অজানা সম্পর্ক !! Part- 04
।।
সকালবেলা পৃথা ঘুম থেকে উঠে ফজরের নামাজ আদায় কে দেখল ওর মা কোরআন তিলাওয়াত করছেন।।পৃথা গিয়ে সকালের নাস্তা বানালো।।সামনের বাগানটায় কতদিন ধরে যাওয়া হয়না তাই গিয়ে গাছগুলোতে পানি দিতে গেল।।গাছে পানি দিয়ে এসে মায়ের সাথে নাস্তা করে মেডিকেলের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম।। জানি আকাশের সাথে এই চলার পথে অনেক দেখা হবে তাই নিজেকে শক্ত করতে হবে।।আর পিছনে ফিরে তাকাব না।। এবার মা আর আমার কথা ভাবব।।নিজের জন্য স্বার্থপর হব।।
।।
।।
আকাশ সকালে ঘুম থেকে উঠে নিচে নেমে বুয়াকে নাস্তা বানাতে বলে।।ওর আর বাবার জন্য কফি করে।।দুজনে গার্ডেনে বসে কফি খায়।।হঠাৎ আকাশের বাবা ছেলেকে বললেন…
শুনলাম কাল পৃথা মা এসেছিল।।একবারের জন্যও আমার সাথে দেখা করল না।।করবেই বা কেন?আমি তো অপরাধী ওর কাছে।।নিজের ছেলের স্বার্থই দেখলাম ।। মেয়ে করেই তো আনছিলাম ওকে।।স্বার্থের সময় তা ভুলে গেলাম।।আয়ানটাও সারাদিন মা মা করে।।পৃথারও বা দোষ কি?অন্যের ছেলেকে কেন ও মেনে নিবে তাও তার স্বামীর যা তাকে ধোকা দিয়েছে।।আয়ান অবুঝ কে কিভাবে বুঝাই? যে ওর মা সে তাকে ছেড়ে গেছে নিজের স্বার্থের কারনে।।আর যাকে পাওয়ার আশায় বুক বেধে আছে সে তো তার কেউনা।।এখন কি করে সব সামলাবি বাবা?এতদিন না হয় আয়ানকে মিথ্যে আশা দিয়ে পৃথার কথা বুঝিয়েছি এখন তো পৃথাকে দেখেছে আবার ওর কাছে যেতে চাবে।।তখন কি করবি??পৃথা কি ওকে মেনে নিবে??(চোখের জল মুছে)
আকাশঃজানি আমি।।
উঠে চলে যায়।।আকাশ নিজেই কিছু না জানে না সেখানে বাবাকে কি বলবে।।এসব ভাবতে ভাবতে রুমে এসে আয়ানকে ঘুম থেকে ডাকে…
আকাশঃবাবা আয়ান ওঠো। সকাল হয়েছে।।
আয়ান কতক্ষণ আড়মোড়া ভেঙ্গে পাশ ফিরে শুয়ে বলে…
আয়ানঃপাপ্পা ফাইপ মিনিট না।। আমাল গুম কমপিলিট না।।
আকাশঃনো মোর টাইম।। গেট আপ।।পাপ্পা কে হসপিটাল যেতে হবে আর তোমাকেও আমার সাথে নিয়ে যাব সো হারি আপ।।
আয়ান তা শুনে এক লাফে উঠে গেল…
আয়ানঃইয়ে….আমিও যাব।।।তল তল।।
আকাশঃআগে ব্রাশ কর।।যাও ওয়াশরুমে তোমার ব্রাশ নিয়ে আসি।।
আয়ানকে ফ্রেশ করে খাইয়ে রেডি করে আাকশ ও রেডি হয়।।আাকশ রেডি হয়ে এসে দেখে আায়ান পৃথার ছবির সাথে কথা বলছে..
আয়ানঃগুত মনলিং মাম্মাম।।দেখো আমি লেডি হয়ে পাপ্পার সাতে যাচ্ছি।। আমি সকালে খাবাল ও খেয়েছি।।পাপ্পার সব কথাও শুয়েছি।।তুমি কিন্তু তালাতালি আমাল কাতে তলে আততা।।
আকাশ আয়ানকে ডাক দিল..
আয়ানঃওকে মাম্মাম।। বাই।।আলাবু(পৃথার ছবিতে চুমু দিয়ে)
আকাশ আর আয়ান হসপিটালের জন্য বের হয়ে গেল।।।।
কে জানে আজ ওদের তিনজনের ভাগ্যে কি আছে???
পৃথা হসপিটালে এসে ক্লাস করে।।নতুন ক্লাস জুনিয়রদের সাথে করে।।আগের স্টুডেন্ট হওয়ায় অনেক টিচার পরিচিত আর ওর অনেক ফ্রেন্ড ও টিচার হিসেবে জয়েন করেছে।। রাজও ওদের ক্লাস নিবে।।জুনিয়রদের সাথে ক্লাস করলেও ও অনেকের সাথে পরিচিত হয়ে ফ্রেন্ডশিপ করে নেয়।। আকাশ পৃথাদের প্রিন্সিপাল আর সাথে হসপিটালের ওনার।।পৃথা এসম্পর্কে অবগত।। নিজেকে বুঝিয়ে শক্ত করে নেয় কারণ জীবন তো তার জন্য থেমে থাকবে না।।সবসময় সব পরিস্থিতিতে মানিয়ে চলতে হবে।।।
।।
।।
আকাশ আয়ানকে নিয়ে হসপিটালে এসে সোজা নিজের কেবিনে চলে যায়।।আয়ানকে পাশে বসিয়ে আজকের সিডিউল দেখতে থাকে।।টুকটাক কাজ করে।।দেন পিএকে ডেকে সার্জারী গুলোর টাইম জানে।।আয়ান চুপচাপ বসে আইপ্যাডে গেইম খেলছে।।কিছুক্ষণ পর আকাশের একটা সার্জারী থাকে তাই আয়ানকে কিডস সেকশনে খেলত দিয়ে আসে যেখানে ডাক্তারদের বাচ্চাদের জন্য খেলার ব্যবস্থা রয়েছে।।যে মহিলারা ডাক্তার তারা তাদের ছোটো ছেলে মেয়েকে অনেক সময় নিয়ে আসে।।তখন তারা এখানে খেলতে রেখে কাজে যায়।।অনেক স্টাফ আর নার্চরাও তাদের বাচ্চাদের নিয়ে আসে।। আকাশ আয়ানকে রেখে গার্ড কে বলে সার্জারীতে চলে যায়।।আয়ান বাকি বাচ্চাদের সাথে খেলা করতে থাকে।।
।।
।।
পৃথা ক্লাস করে বের হলে হঠাৎ ওর এক পুরনো ফ্রেন্ডের সাথে দেখা হয়ে যায়…
মিশাঃআরে পৃথু।।কতদিন পর।। কি খবর?(জড়িয়ে)
পৃথাঃওহহহ।।।মিশু।।এইতো ভালো। তোর খবর কি??
মিশুঃএইতো আছিরে।সংসার আর হসপিটাল নিয়ে আছি আর কি।।বাসায় ছেলেকে সামলাও আর এখানে রোগী।।
পৃথা হেসে দেয়..তোর ছেলে আছে নাকি?আর আমিই জানি না।।অবশ্য জানবও বা কীভাবে নিজেকে নিয়েই তো ছিলাম এতদিন।।ওসব বাদ দে ছেলের পিক দেখা রে।।
মিশুঃপিক কেন দেখবি?স্বয়ং সামনে দেখে নে।।আয় দেখাচ্ছি তোকে।। কিডস সেকশনে খেলত দিয়ে এসেছি চল দেখবি।।কত পাকনা হয়েছে আমার ছেলে।।
পৃথাঃওরে তাই নাকি।।কত বছর তোর ছেলের?
মিশাঃতিন বছর ছয় মাস।।
পৃথাঃওহ।।অনেক বড় হয়েছে(আমার বেবি বেঁচে থাকলে আজ এমনই হত মনে মনে বলে)চল যাই।।
।।
।।
আয়ান বাচ্চাদের সাথে খেলতে থাকে।।দেখে অনেক বাচ্চার মা এসে ওদের দিয়ে যায় আদর করে যায়।।অনেকের মা ওদের নিতে আসে।খাবার খাইয়ে দেয়।।কোলে নিয়ে আদর করে।।এসব দেখে ওর মনটা খারাপ হয়ে যায়।।ওর মাম্মাম কেন ওর সাথে আসে না?কেন ওকে কোলে নিয়ে আদর করে না?এসব ভেবে ওর মনটা খারাপ হয়ে যায় তাই ও খেলা বাদ দিয়ে পাশে বেঞ্চে বসে চুপচাপ মন খারাপ করে বসে অন্যদের তাদের মায়ের সাথে দেখতে থাকে।।
।।
।।
মিশা আর পৃথা কিডস সেকশনে যায়।।মিশা ওর ছেলেকে দেখে ডাক দেয়…
মিশাঃসাইফ…বাবা এদিকে আস।।
সাইফ ওর মায়ের ডাকে দৌড়ে এসে ওর মাকে জড়িয়ে ধরে।।মিশাও হাঁটু গেড়ে ওর ছেলের সামনে বসে..
মিশাঃদেখেছ কত ঘেমে গেছ?দৌড়াদৌড়ি কি বেশি করেছ নাকি?(পরম যত্নে বাচ্চার ঘাম মুছিয়ে।। কপালে এক চুমু আঁকে) তোমাকে এক আন্টির সাথে দেখা করাই আসো।।
পৃথার মনটাও খারাপ হয়ে যায় এসব দেখে।। আজ ওর তো এমন বেবী থাকত।।ওকে এমন করে জড়িয়ে ধরত।।নাহ নিজেকে সামলে নেয়।।
মিশা ওর ছেলেকে নিয়ে পৃথার কাছে আসে।।
মিশাঃসাইফ বাবা এই তোমার এক আন্টি।হ্যালো বলো আন্টিকে।।
সাইফঃহেলো আনতি।।
পৃথাও হাঁটু গেড়ে সাইফের সামনে বসে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়..
পৃথাঃহ্যালো বাবাই।।তোমার নাম কি সোনা???
সাইফঃসাইফ(হেসে দেয়)
পৃথাঃখুব সুন্দর নাম তো বাবাই(কপালে চুমু খায়)
সাইফও চুমু খায় পৃথার গালে।।তা দেখে পৃথা আর মিশা দুজনেই হেসে দেয়।।পৃথা সাইফকে জড়িয়ে ধরে।।
।।
।।
আয়ান হঠাৎ পৃথাকে দেখে।। হাসি হাসি মুখ করে পৃথার কাছে যাওয়া ধরে তখন সাইফকে পৃথার আদর করা দেখে ফেলে।।হঠাৎ চোখ মুখ লাল করে ফুপিয়ে ওঠে।। চোখে পানি চিকচিক করে ওর মাম্মাম অন্য কাউকে আদর করে তা দেখে।।ওকে আদর না করে অন্য কাউকে চুমু খায়।।ওকে জড়িয়ে না ধরে অন্য কাউকে কেন ধরবে।।ও দৌড়ে আসে।। এসেই সাইফকে পৃথার কাছ থেকে ধাক্কা দেয় আর বলতে থাকে..
আয়ানঃএই তুই আমাল মাম্মাম কে কেন ধলেছিস।।আমাল মাম্মাম কেন আদল কলবে তোকে।।আমি মাম্মামেল বাবু।।তোকে না আমাকে আদল কলবে(বলেই পৃথাকে জড়িয়ে ধরে)
হঠাৎ এসব হওয়ায় পৃথা আর মিশা কিছু বুঝতে পারেনি।মিশা ওর ছেলেকে ধরে।।পৃথা আয়ানের দিকে তাকিয়ে দেখে আয়ানে চোখ মুখ লাল। চোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে।।বুকটা খা খা করে ওঠে পৃথার।।মিশা হঠাৎ বলে ওঠে
মিশাঃপৃথা কে ও?তোর কি হয়?তোকে মা ডাকছে কেন??
পৃথা নিজেকে সামলে বলে..
পৃথাঃচিনি না তেমন কিন্তু আমাদের প্রিন্সিপালের ছেলে কাল পার্টিতে দেখেছিলাম।।(আয়ানকে ছাড়িয়ে নিজের থেকে)
মিশা আয়ানের মাথায় হাত দিয়ে বলে
মিশাঃবাবা কি নাম তোমার? তুমি কার কার সাথে এসেছ? তোমার বাবা কোথায়?ওকে কেন মা বলছ??
আয়ানঃ(মিশার হাত ঝেড়ে চিল্লিয়ে বলে)আমাল মাম্মামকে মাম্মাম বলব না তো কি বলব?ওই তেলে আমাল মাম্মাম কে আদল কেন কলেছে?(আয়ান সাইফকে আবার মারতে যায়)
পৃথা এতক্ষণ আয়ানকে ইগনোর করতে চাইলেও এবার সাইফকে মারতে গেলে এবার ও খুব রেগে যায়।।আয়ান সাইফকে মারার আগেই পৃথা আয়ানের হাত ধরে ফেলে।।মিশাকে বলে তোর সাথে পরে কথা বলছি।। আয়ানের হাত ধরে টানতে টানতে আয়ানের রুমের দিকে যায়।।পৃথা রাগের মাথায় যে আয়ানের হাত ধরেছে তা ওর খেয়াল নেই ওর মাথায় শুধু এক জিনিস চলছে কেন এই ছেলে ওর পিছনে আসে বারবার কেন ওকে মাম্মাম ডাকে।।পৃথা তো ওর কেউ না।।ও তো ডায়নার সন্তান।। ওদের জন্যইতো আকাশ পৃথাকে ছেড়েছে।।এখন কেন ওদের ছেলে পৃথার লাইফে এসে সব এলোমেলো করে দিচ্ছে কেন পৃথার শূন্য বুকটা খা খা করে এই ছেলেকে দেখে।।নাহ আহ আজকে এর বিহিত করতেই হবে।।আয়ানের হাত জোড়ে ধরায় আয়ান ব্যথা পায় হাতে।। আয়ান ব্যথায় বলতে থাকে..
আয়ানঃমাম্মাম আহ মাম্মাম লাগছে তো।।
পৃথা যেন শুনতেই পাচ্ছে না।।(ও যেন আজ ওর নিজের মধ্যে নেই)
আকাশের রুমে এসে আয়ানের হাত ছেড়ে দেয়।।আয়ান হাত ধরে নিচে বসে পড়ে।। নিচে বসেই ফুপিয়ে কান্না করে দেয়।।আকাশকে রুমে না দেখে মেজাজ আরও খারাপ হয়ে যায়… আয়ানের সামনে ঝুঁকে ওকে জিজ্ঞেস করে…
পৃথাঃএই ছেলে তোর বাপ কই হ্যা?তোকে এমন একা ছেড়ে দেয়।। আর তুই যাকে পাস তাকেই মাম্মাম মাম্মাম করিস..
পৃথার এমন জোরে কথা বলায় আয়ান ভয়ে জোরে কান্না করে দেয়।
আয়ানঃম..মা..মাম্মাম ভয় লাগে তো(পৃথার হাত ধরে)
পৃথা হাত ঝেড়ে বলে…
পৃথাঃওই চুপ।।আর কত বলব আমি তোর মা নই।।(চিল্লেয়ে)
হঠাৎ আকাশ রুমে এসে দেখে পৃথা আয়ানের সাথে চিল্লিয়ে কথা বলছে আর আয়ান ভয়ে কাচুমাচু দিয়ে কান্না করছে।।
আকাশ রেগে বলে…
আকাশঃপৃথা……..তুমি কি হ্যা তোমার কি কোনো সেন্স নেই??এতটুকু বাচ্চার সাথে চিল্লিয়ে কথা বলছো??দেখছো না ও কত ভয় পাচ্ছে?কি করছে ও??
পৃথাঃহ্যা আমার কোনো সেন্স নেই।।আমি কেন দেখতে যাব তোর ছেলেকে?ওই তোর ছেলে কেন আমার পিছনে মাম্মাম মাম্মাম করে??ওই ছেলেকে সামলে রাখতে পারস না??আমার পিছনে কেন আসে??আমি ওর মা নই এইটা কেন ওকে বলিস না।।তোর ছেলেকে বলে দিবি যেন আমার পিছনে পিছনে না আসে।।আমার সাথে কোনো সম্পর্ক নেই না কখনো হবে।।ওর মায়ের কাছে যায় না কেন ও??আমার লাইফ থেকে চলে সেই কত বছর আগে গেসিছ আবার কেন আসলি??নিজের সন্তান যখন মারা গেল একবারও তো এলি না।।কেনন??ও তো তোর অংশ ছিল।।তখন তো তোর খোঁজ ছিল না।।(চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়ল) এখন কেন এসেছিস তাও এই ছেলেকে নিয়ে৷।।আর খেলতে দিব না কাউকে আমাকে নিয়ে।।আর কারও প্রতি মায়া জন্মাতে দিবনা কাউকে।।
পৃথা আকাশকে ছেড়ে আয়ানের কাছে গিয়ে বলে….
পৃথাঃএই শুনেছিস তো আমি তোর মা নই তো নেক্সট টাইম আমার সামনে আসবি না কিন্তু বলে দিলাম।।
পৃথা রাগে রুম থেকে বেরিয়ে যায়।।কেন কেন বলে চিল্লাতে থাকে।।হঠাৎ হাঁটু গেড়ে রাস্তায় বসে পড়ে…জোড়ে জোড়ে কান্না করতে থাকে যেন ওর অনেক প্রিয় জিনিস কে আঘাত করে ফেলছে।। চিল্লাতে চিল্লাতে কান্না করে দেয়।।
পৃথাঃহে আল্লাহ কেন?কেন করলে আমার সাথে এমন? সব তো নিয়ে গেছ আবার কেন এত কষ্ট।।আয়ানের জন্য কেন এই বুকটা পুড়ে?? ও তো আমার কেউনা।।আমার বাচ্চা তো সেই কত আগেই কেড়ে নিলা।।তো ও কেন আমার উপর অধিকার খাটায়।।ও আকাশের আর ডায়নার ছেলে।।আমাকে কেন মা ডাকে?কিছু বুঝতে পারছি না।। সব কেন এত এলোমেলো লাগছে???আমাদের এই এলোমেলো জীবনে কেন আয়ান এত কষ্ট পাচ্ছে???।। ছোট্ট বাচ্চাটার চোখে তাকালে কত মায়া কাজ করে।।কত ভালোবাসার কাাঙাল চোখদুটো।।
এসব বলেই পৃথা পাগলের মতো চিল্লিয়ে কান্না করতে থাকে।।।।।
।।
।।
আকাশ পৃথার ব্যবহারে অবাক।। এ কোন পৃথাকে দেখছে সে??এত কষ্ট ওর মনে ভরে রেখেছিল?? কত কষ্ট পেলে মানুষ এসব বলতে পারে?? এসব ভাবতে ভাবতে আয়ানের দিকে তাকিয়ে দেখে আয়ান নিচে পড়ে আছে।।ওর কোনো হুঁশ নেই।।আকাশ দ্রুত ওর পালস চেক করে।।বেশি ভয় আর শকে ও সেন্সলেস হয়ে পড়ে।।দ্রুত ওকে কোলে তুলে ওয়ার্ডে নিয়ে যায়।।
আয়ানকে হসপিটালের ওয়ার্ডে শিফট করা হয়।।আকাশ নিজেই ওর চেক-আপ করে।।ওর সাথে চিল্লাচিল্লি করার কারনে অতিরিক্ত মেন্টাল প্রেশারে ও সেন্সলেস হয়ে পড়ে।। আয়ানের ছোটবেলা থেকেই এই প্রবলেম।।আকাশ এবার কোনো রিক্স নিল না।।আয়ানের ফুল বডি এক্সামিন করল।।নার্সকে বলে রিপোর্ট বানাতে দেয়।।আয়ানকে ঘুমের ইনজাকশন দিয়ে সেলাইন পুশ করে আকাশ ওর পাশে বসে থাকে।।আয়ান গভীর ঘুমে মগ্ন।।আকাশ পাশে বসে কান্না করে বলতে থাকে..
আকাশঃসব আমার দোষ।।আমার জন্যই আয়ানের এ অবস্থা।। আমার এক ভুল এলোমেলো করে দিল এতগুলো জীবন।।পৃথাকে কত কষ্ট দিয়েছি।। আমার তো আয়ান আছে ওর তো সেই সম্বলটুকুও নেই।।আমি তো এক বাচ্চা নিয়ে সুখে থাকি আর আমার সেই মৃত বাচ্চা যাকে এক নজরও দেখতে পারলাম না।।পৃথাতো সেই বাচ্চার কষ্ট বুকে চেপে এখনও বসে আছে।। আল্লাহ সব ঠিক করে দেও যেন আমার আয়ানের জীবনে সব ঠিক হয়ে যায় সাথে আমার পৃথারও।।
হঠাৎ আয়ান ঘুমের ঘোরে মাম্মাম মাম্মাম করতে থাকে।।আকাশের যেন এসব সহ্য হচ্ছে না।। তার তো কিছু করারও নেই।।আজ সে বড় অসহায়।।
।।
।।
পৃথার হঠাৎ ঘুম ভেঙে যায় যেন কাছের কেউ অনেক কষ্টে আছে।।ওকে যেন বার বার ডাকছে।।মনটা ছটফট করছে।।মনকে স্থির করার জন্য ও তাহাজ্জুদের নামাজ পড়ে কতক্ষণ কান্নাকাটি করে।।
।।
।।
পরদিন সকালে আয়ানের ঘুম ভাঙে হসপিটালে।।আয়ান দুর্বল ক্লান্ত চোখে তাকিয়ে আকাশকে ওর পাশে দেখে।।ক্লান্ত কন্ঠে আকাশকে ডাকে..
আয়ানঃপাপ্পা…
আকাশঃজ্বি বাবাই (আকাশ আয়ানের পাশেই বসে তন্দ্রার মতো পড়েছে মাত্র) কেমন লাগছে??
আয়ানঃ মাম খাব।।
আকাশ আয়ানকে পানি খাইয়ে হাত বুলিয়ে দেয়।। নার্সকে দিয়ে ওষুধ আর নাস্তা আনায়।।
আয়ানঃমাম্মাম আমাকে ভালবাতে নাহ তাই না পাপ্পা?? (অসহায় চোখে)
আকাশঃকে বলেছে বাবাই মাম্মাম তোমাকে অনেক ভালোবাসে।।(মাথায় হাত বুলিয়ে)
আয়ান ঃকাল বলেতে যেন আমি মাম্মামকে মাম্মাম না বলি।।মাম্মাম আমাকে বকেতে।।আমাল হাতেও ব্যথা পাইতি তাও আমাকে আদল কলে নাই।।ওই বাচ্চা তাকে এত্ত গুলা আদল কলছে।।চুমুও দিতে।।আমাকে একতুও দেয়নি।।আমি কাল লাতে মাম্মাম কে সপনে দেকতি ওই বাবুতাকে নিয়ে অনেক আদল কলে আমাকে কলে না।।(চোখ মুখ লাল করে ফুপিয়ে কান্না করে)
আকাশ ঃ(কি বলবে কিছু বুঝছে না।।ছোট ছেলেটার মনে তো অনেক প্রশ্ন যার উত্তর নেই ওর কাছে।।মিথ্যে আশা আর কত দিব।।পৃথারও বা কি করার এখানে??ও বা কেন আয়ানের সাথে সম্পর্কে জড়াবে।।আয়ান তো ওর কেউ না।।নিজের ভাবনায় ছেদ পড়ে আয়ানের হাত ঝাঁকানিতে।।)
আয়ানঃবলোনা পাপ্পা।।
আকাশঃনো মোর কথা।।চল খাবার খাও।।মেডিসিন খেতে হবে হারি আপ।।
আয়ানঃনাহ আমি খাব না।।আমাল মাম্মাম কে চাই মানে চাই।।মাম্মামেল হাতে খাব।।(চিল্লিয়ে)
আকাশঃতোমার মাম্মাম এখানে নেই।। আমি খাইয়ে দেই বাবাই।। আসো…
আয়ানঃনাহ….(স্যুপের বাটি ফালিয়ে দেয়)বলছি না খাব না।।মাম্মাম চাই….
আকাশের রাগ হয় প্রচন্ড।। আয়ানকে চড় মারার জন্য হাত তোলে চিল্লিয়ে…
আকাশঃআয়াাাাা..ন.. এতো জেদ কেন তোমার।। বলছি না তোমার মাম্মাম নেই তারপরও..
(আয়ানের দিকে তাকিয়ে দেখে ওর চোখ লাল এখনই অশ্রু গড়িয়ে পরবে।।আহ কি করে দিল সে।।আয়ানের গায়ে হাত তুলতে গিয়েছিল।।ও তো অবুঝ।। ওর সাথে চিল্লাচিল্লি না করে আদর করে ভালোবাসা দিয়ে বুঝানো উচিত ছিল।।)
আকাশঃসরি সরি আয়ান বাবাই..
আকাশ কিছু বলার আগেই আয়ান বেড থেকে নেমে দৌড়ে কেবিনের বাহিরে এসেই কারও সাথে ধাক্কা খায়…
।।
।।
পৃথা ফজরের নামাজ পড়ে জায়নাজেই ঘুমিয়ে পড়ে।। সকালে উঠে দেখে ওর মা নাস্তা বানিয়েছেন।। নাস্তা খেয়ে ও হসপিটালের জন্য বের হয়।।ক্লাসে যাওয়ার আগে অফিস রুমে কিছু কাজের জন্য যাওয়া ধরে।।হঠাৎ কারও সাথে ধাক্কা খায়।। নিচে তাকিয়ে দেখে একটা বাচ্চা ভয়েমওর হাটু জড়িয়ে কাপছে চেহারা দেখা যাচ্ছে না।।পৃথা বাচ্চাটাকে জড়িয়ে ধরে মাথায় বুলিয়ে দেয়।।
পৃথাঃকি হয়েছে বাবু??হাঁপাচ্ছ কেন??
আয়ান মাথা তুলে তাকিয়ে পৃথাকে দেখে মুখ থেকে বের হয়..
আয়ানঃমাম্মাম???
পৃথাও আয়ানকে দেখে অবাক হয়।।ওর ক্লান্ত চোখ-মুখ দেখে ওর বুকটা ধক করে ওঠে।।পুরো মুখ লাল হয়ে আছে।। অনেক কষ্ট হচ্ছে ওকে এ অবস্থায় দেখে।।
পৃথাকে দেখে আয়ানের কষ্টটা যেন আরও বেড়ে যায়।।পৃথা তো ওকে দেখতে চায় না।।ওকে মাম্মাম বলতে মানা করেছে।।তবুও ছোট্ট অবুঝ মনটা তো আর বোঝে না।।তাই পৃথাকে জড়িয়ে ধরে আয়ান কেঁদে দেয়…
আয়ানঃমাম্মাম তুমি এসেত?আমাকে নিয়ে যাওনা পিলিজ।।জানো পাপ্পাও আমাকে ভালুবাতে না।।আমাকে আজকে মালাও ধলেছিল।।আমাল খুব কত্ত হয়। ।কেউ আমাকে ভালুবাতে না।।তুমিও না।।মাম্মাম আমি তুমাল তব কতা তুনব।।তুমি যা বলবা তাই কলব।।লাগ কললেও কাননা কলব না।।তাও নিয়ে তল না আমাকে।।মাম্মাম আমাল খুব কত্ত হততে।।
পৃথা যেন পাথর হয়ে গেছে।।কত কষ্ট এই ছোট্ট বাচ্চাটার মনে।।পৃথার চোখ থেকে একফোঁটা পানি গড়িয়ে পরল।।ও আয়ানকে জড়িয়ে ধরল।।কি শান্তি এই বুকটাতে আয়ানকে জড়িয়ে ধরার ফলে।। কতদিনে প্রতীক্ষার প্রহর যেন শেষ হল।।কত স্বপ্ন দেখত ওর বাচ্চাকে নিয়ে।। আজ যেন সত্যি হল। কিন্তু….. এসব তো ওর না।।নাহ।।ও তো আয়ানের মা নয়।।কেন আবার আশায় বুক বাধবে??নাহ।।নিজেকে শক্ত করতে হবে।।
যেই আয়ানকে সরাতে যাবে আয়ান ধলে পড়ল ওর ওপর।।আবার সেন্সলেস হয়ে পড়েছে দুর্বল থাকার কারনে।।।
।।
।।
আকাশ হঠাৎ চলে আসে।।আয়ানকে সেন্সলেস হতে দেখে দ্রুত ওকে নিয়ে ওয়ার্ডে যায়৷। পৃথাও কোনো অজানা টানে আয়ানের পিছনে পিছনে যায়।।কোনো সম্পর্ক থাকুক আর নাই থাকুক।।ছোট্ট বাচ্চাটাকে এই অবস্থায় তো আার ফেলে রাখা যায় না।।কত আকুতি ছিল বাচ্চাটার কন্ঠে।। কত অসহায় লাগছিল বাচ্চাটাকে।।
আয়ানকে ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়৷ পৃথা আয়ানের বেডের পাশেই দাড়িয়ে ছিল।।আাকশ ওর হাতে ইনজেকশন পুশ করে সেলাইন লাগায়।।হঠাৎ পৃথা প্রশ্ন করে…
পৃথাঃওর মা কই আকাশ?এতদিনে একবারও দেখলাম না?আজ ছেলের এ অবস্থা তাও ওর মাকে কেন দেখছি না?আর তোমার ছেলে আমাকে কেন ওর মা বলে??আগেই তোমাকে প্রশ্নগুলো করার ছিল।।কোনো কারনে সুযোগ হয়ে উঠেনি।।আজকে তোমাকে বলতে হবে কই ওর মা?কেন আমাকে দেখে এমন করে ও??আমাকেই বা কিভাবে চিনল??আনসার মি…..(চিল্লিয়ে)
আকাশঃনেই।।নেই ওর মা।।।।।।।।।।
।।
।।
চলবে…..🙄