অনুভূতির সংমিশ্রণ

অনুভূতির সংমিশ্রণ !! Part- 09

নিজের উপরে রাগ লাগার কারনে ইমরেত রাত্রি বারোটার দিকে গোসল করতে ঢুকেছে,কোনক্রমেই তার রাগ কমছে না নিজের উপর থেকে..এমনিতে তার নিজের সবকিছুর প্রতি কন্ট্রোল তবে আজকে কেন এরকম নিধির সাথে করলো..তার নিধি কতটা কষ্ট পেলো এইজন্য।।

এক ঘন্টা ধরে শাওয়ার নেয়ার কারনে ইমরেত নিজেরে মুছে,বের হয়ে আসলো..ভাবছে নিধির কাছে আবার যাবে কি না,নিধি ত দরজা লক করে বসে আছে ঘরের ভিতর থেকে সিসিটিভি ফুটেজেও কিছু দেখা যাচ্ছে না..ভেঙ্গে দিয়েছে নাকি কে জানে..কিন্তু ও জানবে কিভাবে ওখানে সিসিটিভি ফুটেজ আছে।।

চিন্তা করতে করতে ইমরেতের একপ্রকার মাথা ফেটে যাচ্ছে,ঘুমের মেডিসিন নিলো নইত এই চিন্তা নামক যন্ত্রনা থেকে সে মুক্তি পাবে না।।

আধাঘন্টা পর সে ঘুমের রাজ্যে তলিয়ে গেলো।।

রাত্রি তিনটা বাজছে,নিধি বালিশ চেপে ফোস ফোস করে কাঁদছে আর হাতে থাকা চিপ্সের প্যাকেট গিলছে..সিসিটিভি ক্যামেরা দিকে চোখ দিয়ে রাখছে,তার মেজাজ গরম এইজন্য যে ওই যমরাজের সাহস কি করে হলো আমার ঘরে সিসিটিভি রাখার..খবিশ লোক কোথাকার।।

নিধির পরক্ষনে নিচের কিছু কথা মনে হলো,তখনি মনে হলো এই দানব ডাক্তারকে কে সে ভালোবাসতে শুরু করেছে।।

ফ্ল্যাশব্যাক,

নিধির কান্না যখন তার কান্নার সাথে হিচকি উঠার অভ্যাস আছে..হিচকি উঠতে আরম্ভ করেছে,তাই উঠে পানি খেতে যেয়ে দেখছে জগে পানি নাই..তখন চোখ মুখ মুছে জগ নিয়ে পানি আনতে যায় সে নিচে।।

সিড়ির কাছে এসে শুনতে পেলো সে স্মৃতি আর ইমরেতের কথোপকথন.. আরেকটু কান উচিয়ে সে শুনতে গেলো কি নিয়ে কথা হচ্ছে।।

স্মৃতি আর ইমরেতের সম্পূর্ণ কথা শুনে,চোখ দিয়ে আবারো তার নোনা জল বইছে..এদিকে তার হিচকিও থেমে গেছে,সে তার রুমের দিকে পা বাড়ালো।।

বর্তমান,

“আমাকে বকছেন না মি.দানবরুপে ডাক্তার..আপনাকে যদি নাকে দড়ি দিয়ে না ঘুরিয়েছি আমার নাম ও নিধি না…আমাকে আপনি কাদিয়েছেন..আমার মতো ভোলা মেয়েকে ওই অপরিচিত লোকের সামনে অপমান করেছেন,আপনার হাল যে আমি কি করি শুধু বুঝবেন এখন থেকে”।।

নিধি আপনমনে কথাগুলো বলছে,আর চিপ্স চিবুচ্ছে..চিপ্সটা ছিলো তার হ্যান্ডব্যাগে,স্মৃতি প্রায় এটা সেটা খাওয়ার তাকে টাকা দেয়..এটা মেহবুব দিয়েছিলো বাইরে থেকে এনে,রাখায় ছিলো ব্যাগে।।

চিপ্স খাওয়া শেষ করে,পানি খেয়ে একটা লম্বা ঘুমের দিকে নিজেকে নিয়ে গেলো।।

সকালবেলা,

নিধি সকালবেলা রেডি হয়ে,পাউরুটি দিয়ে নাস্তা করে..ভার্সিটির উদ্দেশ্য বেরিয়ে গেছে,স্মৃতিকে তার দেয়া ফোন নিধি ব্যাক দিয়ে বলেছে,” আপাতত এটার দরকার নাই ভাবীপু..তোমার কাছে রাখো”।।

স্মৃতি প্রতি উত্তরে কিছু বলতে পারে নি,সে বুঝতে পেরেছে নিধি ঠিক কতটা কষ্ট পেয়েছে।।

এদিকে ইমরেত ঘুম থেকে উঠে বেলা একটা..মেডিসিনের চাপে সে এতোক্ষন উঠে নাই..বেহুশ হয়ে ঘুমিয়ে ছিলো..ঘুম থেকে উঠে,ঘড়ির দিকে নজর গেলে তার চোখ কপালে উঠে যায়..ধড়ফড়িয়ে উঠে সে,ফোন হাতে নিয়ে দেখে সেইম টাইম..অসংখ্য মিসডকল,তবে বেশিরভাগ অফিস আর হসপিটালের,আর কিছু স্প্যাম কল।।

তাড়াতাড়ি করে ওয়াশরুমে ফ্রেশ হয়ে এসে,নিধির রুমের দিকে গেলো গিয়ে দেখে দরজা খোলা কিন্তু নিধি নাই..ইমরেত টিশার্ট টা ঠিক করতে করতে নিচে গেলো স্মৃতির কাছে জানতে।।

মাহিকে গোসল করিয়ে খেলনা দিয়ে ঘরে বসিয়ে রেখে স্মৃতি নিচে আসছে মেহবুবের টিফিন কেরিয়ার অফিসে পৌঁছে দেয়ার জন্য..সে কিচেনে বসে সেইগুলা টুকটাক রেডি করছে।।

ইমরেত হন্তদন্ত হয়ে ছুটে আসছে স্মৃতির কাছে,কপালে তার বিন্দু বিন্দু ঘাম।।

“ভাবী নিধি কোথায়??খুজে পাচ্ছি না যে” ইমরেত হাসফাস গলাতে বললো।।

“আরেহ!!তুমি এমনে শ্বাস নিচ্ছো কেন??বিপি লো হয়ে গেছে নাকি আবার??দেখি বসো” স্মৃতি অস্থির গলাতে বললো।।

“আমি ঠিক আছি,আগে তুমি বলো নিধি কই..ফোনটাও অফ দেখি??ও কি ফোন রেখে গেছে?” ইমরেতের পাল্টা প্রশ্ন।।

“ভাই বসো আগে!!নিধি ভার্সিটি গেছে..আর কালকে বকা খেয়েছে ত এইজন্য ফোন ও নেয় নি!!আসলে তুমি কথা বলো কেমন!!” স্মৃতি শান্ত ভাবে বললো।।

“না ভাবী!!আমি ওর ভার্সিটি যাবো” ইমরেত এই বলে পা বাড়াতে গেলে,স্মৃতি থামায়।।

“হ্যাভ সাম পেসেন্স ভাই?” স্মৃতি বললো।।

“হুম”ইমরেত ক্ষীন স্বরে বললো।।

স্মৃতি মেহবুবের টিফিন পাঠিয়ে,ফোন থেকে মেসেজ করলো মেহবুবকে,

” যা দিয়েছি তা যেন ব্যাক না আসে,ব্যাক আসলে ঠোটের ছাল তুলে নিব আমি”।।

স্মৃতি ইমরেতকেও খাইয়ে দিলো,স্মৃতি বুঝছে ইমরেত কালকের বিহেভিয়ারের জন্য ভয়ে আছে নিধি না কিছু করে বসে,কেমন ক্লান্ত লাগছে তাকে..আল্লাহর কাছে সব ঠিক করে দেয়ার জন্য বলছে বারবার স্মৃতি।।

অফিসে,

মেহবুব কাজ সেরে ফোন চেক করলে,দেখে তার বউ মেসেজ দিয়ে পাঠিয়েছে..মেসেজ দেখে বাকা হাসি দিলো সে,মেসেজ পরতে পরতে ড্রাইভার এসে, দরজা নক করে খাবার দিয়ে গেলো।।

“এখন ত এইসব খাবো,রাতে তোমাকে না পেলে তোমারো ঠোটের ছাল তুলে নিব আমি মেহবুব চৌধুরী ” মেহবুব বাকা হেসে বললো।।

নিধি সন্ধ্যাই বাড়িতে আসে..কিন্তু কারো সাথে দেখা করে নে,যেখানে ইমরেত থাকে সেখানে যায় না..খাবার ও নিজের ঘরে খায়..দরজা সবসময় বন্ধ করে রাখে..নিধি প্রতিদিন খুব সকালে যায় আর সন্ধ্যায় আসে..এইভাবে কেটে যায় বেশকিছুদিন।।

সাতদিন পর,

এইভাবে নিধির বিহেভিয়ার সাতটা দিন ধরে চালাচ্ছে..ইমরেতের বাড়িতে থেকেও,ইমরেতের সাথে দুরত্ব বজায় রেখে চলছে।।

ইমরেতের এদিকে দমবন্ধ হয়ে আসছে,নিধির উপর এতোবেশি রাগ জন্মেছে এই কয়দিনে বলার কথা না..হসপিটালের কোন সার্জারীতে হাত দিতে পারে নি সে না অফিসের কোন কাজে।।

ইমরেত আজ নিধি নামক একটা বিহিধ করেই ছাড়বে।।

“যা বলেছিলাম সেটার খোজ?” ইমরেতের শান্ত জবাব ফোনের অপাশের ব্যক্তিকে কল করে।।

“…………..”

“কামিং” ইমরেত ফোন কেটে বেরিয়ে গেলো,গাড়ি নিয়ে।।

নিধি ভরদুপুরবেলা ক্লান্ত শরীরে দাড়িয়ে আছে রিক্সার জন্য,মাত্র একটা বাচ্চার টিউশানি শেষ করলো সে,এখনো অনেকে বাচ্চা বাকি আছে..হ্যা সে টিউশানি আরম্ভ করছে,সিদ্ধান্ত নিয়ে ইমরেতের বাসা ছেড়ে দেয়ার।।

এক পা দু পা করে আগাচ্ছে কিন্তু মাথাটা ঝিম ঝিম করছে নিধির…তার সামনে একটা গাড়ি থামলো,গাড়ি থেমে সেখান থেকে একটা পুরুষ নেমে এসে নিধির গালের উপর সর্বশক্তি দিয়ে একটা থাপ্পড় মারলো।।

এমনে ক্লান্ত শরীর আর এমন থাপ্পড় খেয়ে নিধি আর টাল সামলাতে পারলো না,নিচে বসে গেলো..ঝাপ্সা চোখে দেখে শুধু একটা কথা বললো,

“যমরাজ আপনি আমাকে আবার মারলেন” নিধি কথাটা বলেই জ্ঞান হারিয়ে ফেললো,মেঝেতে তার মাথাটা পরার আগেই ইমরেত নিধির মাথাটা তার বুকের সাথে চেপে ধরলো।।

আশেপাশের মানুষ তাকাচ্ছে তাদের দিকে,ইমরেত সবার দিকে কেমন রক্ত চক্ষু নিয়ে তাকালো।।

“শো এন্ড?নাও গো অল অফ ইউ!!আমার বউ বেশি ত্যাড়ামি করেছিলো তাই মেরেছি,দেখা শেষ?জাস্ট লিভ” ইমরেতের চিল্লানি শুনে যে পাঁচ ছয়জন মানুষ ছিলো কেটে পরলো।।

“তোমার অবস্থা যে কি করি আমি এখন থেকে টের পাবা..সাতটা দিনের তীব্র জ্বালা তোমার উপরে আমি ঝাল তুলবো” ইমরেত নিধির মুখের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো।।

নিধিকে কোলে নিয়ে ইমরেত গাড়িতে বসে ড্রাইভ করতে লাগলো।।

চলবে🍁

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *