ভালোবাসব যে তোকে !! Part- 08
আয়ান যে মৌ এর ছবি লুকিয়ে লুকিয়ে তুলছে তা দাদি দেখে ফেলে।উনি ছাদে এসেছিলেন মৌ আর অহনার সাথে জরুরি কিছু কথা বলার জন্য।
দাদি আয়ানের কাছে গিয়ে বলে,
“তোর ই বউ রে।এভাবে লুকিয়ে ছবি তোলার কোনো দরকার আছে??”
দাদির এভাবে হঠাৎ করে কথা বলায় আয়ান চমকে উঠে।সে আমতা আমতা করে জবাব দেয়,
“আআরে ততেমন কিছু না দাদি।আমি তো চারপাশের প্রকৃতির ছবি তুলছিলাম।”
“ওওও তাই নাকি। এতো মিথ্যা কথা বলতে হবে না আমাকে।”এ বলে দাদী আয়ানকে মৌ আর অহনার কাছে নিয়ে গেলো।
দাদিঃ ঐ তোরা এমন কেনো রে??
অহনাঃ কেমন গো দাদি??
দাদিঃ আমার নাতিটাকে নিয়ে একটু ছবি তোলা যায় না??
এ কথা শুনে মৌ আর অহনার সে কি হাসি।দাদি ওদের হাসি দেখে ভ্রু কুঁচকিয়ে বললো,
দাদিঃহাসির কি বললাম আমি??
মৌ ঃতুমি এমনভাবে বললা।মনে হচ্ছে আমরা কোনো খেলা খেলছি আর তোমার ছোটো কিউট নাতি কে নিচ্ছি না।
এ বলেই মৌ হাসতে লাগলো।আর আয়ান মনভরে সেই হাসি দেখছে।
দাদিঃএতো কিছু জানি না।।
আর এই অহনা তুই এদিক আয় তো।
দাদির কথা শুনে অহনা উনার কাছে গেলো।
দাদিঃআর এই যে,আয়ান তুই এখানে দাঁড়ীয়ে থাকবি নাকি মৌ এর পাশে গিয়ে দাঁড়াবি??
আয়ানঃআরে দাদি অযথা এসব কেনো?? আমি ওর কাছে গিয়ে কি করবো??
দাদিঃতুই যাবি নাকি মাইর খাবি?
আয়ানঃ আচ্ছা আচ্ছা যাচ্ছি।এর জন্য আবার মারার ভয় দেখানো লাগে নাকি।
এরপর আয়ান গিয়ে মৌ এর পাশে দাঁড়ালো।মৌ তো লজ্জায় শেষ।সে লজ্জায় মাথা নিচু করে আছে।আয়ান মৌ এর থেকে কিছুটা দূরে দাঁড়ীয়ে আছে।এ দেখে অহনা বললো,
“আরে ভাইয়া মৌ তোমার বউ। অচেনা কেউ না। কাছে গিয়ে দাঁড়াও।আর শুনো মৌ এর কাঁধে হাত রাখবা।”
আয়ান বাধ্য ছেলের মতো মৌ এর কাধে হাত রাখলো। আয়ান এর এমনভাবে ধরায় মৌ হালকা কেঁপে উঠলো।
এভাবে বেশ কয়েকটা ছবি তুললো অহনা।
হঠাৎ আয়ান মৌকে হালকা স্বরে বললো,
“তোকে আজ অনেক বেশি সুন্দর লাগছে।” এ কথা শুনে মৌ অবাক চোখে আয়ানের দিকে তাকালো। আয়ানও মৌ এর দিকে তাকালো। এই মুহুর্তের একটা ছবি অহনা তুলে নিলো।ছবিটা তোলার পর সে দাদিকে দেখালো এটা।তিনি দেখে বললেন,”মাশাল্লাহ, দুজনকে একসাথে খুব সুন্দর লাগছে।”
ছবি তোলা শেস হওয়ার সাথে সাথে মৌ অহনাকে নিয়ে রুমে গেলো ড্রেস চেন্জ করবে বলে।
“অহনা একটু রুমে চল। কাজ আছে।”
“আচ্ছা চল।”
মৌ আর অহনা রুমে এসে দরজা বন্ধ করে দিলো।এরপর মৌ গিয়ে ধপ করে বেডে বসলো।
“আমার না কেমন জানি হাত পা কাঁপছে।”
“কেনো তোর আবার কি হলো??”
“কি জানি।”
“আচ্ছা তুই কি কাজে আসতে বললি?”
“ওহ হ্যা।আসলে আমার না শাড়ীর আচঁলের সাথে সেফটিপিন আটকে গিয়েছে। কাধে হওয়ায় নিজে খুলতে পারছি না।একটু খুলে দে তো।”
“আচ্ছা দাঁড়া তুই।”
অহনা সেফটিপিনটা খুলতে চেষ্টা করছে।এর মধ্য আবার দাদি তাকে ডাক দিলো।এজন্য সে চলে গেলো। কিন্তু যাওয়ার সময় ভুলে দরজা খুলে রেখে চলে যায়।মৌ ও সেটা খেয়াল করেনি।
এদিকে আয়ান রুমে যেন কি একটা কাজে রুমে আসে। সে দেখতে পায় মৌ ড্রেসিং টেবিল এর সামনে দাঁড়ীয়ে শাড়ীর আঁচলে হাত দিয়ে কি একটা খুলার ট্রাই করছে।
আয়ান রুমে ঢুুকে দরজা আটকে দিলো।মৌ ভেবেছে যে হয়তো অহনা এসেছে।সে বললো,
“এতো তাড়াতাড়ি চলে আসলি!ভালো। আচ্ছা তাড়াতাড়ি আয় রে।এই মহা ঝামেলা খুলে দিয়ে যা।”
আয়ান মৌ এর পিছে গিয়ে দাঁড়ালো। সে যে মৌ এর শাড়ী থেকে সেফটিপিনটা খুলবে এতেই কেমন যেনো লাগছে। বারবার হাত দিতে গিয়েও সরিয়ে নিচ্ছে।মৌ এসবের কিছু দেখেনি।কারন সে নিচের দিকে তাকিয়ে হাতের চুড়ি খুলছিলো।
“কি রে দাঁড়ীয়ে আছিস কেনো??”
মৌ এর এ কথায় আয়ান মৌ এর কাঁধে হাত দিয়ে সেফটিপিনটা খুলার চেষ্টা করছে।
“জানিস অহনা তখন তোর ভাইয়া আমাকে কি বলেছিলো??বলেছিলো যে আমাকে বলে আজকে অনেক সুন্দর লাগছে। আমি তো শুনে বেশ অবাক হয়ে যাই।”
“কেনো এতো অবাক হওয়ার কি হলো। তোকে তো সুন্দর ই লাগছিল।”
আয়ানের কন্ঠ শুনে মৌ ভয় পেয়ে যায়। সে আয়ানার দিকে তাকাতেই দেখে আয়ান মুচকি মুচকি হাসছে।
“তততুমি এখানে কেনো?অহনা কই?”
“কেনো আমাকে ভালো লাগছে না এখানে দেখতে??”
মৌ কি বলবে।সে কোনো কথা খুঁজে পাচ্ছে না।
“আমি রুমে এসেছিলাম কাজে।কিন্তু দেখলাম যে তুই শাড়ীর আচঁলে কি যেনো করছিস।এদিকে আমাকে অহনা ভেবে তুই বললি যে তোকে হেল্প করতে। তাই হেল্প করতে চলে এলাম।”
এদিকে মৌ এর তো ভয়ে হাত কাঁপছে।
আয়ান বেশ কয়েকবার সেফটিপিনটা খুলার চেষ্টা করছে।কিন্তু সেটা শাড়ীর সাথে আটকে গিয়েছে। তাই সে আর কোনো উপায় না পেয়ে দাঁত দিয়ে খোলার চেষ্টা করবে ভাবছে।
তাই সে মৌ এর কাঁধের কাছে মুখটা নিয়ে গেলো।আয়ানের গরম নিশ্বাস মৌ এর কাঁধে পরায় সে কেঁপে উঠলো।আয়ান আলতো করে সেফটিপিনটা খুলে দিলো। মৌ তো এখনো চোখ বন্ধ করে আছে। হঠাৎ দরজায় নক পরলো। দরজায় অহনা নক করছে।
“কি ব্যাপার মৌ দরজা আটকানো কেনো?খোল দরজা।”
আয়ান হন্তদন্ত করে গিয়ে রুমের দরজা খুলে বের হয়ে গেলো।অহনা তো এটা দেখে থ বনে গেলো।সে আস্তে করে রুমে গিয়ে দেখলো মৌ ড্রেসিং টেবিল এর সামনে দাঁড়ীয়ে আছে।
“ওওওওওও।তো এখানে রোম্যান্স চলছিলো।
ধ্যত আমি কাবাবে হাড্ডি হয়ে গেলাম।”
“এই তুই চুপ করবি??যা তো এখান থেকে।”
“আচ্ছা আচ্ছা যাচ্ছি রে।”
মৌ গিয়ে বারান্দায় দাঁড়ালো।তার মনে এখন হাজারো প্রশ্ন।
” আচ্ছা আয়ান কি আমাকে পছন্দ করে বা ভালোবাসে??
নাহ এসব কি ভাবছি আমি। সে আমাকে কেনো ভালোবাসতে যাবে।সে তো মনাকে ভালোবাসে।
আমিও না।।….উল্টা পাল্টা চিন্তা করি শুধু।”
পরেরদিন মৌ আর অহনা কলেজ থেকে আসার পথে দেখলো মনা আর একটা ছেলে হাত ধরে হেঁটে কোথায় যেনো যাচ্ছে।(মৌ এর আগে মনাকে আয়ানের সাথে দেখেছিলো বলে মনাকে সে চিনে।)
মৌ ত এ দেখে পুরাই অবাক। কারন মনা যেভাবে ছেলেটার হাত ধরে রেখেছে তাতে মনে হচ্ছে তারা দুজন বয়ফ্রেন্ড গার্লফ্রেন্ড।
“এই অহনা আমি যা দেখছি তা কি তুইও দেখছিস?”
“হ্যা রে।বিশ্বাস হচ্ছে না এই মেয়ে এমন। এর জন্য ভাইয়া তোর সাথে খারাপ ব্যবহার করে!!!”
“আমারও বিশ্বাস হচ্ছে না।আয়ানকে বললেও হয়তো সে বিশ্বাস করবে না।”
“হুম। তাই তো তুই তাড়াতাড়ি ছবি তুলে রাখ।”
অহনার কথা শুনে মৌ তো তাড়াতাড়ি ছবি তুলতে চাইলো আয়ানকে দেখাবে বলে। কিন্তু সে ব্যাগের থেকে ফোন বের করতে করতেই মনা আর ঐ ছেলেটা চোখের আড়াল হয়ে গেলো।
“ধ্যাত চলে গেলো এতো তাড়াতাড়ি!! এখন কি হবে??”
“কি আর হবে। ভাইয়া কে মুখে বলা ছাড়া আর উপায় নেই।কারন কোনো প্রুফ ই তো নেই আমাদের কাছে।”
বাসায় এসে মৌ আর অহনা তো অস্থির হয়ে আছে। কখন আয়ান আসবে আর কখন তাকে সব বলবে তারা।
কিন্তু রাতে আয়ান বাসায় আসলেও তাদের দুজনের মনে ছিলো না। বাসার কিছু কাজে তারা অনেক বিজি হয়ে গিয়েছিলো।
রাতে খাওয়াদাওয়া শেষে সবাই ঘুমাতে চলে গেলো।আয়ান আজকে একটু টায়ার্ড ছিলো বলে আগে আগেই ঘুমিয়ে পরে।
এদিকে মৌ ভেবেছিলো যে সে ঘুমাতে যাওয়ার আগে আয়ানকে আজকের ঘটনাটা বলবে।কিন্তু রুমে আসার পরে তাকে বেশ হতাশ হতে হলো।কারন আয়ান তো ঘুমিয়ে পরেছে।তাই সেও ঘুমিয়ে পরলো।
সকালে,
আয়ানের ঘুম থেকে উঠার আগেই মৌ এর ঘুম ভেঙে যায়।সে উঠে ফ্রেশ হয়ে নিচে যায় নাস্তা বানাতে।
আর আয়ান ঘুম থেকে উঠে শাওয়ার নেয়। তারপর রেডি হয়ে নাস্তা সেরে রুমে আসে কিছু কাগজপত্র নেওয়ার জন্য।
রুমে এসে কাগজপত্র গুছাতে গুছাতে সে মনা কে ফোন দিলো,
“হ্যালো মনা,তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে।”
“কি কথা?”
“সেটা দেখা হলেই বলবো।তুমি “রংধনু” রেস্টুরেন্ট এ এসো।”
“আচ্ছা।’
এসব কিছু আবার মৌ শুনে ফেলে। তার একদিকে যেমন রাগ হচ্ছে অন্যদিকে খুব খারাপ লাগছে।সে নিজেকে যতই বুঝাক আয়ান তাকে পছন্দ করে না বা ভালোবাসে না,কিন্তু মন তার কিছুটা মেনে নিয়েছে যে আয়ানের মনে হয়তো কোনো ফিলিংস আছে।কিন্তু এখন মনা আর আয়ানের দেখা করার কথা শুনে সে আশাটুকুও শেষ।
মৌ আয়ানকে কিছু বলতে যাবে কিন্তু কিছু কাজের জন্য আয়ানের আম্মু তাকে নিচে ডাকে।তাই সে কিছু না বলেই নিচে চলে যায়।আর আয়ান অফিসের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পরে।
১২টার দিকে মৌ আয়ানকে ফোন দিয়েই যাচ্ছে।কিন্তু আয়ান ফোন ধরছেই না।তার এখন প্রচণ্ড রাগ লাগছে।রাগে রীতিমত তার হাত কাঁপছে।সে আর কোনো উপায় না পেয়ে তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নিলো।তার উদ্দেশ্য রেস্টুরেন্ট এ গিয়ে আয়ান আর মনাকে আচ্ছামতো ঝাড়া।
অহনা আর দাদি নিচে ড্রইং রুমে বসে গল্প করছিলে।তারা দুজনে দেখলো মৌ রেডি হয়ে নিচে নামছে।
দাদিঃকি ব্যাপার মৌ??এই সময়ে কোথায় যাচ্ছিস??
মৌ ঃতোমার নাতির ব্যান্ড বাজাতে যাচ্ছি।খুব ভালো মানুষ তো সে।অহনা তুই যাবি??
অহনাঃ হ্যা হ্যা যাবো।
মৌ ঃতাহলে ৫ মিনিটের মধ্য রেডি হয়ে আয়।
অহনাঃ ঠিক আছে যাচ্ছি।
এরপর অহনা তার রুমে গেলো রেডি হতে।
দাদিঃ কি হয়েছে বল তো মৌ।
মৌ ঃদাদি এখন কিছু জিজ্ঞাসা করো না। আমি পরে এসে বলবো।
দাদিঃঠিক আছে।তোর যা ভালো মনে হয়।
অহনা রেডি হয়ে আসার পর মৌ আর অহনা বেরিয়ে পরে। রিকশা নিয়ে সোজা রেস্টুরেন্ট এ গিয়ে নামে।মৌ যে ভাড়াটুকু দিবে সেটার ধৈর্য পর্যন্ত নে তার।এদিকে অহনা ভাড়া দিয়ে দিলো আর সে রেস্টুরেন্ট এর ভিতর ঢুকলো। তার চোখ এখন আয়ান আর মনাকে খুঁজছে।
কোনার একটা টেবিলে তার চোখ আটকে গেলো।তার যেনো বিশ্বাস ই হতে চাচ্ছে না।যদিও সে জানে মনা আর আয়ান এর রিলেশন এর কথা।কিন্তু তারপর ও এটা দেখার পর তার খুব কষ্ট হচ্ছে।
আসলে মনা আয়ানের হাতের পর হাত রেখে কথা বলছে।কিন্তু আয়ান কিছুই বলছে না।
অহনারও এসব দেখে খুব রাগ লাগছে।মৌ আর কিছু না ভেবে ঐ টেবিলের উদ্দেশ্যে পা বাড়ালো।
চলবে…..