অজানা কারণ

অজানা কারণ !! Part- 06

মিনহাজ ঘর থেকে বের হয়ে যাওয়ার পর মানহা আরো ক্ষিপ্ত হয়ে উঠল। পাগলের মত আচরণ ক্রমাগত বৃদ্ধি পেতে থাকলো। এক পর্যায়ে মিনহাজ আর মানহার একই ফ্রেমে বদ্ধ থাকা ছবিটা, ছুড়ে ফেলে দিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে মানহা।

_আমি জানি এই ডাইরিটা নীলা লেখেনি। তোমরা সবাই মিথ্যে বলছো। সবাই আমাকে ঠকাচ্ছো।আমি বিশ্বাস করি না নীলার মত এত দুঃখী একজন মানুষ খুন করতে পারে! নীলা তুমি কোথায়? আমার সব প্রশ্নের উত্তর দিয়ে যাও!
মানহা আর কিছুই বলতে পারল না। অভিমান আর রাগ দুটোই মানহা কে ভেঙে চুরমার করে দিল। কান্নার বাঁধভাঙ্গা জোয়ার মানহার হৃদয় ভেদ করে বয়ে গেল।

মানহা কে এভাবে ডায়েরি ধরে কাঁদতে দেখে মিনহাজের মা এগিয়ে এসে,ওর মাথার এলোমেলো চুলগুলো হাত বুলাতে বুলাতে বললেন,

_তুমি জানতে চাও নীলার ঘটনা? জানতে চাও সত্যি কি হয়েছিল সেই দিনগুলোতে?

মানহা হ্যাঁ সূচক মাথা ঝাঁকিয়ে সম্মতি জানালো।
মিনহাজের মা কিছুটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বলতে শুরু করলেন,

_শোনো! সত্যি এটাই নীলা নিরপরাধী। আসলে ও কিছুই করেনি। এসব ঘটনা সম্পর্কে ওর কোন ধারনাও নেই । বিয়ের ২ মাস আগে মিনহাজ নীলাকে রেপ করেছিল। কিন্তু সেটাও একা। কোন বন্ধুকে নিয়ে নয়। আর তখন নীলা প্রেগন্যান্ট হয়ে যায়।

বাসর রাতের কথা যা লিখা ছিল। সেটা সম্পূর্ণই কল্পনাতীত। এটার সাথে বাস্তবতার কোনো সম্পর্কই নেই। কারণ নিজের স্ত্রীকে অন্য কারো কাছে সমর্পণ করা।কোনো মানুষ কেন বরং কোন অমানুষের পক্ষেও এটা সম্ভব নয়। আর মিনহাজ এর মত ছেলে তো এসবের ধারের কাছেও নেই।

আর জয়ার খুন। এটাও মিনহাজ করেছিল।মিনহাজ আমাদের সাথে কুষ্টিয়া যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ও কুষ্টিয়া না গিয়ে ফিরে আসে। মিনহাজ যখন জয়ার খুন করে, তখন নীলা ঘুম থেকে জেগে যায়। বাধ্য হয়ে মিনহাজ জয়ার লাশ রেখে চলে আসে। আর সেই লাশ নীলা গায়েব করেছিল। সেটাও ফেঁসে যাওয়ার ভয়ে।

আর নীলার ভাই আর মায়ের খুন ।সেটাও মিনহাজ করেছিল। রাত প্রায় দু’টা নাগাদ রাজাকে খুন করে মিনহাজ বাড়ি ফিরে আসে। নীলা মিনহাজ কে দেখে ভয় পেয়েছিল। দুজনের মাঝে কঠিন পর্যায়ের ধস্তাধস্তিও হয়েছিল।শক্তিতে নীলা মিনহাজের সাথে না পারাটা খুব স্বাভাবিক।

তাই এক পর্যায়ে নীলা জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। আর সকালে উঠে রাতে ঘটে যাওয়া সব কিছু ভুলে যায়। ডবল ডোজের ঘুমের ওষুধের কারণে এমনটা হতো। মিনহাজ নীলাকে জোর করে ডবল ডোজের ঘুমের ওষুধ খাইয়ে দিত। আর খুব ভালো করে ছুরিতে নীলার আঙ্গুলের ছাপ বসিয়ে নিতো।

সকালবেলা নীলা ওদের বাসায় পৌছার আগেই মিনহাজ পৌঁছে যায়। আর তারপর বিষ খাইয়ে নীলার মাকে হত্যা করে। এই হত্যাটা মিনহাজ এমনভাবে করে, যেন এটাকে সাধারণ আত্মহত্যা বলে মনে হয়।
কিন্তু পুলিশের দৃষ্টি ছিল তার থেকেও বেশি শক্তিশালী। আত্মহত্যা সাজানোর চেষ্টা করা হলেও, পুলিশের দৃষ্টিতে সেটা হত্যা বলে বিবেচিত হয়।

কারণ এক্ষেত্রে মিনহাজের একটা ভুল ছিল। আর সেটা হলো, বিষের কৌটো টা মিনহাজ নিজের বাড়িতে এনে রেখেছিলো।যদিও এই ভুলটা মিনহাজের ইচ্ছাকৃই ছিল। যেন নীলা ফেঁসে যায়।

আর তারপর পুলিশ প্রত্যেকটা এভিডেন্সে নীলার ফিঙ্গারপ্রিন্ট পাওয়ার কারণে, নীলাকে খুনি হিসেবে এরেস্ট করে নিয়ে যায়। এটাই সেই কাহিনী যেটা তুমি জানতে চাও।

মানহা মিনহাজের মাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়ে বলে উঠলো,

_ঘটনা সম্পূর্ণ হয়নি। আর এই ঘটনাকে আমি সম্পূর্ণ বলে মানিও না। তুমি শুধু বলেছো সবকিছু মিনহাজ করেছে। কিন্তু মিনহাজ কেন করেছে এসব? কি ক্ষতি করেছিল নীলা? যার দায়ে মিনহাজ নীলাকে ফাঁসিয়ে দিল। উত্তর দাও আমাকে!

মিনহাজের মায়ের দুধ চোঁখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়তে লাগলো। কিছু বলতে যাচ্ছিল কিন্তু তার ঠোঁট কাঁপতে শুরু করল। নিজেকে বহু শক্ত বাঁধনে বেঁধে মিনহাজের মা বলে উঠলো,
_বাধ্য হয়েছিল মিনহাজ এ সবকিছু করতে । না হলে আমার মিনহাজকে এসব করার কল্পনাও করে না।
বাস্তবে করা তো বহু দূরের কথা।

মানহা বিস্ময়সূচক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,
_বাধ্য হয়েছিল মিনহাজ? কিন্তু কেন? কে বাধ্য করবে মিনহাজকে এসব করতে? আমাকে সবকিছু পরিষ্কার করে বলো।

মিনহাজের মা এবার খুব উত্তেজিত কন্ঠে বলল,
_হ্যাঁ মিনহাজ এসব কিছু করতে বাধ্য হয়েছিল। কারণ নীলার বাবা বাধ্য করেছিল মিনহাজকে এসব করতে।

মানহা চমকে উঠলো! কোনভাবেই নিজেকে স্বাভাবিক করতে পারলো না।
_কি বলছো তুমি এসব? একজন বাবা নিজের মেয়ের ব্যাপারে কেন এসব করতে অন্যকে বাধ্য করবে?

মানহা আরো কিছু বলতে গেল, কিন্তু মিনহাজের মা মানহা কে থামিয়ে দিয়ে বলতে শুরু করল,

_হ্যাঁ সত্যিই নীলার বাবা এরকম কিছু করেছে। কারন সে নীলার নিজের বাবা ছিলনা। সে ছিল নীলা আর রাজার সৎ বাবা। কিন্তু ছোট থেকেই তার কোলে পিঠে বড় হওয়ার কারণে নীলা বা রাজা কেউই জানতো না সে তাদের সৎ বাবা।

মানহা হতভম্ব হয়ে জিজ্ঞাসা করলো,
_সবই ঠিক আছে। কিন্তু উনি এ সবকিছু কেন করলেন? কি লাভ হয়েছে উনার এসব কিছু করে?
আর এসব কিছুর সাথে মিনহাজের সম্পর্ক হল কি করে? পৃথিবীতে এত লোক রেখে উনি মিনহাজকেই কেন বাধ্য করলেন এ সবকিছু করতে?

মিনহাজের মা দু মিনিট দম নিয়ে বলতে শুরু করলেন,
_নীলার মাকে ওর বাবা বিয়ে করেছিল শুধুমাত্র সম্পত্তির লোভে। নয়তো আড়াই বছরের বাচ্চা এবং তিন মাসের গর্ভের বাচ্চা সহ কোন ভালো
লোকেও আজকাল কোনো মেয়েকে বিয়ে করতে চায় না। আর নীলার বাবা তো কোনো ভালো লোকই ছিল না।
নীলার বিয়ের ঠিক এক বছর আগে নীলার বাবার জয়া নামে একটা মেয়ের সাথে অবৈধ সম্পর্ক হয়।

কয়েক মাস যেতে না যেতেই নীলার মা সেই অবৈধ সম্পর্কের ব্যাপারে জেনে যায়। এটা নিয়ে তাদের দুজনের মাঝে অনেক ঝামেলা শুরু হয় । কিন্তু এসব কিছুই নীলা বা রাজা কেউ জানতো না।
নীলার মা প্রচন্ড রকম ক্ষিপ্ত হয়ে সমস্ত সম্পত্তি নীলা আর রাজার নামে করে দেয়। সেই থেকেই নীলার বাবার মনে প্রতিশোধের আগুন জ্বলতে শুরু করে।

আর সেই আগুনের বলি হয় আমার মেয়ে ঝিলি। দুর্ভাগ্যবশত ঝিলি জয়ার কাছেই প্রাইভেট পড়তো। সেই থেকে নীলার বাবা ঝিলি আর আমার পরিবারের প্রতি নজরদারি করতে শুরু করে। মিনহাজ পিএইচডি শেষ করে দেশে আসার সাথে সাথেই নীলার বাবা খেলতে শুরু করে দেয়।

সর্বপ্রথম সে ঝিলি কে কিডন্যাপ করে। জয়ার কাছে প্রাইভেট পড়তে যাওয়ার সুবাদে ঝিলি কে কিডন্যাপ করা তার কোন ব্যাপারই ছিল না। আর তারপর ৬/৭ জন ছেলেকে দিয়ে ঝিলিকে রেপ করায়। অমানুষ লোকটা সেই ভিডিও ধারণ করতেও পিছপা হয়নি।
আর তারপর সেই ভিডিও মিনহাজ এর কাছে সেন্ড করে, শুরু হয়ে যায় তার হুমকি-ধামকি।

মানহানির ভয়ে আমরা পুলিশের কাছেও যেতে পারিনি। একজন মা হয়ে একজন ভাই হয়ে কিভাবে আমরা নিজেদের মেয়ের/বোনের ক্ষতি করতে পারি? এটা যে সারা জীবনের প্রশ্ন। মিনহাজ খুব কষ্ট করে জানতে পারে কিডন্যাপ কারী আর তার পরিবারের তথ্য।

তারপর মিনহাজ নীলাকে কিডন্যাপ করে। রাগে, দুঃখে, কষ্টে নীলাকে রেপ করে সেই ভিডিও ধারণ করে। মিনহাজ ভেবেছিল নীলার রেপ করা ভিডিও ওর বাবা কে সেন্ড করলে ,সম্ভবত মানহানির ভয়ে সে ঝিলিকে ছেড়ে দিবে! সেই সাথে ভিডিওটা ডিলিট করে দিবে। কিন্তু সব কিছু ঘটলো উল্টো!

কারণ নীলার বাবা চাইছিল নীলাকেই ফাঁসাতে। মিনহাজ যখন এ কথাটা বুঝতে পারে, তখন খুব দেরি হয়ে যায়।কারণ মিনহাজ নীলাকে রেপ করার পরে এই বিষয়টা বুঝতে পারে। তখন মিনহাজ হাজার চাইলেও নীলাকে আর কিছুই খুলে বলতে পারেনি। কারণ তখন নীলার চোখে মিনহাজের জন্য ঘৃণা ছাড়া আর কিছুই অবশিষ্ট ছিল না।এমন লোকের মুখ থেকে কোন মেয়ে নিজের বাবার বিরুদ্ধে কোনো কথা কেন বিশ্বাস করবে? যে লোকটা তাকে রেপ করেছে।

মিনহাজ ভিতরে ভিতরে একপ্রকার গুমড়ে মরছিলো।নিজের বোনের প্রতি প্রচন্ড ভালোবাসা, আর একজন মেয়ের সাথে অন্যায় দুটোই মিনহাজ কে কূরে কূরে খাচ্ছিল। কিন্তু সেক্ষেত্রেও মিনহাজ ছিল অসহায়!

নীলার বাবা মিনহাজকে বলেছিল,
_দেখো তোমাকে আমার প্ল্যানমাফিক চলতে হবে! তাহলে আমি তোমার বোনকে ছেড়ে দিব। আর সাথে ভিডিওটা ও ডিলিট করে দিব।
আর সেই প্ল্যান হচ্ছে। এখন সর্বপ্রথম তুমি নীলাকে বাধ্য করবে তোমার সাথে বিয়ে করতে। আর তারপর তুমি ওর সাথে করবে সীমাহীন দুর্ব্যবহার। কোনভাবেই যেন এরকম না হয় তুমি ওর প্রতি দুর্বল হয়ে পড়েছো।

তোমাকে এত বেশি দূর ব্যবহার করতে হবে, যেন নীলা তোমাকে প্রচন্ড ঘৃণা করে।

মিনহাজ কোনো প্রতিবাদ করলো না। নীলার বাবা যা যা করতে বললো মিনহাজ ঠিক সেটাই করলো।বিনিময় নীলার প্রচন্ড ঘৃণা ছাড়া মিনহাজের ভাগ্যে আর কিছুই জুটলো না।

বিয়ে ঠিক পরদিন সকালে নীলার বাবা মিনহাজকে কল করে বলেছিল,
_আজকে তোমার পরিবারের বাকিদেরকে কুষ্টিয়া চলে যেতে বলবে। সেই সাথে তুমিও কুষ্টিয়া যাওয়ার নাটক করবে। কিন্তু তুমি আবার ফিরে আসবে।
কারণ আজ রাতে গোপনে জয়া যাচ্ছে নীলার সাথে দেখা করতে। ও নীলাকে সবকিছু খুলে বলে দিবে। কারণ ও আমার সব প্ল্যান জেনে গেছে। আর সব ভেস্তে দেওয়ার প্ল্যান করেছে।
কিন্তু তুমি সেই সুযোগ জয়াকে দিবেনা। তার আগেই ওকে খুন করে ফেলো। না হলে আজই তোমার বোনের ভিডিও পুরো দুনিয়ায় সারা তুলবে।

মিনহাজ খুব আপত্তি করেছিল। খুন করা তো আর কোনো সহজ কাজ নয়। ডক্টর কাটাছেঁড়া করে রোগীকে বাঁচানোর জন্য, মারার জন্য নয়। বাধ্য হয়ে মিনহাজ সেটাই করে। আর তারপর নিলার ভাই আর মাকেও এভাবেই খুন করে। সবকিছুই তার প্ল্যানমাফিক চলতে থাকে।

আর তুমি বললে না ?এই ডাইরি নীলা লেখেনি। হ্যাঁ তোমার কথাই ঠিক। সত্যি বলতে এই ডাইরি মিনহাজ লিখেছে। এ ডায়রি পড়লে যে কেউ বলবে নীলার মাথা নষ্ট। সব রকমের অবাস্তব কথা এই ডাইরিতে মিনহাজ লিখেছে। শুধুমাত্র নীলাকে মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন প্রমাণ করার জন্য। আর এটাও মিনহাজ করেছিল নীলার বাবার প্ররোচনায়।
নিজের বোনকে বাঁচানোর জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছিল মিনহাজ। কিন্তু ও ঠিক সেই মুহূর্তে বুঝতে পারেনি অন্য আরেকজনের বোন বলির শিকার হচ্ছে!

সবশেষে পুলিশ নীলাকে ৩ খুনের আসামি হিসেবে এরেস্ট করে নিয়ে যায়। ঘটনা অল্পবিস্তর হলেও আমি তোমাকে যতটুক বলেছি, আশা করি তুমি সব পরিষ্কার বুঝেছো!

মানহার চোঁখ দিয়ে টপটপ করে জল গড়িয়ে পড়তে থাকলো। নীলার জন্য এত বেশি কষ্ট কেন হচ্ছে মানহা নিজেও জানেনা। যাকে কখনো দেখেইনি তার জন্য এত অনুভূতি!

মিনহাজের মা এগিয়ে এসে মানহার কাঁধে হাত রেখে বললেন,
_একটা কথা বলতো মানহা! তুমি কি করে বুঝতে পারলে এই ডাইরিটা নীলা লেখেনি?

মানহা চোখের জল মুছতে মুছতে বলল,
_এটা বোঝা তো খুব সহজ। যখন পুলিশ নীলাকে এরেস্ট করতে আসে। তখন মিনহাজ নীলাকে বলল,
_নীলা তুমি এসব খুন করেছো?
এই কথাটা ডাইরিতে তোলা নীলার জন্য কখনোই সম্ভব নয়। কারণ ঠিক ওই মুহুর্তে পুলিশ নীলাকে এরেস্ট করে নিয়ে চলে যায়। তাহলে কে লিখেছিলে কথাটা? তখনই আমি বুঝতে পারি সব কিছু।

মানহা আর কিছুই বলতে পারছে না। ভেতর থেকে একটা হাহাকার শক্ত করে চেপে ধরে আছে মানহা কে। সজোরে হেঁচকি তে কান্নায় ভেঙে পড়ল মানহা।

মানহা কাঁদতে কাঁদতে মিনহাজের মাকে বলবো,
_সবকিছুই তো বললে। নীলার সন্তানের কি হয়েছিল সেটা তো বললে না।

মিনহাজের মা চোঁখের কোণে থাকা জল মুছে হাসতে হাসতে বললেন,
_নীলার সন্তানের জন্ম হওয়ার তিন বছর পর মিনহাজ দেশ ছেড়ে চলে যায়। মিনহাজ নীলাকে প্রচণ্ডরকম ভালোবেসে ফেলেছিল! নীলার সাথে ঘটে যাওয়া অন্যায় কে ও কোনোভাবেই ভুলতে পারছিলো না।

এরপর ১০ বছর পর মিনহাজ দেশে ফিরে আসে। নীলার মেয়ে দেখতে হুবহু নীলার মতই ছিল। ওকে দেখার পর মিনহাজের কষ্ট আরো বাড়তে থাকলো। এক বছর দেশে থাকার পর মিনহাজ বাধ্য হয়ে আবার ফিরে যায় বিদেশ। এরপর ৬ বছর পর আবার ফিরে আসলো। সেটা তো তুমি নিজেই দেখছো।

মানহা খুব আহত হৃদয় নিয়ে জিজ্ঞাসা করলো,
_কি নাম নীলার মেয়ের? কোথায় থাকে ও?

মিনহাজের মা কিছু একটা বলতে যাবে, তার আগেই শব্দ করে দরজার কপাট খুলে ভেতরে ঢুকলো মিনহাজ। মিনহাজ কে দেখে মানহা এগিয়ে গেল।

কিছু না বলে মিনহাজকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়লো। মিনহাজ মানহার মাথায় হাত বুলাতে লাগলো।
মানহা অভিমান কাতর কণ্ঠে বলে উঠল,
_আমি তোমাকে কত ভুল বুঝেছিলাম। তুমি কত ভালো একটা মানুষ। কেন আমায় বলোনি মিনহাজ তোমার কোন দোষ নেই?

এমন সময় ঝিলি এসে মানহার হাত ধরে পিছনে টেনে নিয়ে বলল,
_কিছুই শিখলি না মানহা। নিজের বাবাকে কেউ নাম ধরে বলে?

ঝিলির কথা শুনে মানহার হাত-পা সব অবশ হয়ে যায়। ধপাস করে মেঝেতে পড়ে যায় মানহা।
মুখ উপরে তুলে অবাক হয়ে বলে,
_উনি আমার বাবা?

মিনহাজের মা এগিয়ে এসে মানহা কে বুকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললেন,
_হ্যাঁ মানহা মিনহাজই তোমার বাবা। কিন্তু মিনহাজ কোনদিন চাইনি নিজের পরিচয় তোমাকে দিতে। তাই এই বাড়ির সাধারণ একজন সদস্য বলেই তোমাকে নিজের পরিচয় দিয়েছিল ।কারণ যখন তুমি জানতে পারবে মিনহাজ তোমার বাবা, তখন তুমি প্রশ্ন করবে নিজের,,,,,,,

মিনহাজের মাকে থামিয়ে দিয়ে মানহা বলল,
_আর কিছু বলতে হবে না। আমি সব বুঝতে পেরেছি।না জেনে না শুনে আমি কত খারাপ ব্যবহার করেছি নিজের বাবার সাথে। আর তোমরা কেউ আমাকে কিছু বলোনি? আচ্ছা একটা কথা বলতো!
উনি না হয় আমার বাবা।
কিন্তু আমার মা কে? কোথায় উনি?

মিনহাজের মা কান্নাবিজড়িত কণ্ঠে বলে উঠলেন,
_ঠিক এই প্রশ্নের ভয়েই মিনহাজ কোনদিন তোমাকে বলেনি আমাদের কারো পরিচয়। তুমি সব সময় জেনে এসেছো ঝিলি তোমার মা। কারণ ও তোমাকে মায়ের ভালোবাসা দিয়েই বড় করেছে।

কিন্তু সত্যি তো এটাই। তোমার মা সেই নীলা,,,,,,,,

মানহা অস্পষ্ট শব্দে একবার মা উচ্চারণ করে,পেছনের দেয়ালে প্রচণ্ড রকমের একটা ধাক্কা খায়। সবকিছু গুলিয়ে যাচ্ছে যেন।
মিনহাজ তখনও দরজার কপাট ধরে মাটির দিকে তাকিয়ে রয়েছে। হয়তো এটা নিজের চোঁখের জলের ফোঁটা গুলো লুকিয়ে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা মাত্র!

মিনহাজের লেখা ডাইরিটা বুকের মাঝে শক্ত করে চেপে ধরে মানহা কাঁদতে লাগল। আজ মানহার মনে আর কোন প্রশ্ন নেই। কারণ মানহার সব প্রশ্নের উত্তর ও পেয়ে গেছে।
কিন্তু মানহা শুধু মনে মনে ভেবে যাচ্ছে,
_আমার বাবা তো বড্ড ভালো মানুষ! ইচ্ছাকৃত ভাবে কাউকে কোন দুঃখ দেননি।
কিন্তু মায়ের সাথে ঘটে যাওয়া বাবার আচরণগুলো তো আজও মায়ের কাছে “অজানা কারণ।”

””””””’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *