অজানা সম্পর্ক

অজানা সম্পর্ক !! Part- 06

আয়ানকে নিয়ে পৃথা উপরে চলে আসে।।আয়ানকে বেডে বসিয়ে..
পৃথাঃবাবাই চুপচাপ বসো।।তোমার জন্য খাবার নিয়ে আসি।।
আয়ানঃআমিও যাব তুমাল সাতে।।(পৃথাকে জড়িয়ে ধরে)
পৃথাঃনো বাবা।।তুমি উইক।।এখন এখানে শুয়ে শুয়ে রেস্ট কর মাম্মাম তোমার জন্য খাবার নিয়ে আসছে।।তুমি না মাম্মার গুড বয়??
আয়ানঃইয়েত।।আমি মাম্মামেল গুত বয়।।তুমি যাও আমি শুয়ে আতি।।
পৃথাঃআমার লক্ষীটি (কপালে চুমু দিয়ে)
আয়ানকে শুইয়ে রেখে পৃথা নিচে গেল।।আগে তার মাকে চেক করতে হবে।।মাকে আপাতত আয়ান আর আকাশের সম্পর্কে বলা যাবে না।। মা এমনিতেই অসুস্থ কত টেনশন করে মেয়েকে নিয়ে।।আর টেনশন বাড়াতে চায় না।।মায়ের রুমে গিয়ে দেখে মা চোখ বুজে শুয়ে আছে।।
পৃথাঃমা ঘুমিয়েছ?
মিসেস শেখরঃনাহ।।কিছু বলবি??হ্যা রে কে এসেছিল??
পৃথাঃওসব ছাড়।।কিছু বলব না।।তা তোমার পায়ে কি বেশি ব্যথা??ডাক্তারকে কল করব??
মিসেস শেখরঃআরে না মা।।বয়স হয়েছে এখন এসব স্বাভাবিক।। কতদিন আর বাঁচব।।
পৃথাঃএসব কি বলছ মা??তুমি অনেক দিন বাঁচবে।। কত কি দেখার বাকি তোমার।।(মাকে জড়িয়ে।।)
মিসেস শেখরঃকি আর দেখব??মেয়ের সংসারটাই তো গুছাতে পারলাম না।। কিছুই তো করতে পারিনি আমরা তোর জন্য।।(মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে)
পৃথাঃকে বলেছে? অনেক করেছ তোমরা আমার জন্য।।যখন আমার ডিভোর্স হলো চাইলে তো তোমরা সবার কথা শুনে আমাকে আরেক জায়গায় বিয়ে দিয়ে দিতে পারতে।।কত মানুষ কত কিছু বললে।। তুমি আর বাবাই তো আমার ইচ্ছে কে প্রাধান্য দিলে।।তোমাদের জন্যই আমি বেঁচে থাকার কারণ পেয়েছি।। তাই কখনও বলবে না যে কিছু করতে পার নি।।আমার সাথে তোমাকে অনেক অনেক দিন বাঁচতে হবে।। মনে থাকে যেন।।নেক্সট এসব বলবে না।।
মিসেস শেখরঃমনে থাকবে সোনা।।(কপালে চুমু দিয়ে)
পৃথাঃতুমি বস।।আমি খাবার বানিয়ে তোমাকে রুমে দিয়ে যাচ্ছি।। খাট থেকে নিচে মানবে না কিন্তু।।
মিসেস শেখরঃআচ্ছা আমার মা নামব না।।পাগলী মেয়ে আমার (হেঁসে)
।।
।।
পৃথা মায়ের জন্য প্রথমে রুটি আর ভাজি বানায়।।।মাকে রুমে খাবার দিয়ে আসে আগে।।
আবার এসে আয়ানের জন্য ভেজিটেবল সুপ আর জুস করে।।একটা বাটিতে ভাতও কচলায় যদি খেতে চায় তো খাইয়ে দিবে।। জানে না তো কি খায় ও।। নিজের জন্যও ভাত নেয়।।সব একটা ট্রে তে সাজিয়ে রেখে দুধ গরম করে।।আয়ানের জন্য পাতিলে রেখে মায়ের জন্য এক গ্লাস নিয়ে মায়ের রুমে যায়।।মাকে ওষুধ খাওয়ায়।।দুধ আর ওষুধ খাইয়ে মাকে শুইয়ে লাইট অফ করে কিচেনে গিয়ে ট্রে নিয়ে উপরে যায়।।
।।
।।
ওদিকে আয়ান কতক্ষণ শুয়ে উঠে পড়ে।। পৃথার রুমে তো বাচ্চাদের খেলার কিছু নেই তাই ও রুমের এটা ওটা দেখতে থাকে।।পৃথার ড্রেসিং টেবিলের উপরে অনেক কসমেটিকস থাকে যা আয়ান একটা একটা দেখতে গেলে ড্রেসিং টেবিলে ধাক্কা লেগে অনেক কিছু নিচে পড়ে যায়।।তেলের কৌটো থেকে তেল পড়ে।।আয়ান হেটে যাওয়ার সময় তেলে পিছলে ড্রেসিং টেবিলের ওপর পড়ে।।মাথাটা টেবিলে লাগার কারনে অনেক খানি কেটে যায়।।।মেকাপ বক্সটা পড়ে অনেক শব্দ করেই যার ফলে অনেক খানি ভেঙেও যায়৷ স্যাডো প্লেটটা গুরো গুরো হয়ে নিচে পড়ে যায়।।এলোমেলো হয়ে অনেক কিছু পড়ে।।এতকিছু এলোমেলো হয়ে ভেঙে যাবার কারণে আয়ান খুব ভয় পেয়ে যায়।।ভাবে এগুলো দেখে নিশ্চয়ই পৃথা ওকে মারবে।।ভয়ে কি করবে বুঝতে না পেরে তারাতারি উঠে সব উঠাতে গিয়ে তেলে পিছলে আবার পড়ে যায়।।খালি ফ্লোরে পড়ার কারনে ব্যথাটা বেশিই পায়।।ভয়ে পালাতে চায় যেন ওকে কেউ খুজে না পায়।।ছোট্ট বাচ্চা এ পরিস্থিতিতে ভয় পাবে তাই স্বাভাবিক।। তার উপর পৃথাকে ভালোবাসলেও এতদিন তো ওর সাথে ছিল না।।এসব দেখে ওর সাথে কি করবে সেইসব ভেবে ভয় পায়।।পৃথাতো ওকে খাটে শুইয়ে দিয়ে গেছিল কিন্তু ও শুয়ে না থেকে এসব ভাঙচুর করেছে।।ভয়ে কান্না করে দেয়..
আয়ানঃআমি তো সব ভেঙে পেলতি।।মাম্মাম এখন আমাকে মালবে।।পাপ্পা তো বলত দুত্তুমি কললে সবাই লাগ কলবে।।মাম্মাম এখন অনেক অনেক মালবে।।আমাল খাত থেকে নামাই উতিত হয় নি।।আমাল খুব ভয় কলছে।।পাপ্পা তুমি কোতায়??আমাল ভয় কলছে তো।।
কেউ আসার শব্দ পেয়ে আয়ান ভয়ে বারান্দায় দৌড় দেয়।।বারান্দায় গিয়ে পৃথার ফুলের টপের পিছনে কাচুমাচু দিয়ে বসে থাকে।বার বার ফুপিয়ে ওঠে।।
।।
।।
পৃথা খাবার নিয়ে রুমে আসতে আসতে আয়ানকে ডাক দেয়..
পৃথাঃআয়ান বাবাই।। উঠ খাবার এনেছি।।
তাকিয়ে দেখে আয়ান খাটে নেই।।খাবারটা ছোট টেবিলটায় রাখে।।আয়ানকে ডাক দেয়।।পিছনে তাকিয়ে দেখে রুমের অনেক কিছু এলোমেলো।। ড্রেসিং টেবিলের অনেক কসমেটিক্স নিচে পরা।অনেক কিছু ভেঙেও গেছে।।তেল পড়া পাশে পাউডার পড়েছে অনেকখানি।।এগুলো দেখে পৃথার রাগ হয় কারন ও অপরিচ্ছন্নতা পছন্দ করে না তার উপর ওর কতকিছু ভেঙে নষ্ট করেছে।।আয়ান আয়ান করে জোড়ে কয়টা ডাক দেয়।।পরে নিজের রাগটা কন্ট্রোল করে কারণ বাচ্চারা এসব করতেই পারে।। বাসায় বাচ্চা থাকলে এগুলো সাধরণ বিষয় আর আয়ানের তো মা ছিলনা এসব সম্পর্কে শিক্ষা দেয়ার জন্য কারণ বাচ্চারা সব ছোটো ছোটো জিনিস মায়ের কাছ থেকেই শিখে থাকে।।আয়ানকে কতগুলো ডাক দেয়ার পরও ওর কোনো সাড়া পাওয়া যায় না।। পৃথার সারা রুম ওকে খুঁজে কিন্তু কোথাও পায়না।।বাথরুম খোঁজে তাও ওকে পায়না।।পৃথার এখন টেনশন হতে লাগে।।অসুস্থতা বাচ্চাটা গেল কই আবার না কোথাও সেন্সলেস হারিয়ে পড়ে আছে।।তাই আয়ানকে জোরে জোরে ডাকে।।
ওদিকে আয়ান বারান্দায় অন্ধকারে কাচুমাচু হয়ে বসে বসে ফুপাচ্ছে।।বারান্দায় আসার সময় দরজা চাপিয়ে আসে ফলে পুরো অন্ধকার ।।আয়ানের ভয়ে বুকটা ধুকধুক করছে।।
পৃথা রুমে আর বাথরুমে না পেয়ে বারান্দায় যায়।।দরজা খুলে আয়ানকে ডাকে।।আয়ান ভয়ে মুখে হাত দিয়ে চুপ করে আছে।। বারান্দা অন্ধকার হওয়ায় পৃথা আয়ানকে দেখতে পায়নি।।বারান্দায় কতক্ষণ ডাকার পর চুপ করে অস্থির হয়ে ভাবতে থাকে কোথায় যেতে পারে।।
হঠাৎ কিছুর শব্দ পায়।।পৃথা শোনার চেষ্টা করে।।কারও থেকে থেকে ফুপিয়ে ওঠার শব্দ।।তাড়াতাড়ি বারান্দার আলো জ্বালায়।।প্রথমে খেয়াল না করলেও পরে দেখে আয়ান টবের পিছনে লুকিয়ে আছে।। পৃথার রাগ ওঠে।। এতক্ষণ ওকে না পেয়ে কত ভয় পেয়ে গেছিল কতবার ডাক দিছে।।এতক্ষণ এখানে দাড়িয়ে ডাকছে তো কেন সাড়া দিচ্ছে না।।একতো রুমে সব এলোমেলো করে এসে এখানে লুকিয়ে লুকোচুরি খেলছে।।কত ভয় পেয়েছে ও ভাবতে ছিল কোথাও অসুস্থ হয়ে সেন্সলেস হলো কিনা আর ও কিনা এখানে লুকিয়ে।।পৃথা দাড়িয়েই আয়ানকে চিল্লিয়ে বলল…
পৃথাঃআয়ান…..এসব কি হ্যা??কতক্ষণ ধরে ডাকছি আর তুমি এখানে লুকিয়ে?? আমার ডাক কি শুনতে পাও নি??তোমাকে না বেডে শুয়ে রেস্ট করতে বলেছি??কি করেছ তুমি হ্যা।।রুমের সবকিছু এলোমেলো করে এখানে লুকিয়ে?? বের হও বলছি।।কি আমার ডাক কি শুনতে পারছ না??হারি আপ বের হও(রেগে)
পৃথার রাগি রাগি ডাকে আয়ান আরও ভয় পেয়ে যায়।। ভাবে বের হলেই বুঝি ওকে মারবে।।তাই ভয়ে কাচুমাচু দিয়ে আরও ঘুপটি মেরে বসে থাকে।।থেকে থেকে কাপছে ও।।
পৃথার আরও রাগ লাগছে…
আয়ানকে আসতে না দেখে ও নিজে গিয়েই হাত ধরে নিয়ে আসা ধরে।।আয়ান আরও ভয় পেয়ে যায়…
আয়ানঃনা না আমি যাব না।।আমাল ভয় কলছে।।আমাকে মালবা তুমি।।আমি কিত্তু করি নাই।ওগুলো সব একা একা পলে গেতে।।আমি কিত্তু কলিনি।।পিলিজ আমাকে মেল না।।আমি আল এখানে আততে চাব না তুমাকে জ্বালাবও না।।পিলিজ মেল না।।পা ধলছি তুমাল।।আমি পাপ্পাল কাতে যাব।।আমাল এখানে ভয় করছে।। [এটাইতো স্বাভাবিক যতই সে পৃথাকে মা ভাবুক আর ভালোবাসুক ওর তো পৃথা সম্পর্কে ধারণা নেই।।এতোটুকু আাচ্চা কি আর বুঝবে??ওর কাছে জায়গাটা অচেনা সাথে মানুষ টাও।।ভেবেছে পৃথা ওকে মারবে।।তাই সে এখন পৃথাকে ভয় পাচ্ছে ]
পৃথা তো ওর কথায় অবাক।।কি বলছে আয়ান এসব???মারবে কেন ও?মারার কথা তো মাথাই আসেনি।।বাচ্চাটা ওকে ভয় পাচ্ছে?? ভাবছে পৃথা ওকে মারবে??আয়ানের মনে পৃথার জন্য ভালোবাসা থাকলেও ভরসা টা নেই??এসব চিন্তাগুলো বুকে যেয়ে লাগে পৃথার।।বুক ফেটে কান্না আসছে ওর।।হঠাৎ আয়ানের কপালে চোখ পড়ে.. কপালে রক্ত জমে আছে।।আঁতকে ওঠে পৃথা ওকে দেখে।। তাড়াতাড়ি ওকে ধরতে যায় আয়ান ভয়ে পিছিয়ে যাওয়া ধরে ফলে পিছনে ফুলের টবে বেজে আবার পরে যায়।।পৃথার গোলাপ ফুলের টবটাও ভেঙে যায়।।পৃথার টব নিয়ে মাথা ব্যথা নেই।।ওর তো আয়ানের জন্য কষ্ট হচ্ছে।।টব ভেঙে যাওয়ায় আয়ান আরও ভয় পেয়ে যায়।। এবার ও পৃথার দিকে তাকায়।।পৃথার দিকে তাকিয়ে জোরেই কান্না করে দেয়….
আায়ানঃআমি ইত্তে কলে কলি নি।। ত
সরি।।মেল না আমায়।। (ভয়ে মুখে হাত দিয়ে)
পৃথা আয়ানের এসব আচরণে হতভম্ব।। বাচ্চাটা এত ভয় পেয়ে আছে।।দ্রুত গিয়ে আয়ানকে জড়িয়ে ধরে কোলে নেয়।।
আয়ানকে কোলে নিয়ে রুমে আসে।।খাটে বসায়।। বাথরুম থেকে পানি আনে।।ব্যাগ থেকে জামা বের করে চেঞ্জ করে কারণ গায়ে হাত পায়ে অনেক কাদা লাগা ছিল।।পানি দিয়ে হাত পা মুছে দেয়।।ফাস্ট এইড এনে ব্যথায় লাগিয়ে দেয়।।ট্রে থেকে খাবার এনে খাবার খাওয়ায়।।ওষুধ খাইয়ে দেয়।।নিজে না খেয়ে খাবার নিয়ে নিচে চলে যায়।।দুধ গরম করে নিয়ে আসে রুমে।।আয়ানকে দুধ খাওয়ায়।।পৃথা আয়ানকে একটা শব্দও বলে নি।।আয়ান পৃথার মুখের দিকে তাকিয়ে বার বার ফুপিয়ে উঠেছিল।। ও কিছু সাহস করে বলেনি ভয়ে।।আয়ানকে দুধ খাইয়ে বেডে শুইয়ে দেয়।।আয়ান ভয়ে ভয়ে পৃথার সব কথা শুনে খেয়ে শুয়ে পড়ে।।পৃথা রুম পরিষ্কার করে রুমের লাইট অফ করে দেয়।।একটা কথাও ও আয়ানকে বলে নাই।।কি বলবে তাই বুঝতে পারছে না।।অশান্ত মনটাকে শান্ত করতে বারান্দায় চলে যায়।।।ওইদিকে আয়ান অন্ধকারে কাচুমাচু হয়ে শুয়ে আছে।। একা ভয়ে ঘুমাতেও পারছে না।। পৃথার হঠাৎ খেয়াল হয় ও রুমের লাইট অফ করে এসেছে।। তাই দ্রুত রুমে আয়ানের কাছে যায়।।আয়ান এতক্ষণে ভয়ে ঘুমিয়ে পড়ে।। পৃথা রুমে গিয়ে দেখে আয়ান কাচুমাচু দিয়ে ঘুমিয়ে আছে।। পৃথা আয়ানের পাশে বসে।। হাত বুলিয়ে দেয় ওর মাথায়।।আয়ানের মুখের দিকে তাকিয়ে অশান্ত মনটা শান্ত হয়।। চুমু খায় ওর কপালে।।তারপর বুকে টেনে ওর পাশে শুয়ে পরে।।
আয়ানকে বুকে নিয়েই পৃথা ঘুমিয়ে পড়ে।। রাতে আয়ানের বাথরুমে ধরে তাই ঘুম ভেঙে যায়।। সবসময় তো আকাশকে ডাকত।।কিন্তু এখন ভয়ে পৃথাকে ডাকতেও পারছে না।।একা কিভাবে যাবে তাই ভয়ে ভয়ে চারপাশে তাকায়।।ঘুটঘুটে অন্ধকার একা যাওয়া সম্ভব না।। একবার পৃথাকে ডাকতে যায় আবার ভয়ে ডাকে না।।চেপে রাখতে না পেরে বিছানা ভিজিয়ে ফেলে।।আয়ান তো এখন পারলে হাউমাউ করে কেঁদে দেয়।। এবার তো রক্ষে নাই।।অন্ধকারেই নেমে যায় কিছু খুজতে বিছানা মুছতে।।কি করবে তা ওর ছোট্ট মাথাতে আসছে না।আগে নিজের প্যান্টটা খুলে।।নিজের ব্যাগ খুঁজে প্যান্ট বের করে।।অন্ধকারে প্যান্ট না দেখে পরতে পারেনা।।এক পা ধুকিয়ে আরেক পা ধুকাতে গিয়ে পরে যায়।।আবার উঠে পরার চেষ্টা করে৷। এক ফাঁকে ই দুপা ভরে।।বিছানা মুছার জন্য কিছু খোঁজার চেষ্টা করে।।কিছু বুঝতে না পেরে টেবিলের ওপরের কাপড় টা নেয়ার জন্য টান দেয়।।টেবিলে একটা কাঁচের জগ ছিল যা ঝনঝন করে নিচে পড়ে ভেঙে যায়।। পৃথা লাফিয়ে ওঠে।।পাশে হাত দিয়ে দেখে আয়ান নেই।।ভয় পেয়ে যায়।।দ্রুত লাইট জ্বালিয়ে দেয়।।নিচে জগ ভাঙা আর আয়ান পাশে দাঁড়িয়ে কান্না করছে।।পৃথা দৌড়ে আয়ানকে কোলে নিয়ে নেয় যেন কাচ ভাঙা ওর পায়ে না লাগে।।
পৃথাঃবাবাই তোমার গায়ে লেখেছে?দেখি কান্না করছ কেন কোথায় লেগেছে??একা একা অন্ধকারে কেন উঠেছ??আমাকে ডাকতে সোনা আমার।।(আয়ানের সারা মুখে চুমু দিয়ে)
আয়ান এবার পৃথাকে জড়িয়ে কান্না করে দেয়।।।ওতো খুব ভয় পেয়েছে ভেবেছে পৃথা তো নিশ্চয়ই ওকে বকবে এবার।।এখানে এসেই সবকিছু এলোমেলো করে দিল।।
পৃথা আয়ানের মাথাশ হাত বুলিয়ে বলে..
পৃথাঃকি হয়েছে বাবাই? তুমি মাম্মামকে বলো।।মাম্মাম কিছু বলবে না।।আমি তোমাকে রাগ করব না সোনা।।
আয়ান শান্ত হয়।।বলে…
আয়ানঃসলি মাম্মাম আমি তুমাল বাসায় এতে সব ভেঙে ফেলতি।।তুমাল গাত ফেলে দিতি।।অন্ধকারে একা ভয়ে বাথলুমে যেতে না পেলে আমি তুমাল বিতানাও ভিজিয়ে ফেলতি।।এখন তুমাল জগও ভেঙে ফেলতি।।সলি।।আমি তুমাল সব ভেঙে ফেলতি।।আমি অনেক খালাপ তেলে তাই না??তুমি আমাকে এখন আল ভালুও বাতবা না তাই না??আমি খুব পতা।।কেউ ভালুবাতবে না আমাকে।।(পৃথাকে জড়িয়ে কান্না করে)
পৃথা আয়ানকে নিয়ে খাটে বসে…কোলের উপরে বসিয়ে বলে..
পৃথাঃবাবাই তুমি একটুও পচা না।।তুমি আমার লক্ষী সোনা।।কে বলেছে কেউ তোমাকে ভালোবাসে না??সবাই তোমাকে খুব খুব ভালোবাসে।।আমিও তোমাকে এত্ত গুলা ভালোবাসি।।আমি কি তোমার সাথে রাগ করতে পারি??আয়ান না তার মাম্মামের বাবু।।।মাম্মাম রা কখনও তার বাবুদের রাগ করে না।।কখনও তাদের মারে না।।।মাম্মামরা সব সময় বাবুদের আদর করে।।আয়ানের মাম্মাম ও আয়ানকে মারবে না।রাগ করবে না।। শুধু অনেক গুলো আদর করবে।।
আয়ান কান্না মুখেই হেসে দিয়ে…
আয়ানঃসত্তি মাম্মাম?? আমাকে তুমি লাগ কলবে না??
পৃথাঃরাগ তো করবই(শুনে আয়ানের হাসি হাসি মুখটা মলিন হয়ে গেল) কারণ তুমি মাম্মামকে একটুও ভালোবাস না।।তুমি ভরসা কর না তোমার মাম্মামকে।। তাই তো ভেবেছ মাম্মাম তোমাকে মারবে।।জান তোমার মাম্মাম অনেক কষ্ট পেয়েছে কারন আয়ান তো তার মাম্মামকে ভালোই বাসে না।।
আয়ানঃকে বলতে।। আমি তুমাকে অনেক ভালুবাতি মাম্মাম। এত্তো গুলা ভালুবাতি।।আমি তো তুমাকে ভলতাও কলি।।আমি তো শুদু ভয় পেয়ে গেতিলাম। সলি মাম্মাম।। আয়ান তুমাকে অনেক ভালুবাতে।।আলাবু মাম্মাম (পৃথার গালে চুমু দিয়ে জড়িয়ে ধরে)
পৃথাও আয়ানকে বুকে জড়িয়ে ধরে বলে…
পৃথাঃআলাবু টু সোনা।।কখনো মাম্মামের কাছ থেকে কিছু লুকোবে না।। কোনো ভুল করলেও নিজে থেকে এসে সব মাম্মামকে বলবে।।মাম্মাম রাগ করলেও মাম্মামকে জড়িয়ে ধরে সরি বলবে দেখবে মাম্মাম কিছু বলবে না বরং অনেক গুলো আদর করবে।।ভয় পেলে সবসময় আগে মাম্মাম কে ডাকবে কেমন??মনে থাকবে তো সব??
আয়ানঃথাকবে সব মনে থাকবে।।আয়ান তাল মাম্মামেল সব কথা মনে লাখে।।কালন আয়ান লাভস হাল মাম্মাম সো মাস।।।
পৃথাঃমাম্মাম অলসো লাভস হার আয়ান। (কপালে চুমু দিয়ে)
আয়ানঃমাম্মাম আমি তো বিতানা ভিজিয়ে দিতি।।এখন কি হবে??
পৃথাঃমাম্মাম আছে না মাম্মাম সব ঠিক করে দিবে। তুমি দাড়াও এখানে।।
আয়ানকে দাঁড়া করিয়ে পৃথা বিছানার সব চেঞ্জ করে সব ঠিক করে আয়ানকে ঘুমুতে ডাক দেয়।।আয়ান দৌড়ে আসতে গিয়ে এক ফাঁকে দুই পা থাকার কারনে পড়ে যায়।। মায়ের দিকে তাকিয়ে ফুপিয়ে ওঠে।। পৃথা দ্রুত গিয়ে ছেলেকে কোলে নেয়।।প্যান্ট ঠিক করে পড়িয়ে দেয়।। আয়ানকে বুকের উপর শুইয়ে দেয়।। মাথায় হাত বুলিয়ে ঘুম পারায়।।বুকের উপর নিয়েই দুজনে ঘুমিয়ে পড়ে।।
।।
।।
ওদিকে আকাশের ঘুম হয় না।।সবসময় তো আয়ানকে নিয়েই ঘুমানোর অভ্যেস।।পৃথার ছবির সামনে দাঁড়িয়ে…
আকাশঃকবে সব ঠিক হবে পৃথা??আমরা কি আর এক হতে পারব না??আমি তো সবসময় তোমার সাথেই থাকার স্বপ্ন দেখেছি।। আমাদের ছোট্ট একটা সংসার হবে তারই তো স্বপ্ন ছিল।। আয়ানকে মেনে নিলে আমাকে কি মেনে নিবে?? আবার কি ফিরে আসবে আমার এই বুকটায়??তোমার অপেক্ষায় যে আজও দিন গুনছি।।
আকাশের চোখের কোনে পানি জমে।।।এমনই এক নির্ঘুম রাত পার করে সে।।।
।।
।।
সকালে পৃথার ঘুম ভেঙে দেখে আয়ান ওর বুকের উপর গুটিয়ে ঘুমিয়ে আছে।। কতদিন পর আজ পৃথার এক শান্তির ঘুম হল।।আজ নিজেকে তার সৌভাগ্যবান মনে হচ্ছে।। তার এক সন্তানকে হারিয়ে আরেক জনকে পেয়েছে।।
আয়ানের মাথায় হাত বুলিয়ে আয়ানকে ডাকতে থাকে।।আয়ান চোখ খুলে তার মাম্মামকে দেখতে পেয়ে তার গলা জড়িয়ে ধরে।।
আয়ানঃগুত মনলিং মাম্মাম।।
পৃথাঃশুভ সকাল বাবাই।।ঘুম কেমন হলো?
আয়ানঃঅনেক ভালু।।আমি তো ভালু ভালু স্বপ্ন ও দেখেতি।।।
পৃথাঃতাই নাকি?
আায়নঃঅঅঅঅ…সব গুলোতে আমি তুমি আল পাপ্পা তিলাম।।মাম্মাম আজকে আমলা ঘুলতে যাবা আমাল স্বপ্নেল মতো।।আমি তুমি আল পাপ্পা।।
পৃথার মুখটা মলিন হয়ে যায়।। আকাশকে সে চায় না।। মাফ করতে পারবে না সে।।কিন্তু ও তো আয়ানের বাবা।।আয়ানকে কাছে রাখতে চাইলে তো আকাশও থাকবে তার পাশে।।এখন আর সে আয়ানকে সে হারাতে চায় না তাতে আকাশের আশেপাশে থাকাটাতে তার কিছু আসে যায় না।।তার মেইন প্রায়োরিটি আয়ান।।আয়ানকে নিয়েই বাঁচতে চায় আবার।।আর কাউকে চাই না তার।আয়ানের ডাকে পৃথার ভাবনায় ছেদ পড়ে।।
আয়ানঃমাম্মাম ও মাম্মাম বলো না ঘুলতে যাবে আজ আমলা।।
পৃথাঃওকে সোনা যাব।।
আয়ানঃইয়ে।।আমলা ঘুলতে যাব।।
পৃথাঃবাবা একটা প্রমিজ করতে হবে আগে আমাকে তাইলে যাব।।
আয়ানঃকি প্রমিত মাম্মাম?? আয়ান তুমাকে সব প্রমিত কলবে।।
পৃথাঃপ্রমিজ করতে হবে যে তুমি তোমার মাম্মামকে ছেড়ে কখনো যাবে না।। সবসময় মাম্মামের সাথে থাকবে।।প্রমিজ?
আয়ানঃ আমি তো সবসময় তুমাল সাতেই থাকতে চাই মাম্মাম।। প্রমিত আয়ান সবসময় তাল মাম্মামেল সাতে থাকবে।।তুমাকে তেলে কোতাও যাবে না।।
পৃথা আয়ানের সারা মুখে চুমু খেয়ে জড়িয়ে ধরে।।
পৃথাঃআজ আয়ানকে তার মাম্মাম দাঁত ব্রাশ করে গোসল করিয়ে দিবে।।।
আয়ানঃইয়ে।।।।।।।।।।
আয়ানকে কোলে করে বাথরুমে গিয়ে দাত ব্রাশ করিয়ে দেয়।।গোসল করিয়ে বেডে বসিয়ে পৃথা নিজেও ফ্রেশ হয়।।নিচে নেমে নাস্তা বানায় মায়ের রুমে যায়।।মাকে নাস্তা দিয়ে পৃথা আর আয়ানের জন্য নাস্তা নিয়ে উপরে যায়৷ আয়ানকে নিজ হাতে খাইয়ে দেয়।।নিজেও খায়।।আয়ানকে রেডি করে নিজেও রেডি হয়।।আজ পৃথা শাড়ী পড়েছে।। নিজেকে তার এখন মা মা মনে হয়।।। আয়ানের মা সে।।আয়ান পৃথাকে দেখে বলল..
আায়ানঃমাম্মাম লুক সো পিতি।।
পৃথাঃতাই নাকি??
আয়ানঃঅঅঅঅঅ….
পৃথাঃদেখতে হবে না আয়ানের মাম্মাম।।।(গাল টেনে)
আয়ান হেসে দেয়।।।
সব গুছিয়ে আয়ানকে নিয়ে বেরিয়ে পড়ে হসপিটালের উদ্দেশ্যে।। হসপিটাল গিয়ে আকাশকে নিয়ে বের হবে ঘুরতে।।নিশ্চয়ই ছেলের কথা ফেলবে না।।আজ অনেক খুশি পৃথা।।কতদিন পর তার কপালে সুখ এলো।।
।।
।।
আয়ানকে নিয়ে আকাশের কেবিনে ডুকে পৃথা যেন থমকে যায়।৷ এ কাকে দেখছে সে???
পৃথার মুখ থেকে বের হয়…ড.ডায়না???
আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখে সে প্রচন্ড রেগে আছে।।।ডায়না তাদের দেখেই দৌড়ে এসে আয়ানকে জড়িয়ে ধরে…
ডায়নাঃমাই কিউটি পাই।।কতটা বড় হয়েছে।।হেই আয়ান কেমন আছো ডিয়ার??আমার বাচ্চাটা।।।চিনতে পারছ আমাকে??হেই আম ইউর মম ডিয়ার।।।
পৃথার সব স্বপ্ন যেন এক নিমিষেই শেষ হয়ে গেল।।এখন কি হবে?ও কি হারিয়ে ফেলবে তার আয়ানকে??আবার তার বুকটা খালি হয়ে যাবে??আবার চলে যাবে তার সন্তান?? কেন এসেছিল তাহলে এই কয়দিনের জন্য??ভালোই তো ছিল এতদিন একা।।আশার আলো হয়ে এসে আবার কেন কাঁদিয়ে চলে যাবে??তার কপালে কেন সন্তানের সুখ নেই??
পৃথার ভাবনায় ছেদ পরে আয়ানের কথায়।।
আয়ানঃনো তুমি আমাল মাম্মাম নও।।আমি তুমাল বাবু নই।।আমাল মাম্মাম এই(পৃথার হাত ধরে)
ডায়নাঃনো ও তোমার মাম্মাম নয় ডিয়ার।।আম ইউর মম।কল মি মম বাবুটা।।
আয়ানঃবলতি নাহ।।।আমি আমাল মাম্মামেল বাবু।।আমাল মাম্মামকে আমি মাম্মাম ডাকব।।তাই না মাম্মাম??
পৃথাকে আয়ানকে জড়িয়ে ধরে।।
পৃথাঃহ্যা বাবাই আমিই তুমার মাম্মাম।। আয়ানের মাম্মাম।।
ডায়না এতে প্রচন্ড ক্ষেপে যায়।।।পৃথার কাছ থেকে ছাড়িয়ে আয়ানের হাত ধরে টান দিয়ে বলে…
ডায়নাঃবলেছি না।।।আমি তোমার মা।।এক কথা কয়বার বলব ড্যামেট????(কাধ ঝাকিয়ে)
আয়ান ভয় পেয়ে যায়।। ডায়নাকে ধাক্কা মেরে পৃথার পিছনে গিয়ে ওর আঁচলের নিচে লুকায়।।
।।
।।
আকাশ এতক্ষন চুপ ছিলো।। প্রচন্ড রেগে আছে।।আয়ানের সাথে মিস বিহেব করার জন্য আর চুপ থাকতে পারল না…
আকাশঃকেন এসেছ তুমি???কি চাই আমাদের কাছ থেকে তোমার???সব তো ছেড়ে চলেই গেছিলা।। এখন আবার কি??
ডায়নাঃভুলে যেও না আমি আয়ানের মা।।এখানে আমার সব কিছু আছে।।
আকাশঃও তাই নাকি।।ফর ইউর কাইন্ড ইনফরমেশন আমার আয়ানের মা হল পৃথা।।
।।
পৃথা অবাক হয়ে আকাশের দিকে তাকায়।। আকাশও পৃথার চোখের ভাষা বুঝতে পারে।।পৃথার কাছে এসে জিজ্ঞেস করে..
আকাশঃতাই না পৃথা??আমার আয়ানের মা।।
পৃথার চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়ে।। সে শুধু মাথা নাড়ায়।।যার মানে সেই আয়ানের মা।।আয়ানের মাম্মাম শুধু সে আর কেউ না।।
।।।
।।।
।।।
চলবে…..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *