বিবাহ শঙ্কা —>পর্বঃ- ২
লেখাঃ শারমিন আক্তার
——পরের দিন লাবিবার বাবা ভাই সোহানদের বাড়ি আসে তাদের লাবিবার বিয়ের কার্ড দিতে। যেহেতু নেহা লাবিবার ভাবি সে হিসাবে বেয়াই বাড়ি প্রথম নিমন্ত্রন কার্ড দিলেন।
ও হ্যা নেহা আর লাবিবার বড় ভাই লিমনের বিয়ে হলো একবছরের বেশি। মূলত ওদের বিয়ের সময়ই সোহান আর লাবিবার সম্পর্কটা বেশি গাড় হয়। বিয়ের সময় বেশ কদিন কয়েকবার করে লাবিবা আর সোহানের দেখা হতো। তখন বন্ধুত্বটা গড়িয়ে ভালোবাসায় রূপ নিলো। সোহান সম্পর্ক তৈরী হবার আগেই লাবিবাকে বলছিলো ও জীবনে কোন দিন বিয়ে করবে না। লাবিবা তখন সোহানের কথায় গুরুত্ব দেয় না। ও ভেবেছিলো সম্পর্ক হলে সব ঠিক হয়ে যাবে, লাবিবা ওর ভালোবাসা দিয়ে সোহানকে বদলে দিতে পারবে কিন্তু হলো উল্টো! লাবিবা সোহানকে বদলাতে পারেনি কিন্তু সোহান লাবিবাকে ঠিকই নিজের মত করে ফেলছে। লাবিবা সোহানের জন্য এত পাগল হইছে যে সোহান সারাজীবন বিয়ে না করলে লাবিবা সোহানের সাথে থাকতে রাজি। কিন্তু সেটা সোহানকে বুঝতে দেয় না।
লাবিবার বাবার সাথে লিমন আর লাবিবাও আসলো সোহানের বাসায়। তখন সকাল দশটার বেশি বাজে, সোহান তখনও ঘুমে। লাবিবা সবার সাথে কথা বলে সোহানের দাদির কাছে এসে বলে
লাবিবাঃ ঐ বুড়ি তোমার বজ্জাত নাতিটা কোথায়? (সোহানের দাদি লাবিবা আর সোহানের বিষয় সব জানে। আর লাবিবার সাথে তার বেশ ভাব আছে, তিনিই লাবিবাকে সোহানের পছন্দ অপছন্দ সম্পর্কে বলে দিতো।
দাদিঃ আমায় বুড়ি বলিস না তোর থেকে বেশি সুন্দরী আছি এখনো।
লাবিবাঃ তো যাও আরেকটা বিয়ে করো।
দাদিঃ পারলে কি করতাম না । কিন্তু তোরা কি করছিস এক বছর ধরে প্রেম করেও সোহানকে বিয়েতে রাজি করাতে পারলি না। রাজিতো দূরের কথা বললাম উল্টা পাল্টা কিছু করে সোহানকে ব্ল্যাক মেইল কর, তোকে বিয়ে করতে বাধ্য কর তুই তো কচুও পারলি না।
লাবিবাঃ চুপ করো তো দাদি, তোমার নাতি তেমন সুযোগ দিছে কখনো, এক নাম্বারের ড্রাইফ্রুট।
দাদিঃ সেটা আবার কি?
লাবিবাঃ কাঁচ কলা! একদিন সোহান আর আমি বাড়িতে একা ছিলাম। আরে মনে নাই কয় মাস আগে নেহা ভাবির সাথে তোমাদের বাড়ি বেড়াতে আসলাম, তুমি তখন তোমার ভাইয়ের বাড়িতে ছিলে! তখন নেহা ভাইয়াকে নিয়ে ঘুরতে গেলো। সোহানের বাবা তো কাজে ছিলো আর সোহানের মা সেও পাশের বাড়ি গিয়েছিলো। তখন সোহান আর আমি টিভি দেখছিলাম, রোমান্টিক মুভি আমার মনে তখন রোমান্স দৌড়া দৌড়ি করছিলো ভাবলাম সোহান কাছে আসবে কিন্তু গাঁধাটা রোমান্টিক মুভি বদলে রেসলিং শো দেখতে শুরু করলো মন চাইছিলো তখন ঘুষি মেরে ওকে জন্মের মত রেসলিং দেখিয়ে দি। তারপর আমি একটু ওর পাশে গিয়ে বসতেই ধমক দিয়ে বলে লাবিবা কন্ট্রোল ইউর স্লেফ। তখন লজ্জায় মরে যেতে ইচ্ছা করছিলো। বলো তো দাদি কি করবো এখন?
দাদিঃ ওর কান টেনে ছেড়ে ছিড়ে দিলি না কেন?
লাবিবাঃ বজ্জাতটা কোথায়? বাসায় আছে?
দাদিঃ ঘুমাচ্ছে।
লাবিবাঃ দাদি এখানে পাহারা দাও আমি একটু ওকে জ্বালিয়ে আসি। কেউ আসলে কুক দিও।
দাদিঃ যা হাসতে হাসতে।
লাবিবা গিয়ে দেখে সোহান ঘুমিয়ে আছে। কোলবালিশটাকে এত শক্ত করে জড়িয়ে ধরছে যেনো ওর বিয়ে করা বৌ। লাবিবা মনে মনে বলছে হারামি ঘুমের মধ্যে দেখলে মনে হয় ভাজা উল্টে খেতে পারে না, অথচ শয়তানের খালাতো ভাই পুরো কাঁচা মাছই চুরি করে খেয়ে নেয়। আমার মনটা নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে, ব্যাটা বজ্জাত, হনুমান, বাদরের ছয় নাম্বার বাচ্চার বন্ধু। দেখাচ্ছি মজা তোকে—-
লাবিবা কোলবালিশটা ধীরে ধীরে সোহানের কাছ থেকে কোলবালিশটা সরিয়ে কোলবালিশটার জায়গায় নিজে শুয়ে পরলো। সোহান কোলবালিশ ভেবে লাবিবাবে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। লাবিবা ভাবছে এ ব্যাটা তো আমাকে কোলবালিশ ভেবে জায়গায় বেজায়গায় হাত দিচ্ছে। নারে কেমন কেমন যেনো লাগছে, তারাতারি উঠে যাই লাবিবা উঠতে যাবে কিন্তু সোহান শক্ত করে জড়িয়ে ধরে লাবিবার চুলে নাক ডুবিয়ে দিলো। তারপর কানের কাছে মুখ নিয়ে বললো
সোহানঃ আমার সাথে উল্টা পাল্টা কিছু করার খুব শখ হইছে না তোমার ! আজ শখ পুরোন করে দি!
ঢোক গিলে লাবিবা বললো
লাবিবাঃ তুমি জেগে আছো?
সোহানঃ যখন তোমার শরীরের উষ্ম পরশ পেলাম তখন জেগে উঠলাম। তা কোলবালিশ সরিয়ে যে নিজে কোলবালিশ হলে এখন যদি না ছাড়ি! কিছু করে ফেলি তখন কি করবে?
লাবিবাঃ ঠিক আছে ধরে রাখো। আমি জোড়ে চিৎকার করছি বাড়ির সবাই এখানে ছুটে এসে আমাদের এভাবে দেখে জোড় করে হলেও বিয়ে দিয়ে দিবে, তখন বাধ্য হয়ে তোমায় আমাকে বিয়ে করতেই হবে।
সোহান তারাতারি লাবিবাকে ছেড়ে দিয়ে বিছানা থেকে নিচে নেমে বললো
সোহানঃ কি ডাকাত মেয়ে। এতে যে তোমার বদনাম হবে যানো?
লাবিবাঃ তো! তাতে যদি তোমাকে পাই তবে সব বদনাম হাসি মুখে মাথা পেতে নিতে রাজি আমি।
সোহানঃ পাগলামির একটা সীমা আছে লাবু।
লাবিবা কিছু না বলে শক্ত করে সোহানকে জড়িয়ে ধরে বললো আজই তোমার সাথে পাগলামির শেষ দিন। এই নাও আমার বিয়ের কার্ড। শেষ বারের মত কোন এক আশায় তোমার কাছে ছুটে আসছিলাম কিন্তু ভুলে গেছিল সব আশা পূরন যোগ্য নয়। ভালো থেকো, তারপর লাবিবা চোখের জল মুছতে মুছতে চলে গেলো। আর সোহান অপলক চোখে বিয়ের কার্ডটার দিকে তাকিয়ে রইলো। কার্ডে লেখা রাফসান ওয়েড লাবিবা। লাবিবার সাথে অন্য কারো নাম দেখতেই সোহানের বুকটা ধক করে উঠলো। কেনো যেনো খুব খারাপ লাগছে ওর। মাত্র সাতদিন বাকি আছে লাবিবার বিয়ের। সোহান ভাবছে লাবিবাকে হ্যা বলে দিবো? না না আমি কখনো বিয়ে করবো না। বিয়ে মানে কষ্ট, এ কষ্ট আমি সহ্য করতে পারবো না।
সোহান নিচে গিয়ে দেখে লাবিবার বাবা, ভাইয়া, সোহানের বাবা মা বসে কথা বলছে। লাবিবা চুপচাপ চেয়ারে বসে আছে, সবার কথায় শুধু হু হা করছে। অন্য কোন কথা বলছে না। সোহানের দিকে একবারও তাকালো না সবার কথা বলা শেষে ওরা চলে গেলো। সোহান লাবিবার দিকে তাকিয়ে ছিলো কিন্তু লাবিবা একটা বারও সোহানের দিকে তাকায়নি।
লাবিবারা যাবার পর সোহানের দাদি সোহানকে বলে
দাদিঃ জানিস দাদু ভাই আমরা কাছের মানুষের মূল্য তখনই বুঝি যখন সে হারিয়ে যায়। তেমনি তুইও লাবিবার কদর তখন বুঝবি যখন লাবিবা অন্যের বৌ হবে। তিনি সোহানকে অর কিছু বললো না। সেদিন লাবিবা সোহানকে একবারও ফোন করেনি, আর সোহান সে লাবিবাকে ফোন করার সাহস যোগাতে পারেনি।
পরের দিন সোহান রিকশায় করে বাসায় ফিরছিলো তখন দেখে লাবিবা একটা ছেলের সাথে রিকশায় যাচ্ছে, ছেলেটাকে দেখে চিনতে অসুবিধা হলো না সোহানের কারন বিয়ের কার্ডে যে ছেলেটার ছবি ছিলো সে, রাফসান। ছেলেটা লাবিবার হাত ধরে ছিলো, সেটা দেখে সোহানের মাথায় রক্ত উঠে গেলো, ও রিকশাটার পিছু নিলো কিছুদূর যাবার পর দেখে ছেলেটা নেমে একটা গলির ভিতর চলে গেছে আর লাবিবা রিকশায় করে যাচ্ছে কতদূর যাবার পর সোহান লাবিবার রিকশার সামনে দাড়িয়ে রিকশা থামিয়ে লাবিবাকে নামতে বলে লাবিবা রিকশা থেকে নামতেই রিকশাওয়ালার ভাড়া মিটিয়ে তাকে চলে যেতে বলে সোহান। লাবিবার বাড়ি কিছুদূর আগে থামালো। সেখানে এসময় লোকজন খুব কম থাকে, রিকশাওয়ালা যেতেই সোহান খুব জোড়ে লাবিবাকে একটা চড় মারে। আর বলে ঐ ছেলেটা কে যে , তোমার কাঁধে হাত দিয়ে বসে ছিলো, আর তুমি ওকে কিছু না বলে ওকে এলাউ করছিলে? কেন?
লাবিবা গাল থেকে হাত নামিয়ে বলে
লাবিবাঃ আজ কাঁধে হাত দিয়েছে বলে তোমার কলিজায় এত লাগছে, চারদিন পর যখন বিয়ে হবে তারপর যখন আমার শাড়ি খুলবে আমার শরীরে হাত দিবে তখন কেমন লাগবে তোমার? সামান্য হাত ধরায় এমন করছো যখন আমার সাথে ফিজিক্যাল রিলেশন করবে তখন কি করবে? আর—- বাকি কথা বলার আগে সোহান লাবিবাকে আবার একটা চড় মারলো আর বললো
সোহানঃ তোমার শরীরে টাচ করার অধিকার শুধু আমার। অন্য কেউ তোমাকে ছুলে খুন করে ফেলবো বলে দিলাম।
লাবিবাঃ কিসের অধিকার খাটাচ্ছো তুমি? হু আর ইউ? কি হও তুমি আমার, আমার স্বামী, বয়ফ্রেন্ড , নাকি অন্য কিছু ? কি নাম তোমার আমার সম্পর্কের? অধিকার খাটানোর জন্য না অধিকারের নাম দেয়া লাগে, আছে তোমার আমার সম্পর্কের কোন নাম, উত্তর দাও?
লাবিবার এতগুলো প্রশ্নের একটা উত্তরও দিতে পারলো না সোহান।
লাবিবাঃ প্রথমে আমাদের সম্পর্কের নাম দাও তারপর অধিকার খাটাতে এসো। এর মধ্যে লাবিবার ফোনে কল আসলো লাবিবা ফোনটা রিসিভ করে বললো হ্যা রাফসান বলো! তারপর নিজের বাড়ির পাঁনে হাঁটা ধরলো
লাবিবার এমন দুঃসাহস দেখে সোহানের রাগে শরীর জ্বলতে লাগলো। রাগের চোটে সোজা বাড়ি চলে আসে। রুমের দড়জাটা এত জোড়ে আটকায় যে, শব্দে পুরো বাড়ি কেঁপে উঠে। তাইফা বেগম সোহানের কাছে যেতে চাচ্ছিলো কিন্তু সোহানের দাদি নিষেধ করে।
সোহান রুমে ডুকে কতক্ষন ঝিম মেরে বসে থাকে তারপর বাথরুমে ডুকে মাথায় ঠান্ডা পানি ঢালতে থাকে। অনেকক্ষন পর বের হয়ে ফোনটা হাতে নিয়ে লাবিবাকে ফোন দেয়, কিন্তু লাবিবার ফোন বার বার ওয়েটিং এ পায়। এভাবে এক ঘন্টার মত চেষ্টা করে বার বার ওয়েটিং আসে। লাবিবা সোহান ছাড়া এত সময় ফোনে কারো সাথে কথা বলে না, সোহানের মনে হচ্ছিলো লাবিবার সাথে কথা না বললে সোহান পাগল হয়ে যাবে। মাথার শিরা উপশিরাগুলো মনে হয় ছিড়ে যাবে। শেষে নেহাকে ফোন দিলো।
নেহাঃ হ্যা ভাইয়া বলো?
সোহানঃ লাবিবাকে একটু ফোনটা দে তো?
নেহা লাবিবার কাছে গিয়ে বলে লাবু সোহান ভাইয়া তোর সাথে কথা বলবে?
লাবিবাঃ তাকে বল আমি রাফসানের সাথে কথা বলছি পরে তার সাথে কথা বলবো। ফোনের ওপর পাশ থেকে সোহান সব শুনলো। রাগে ফোনটা কেটে দিয়ে পাশে থাকা ফুলদানিটা ভেঙে গুড়িয়ে দিলো।
সোহানের মাথার মধ্যে শুধু ঘুরছে রাফসান নামের কেউ তার লাবিবাকে স্পর্শ করছে, লাবিবার শাড়ির সেফটিপিন একটা একটা করে খুলছে, লাবিকে——-
নাহ্ সোহান আর নিতে পারছে না। কিন্তু কি করবে ও!
চলবে——–