তারে আমি চোখে দেখিনি

তারে আমি চোখে দেখিনি ! সিজনঃ-2 !! Part- 08 (শেষ)

মেঘ বাড়িতে এসে তার মাকে আজকের সব ঘটনা খুলে বলে।শুধা মেঘের মুখে আয়াতের কথা যতো শুনছে ততোই যেন মুগ্ধ হচ্ছে।শুধা সিদ্ধান্ত নেয় কাল মেঘের সাথে ভার্সিটিতে যাবে আর আয়াতকে দেখে আসবে।সেই সাথে আয়াতের মাম্মামের সাথে কথা বলে মেঘ আর আয়াতের বিয়ের কথাও সেড়ে আসবে।

ওদিকে আবির বুঝতে পারে লাবন্য অনেক কেঁদেছে।তাই লাবন্যর পাশে গিয়ে বসে মাথায় হাত রাখলে লাবন্যর ঘুম ভেঙে যায়। লাবন্য চোখ মেলে চেয়ে তার বাবাকে দেখে উঠে বসে।আর সব খুলে বলে আজকের ঘটনা।সে এতোদিন যা করেছে ভুল করেছে।আর কখনো এমন ভুল করবে না।শুধু একটাই কস্ট মেঘকে হারিয়ে ফেলেছে।

মেয়ের এমন অনুশোচনাবোধ আর আকুতি দেখে আবির সিদ্ধান্ত নেয় কাল ভার্সিটি যাবে আর মেঘকে বোঝাবে লাবন্য আর আগের মতোন নেয়, বদলে গেছে।তাই মেঘ যেন লাবন্যকে বিয়ে করতে রাজি হয়।

মির্জা প্যালেসে,,
আজ সবাই খুব খুশি। সবাই মিলে একসাথে খাবার টেবিলে বসে খাচ্ছে। শুধু রুসা মুখে খাবার তুলছে না।সুস্থ হওয়ার পরও বারবার আবিরের মুখটা রুসার চোখের সামনে ভেসে ওঠছে।কারণে অকারণে রুসা বারবার উপলব্ধি করছে যে সে আজও আবিরকে সেই একই ভাবে ভালোবাসে।

রুসাকে আনমনা হয়ে খাবার সামনে বসে থাকতে দেখে বাড়ির সকলে মিলে রুসাকে খাইয়ে দেয়।আর সারাদিন রুসার সাথে হাসাহাসি করে সময় কাটাই যেন আবিরের কথা রুসা একবারও মনে না করে।এমনকি রাতে রুসাকে ঘুম পারিয়ে দিয়ে সবাই ঘুমাতে যায়।
,
,
,
নেহা চৌধুরী ডাক্তারের চেম্বার থেকে রিপোর্ট হাতে বের হয়।আর আনমনা হয়ে পুরোনো অতীতগুলোর কথা ভাবতে থাকে। কতোটা অন্যায় করেছে সে।বহু বছর আগে নিজের জন্মদিনের পার্টিতে আবিরকে ইনভাইট করে আবিরের সরবতের গ্লাসে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে দিয়ে যেই নোংরা খেলাটা খেলেছিলো সেই নোংরা খেলার ফসল আজ লাবন্য।

নেহা লাবন্যর দৌলতে আবিরকে ঠিকই স্বামী হিসেবে পেয়েছে কিন্তু বিয়ের পর একবারের জন্যও আবির নেহাকে নিজের স্ত্রীর মর্যাদা দেয় নি।নেহার কাছে সব আছে।টাকা, পয়সা, ধন, দৌলত। নেই শুধু ভালোবাসা।যাকে ভালোবেসেছে তাকে লাবন্যর জোড়ে বেঁধে রেখেছে কিন্তু এতোগুলো বছর ধরেও তাকে আপন করতে পারে নি।তবে তার আর নয়।ডাক্তার বলেছে নেহা আর বেশি দিন বাঁচবে না।নেহার হাতে সময় আছে আর মাত্র তিন মাস।ব্লাড ক্যান্সার নেহার।লাস্ট স্টেজে এসে ধরে পরেছে।এতোদিন টাকা, মিটিং, কনফারেন্স এগুলোর চাপে হসপিটালে আসতে পারে নি আর আজ নিজের ভুল বুঝতে পেরেও পারবে না নিজেকে বাঁচাতে।

নেহা হসপিটাল থেকে সোজা উকিলের কাছে যায় আর নিজের সব সম্পত্তি আবির আর লাবন্যর নামে লিখে দেয়।

পরেরদিন সকালে,,,
ভার্সিটিতে,
মেঘ তার মাকে নিয়ে আসে।আর লাবন্য তার বাবাকে নিয়ে আসে।অন্যদিকে মাহির এসেছে মায়া আর আয়াতকে ভার্সিটিতে ছেড়ে দিয়ে যেতে।গাড়ি থেকে নেমে লাবন্য ভার্সিটির মধ্যে দৌড় দেয়।মেঘকে ডেকে আনার জন্য।আর আবির গাড়ি থেকে নামতেই সামনে মাহিরকে দেখতে পাই।মায়া আর আয়াত ভার্সিটিতে ঢোকার পরে মাহির গাড়িতে উঠছিলো।আবির মাহিরকে দেখে জোড়ে জোড়ে ডেকে মাহিরের সামনে চলে আসে।তারপর মাহিরকে জড়িয়ে ধরে বলে,

আবিরঃ তুই এখানে মাহির, আমি খুব খুশি হয়েছি।জেল থেকে কিভাবে ছাড়া পেলি?

মেঘ আবিরকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়। তারপর আবিরের মুখের দিকে তাকালে রুসার কস্টগুলো মাহিরের মনে পরে যায় যেটা সহ্য করতে না পেরে আবিরকে মাহির মারতে থাকে। আর মারতে মারতে বলে,

মাহিরঃ এইভাবে আমার বোনটাকে তুই কেন ঠকালি আবির? কি দোষ করেছিলো আমার বোন? উত্তর দে আবির?

আবির মাহিরের হাতটা ধরে বসে।আর বলে,

আবিরঃ বিশ্বাস কর মাহির আমি আজও রুসাকে ভালোবাসি।

আবির মাহিরকে নেহার ষড়যন্ত্রের কথা সব খুলে বলে।

লাবন্য মেঘকে ডাকতে গিয়ে মেঘের মাকে দেখে।লাবন্য কিছু বললে তার কোনো কথায় মেঘ শুনতে চাইনা।তাই অনেক বুঝিয়ে মেঘের মাকে রাজি করাই লাবন্য, একবার যেন মেঘ তার সাথে যায়।লাবন্যর এতো অনুরোধে মেঘের মা রাজি হয়ে যায়। আর মেঘকে বোঝায়। মায়ের কথা রাখতে মেঘ লাবন্যর সাথে আসে আবিরের কাছে।এসে মাহির আর আবিরের বলা সব কথা মেঘ, লাবন্য শুনে ফেলে।লাবন্য তার মায়ের এসব কর্মকান্ড শুনে খুব কস্ট পাই।মেঘও অবাক হয়, ভাবে আসলেই কি নেহা চৌধুরী এতোটা নিচ?

মাহির সব শুনেও আবিরকে বিশ্বাস করে না।শুধুই মারতে থাকে। মাহির আবিরকে মারছে দেখে ভার্সিটির সামনে সব মানুষ জড় হয়ে যায়। মায়া, আর আয়াত উপরে ক্লাসরুমের সামনের বারান্দায় দাড়িয়ে বাইরে অনেক মানুষের ভীর দেখে।ভাবে কিছু একটা হয়েছে।দুজনে নেমে নিচে যায় আর ভীর ঠেলে দেখে মাহির আবিরকে মারছে।

মায়া আর আয়াত গিয়ে আবিরকে মাহিরের কাছ থেকে ছাড়ানোর চেস্টা করছে।আর লাবন্য পাশে দাড়িয়ে কাঁদছে।মাহির আবিরকে ছেড়ে দিলে লাবন্য এসে তার বাবাকে ধরে।আর কেঁদে কেঁদে মাহিরের সামনে হাত জোড় করে বলে,

লাবন্যঃ বিশ্বাস করেন আংকেল আমি আমার বাবাকে চিনি তিনি কখনো মিথ্যা বলে না।আমি আমার মমকেও চিনি, আমার মনে হয় বাবা যা বলছে সব সত্যি। দয়া করে আর আমার বাবাকে মারবেন না।আর যদি সত্যি কারও কোনো দোষ থেকে থাকে সেটা শুধুই আমার। না আমি এই পৃথিবীতে আসতাম আর না এতোগুলা জীবনে অশান্তি হতো।কোনো শাস্তি দেওয়ার হলে আমাকে দিন আপনারা।

লাবন্যর কথা শুনে মাহির গাড়িতে উঠে ওখান থেকে চলে যায়। আর লাবন্যও আবিরকে নিয়ে বাড়িতে চলে যায়।

এদিকে মেঘের মা মেঘের কাছে সব শোনে।আর ভাবে সত্যি নেহা চৌধুরীর সব দোষ।বেচারা স্বামীটাকে নিজের ভুলের মাসুল দিচ্ছে।

কিছুক্ষণ পর মেঘ গিয়ে মায়াকে তার মায়ের কাছে ডেকে আনে।আর শুধা মায়াকে বলে, মেঘের সাথে আয়াতের বিয়ে দিতে চায়।কিন্তু মায়া আয়াতের অনুমতি ছাড়া শুধার প্রস্তাবে রাজি হয় না।

শুধার সাথে কথা বলার পর মায়া গিয়ে আয়াতকে বলে মেঘের কথা।আয়াত বলে,

আয়াতঃ তোমার যা ভালো মনে হয় তাই করো মাম্মাম। আমার জীবনে কখনো কোন পছন্দ ছিলো না আর আজও নেয়। উপর অলা যার সাথে আমার জুটি ঠিক করে রেখেছে তার সাথেই বিয়ে হবে।

মেঘেরও আয়াতকে খুব পছন্দ।মায়া বাড়িতে গিয়ে সকলকে জানালে সকলে মেঘকে দেখতে চাই।তাই মেঘ তার মাকে নিয়ে মির্জা বাড়িতে আসে।মেঘ আর মেঘের মা মির্জা বাড়িতে এসেই অবাক।এতো বড় বাড়ির মেয়ে আয়াত অথচ আয়াতকে দেখলে বোঝায় যায় না।মেঘ আরও বেশি অবাক হয় এটা জেনে যে মির্জা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রির মালিক সোহাগ মির্জা আয়াতের দাদু।যে কিনা শহরের নামি-দামী ধনীদের মধ্যে একজন।

সকলে মিলে কথা বলছে আর মেঘের চোখ শুধু আয়াতকে খুঁজছে।কারণ, মেঘ যেই মেয়েটাকে পছন্দ করে বিয়ে করতে চাইছে সেই মেয়েটাকে কখনো দেখেই নি।শুধু তার আচার-আচরণ, স্বভাব এগুলো দেখেই কখন যে নিজের মনে জায়গা দিয়ে ফেলেছে সেটা মেঘ নিজেও জানে না।

কিছুক্ষণ পর মায়া আয়াতকে নিয়ে এসে মেঘ আর শুধার সামনে এনে বসায়।আয়াত এসেই সকলকে সালাম দেয়।আয়তের সালামের উত্তর দিয়ে মেঘ প্রথমবার তাকিয়ে আয়াতকে দেখে।তবে এবারও আয়াতের আপাদমস্তক ধাকা শুধু মুখটা ছাড়া।এবার মনভরে মেঘ আয়াতের মুখটা দেখে।মেঘ আগে কল্পনাও করতে পারে নি আয়াত দেখতে এতোটা সুন্দর।মেঘ আর আয়াতের দুজনের সম্মতিতেই কাল ওদের বিয়ের দিন ধার্য হয়।

ওদিকে নেহা উকেলের কাছে সব সম্পত্তির কাগজপত্র বুঝিয়ে দিয়ে বাড়িতে আসে।নেহা জানে সে আর বেশিদিন বাঁচবে না তাই লাবন্যর কাছে যায় কিছুটা সময় আজ অন্তত মেয়ের সাথে কাটাবে বলে।কিন্তু লাবন্য নেহার সাথে খুব বাজে ব্যবহার করে।লাবন্যর ব্যবহারে নেহা অনেক উত্তেজিত হয়ে যায়। আর অসুস্থ হয়ে পরে।নেহা অসুস্থ হয়ে পরলে আবির আর লাবন্য নেহাকে নিয়ে হসপিটালে যায়। আর সেখান থেকে ডাক্তারের কাছে জানতে পারে নেহার ক্যান্সারের কথা।এবার আর নেহাকে বাঁচানো সম্ভব নয়।তবুও ডাক্তার যথাসাধ্য চেস্টা করে।কিন্তু পারে না নেহাকে বাঁচাতে।

নেহার মৃত্যুর পর উকিল এসে সব সম্পত্তি আবির আর লাবন্যকে বুঝিয়ে দিয়ে যায়।মায়ের মৃত্যুর জন্য এক সপ্তাহ লাবন্য ভার্সিটিতে যায় না।এক সপ্তাহ পর ভার্সিটিতে গিয়ে শোনে আয়াত আর মেঘের বিয়ে হয়ে গেছে।লাবন্য এই খবরটা শুনে আরও বেশি কস্ট পাই।বাড়িতে এসে বাবার রুমের সামনে দাড়িয়ে দেখে রুসার ছবিটা বুকে নিয়ে কাঁদছে আবির।

লাবন্য ছুটে মির্জা বাড়িতে যায় আর রুসার কাছে হাত জোড় করে বলে আবিরকে ক্ষমা করে দিতে।আবির যা করেছে তাতে আবিরের কোনো দোষ ছিলো না।লাবন্যর মুখে সবকিছু শুনে রুসাও আবিরকে ক্ষমা করে দেয় আর লাবন্যকে মেয়ে হিসেবে মেনে নেয়। লাবন্যর কথা রাখতে আবির রুসাকে বিয়ে করে।কিন্তু রুসার চোখে চোখ রেখে তাকাতে পারে না।কিছুদিনের মধ্যে ধীরে ধীরে রুসা আর আবিরের দূরত্বও কমতে থাকে। দুজনেই উপলব্ধি করে তাদের ভালোবাসা আজও আগের মতোই আছে।

সবাই এখন সুখে আছে শুধু লাবন্য ছাড়া।সারাদিন সকলের মাঝে ভালো থাকার অভিনয় করলেও দিন শেষে লাবন্য বুঝতে পারে তার কিছুই নেয়। মাঝে মাঝে চৌধুরী মহলে গিয়ে আসবাবপত্র গুলোতে হাত বুলাই। মায়ের কাপড়গুলোর গন্ধ শুকে মাকে অনুভব করে।আর মেঘ আয়াতের ভালোবাসা দেখে নিরবে কাঁদে। ভাবে তখন যদি সে অহংকারী আর জেদি না হতো তাহলে মেঘ আজ তারই হতো।তবে কি আর করার! সবাই তো সবকিছু পাই না।কিছু মানুষের জীবনের গল্পটা হয়তো বাকিই থেকে যায়। কারণ সেই গল্পটা প্রকৃতি নিজের মতো করে সাজায়।কোনও একদিন প্রকৃতি নিয়ম মেনে লাবন্যর জীবনটাকেও সাজিয়ে দিবে।শুধু সেই সময়ের অপেক্ষা।

।।।।।।।।সমাপ্ত।।।।।।।।

পরিশেষে কিছু কথা, আমি বুঝতে পেরেছি গল্পটা পাঠকদের পছন্দ হয় নি।তাই সারসংক্ষেপে শেষ করে দিলাম।শুধু শুধু ডিটেইলস লিখে কি আর করবো যদি পাঠকরাই না পড়ে।এতে অন্তত গল্পের কাহিনীটা আপনারা বুঝতে পারবেন।আবার আসবো ইনশাআল্লাহ নতুন কোনো গল্প নিয়ে। দুই একজন যারা আমার গল্পটা ভালোবেসে পড়তেন তাদের সবাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ। সবাই ভালো থাকেন।সুস্থ থাকেন।আসেপাশের মানুষ গুলোকেও ভালো রাখেন।আপনারা সবাই আমার জন্য দোয়া কইরেন।আমিও আপনাদের জন্য দোয়া করবো।শুভ কামনা & আল্লাহ হাফেজ।

One thought on “তারে আমি চোখে দেখিনি ! সিজনঃ-2 !! Part- 08 (শেষ)

  • সানজিদা রহমান রোজ

    কে বলেছে আপনার গল্প ভালো না? আমার খুব ভালো লাগলো। আপনার জন্য শুভ কামনা রইল।

    Reply

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *