প্রেমে পড়া বারণ ( সিজন-2 ) Part- 19
খুব শখ করে বৃষ্টিতে ভেজার ফল হাতেনাতে পেলাম। রাতেই ঝাকিয়ে জ্বর আসলো।
গোটা একটা দিন জ্বরে পুড়েছি। বিকালে রেহানের আম্মু এসেছিলো।আন্টি দেখে গেছেন আমার গায়ে ভীষণ জ্বর। বিছানায় লেপ্টে আছি।।
রাতে রেহান আসলো।
– আজও মনে হচ্ছে বৃষ্টি হবে। ভিজতে যাবি?
চল.. ভিজবি।।
রাগ- বিরক্তি নিয়ে রেহান কথাগুলো বললো।
ওর কথার জবাব না দিয়ে আমি পিটপিট চোখে ওকে দেখছি।।
রেহান আবার বললো – এখন কিছু কমেছে জ্বর?
কপালে হাত ছুঁয়ে দেখে।
– হা, একটু কম এখন। তোকে কে বললো আমার জ্বর?
– আম্মু বলেছে। তোর কি কখনো কোনো কান্ড-জ্ঞান হবে না? জানিস বৃষ্টিতে ভিজলে জ্বর হবে, তাও ভিজলি।
– হঠাৎ করেই বৃষ্টি শুরু হলো। অনেকটা ভিজে গিয়েছিলাম। তাই আরও একটু ভিজলাম।।
– খুব ভালো করেছিস।
কিছু সময় চুপচাপ বসে থেকে রেহান চলে যাবার জন্য উঠে দাঁড়ালো।
– আমি যাই এখন, কাল এসে দেখে যাবো।
কয়েক পা সামনে গিয়ে আবার ফিরে একটু এগিয়ে এসে বললো – তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠ। তোর সাথে অনেক কথা আছে।
– কি কথা বল।
– উহু… এখন না আগে সুস্থ হ। জ্বরের ঘোরে পরে কিনা কি বলবি। আমার কথাগুলো একেবারে সুস্থ মস্তিষ্কে শুনতে হবে।
– আচ্ছা। শুনবো।
রেহান চলে গেলো।
আমি ভাবনায় পড়ে গেলাম। কি বলবে রেহান? ও কি বলতে চাইছে? নিশ্চয়ই গুরুত্বপূর্ণ কিছু। নাহলে এভাবে বলতো না।
ও কি তানিশার বিষয়ে কিছু বলবে?
কিন্তু তাহসিনের বিয়ের পরে তো ওর মুখে তানিশার নাম একবারের জন্যেও শুনিনি।
তানিশাকে নিয়ে কি ভাবছি!!
শুধু রেহানের সাথে একটু কথা বলতে দেখেই….
এমনও তো হতে পারে যে রেহানের মনে এসব কিছুই আসেনি। আমিই উল্টো পাল্টা ভেবেছি।
এটাই হবে। কারণ এমন কিছু হলে রেহান আমাকে বলবেনা এটা অসম্ভব!
কিন্তু কি বলবে সেটাই তো বুঝতে পারছি না।
পরদিন বিকেলে রেহান আসলো।
– কিরে কি অবস্থা তোর?
– ভালো।
কপালে হাত দিয়ে দেখলো
– জ্বর তো তেমন নেই এখন। ঔষধগুলো খাচ্ছিস?
– হে,খেয়েছি।
রেহান…
– হুম?
– তুই কি যেন বলবি বলেছিলি?
– হা।বলবো তো।আরেকটু সুস্থ হয়ে উঠ।
– আমার তো জ্বর নেই এখন। বল কি বলবি।
– উহু… না। যেদিন আবার বৃষ্টিতে ভেজার মতো সুস্থ হবি,সেদিন বলবো।
বলেই রেহান মিটিমিটি হাসছে।
– ধুর! সামান্য একটু জ্বরই তো ছিল। এখন তো তাও নেই।আর এমন ভাব করছিস যেন কি হয়ে গেছে!
– আরে বাবা বলবো তো। এতো ব্যস্ত হচ্ছিস কেন? আমার একটু কাজ আছে। সামনের মাসেই তো জয়েন করতে হবে।
দুদিনের মধ্যে কাজগুলো গুছিয়ে তারপর বলবো।
– হুম। আচ্ছা।
– হিয়া….
– হুম… বল।
– তুই কি কখন আমার কথা ভাবিস?
আমি একটু চমকে উঠলাম।
– তোর কথা ভাবি… মানে কি নিয়ে? বুঝতে পারছি না!
– নাহ। কিছু না।
– কিন্তু এইমাত্র কি বললি? সত্যিই বুঝতে পারিনি। তোর কথা কি ভাববো??
– তেমন কিছু না।
আচ্ছা আমি এখন যাই। পরে আসবো।
বলেই রেহান হনহন করে চলে গেলো।
একটু সময় লাগলো রেহান কি বলেছে সেটা বুঝতে।
নিজের অজান্তেই ঠোঁটের কোনে হাসি দেখা দিলো। তার মানে রেহান আমাকে নিয়ে ভাবে। আমাদের বন্ধুত্বের গন্ডি পেরিয়েও রেহান আমার কথা ভাবে।
তবে কি রেহান আমাকে …………
হঠাৎ করে মনের হাওয়া অন্যদিকে বইতে লাগলো। আমার ভেতরে একটা তোলপাড় শুরু হয়েছে। একটা অস্থিরতা যা আমাকে কষ্ট দিচ্ছে না, বরং ভালো লাগছে।
মুহুর্তেই মনের মধ্যে ঝড় শুরু হলো। আজ এই ঝড় সবকিছু এলোমেলো করে দিলো।
রেহান কত কেয়ার করে। কত ভাবে, ভালো মন্দ খেয়াল রাখে,জীবনের ছোট- বড় সবকিছু আমার সাথেই শেয়ার করে।
এসব কেবলই বন্ধুত্বের জন্য?
না। শুধু বন্ধুত্ব নয়। এর বাইরে কিছু একটা আছে।
সন্ধ্যা হয়ে গেছে।
– আপু…
– দিয়া.. আয়।
– তোর জ্বর কমেছে?
– হা….এখন জ্বর নেই।
– চল আম্মু তোকে ডাকে।
– কেন?
– চা খাবিনা?
– সবাই বসে আছে। চল।
– ওহহহ… সন্ধ্যা হয়ে গেছে! খেয়াল করিনি।
দিয়ার সাথে গেলাম।
রাতে বারবার রেহানের কথাই মনে পড়ছে।
একটু লজ্জাও লাগছে।
কখন যে ঘুমিয়ে পড়লাম! এক ঘুমে সকাল।
সারাটা দিন গেলো। কিন্তু রেহান একবারও এলো না। কয়েকবার বেলকনিতে গিয়ে দেখলাম।
না, রেহানকে দেখতে পাইনি।
বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নামে। ভেবেছিলাম হয়েতো সন্ধ্যায় আসবে। কিন্তু আসেনি রেহান।
একটু অভিমান হলো। কেন আসেনি? একবার এলে কি এমন হতো?
মনে হয় রেহান আমাকে কথাটা জিজ্ঞেস করে নিজেই লজ্জায় পড়ে গেছে। তা নাহলে যতই ব্যস্ত থাকুক আমার জ্বর জানে,ও আসতোই।
আরও একটা দিন গেলো, রেহান এলো না।।
এতো দিন নিজের মনে একটা আড়াল ছিলো। একটা অস্বচ্ছ কাচের দেয়াল ছিলো। যেকারণে আমার অনুভূতি গুলো অস্বচ্ছ ভাবে দেখতে পেতাম।
কিন্তু এখন সব কিছুই স্বচ্ছ। স্বচ্ছ কাচের মতো। আমার মনে আর কোনো আড়াল নেই।
যে কথাটা নিজেই নিজের কাছে স্বীকার করতে ভয় পেতাম, আজ তা স্বীকার করলাম।
হা… আমি রেহানকে ভালোবাসি।
এ ভালোবাসা এই দুদিনেই তৈরি হয়নি।খুব ধীরে ধীরে হয়েছে যা নিজেও বুঝতে পারিনি।
আজ দুদিন রেহানকে না দেখে কতটা অস্থির হয়েছি সেটা কেবল আমি জানি।
কতবার বেলকনিতে দাঁড়িয়েছি শুধু ওকে এক নজর দেখবো বলে। যখন দেখা পাইনি কতটা কষ্ট হয়েছে কেবল আমি জানি।
অভিমানে কান্না পেয়েছে।
কেন একবার আসলো না রেহান?!
পরদিন রেহানের ফোন আসলো।
স্ক্রিনে ওর নাম ভেসে উঠার সাথে সাথে আমার বুক ধড়ফড় করে উঠলো।
বুঝতে পারছি না কিভাবে কথা বলবো ওর সাথে।।
যাহ… এসব ভাবতে গিয়ে মিসড কল হয়ে গেছে!
আবার কল দিলো।
এবার আর মিসড কল হতে দিবো না। অতশত ভেবে কাজ নেই,আমি একদম নরমাল থাকবো।
ওকে বুঝতেই দেয়া যাবে না কিছু, যতদিন ও নিজে থেকে কিছু না বলে।
ফোনটা ধরলাম।
– হ্যালো……
– হিয়া…. তুই এখন কই?
– এই বিকালবেলা কই থাকবো? বাসায়।
– ওকে গুড। আমার সাথে একটু বের হতে পারবি? আধা ঘণ্টার জন্য?
– কেন? কোথায় যাবি?
– কাছেই….. তোকে কিছু বলবো বলেছিলাম। আজকে বলতে চাই।
কথাটা শুনে বুক ধুক করে উঠলো। নিঃশ্বাস যেন থমকে গেছে।
নিজেকে সামলে নিয়ে বললাম
– এখনি যাবি?
– হা। তুই ১০ মিনিটের মধ্যে বের হয়ে আয়।
– আমি বাহিরেই আছি।তুই বের হয়ে ফোন দে।
– আচ্ছা… আমি আসছি।
ফোন রেখে দ্রুত রেডি হতে গেলাম। আজকে একটু অন্যরকম লুক চাই।
একটু ডিফারেন্ট। কি পড়ে যাবো ভেবেই মাথা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
একটা ড্রেস পছন্দ হচ্ছে না। রাগ হচ্ছে নিজের উপর, একটা ড্রেসও পড়ার মতো মনে হচ্ছে না।
শেষ পর্যন্ত একটা শাড়ি বাছাই করলাম। অফ হোয়াইট কালারের জামদানী শাড়ি। গত জন্মদিনে রেহান গিফট করেছিলো।
পড়ার সুযোগ হয়নি।
আর আজই এই শাড়ি পড়ার সময়।
দ্রুত রেডি হয়ে নিলাম।
আম্মুকে গিয়ে বললাম – আম্মু, একটু বের হবো।
আম্মু আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলেন কিছুক্ষন। হঠাৎ করে শাড়ি পড়ে বের হচ্ছি, তাই একটু অবাক।যদিও মুখে কিছু বললেন।
তারপর আম্মু জিজ্ঞেস করলেন – কার সাথে বের হবি?
– আমরাই…. রেহান ও যাবে।
একটু ঘুরিয়ে বললাম। আম্মু ভেবেছে সবাই একসাথে ঘুরতে বের হবো।
– ঠিক আছে, বেশি দেরি করবি না।
– আচ্ছা আম্মু।
বাসা থেকে বের হয়েই রেহানকে কল দিলাম।
– তুই কোথায়? আমি বের হয়েছি।
– গুড। এখন সোজা বৈকালিতে চলে আয়।
রেহানের কথা মতো ‘ বৈকালিতে ‘ পৌঁছে গেলাম বিশ মিনিটের মধ্যে।
এটা একটা চমৎকার রেস্টুরেন্ট। বন্ধ রুমে আভিজাত্য নয়,বরং খোলা প্রকৃতির জন্য এই রেস্টুরেন্ট অনেক পছন্দের। প্রায়ই আমরা এখানে যাই।
বিশেষ করে আমার অনেক পছন্দের যায়গা।
গেইট থেকে ভেতরে ঢুকতেই রেহানের ফোন – ডান পাশে চলে আয়।আমি দেখতে পাচ্ছি তোকে।
কিছু না বলে ফোন রেখে দিলাম। আমি এখনো রেহানকে দেখতে পাইনি।কিন্তু ও আমাকে দেখছে!
ভাবতেই ভেতরে ধুকপুক শুরু হলো।
ডান দিকে একটু যেতেই রেহানকে চোখে পড়লো। কর্নার ঘেঁষে যে টেবিলটা আছে, সেখানে বসে আছে।
আমাকে দেখে হাত তুললো একটি।
আমি ধীরে ধীরে রেহানের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। যত এগিয়ে যাচ্ছি ততো হার্টবিট বেড়ে যাচ্ছে আমার।
আজ মনের ভেতরে ঝড় বইছে।।
এতো দিনের বন্ধুত্ব, কিন্তু কোনো দিন এতো সংকোচ, এতো লজ্জা হয়নি।
চলবে…..