সেলিব্রেটি স্বামী

সেলিব্রেটি স্বামী !! Part 18

🍁🍁🍁
সন্ধ্যার পর হসপিটাল থেকে বাড়িতে ফিরলাম আমরা।মা এসেছিলো উনাকে দেখতে।আজ মায়ের আচারণ যেন অন্য রকম লাগছিলো।আমাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদেছিলো মা।বলেছিলো এতোদিনে যা ভুল করেছে তার জন্য ক্ষমা করে দিতে।আমিই তার প্রথম সন্তান।মা হবার প্রথম উপলব্ধি আমার কাছে থেকে পেয়েছে।মা যখন নিঃসন্তান ছিলো। সন্তানের জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছিলো। বিয়ের পরও প্রায় ১৫ বছর সন্তানের মুখ দেখি নি।অনেক ভেঙে পরেছিলো তখন মা।বাবা তার সমস্ত সম্পত্তি বিক্রি করে সে সময় একটা অনাথ আশ্রমের ম্যানেজারকে খুশী করে সব দিয়ে আমাকে কিনে এনেছিলো।এক প্রকার কাগজে কলমে আইনি ভাবেই আমাকে দপ্তক নিয়েছিলো বাবা-মা। তখন আমার বয়স মাত্র আট। অনাথ আশ্রমের সামনে বিশাল মাঠ জুড়ে পার্কের মতো ব্যাবস্থা ছিলো।সেখানে খেলছিলাম সাথীদের সাথে আমি।খেলতে খেলতে হঠাৎ হোটচ খেয়ে পরে গেলাম মাটিতে।ব্যাথা পেয়ে চিৎকার দিয়ে কাঁদছিলাম। আমার কান্নার মধ্যে একটাই শব্দ প্রকাশ পাচ্ছিলো। মা! ও মারে! মা তখন আশ্রমের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলো।হাতে মায়ের বাজারের ব্যাগ।আমার কান্না শুনে হাতের আলু পটল সবজি তরকারির ব্যাগগুলো নিচে ফেলে দিয়ে ছুটে এসেছিলো মা আমার কাছে।দাড়োয়ান মাকে আটকালো।আমার তীব্র কান্নায় মা কোনো বাঁধা মানলো না। ছুটে এসে আমার কাছে আমাকে জড়িয়ে ধরে চুমুতে ভরিয়ে দিলো আমার গালে মুখে।আমি কাঁদতে কাঁদতে বললাম খুব মিস করছি আমার মাকে।কতোদিন মায়ের কোলে ঘুমাই না।আমাকে কেউ খাইয়েও দেয় না।আন্টি তুমি কি আমার মায়ের কাছে আমাকে নিয়ে যাবে? আমার কথায় মা কেঁদে উঠলো।ভাবলো একটা সন্তানের জন্য সে কতোই না চেস্টা করেছে আর এখানে একটা বাচ্চা তার মায়ের জন্য কস্ট পাচ্ছে? মা আমাকে কোলে নিয়ে জড়িয়ে ধরে কেঁদে উঠেছিলো সেদিন।ম্যানেজার এসে মায়ের থেকে আমাকে ছাড়িয়ে নিয়ে পাগল ভেবে বলেছিলো মাকে চলে যেতে।মা আসতে চাইছিলো না আমাকে ফেলে।বাবাকে ফোন দিয়ে বলেছিলো আশ্রমে আসতে।বাবা আসলো আশ্রমে।বাবার কাছে বাইনা ধরলো মা আমাকে মায়ের চায়ই চাই।বাবা মাকে অনেক বুঝিয়ে সেদিন নিয়ে এসেছিলো বাড়িতে।কিন্তু মা খাওয়া দাওয়া সব ছেড়ে শুধু আমার কথা ভাবতো।মাঝে মাঝে ভালো মন্দ রান্না করে নিয়ে যেতো আমাকে দেখতে।কিন্তু সেই খাবার আমার কাছে পৌঁছাতো কিনা মা জানতো না।ভেতরেই মা যেতে পারতো না।বাইরে থেকে দাড়োয়ান খাবারের বাটিগুলো রাখত আর বলতো আমাকে খাইয়ে দেবে।তখন বাবা মাকে সব সময় মন মরা হয়ে পরে থাকতে দেখতো।মায়ের কাছে আসলে মা জেদ ধরতো আমাকে এনে দিতে হবে।মায়ের সেই জেদের জন্য বাবা ম্যানেজারের স্বত্ত্বে রাজি হয়ে যায়। নিজের যা কিছু ছিলো সব বিক্রি করে আমাকে কিনে এনে মায়ের কোলে তুলে দেয়। মা খুব খুশি হয়েছিলো আমাকে পেয়ে। টাকা পয়সা ধন দৌলত এগুলোর চেয়ে তখন মাতৃত্বের সুখটা মায়ের কাছে বেশি প্রয়োজন ছিলো। সব হারিয়েও হাসি মুখে আমাকে নিয়ে একটা বস্তিতে গিয়ে ভাড়ার ঘড়ে উঠেছিলো বাবা-মা।সবার আগে আমার গল্প পেতে নীল ক্যাফের ভালোবাসা পেজে আসবেন।হঠাৎ একদিন খবর এলো মায়ের ছোট বোন আর বোনের স্বামী এক্সিডেন্টে মারা গিয়েছে। তাদের একটি মাত্র ছোট মেয়ে প্রায় আমার থেকে দু’বছরের ছোট।বাবা-মাকে হারিয়ে সেও অনাথ।বাবা-মা দেখতে গিয়ে মেয়েটাকে নিয়ে আসে আমাদের বস্তিতে।মেয়েটার নাম মাইশা।আমার ছোট বোন মাইশা।ওকে বাবা-মা স্কুলে ভর্তি করে।কিন্তু প্রথম শ্রেণীতে তিনবার পরীক্ষা দিয়েও উত্তীর্ণ হতে পারে না মাইশা।অবশেষে লেখা পড়াটাও আর হয়ে ওঠে নি ওর। আমি লেখাপড়া করলেও মাইশাকে নিয়ে বাবা-মা চিন্তায় থাকতো। আমার থেকে তখন বেশি আদর মাইশাকে দিতো। আমরা বড় হতে থাকলাম।আমার ভেতরে অনেক চেঞ্জ হতে থাকলো।কিন্তু মায়ের মনের মতো আমি হতে পারলাম না।এক সময় অনেক অভাব অনাটন এসে হানা দিলো পরিবারে।যা ধীরে ধীরে মাকে বুঝতে শেখালো এভাবে থাকা যায় না।মায়ের মেজাজ একটা সময় পর খিটখিটের চরম আকার ধারণ করলো।খিটখিটে মেজাজে রাগ হলেই আমাকে অনেক মারতো।শেষে এতোটাই বদল হলো মায়ের যে টাকার জন্য আমাকে বিক্রি করে বিয়ে দিলো উনার সাথে।
মায়ের সব কথা শুনে আমার সত্যি খুব খারাপ লাগছে।মনে মনে কতো কিছু ভেবেছি মাকে নিয়ে এতোদিন আমি। অথচ জন্ম ধারীনি মা না হয়েও যেটুকু করেছে তা অনেক আমার জন্য।আমাকে নিজের মেয়ে ভেবেছে সে।আশ্রয় দিয়েছে।লেখাপড়া করিয়েছে।শুধু সময় আর পরিস্থিতি তাকে এতোটা নিষ্ঠুর করে দিয়েছে।
মা চলে যাবার পর থেকে মন খারাপ করে কথাগুলো মনে করে বসে বসে চোখের পানি ফেলছি আমি।উনি রুমের মধ্যে এসে হুট করে আমাকে পেছনের থেকে জড়িয়ে ধরলেন। আমার কাঁধে থুতনির ভর দিয়ে বসলেন উনি।হাত দিয়ে আমার পেট আর বুক জড়িয়ে ধরে বললেন,
-একা একা কি ভাবছো হুমমম? আমাকে ভাবলে ঠিক আছে।
আমি চোখের পানি মুছে উনাকে সরিয়ে দিয়ে ঘুরে তাকিয়ে বললাম,
-সরুন তো।ভালো লাগে না সব সময়।বারবার গায়ে এসে কেন পরেন?
-আরু এভাবে কেন বলছো?
-একদম নাটক করবেন না।মন ভালো নেয়। আমাকে একটু একা থাকতে দিন।
উনি কিছু না বলেই আমার কোলের উপরে মাথাটা রেখে শুয়ে পরলেন,
-আরে আরে। বিছানার বালিশ পেয়েছেন নাকি? উঠুন বলছি আমার কোল থেকে আপনি। দেখছেন না আমার মনটা খারাপ? সরুন একটু একান্তে কাঁদতে দিন আমায়।
উনি দুই হাত দিয়ে আমার কোমড়টা চেপে ধরলেন।ঠোঁটে বাঁকা হাসি ফুটিয়ে বললেন,
-কিসের এতো মন খারাপ শুনি? যে স্বামীকে আজ সময় দিতে অসুবিধা হচ্ছে?
-স্বামী? কিছুক্ষণ পর বলবেন সুপারস্টার আহান খানের স্ত্রী হবার কোনো যোগ্যতা আমার নেয়।
-তুমি যা ভাবো তাই।খুশি? এখন আমার মাথায় একটু হাত বুলিয়ে দেও।নইলে কিন্তু ঘুমের ওষুধ নেবো ঘুমোতে।
-নেন নাহ।ঘুমের ওষুধ কেন নেশার ওষুধ নেন।ওইযে আপনার পার্সোনাল এসিস্ট্যান্ট আছে না? কি যেন নাম? হ্যাঁ মনে পরেছে নাইরা মেয়েটা।যার গালে চুমু খেয়েছিলেন আপনি।লজ্জা করলো না বউয়ের সামনে অন্য মেয়ের গালে চুমু খেতে? আপনি আসলেই একটা লু** বলবো না।গালি দিতে শিখিনি আমি।যান তো ওর কাছে গিয়ে ঘুমান।ওকে আদরে সোহাগে ভরিয়ে দেন।
উনার মাথাটা আমি নামিয়ে দিলাম কোল থেকে। উনি উঠে আমার মুখোমুখি হয়ে বসলেন।আমার চুলের ভাজে হাত ডুবিয়ে আমাকে টেনে আনলেন নিজের মুখের সামনে।খুব কাছ থেকে আমার চোখ মুখের দিকে তাকিয়ে বললেন,
-রাগিও না আমায়।
-আপনাকে রাগানোর মতো কথা কি আমি বলেছি? মনে তো হয় না।
-আরু আমি কিন্তু রাগ কন্ট্রোল করতে পারি না।তাই বলছি অফ যাও।
-তাই নাকি? এখন আমাকে ভয়ও দেখাচ্ছেন? মারবেন আমাকে? নিন না নিন আপনার যা স্বভাব চর মারুন।গালটা এগিয়ে দিয়ে বললাম।
উনি কোনো কথা বলছে না।রাগি দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন।আমি ঝট করে উনাকে ধাক্কা দিয়ে বিছানায় ফেললাম।তারপর উনার উপরে উঠে আসলাম।
-আহান আপনাকে আমি খুব ভালোবাসি। আমাকে একটু আদর করবেন?
উনার মুখের দিকে তাকিয়ে কথাটা বললে উনি মুখে হাসি ফুটিয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরলেন।আর আমি উনাকে ঠেলে উঠে আসলাম উনার উপর থেকে।
-বিশ্বাস করলেন নাকি?
-মানে?
-আপনি যা করেন তাই করলাম অভিনয়। উনার গলা ধরে কথাটা বলে ছেড়ে দিলাম।
-তাহলে তুমি আমাকে মন থেকে ভালোবাসি বলো নি?
-নাহ! বোঝালাম আপনাকে।কেমন লাগে ভালোবাসা নিয়ে নাটক করলে।
🍁🍁🍁
ওদিকে খাবার টেবিলে বসে আছে মাইশা তার শ্বাশুড়ি, ননদ আর রুহানের সাথে।কাটা চামচে বাঁধিয়ে গপগপ করে লুডুস খেয়ে চলেছে সবাই।মাইশা গোল গোল চোখ ঘুড়িয়ে সবার খাওয়া দেখছে।চামচ নাড়িয়ে চাড়িয়ে শব্দ করে সকলের মুখের দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।শ্বাশুড়ি মা ব্যাপারটা লক্ষ্য করে বলছে খাচ্ছো না কেন বউ মা? জবাবে মাইশা রুহানের মুখের দিকে তাকায়। কারণ রুহান বলেছে কারও সাথে কথা না বলতে।কেউ কথা বললেও উত্তর না দিতে।রুহান হাসি মুখে মায়ের দিকে তাকিয়ে উত্তর দেয় মাইশা আমার হাতে খেতে চাচ্ছে মা। রুহান মাইশাকে আপন মনে খাইয়ে দিতে লাগে।মাইশার কাছে লুডুসের স্বাদটা কেমন যেন অসহ্য লাগতে থাকে।মনে মনে বলতে থাকে রাতের বেলায় ভাত না খেয়ে এরা এমন খাবার কেন খাই? রুহান বুঝতে পেরে বলে,
-জানেমান ভালো লাগছে না খাবারটা?
মাইশা মাথা নাড়িয়ে না বোঝায়। রুহান মাইশার কপালে একটা চুমু দিয়ে বলে,
-এক মিনিট আসছি দাড়াও।
টেবিল থেকে উঠে ফোন করে রুহান খাবারের অর্ডার দিতে যায়। মাইশার রুহান চলে যাওয়ায় মন খারাপ হয়ে যায়।প্রচন্ড ক্ষুদাও লেগেছে।তাই চামচ ফেলে দিয়ে লুডুসে সস ঢেলে হাত দিয়ে চিটকে খেতে শুরু করে এবার।মাইশার খাওয়া দেখে ননদ বলে ওঠে।ইয়াক ছিঃ মা কিভাবে গাইয়াদের মতোন করে খাচ্ছে ভাবি ওটা?শ্বাশুড়িও বলে ওঠে।একি বৌ মা কিভাবে খাচ্ছো মিডিলক্লাসদের মতোন? মাইশার কানে কোনো কথা যাচ্ছে না।আরামচে আয়েশ করে খেয়ে চলেছে মাইশা।শ্বাশুড়ি রেগে গিয়ে লুডুসের প্লেটটা টেনে ছুঁড়ে ফেলে দেয় ফ্লোরে। মাইশা মুখ তুলে শ্বাশুড়ির দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে, লুরুসটা ফেলে দিলেন মা? খাইতে দিলেন না আমারে?
চলবে,,,,,,,,