হারিয়ে খুজবে আমায় !! Part- 02
শাফিন ভাবছে কি করে পারল ও অনুর গায়ে হাত তুলতে দোষ তো তারই ছিল। গায়ে হাত না তুলে বোঝানো উচিত ছিল যে সে থাকতে চায় না তার সাথে হয়তো ভালোবাসাটা নেই আগের মত। আচমকা শাফিন তার হাতে আঘাত করতে লাগলো এই হাত দিয়ে সে অনুকে মেরেছে কেন জানি তার বুকে চিনচিন ব্যথা করছে কিন্তু সেতো অনুকে ভালবাসেনা তাহলে কেন এমন হচ্ছে ?মায়ায় পরে? হয়তো অনেকগুলো দিন একসাথে থাকার কারণে হয়তো মায়া হয়েছে তাই তার কষ্ট হচ্ছে।
মেয়েটার তো কোন দোষ নেই ও তো তার সর্বোচ্চ দিয়ে সংসারটাকে আগলে রেখেছে শাফিনের ভালোলাগা খারাপ লাগা নজর দিয়েছে। অসুস্থ হলে সেবা করা,সকালে অফিসে যাওয়ার আগে সবকিছু গোছগাছ করা,রাত্রে নিজে না খেয়ে ডিনারের জন্য অপেক্ষা করা সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছেন মেয়েটা।
কিন্তু সময়ের সাথে সাথে কিভাবে জানে ভালোবাসাটা হারিয়ে গেছে মন থেকে।প হয়তো ইরার ঝাঁঝালো রুপ দেখে। তার স্টাইল দেখে কথাবার্তার আচরণ সবকিছুতেই শাফিন মুগ্ধ হয় যা আগে অনুর জন্য হত।
অনু মেয়েটা বড্ড সেকেলে সবসময় শাড়ি পড়ে থাকে। বিবিএ কমপ্লিট করার পরেও চাকরি না করে সংসার সামলানোর জন্য ঘরে থাকে রান্না করে। সব কাজের জন্য শাফিনের ওপর নির্ভর থাকে। সবকিছুতে তাই অনুমতি লাগবে নিজস্ব কোন স্বাধীনতা নেই মেয়েটার মাঝে। বেশি সাজগোজ পছন্দ না তার হালকা কাজল আর কপালে টিপ, কাচের চুড়ি আর হালকা লিপস্টিক এই তার সাজ। সবসময় সাধারণ থাকতে পছন্দ করে সে। অফিসে কোনো পার্টিতে গেলেও সে বড্ড সাধারণ সাজে যেত, তার বন্ধুদের সাথে ভালোভাবে কথা বলতে চাইত না,মিশতে চাইতো না,যা মাঝে মাঝে শাফিনকে বিব্রত করে দিত। তাইতো সে তাকে পার্টিতে নিত না।
অন্যদিকে ইরা মেয়েটা যেন কোন মডেলের থেকে কম নয় অফিসে সব সময় টিপ টপ করে চলে সবার সাথে হাসিমুখে কথা বলে যে কোন পার্টিতে সে থাকে মধ্যমণি তার রূপের চর্চা সবার মুখে মুখে আর সেই মেয়েটা শাফিন কে প্রপোজ করে তাইতো সে অনুকে বাদ দিয়ে তার দিকে ঝুকেছে। আর সব থেকে বড় যা শাফিনকে মুগ্ধ করেছে তা হলো স্বাধীনতা মেয়েটা স্বাধীনভাবে চলাচল করতে পছন্দ করে কারো উপর নির্ভর না। ফিজিক্যাল রিলেশনে যেতে চাইনি শাফিন ডিভোর্সের আগে কিন্তু ইরাক জোরজবস্তি করায় সে আর না করতে পারেনি এমনিতেই সে ইরার রূপে মুগ্ধ তারপর কোন ঘোরে জানো তাদের মধ্যে সম্পর্কটা হয়ে যায়।কিন্তু প্রত্যেকবার শারীরিক সম্পর্কের পর শাফিন বিষণ্নতায় ভুগত তার মনে হতো সে অনুকে ধোকা দিচ্ছে। কই অনুর সাথে মিলনের পর তো কখনই এমন বিষন্নতায় ভুগত না যেন মনটা আরো ফুরফুরে হয়ে যেত।তাই তারপর থেকেই শাফিন অনুর সাথে কারনে অকারনে খারাপ ব্যবহার শুরু করে কিন্তু কেন জানি আবার গিলটি ফিল হত যে মেয়েটার কোন দোষ নেই তাই সে ক্ষমা চেয়ে নিত নানান বাহানায়।
তা ঠিক একমাস পর আজ অনু সব জেনে যায়।
আরেকটা বিষয় সে লক্ষ করেছে অনুকে ছাড়া তার ঘুম হয় না হয়তো অনেক দিনের অভ্যাস তাই ।তাও পরিবর্তন হয়ে যাবে ইরাকে পেয়ে।
ইরাকে সে কথা দিয়েছে খুব তাড়াতাড়ি অনুকে তাদের সম্পর্কের কথা বলে ডিভোর্স দিয়ে দেবে আর তাকে বিয়ে করবে তাইতো এতদূর আগানো।
সে সঠিক সময়ে অপেক্ষায় ছিল কিন্তু অনুর মায়াভরা মুখ দেখে সে আর কিছু বলতে পারতো না। অনু খুব ফর্সা না হলেও উজ্জল শ্যামলা চোখ দুটো টানা টানা সরু নাক আর পাতলা ঠোঁট দুটো গোলাপের পাপড়ির ন্যয় লাল। অসম্ভব মায়া তার চেহারায়।
হয়তো যে কেউ তার মায়া পড়ে যাবে যেমন ভার্সিটি প্রথম দিনে শাফিন তার মায়ায় পড়েছিল। অনু প্রচণ্ড চঞ্চল মেয়ে আর প্রচুর দুষ্টু এই জিনিসটাই টানত শাফিনকে তার মায়াবতীর দিকে। কিন্তু ইদানিং কেন জানো মায়াবতীর দুষ্টুমি গুলোও তার বিরক্তের কারণ হতো।
এসব কথা ভাবতে ভাবতে শাফিন বাড়িতে পৌঁছালো বাড়িতে ঢুকে দেখলো মেন দরজা খোলা সে তাড়াতাড়ি রুমে ঢুকলো রুমটা ফাঁকা দেখে হঠাৎ তার বুকে ধুক করে উঠলো কি যেন নেই রুমটাতে তাহলে কি সত্যি মায়াবতী চলে গেছে তাকে ছেড়ে হঠাৎ সে বুঝতে পারল সেকি ভাবছে সেতো অনুকে ভালবাসেনা না অনুর কথা ভাববে না সে আর এখন থেকে শুধু ইরার কথাই ভাববে।
কিন্তু তার কেন জানি মনে হচ্ছে অনু এই ঘরেই আছে। অনুর উপস্থিতি সে বুঝতে পারে।তাই সে প্রত্যেকটা ঘর আর ওয়াশরুম চেক করলো কিন্তু অনুকে পেল না তাই হতাশ হল,হঠাৎ বেলকুনি কথা মনে পরল সে দ্রুত বেলকুনিতে গেল গিয়ে দেখে অনু দোলনায় শুয়ে আছে তাই শরীরের বিভিন্ন জায়গায় মারের দাগ কিছু কিছু জায়গা কেটে গেছে রক্ত পড়ছে। চোখের জল শুকিয়ে দাগ পড়ে গেছে মুখে।
অনুর অবস্থা দেখে শাফিনের চোখ থেকে আপনা আপনি দুই ফোটা জল গড়িয়ে পড়ল। অনুর বাবা-মা কখনোই অনুর গায়ে ফুলের টোকাও দেয়নি তাদের একমাত্র সন্তান বলে আর আজকে সে জানানোর মতো পিটিয়েছে অনুকে,তাও কোন দোষ ছাড়াই।
কোন নারীই তার স্বামীর ভাগ কাউকে দিতে চায়না। কেউ এটা মেনে নেয় না তাইতো তার রাগটা স্বাভাবিক কিন্তু শাফিন নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারিনি। কথাটা ভেবে একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলল শাফিন।
তারপর অনু…
চলবে..