না চাইলেও তুই আমার !! Part- 10
দীর্ঘ ছয় ঘণ্টা জার্নি করার পর নিধিদের বাড়িতে পৌঁছায়।সবাই হল রুমে বসে ভালো মন্দ জিজ্ঞাসা করছে।মিরা এখনো এসে পৌঁছায়নি।নিরার জন্য আইসক্রিম কিনার সময় মিরাদের গাড়ি পিছিয়ে পড়েছে।নিধি বাবা রবি হোসেন রাজশাহীর একজন নামকরা ব্যবসায়ি।নিধিরা তিন ভাই বোন বড় ভাই বিজয় হোসেন,ছোট ভাই জয় হোসেন।নিধি সবার ছোট।নিধির বড় ভাইয়ের বিয়ের কল দুই বছর পূর্ন হবে।নিধির ছোট ভাই এখনো বিয়ে করেনি।নিধিদের বাড়িতে কল অনুষ্ঠান বিধায় আত্মীয়স্বজন সবাই চলে এসেছে আর যারা এখনো আসতে পারেনি তারা কাল সকালে আসবে।এরমধ্য মিরার গাড়ি চলে আসে।মিরা নিরাকে কোলে নিয়ে বাড়ির দিকে পা বাড়ায় মিরার পিছনে ডেনি মিরার ট্রলি নিয়ে বাড়ির ভিতরে যায়।মিরাকে দেখে মিরার মামু বলে।
মামু : এসে গেছিস মামনি।আয় তোর জন্যই অপেক্ষা করছিলাম।
আশেপাশে যতো ছেলে ছিলো সবাই মিরার দিকে ডেবডেব করে তাকিয়ে আসে।মিরা না সাজলেও ওকে পুতুলের মত লাগে।নিরাকে ওর মাম্মার কোলে দিয়ে মিরা ওর মামুর পাশে গিয়ে সোফায় বসে।
মামু : মামনি উনি হলেন নিধির বাবা রবি হোসেন রাজশাহীর একজন নামকরা ব্যবসায়ি।
মিরা : হ্যালো আঙ্কেল।কেমন আছেন আপনি?
নিধির বাবা : ভালো মামনি তুমি কেমন আছো?
মিরা : ভালো।
নিধির বাবা : আসতে কোনো অসুবিধা হয়নি তো?
মিরা : না আঙ্কেল তেমন কোনো অসুবিধা হয়নি।
নিধির বাবা : যাই হোক তোমার সাথে পরিচয় করিয়ে দেই।আমার বড় ছেলে বিজয় হোসেন।
মিরা : হায়।আমি মিরা।মিরা খান।
বিজয় : হ্যালো।আমি বিজয় হোসেন।আমার wife নিপা।
নিপা : হায় মিরা তোমার সাথে পরিচয় হয়ে ভলো লাগলো।
উত্তরে মিরা শুধু মুচকি হেসে দেয়।নিধির বাবা একজনকে দেখিয়ে দিয়ে বলে।
নিধির বাবা : এই আমার ছোট ছেলে জয় হোসেন।
জয় : হায় বিউটি!
জয়ের কথা শুনে সবাই বেশ অবাক হয়।মিরা কিছু না বলে চুপ করে বসে আছে।জয় আবার বলতে থাকে।
জয় : হেই বিউটি তোমার কি আমাকে পছন্দ হয়নি?
নিধি পরিস্থিতি সামলানোর জন্য সবাইকে ফ্রেশ হতে পাঠিয়ে দেয়।বাড়ির কাজের লোকরা সবার রুম দেখিয়ে দেয়।সবাই চলে গেলে নিধি ওর বাড়ির লোকেদের সামনে গিয়ে ওর ভাই জয়কে বলে।
নিধি : ছোট ভাইয়া তুই কি কিছু জানিস না মিরা আপুর সম্পর্কে?
জয় : না জানার কি আছে।তোর ননদ।দেখতে কি মিষ্টি রে।জীবনে প্রথম কাউকে দেখে ক্রাশ খেলাম।ভাবছি আজকে রাতেই ওকে প্রপোজ করে ফেলবো।
নিপা : তাহলে তো ভালোই হবে আমি মিষ্টি একটা জা পাবো।
নিধি বিরক্তি হয়ে বলে।
নিধি : তোমরা কি শুরু করেছো থামবে!
বিজয় : কেনো বোন কিছু হয়েছে?
নিধি জয়কে দেখিয়ে বলে।
নিধি : ভাইয়া এই হাদা টাকে বুঝোও আপুকে এসব কথা তো দূরে থাক আপুর সামনেও যেনো না যায়।
বিজয় : তুই কি বলছিস বোন কিছুই বুঝতে পারছি না।
নিধি : তোমরা তো জানো আপুর বাবা মার ডিভোর্সের পর আপু বিদেশে চলে যায়।তখন থেকে আপু ভালোবাসা নামক শব্দটা শুনতে পারে না।আমারা মামার কাছ থেকে শুনছি আপুর বিজনেস পার্টনারে ছেলে তাকে প্রপোজ করলে তাকে গুলি করে।মামার বন্ধুর ছেলে বিয়ের প্রস্তাব দিলে মেরে হাত পা ভেঙ্গে দেয়।এরকম আরো অনেক ঘটনা আছে।আমার কথা বিশ্বাস না হলে সোশাল মিডিয়া দেখে নিতে পারিস না হলে মামার কাছ থেকে জেনে নিস।ছোট ভাইয়া আমি তোর ভালোর জন্য বলছি আপুর থেকে দূরে থাকিস এরপর কিছু হলে আমাকে দোষ দিতে পারবি না।
জয় একটা ঢোক গিলে বলে করুন চোখে তাকিয়ে বলে।
জয় : কি বলছিস এসব বোন?
নিধি : সত্যি বলছি।
নিপা হেসে দিয়ে বলে।
নিপা : ভাই তোমার আর মিরাকে প্রপোজ করে লাভ নেই।
নিধি : জানো ভাবী আপুর মনে না অনেক কষ্ট।কাউকে কখনো বুঝতে দেয় না।আমাদের বিয়েতে বাবা মামাকে মিরা আপুকে নিয়ে বাংলাদেশে আসতে বলে কিন্তু আপু বিয়েতে এলো না।মামার হঠাৎ করে জ্বর ঠান্ডা লাগলে আপু কিভাবে যেনো খবর পেয়ে বাংলাদেশে চলে আসে।সেদিনই আপু চলে যেতে চেয়েছিলো কিন্তু মামার কথা রাখতে আপু বাংলাদেশে থেকে যায়।জানো এখানে আসার জন্য আপুকে কত কষ্ট করে রাজি করাতে হয়েছে।এই প্রথম আপু তার পরিবারের সাথে কোনো অনুষ্ঠান এটেন করতে এসেছে।আপু আমাদের কারো সাথে মন খুলে কথা বলে না।বাবা আর দাদার সাথে কথা দূরে থাকে তাদের দিকে তাকিয়েও দেখে না।
নিধির কথা শুনে সবাই ছোট করে নিঃশ্বাস ফেলে।খান বাড়ির সবাই ক্লান্ত থাকায় তাদের আর কেউ বিরক্ত করেনি।রাতে ডিনার টেবিলে সবাই একসাথে খেতে বসে।সবাই টুকি টাকি কথা বলছে।ডিনার করে সবাই হল রুমে বসে আড্ডা দিতে শুরু করে।এরমধ্য বারোটা বাজলে সবাই বিজয় আর নিপাকে বিবাহ বার্ষিকীর শুভেচ্ছে যানায়।কেক কাটা হয়ে গেলে একে একে সবাই গিফট দিতে শুরু করে।মিরা নিপাকে কালো ডায়মন্ডের কানের দুল আর বিজয়কে একটা দামি হাত ঘড়ি গিফট করে।সবাই কথা বলতে বলতে প্রায় দুইটা বেজে যায়।নিধির মা সবাইকে তাড়া দিয়ে ঘুমতে পাঠায়।মিরা রুমে না দিয়ে নিধিকে কাছ থেকে ছাদে কোন দিক দিয়ে যায় তা জেনে ছাদে চলে যায়।মিরা ছাদের বেতের চেয়ারে বসে আকাশের চাঁদটার দিকে তাকিয়ে থাকে।মৃদু বাতাসে বেশ ভালো লাগছে মিরার।আনমনে কালকে রাতের কথা মনে পড়ে যায় মিরার। না চাইতেও ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে ওঠে। মিরা ভাবতে থাকে কালকে ঠিক এই সময় এক কাপ চা খাওয়ার জন্য ওকে জোর করে ঘুম থেকে তুলে নিয়ে গেছিল।মিরার জীবনে স্মরণীয় স্মৃতির মধ্যে কালকের রাতটা অন্যতম। মিরা বসে বসে এসব হাবি জাবি ভাবছে তখন মিরার ফোন বেজে উঠে। মিরা ফোনের স্ক্রিনে না তাকিয়ে ফোন রিসিভ করে বলে।
মিরা : হ্যালো।
– এত রাত ওবদি জেগে আছো?
মিরা ফোনের স্ক্রিনে তাকিয়ে দেখে মিহান ফোন করেছে। আনমনে ঠোঁটে হাসি ফুটে ওঠে।
মিহান : কি হলো কথা বলছো না যে?
মিরা : কি বলবো?
মিহান : এখনো ঘুমোওনি কেনো?না কি আমার কথা ভাবছো?
মিরা : আপনার কথা ভাবতে যাবো কেনো?
মিহান : কালকে রাতে এইসময় আমরা একসাথে হাটছিলাম।আর আজকে রাতে তুমি কয়েক কিলোমিটার দূরে আছো।
মিরা কথা ঘুরানোর জন্য বলে।
মিরা : আপনি এত রাতে ফোন দিলেন যে?
মিহান : কিছুক্ষন আগে হসপিটাল থেকে ফিরলাম।তোমার কথা খুব মনে পড়ছিলো জান।একবার ভাবছি তোমাকে ফোন করবো আবার ভাবি না থাক তুমি ঘুমিয়ে পড়েছো বোধহয়।অবশেষে আর থাকতে না পেরে তোমাকে ফোন দেই।
মিরা : আপনি কি প্রতিদিনই এত রাত করে বাড়ি ফিরেন?
মিহান : আরে না পরশু থেকে ছুটি নিবো তো তাই একদিন একটু কাজের চাপ বেশি।
মিরা : অহহ।
মিহান : ডিনার করেছো?
মিরা : হুম।
মিহান : কিছু বলছো না যে শুধু আমার প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছো।
মিরা কিছু একটা ভেবে একটা শয়তানি হাসি দিয়ে বলে।
মিরা : ও আপনাকে তো একটা কথা বলতে ভুলেই গেলাম।
মিহান : কি কথা?
মিরা : নিধিকে চিনেন তো?
মিহান : হ্যা কেনো কি হয়েছে?
মিরা : নিধির ছোট ভাইয়া জয় আছে না।উনি বোধহয় আমাকে প্রথম দেখে ভালোবেসে ফেলছেন।আমি এখানে আসছি পর থেকে শুধু আমার দিকে তাকিয়ে থাকে।
মিহান রাগে ফোস ফোস করছে কিছু না বললে মিরা আবার বলতে শুরু করে।
মিরা : জানেন ডিনারে সময় আমার পাশে বসে সব কিছু বেরে বেরে দিচ্ছিলো।উনি,,,,
মিরা আর কিছু বলবে তার আগে মিহান রেগে চিৎকার করে বলে।
মিহান : তোকে আমি ছাড়া যে ভালোবাসবে তাকে আমি মেরে ফেলবো।তুই শুধু আমার।জয় না ফয় ওর কাছে আর একবার গেলে আমি কি করবো আমি নিজেই জানি না।তোর ভালোবাসার আমার দরকার নেই।আমি ভালোবাসলেই হবে।#না_চাইলেও_তুই_আমার হবি কথাটা ভালোভাবে মাথায় ঢুকিয়ে নেয়।
এসব কথা বলে মিহান ফোন রেখে দেয়ে।মিরা ফোনের স্ক্রিনে তাকিয়ে ঠোঁটের কোণে হাসি রেখা ফুটিয়ে তুলে বিড়বিড় করে বলে।
মিরা : পাগল ডাক্তার!
চলবে… 🍁