনে রেখে বলে সই করতে।”
—এটাতে সই করে দে।
“তাকিয়ে দেখি উনার দু’চোখের কোণ ঘেঁষে পানি গড়িয়ে পরছে। আবেগের বসে উনি সই করে দেয়।তারপর শ্বাশুড়ি আম্মা রুম থেকে বেড়িয়ে যায়।”
“বিছানার পাশে ঝাপসা চোখে বসে আছে উনি।”
—কি করলেন এটা আপনি? আপনি জানেন এখন উনি কি করবে? যদি আপনাকে এই বাড়ি থেকে বের করে দেয়?
—দিলে দিবে তবে আমার মনে হয় না এমনটা করবে।
—মানে?
—এতোগুলা দিন ধরেও কি মায়ের মনে একটু জায়গা করতে পারিনি আমি? নিজের সব কিছু মায়ের কথায় আমি নিশি আর তপুকে দিয়ে দিয়েছি।আমাকে তাড়িয়ে দিতে মায়েরও কস্ট হবে।তাছাড়াও বাবা মৃত্যুর আগে বলে গিয়েছিল এই সবকিছু দেখে রাখতে।এগুলো ভোগ করতে গিয়ে আমি আমার মা, ভাই, বোনকে হারাতে পারবো না।
“আমি উনাকে টেনে আমার দিকে ঘুরিয়ে নিয়ে বলি,”
—এতো ভালো কেন আপনি? কেন এতো বিশ্বাস করেন মানুষকে?
“উনি কিছু বলে না, আমার কোলে মাথা রেখে শুয়ে পরে।আর আমি উনার মাথাই বিলি কাটতে থাকি।কিছুক্ষণ পর নিরাবতা ভেঙে আমিই উনাকে বলি,”
—আচ্ছা, আজ অফিসে গেলেন না কেন?
—গিয়েছিলাম।ভাবলাম মায়ের পায়ে ব্যাথা হয়তো এখনো আছে। হাটঁতে পারছে না।আর কালতো তোমাকে একটু সময়ও দিতে পারি নি।তাই চলে আসলাম।
—কেমন মানুষ আপনি? সবার কথা এতো ভাবেন।আর…
“উনি উঠে বসেই আমার ঠোঁটটা চেপে ধরলো।চোখটা ঘুরিয়ে আমাকে বলল,”
—আর কিচ্ছু না! আমাকে একটু ভালোবাসবে ইশানি?
—হুমমমম
“উনার বুকে আমার মুখ লুকায়,”
—আপনাকে যে ভালো না বেসে পারা যায় না।
চলবে,,,,,