অন্তরালে তুমি আমি !! Part- 14
খুশীতে জলি নিজের কান্না ধরে রাখতে পারে না।জলির চোখ ছলছল করছে।ঝাপসা চোখের টলোমলো জল গড়িয়ে পরার আগেই জলি মুছে নেয়।তারপর পেপারটা বুকের সাথে চেপে ধরে কান্নাজড়িত কন্ঠে বলে,”
—আদি আসছে! আমার আদি ফিরে আসছে।অহনা, আবির নিউজটা পড়েছিস তোরা? আমার আদি ফিরে আসছে।জলি নিজের পেটে হাত রেখে বলে, সোনা তোর বাবাই আসছে।
“জলির এমন আদির প্রতি ভালোবাসা দেখে অহনার চোখেও পানি চলে আসে।ভাবে আদিও কি এভাবে জলিকে ভালোবাসে নাকি আদি এখনও আগের মতোন আছে?”
“পরের দিন সকালে জলিকে রেডি করিয়ে চুল আঁচড়ে দিচ্ছে অহনা।আবির বাইরে থেকে চিৎকার করে ডাকছে,”
—কি হলো তোমাদের? ওদিকে আদিতো এয়ারপোর্ট থেকে চলে যাবে।
“টিভিতে নিউজ দিয়েছে এয়ারপোর্টে সাংবাদিকরা আদিকে ঘিরে ধরেছে আর তারা আদিকে একটার পর একটা প্রশ্ন করে চলেছে।আদিও তাদের প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছে সেটা দেখে আবির অহনাকে বলছে জলিকে নিয়ে তারাতারি রুম থেকে বের হতে।আর অহনা আসছি বলে বলে জলিকে আরও বেশি করে সাজাতে ব্যাস্ত।”
“অবশেষে জলিকে খুব সুন্দর করে সাজানো হলো।অহনা জলিকে নিয়ে বাইরে আসে।আবির জলিকে দেখে বলে হ্যাঁ খুব সুন্দর লাগছে।আদি চোখ ফেরাতেই পারবে না জলির থেকে।কথাটা শুনে জলি লজ্জা পেয়ে যায়। লজ্জা পেয়ে বলে,”
—যাহ কি বলিস না তুই আবির!
“অহনা বলে,”
—আবির ঠিকই বলেছে।
“তারপর আবির আর অহনা হাসতে থাকে। হাসতে হাসতে অহনা চোখের সামনে সবকিছু ঝাপসা দেখে।অহনা লক্ষ্য করে তার মাথাটা ঘুরছে।অহনা পরে যেতেই আবির অহনাকে ধরে বসে।অহনাকে আবির ডাকে দেখে কোনো সাড়া নেই।তাই আবির আর জলি এয়ারপোর্টে না গিয়ে অহনাকে নিয়ে হসপিটালে যায়।”
“হসপিটালে নেওয়ার পর অহনাকে চেকাব করে ডাক্তার বলে অহনা মা হতে চলেছে।কথাটা শুনে আবির আর জলি খুব খুশি হয়।আবার পরক্ষণে জলির মনটা খারাপ হয়ে যায় সে আদির কাছে যেতে পারলো না বলে।অহনার মাথাটা এখনো ভার হয়ে আছে।আবির আর জলি অহনাকে নিয়ে বাড়িতে আসলে অহনা আবিরকে বলে জলিকে নিয়ে আদির কাছে যেতে।অহনাকে বিশ্রাম নিতে বলে আবির জলিকে নিয়ে আদির কাছে যায়।”
“এয়ারপোর্টে জলি আর আবির আসার আগেই আদির গাড়িটা চলে যায়। জলির আর আদির সাথে দেখা হয় না।পেপারে লেখা ছিলো একটা এ্যাওয়ার্ড ফাংশনে নিমন্ত্রিত হয়ে দেশে এসেছে আদি।এ্যাওয়ার্ড পাওয়ার পর আবার আমেরিকাতে চলে যাবে।ফাংশন শুরু হবার টাইম তো পাঁচটা এখন মাত্র দশ মিনিট সময় আছে।না জানি ফাংশন শেষে আদির সাথে জলির দেখা হবে কিনা।”
“জলি আর আবির এ্যাওয়ার্ড ফাংশনের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। আবিরের গাড়িটা থামাতেই জলি গাড়ি থেকে নেমে যায়। দূর থেকে তাকিয়ে জলি আবিরকে দেখতে পাই। স্ট্রেজে আদি এ্যাওয়ার্ড হাতে তার সফলতার গল্প শোনাচ্ছে।তার জীবনের ব্যার্থতার গল্পও শুনাচ্ছে।আদির জীবন কাহিনী শুনে সবার চোখে পানি চলে আসে।আদি যখন বলে সে একজনকে ভালোবেসেছিলো।এক ছলনাময়িকে বিশ্বাস করেছিলো।কিন্তু সেও তাকে ঠকিয়েছে তখন জলি বুঝতে পারে যে আদি তার কথাই বলছে।জলি চোখের পানি মুছে দূর থেকে চিৎকার দিয়ে ওঠে।আদিকে ডাকে জলি।আর জলির চিৎকারে সকলের নজর জলির দিকে।ভিরের মধ্যে আদি দূর থেকে অন্ধকারে জলিকে দেখতে পারে না।শুধু কন্ঠ শুনে বুঝে ফেলে এটা জলি।জলি ভির ঠেলে একটু এগিয়ে আসলে আদি আবছা জলির মুখটা দেখতে পাই।এতোদিন পর জলিকে দেখে আদি খুশি হয়।যে জলি তার কাছে এসেছে।আদি তার দুই হাত মেলে দেয় জলি কাছে আসলেই জলিকে জড়িয়ে ধরবে।জলি আটমাসে পেট নিয়ে জোড়ে হাটতেও পারছে না তবুও আজ নিজের সর্বস্ব শক্তিটুকু দিয়ে ছুটে আসে।জলি স্টেজের কাছাকাছি আসলে সব লাইট ক্যামেরা জলির দিকে আর আদির চোখ যায় জলির পেটের দিকে।আদি ভাবে জলি প্রেগনেন্ট? মুখ তুলে জলির পেছনে দেখে আবির হেঁটে আসছে।আবিরকে দেখে আদির ১১ মাস আগে জলির লিখে রেখে যাওয়া সেই চিঠিটার কথা মনে পরে যায়। আদি ভাবে আবিরের সাথে জলির বিয়ে হয়েছে আর জলির গর্ভে আবিরের সন্তান।এটা ভেবে আদি নিজের হাতটা নামিয়ে পিছনে ঘুরে যায়। জলে এসে আদিকে টেনে বলে, এই আদি এভাবে না বলে চলে কেন গিয়েছিলি রে? তুই জানিস না তোকে আমি কত্ত মিস করেছি…কথাটা বলেই জলি আদিকে টেনে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নেয়। তারপর আদির গালটা ধরে বলে…কেন চলে গিয়েছিলি তুই? আদি কোন উত্তর না দিয়েই নিজের গাল থেকে জলির হাতটা নামাতে যায় আর জলি আরও শক্ত করে আদির গালটা ধরে নিজের দিকে টেনে নেয়।তারপর আদির মুখে অজস্র চুমু এঁকে দিয়ে আদিকে জড়িয়ে ধরে কাঁদে।আদি খেয়াল করে সমস্ত লাইট ক্যামেরা তাদের উপর।আদি এক ধাক্কা দিয়ে জলিকে দূরে সরিয়ে দেয়। আর বলে,”
—আপনার সাহস হয় কিভাবে এভাবে আমাকে স্পর্শ করার? সিকিউরিটি গার্ড কে কোথায় আছেন। আপনাদের মাইনে দিয়ে রেখেছি কি জন্য? একজন মানুষ এভাবে স্ট্রেজে কিভাবে চলে আসলো?
“আদির কথা শুনে সবাই ভয়ে ভয়ে বলে,”
—স্যার আমরা ভেবেছি উনি আপনার পরিচিত।
—পরিচিত? আপনাদের কি বুদ্ধি নেই? দেখতেই পারছেন একজন গর্ভবতী মহিলা।এনাকে আমি কিভাবে চিনবো? নিশ্চয় আমার কোনো প্রতিপক্ষের সাজানো নাটক এটা।আমাকে দেশে কি এ্যাওয়ার্ড নিতে আসতে বলা হয়েছে নাকি ইনসাল্ট করতে সেটাই বুঝতে পারছি না।
“জলি আদির ব্যাবহার আর কথার মধ্যে বদল দেখে অবাক।ভাবে এসব কি বলছে আদি? জলি আদির কাছে আবার এগিয়ে আসে আর আদির শার্টের কলারটা টেনে ধরে বলে,”
—কিসব বলছিস তুই আদি? জলি আদির হাতটা নিজের পেটে ছুঁইয়ে বলে, এই সন্তানটা…
“জলি আর কিছু বলার আগেই আদি জলির পেট থেকে হাতটা টেনে এনে রাগে, কস্টে ঠাসসসস! করে জলির গালে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দেয়। জলিকে আদি থাপ্পড় দিলে আবির স্টেজের কাছে আসে কিন্তু সিকিউরিটি গার্ডরা আবিরকে স্টেজে উঠতে দেয় না।জলিকে টানতে টানতে তারা স্টেজ থেকে নিচে নামিয়ে নিয়ে আসে।আর আদি মাইক হাতে বলে কেউ ছবি তুলবেন না।এটা আমাকে ছোট করার জন্য পতিপক্ষের প্লান।”
“জলিকে কিছু দূর নিয়ে আসার পর গার্ডরা ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়। জলি পরে দিয়ে ব্যাথা পাই। হাতে ছিলে যায়।তারপরও জলি আবার উঠে দাড়ায় আর আদির কাছে আসতে চাই।গার্ডরা আবার জলিকে আটকায়। জলি বারবার বলে শুধু একবার আদির সাথে কথা বলে সে চলে যাবে তবুও জলির কোনো কথা তারা শুনতে চাই না।তাই জলি তাদের ঠেলে ছুটতে থাকে।ছুটে স্টেজের সিঁড়িতে আসতেই হোচট খেয়ে পরে যায় আর জলি পেটে আঘাত পাই।জলি আর উঠতে পারে না।যন্ত্রণায় চিৎকার করে আর আদিকে ডাকে।আদি জলির এই অবস্থা দেখে ছুটে আসে কিন্তু জলিকে স্পর্শ করে না।কারণ তার আগেই আবির জলিকে এসে ধরেছে।আদি উঠে দাড়ায় আর আবির জলিকে ডাকে।জলির প্রচুর রক্ত ক্ষরণ হয়।দাপাচ্ছে আর চিৎকার করছে।আদি দূরে সরে গিয়ে নিজের চোখটা বন্ধ করে জলির যন্ত্রণা অনুভব করছে।আবির বলছে জলিকে হসপিটালে নিয়ে যাবে কিন্তু জলি আদির সাথে কথা না বলে যাবে না।আদি অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে কাঁদছে আর জলি চিৎকার করে এখনো আদিকেই ডাকছে।
চলবে,,,,