ঝরা ফুলের বাসর

ঝরা ফুলের বাসর !! Part- 28 (Last-Part)

সারা হসপিটাল মাতিয়ে, সবাইকে হাসিয়ে তুলি স্যারের সাথে নিজের বাড়িতে গেলো।মিলি নিজের রুমে তুলিকে নিয়ে গিয়ে অনেক খেললো।আর বলল বাবাই বলতো আমার মাম্মাম আছে।কিন্তু কোথাও হারিয়ে গেছে।
তুলি মিলিকে জড়িয়ে ধরলো।আর শান্তণা দিলো।মিলিকে বলল মনে কস্ট নিও না।আমারও বাবাই নেই।কিন্তু আমার মাম্মাম খুব ভালো।আমাকে অনেক ভালোবাসে।
আপু স্কুলে গিয়ে জানতে পারলো তার মেয়েকে ডা.মেঘ চৌধুরী নিয়ে গেছে।কথাটা শুনে আপু কিছুটা নিস্তব্ধ হয়ে রইলো।কিছুক্ষণ পর ভেবে দেখলো মেয়েটাকে ছাড়া বেঁচে থাকা তার পক্ষে অসম্ভব।তাই সমস্ত দ্বিধাবোধ কাটিয়ে ছুটে স্যারে বাড়িতে আসলো।

বাড়ির কলিং বেল বেজে উঠলে উৎসাহ নিয়ে এগিয়ে গিয়ে দরজাটা খুলে স্যার প্রিয়াকে দেখতে পেলো।প্রিয়া তার দুই বছরের ছেলেকে নিয়ে এসেছে বেড়াতে।কাল প্রিয়ার ছেলের জন্মদিন। তাই ইনভাইট করতে এসেছে।প্রিয়ার কন্ঠ শুনে মিলি খুব খুশি। রুম থেকে ছুটে এসে প্রিয়ার সামনে দাড়ালে দরজার কাছে আপু এসে দেখতে পেয়ে বললো মিলিকে থামতে।স্যার মুখটা ঘুরিয়ে আপুকে দেখে এগিয়ে আসলো।খুশিতে স্যারের চোখে পানি টলমল করছে।আপু নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করে প্রিয়ার দিকে তাকালো।ওর কোলে ছোট একটা ছেলেকে দেখে ভাবলো ওটা প্রিয়া আর স্যারের সন্তান।স্যার আপুকে জড়িয়ে ধরতে যাবে তখনই আপু স্যারের সামনে বসে পরলো।শাড়ির আঁচল উঠিয়ে স্যারের মুখের দিকে তাকিয়ে বললো আমার তুলিকে তুই দিয়ে দে মেঘ।ওকে ছাড়া আমি বাঁচব না।এতোগুলো বছর ধরে শুধু ওর জন্য আমি বেঁচে আছি।দুনিয়ায় আমার কিচ্ছু নেই তুলি ছাড়া।

মিলি ছবিতে ওর মাম্মামকে দেখেছে।তাই চিনতে পেরে এগিয়ে এসে মাম্মাম বলে ডাকে।আপু মিলিকে জড়িয়ে ধরে স্যারের দিকে তাকিয়ে বললো আমি আমার একটা সন্তানকে ফুলের কোলে তুলে দিয়ে নিজের পাপ মোচন করেছি।আরেকটা সন্তানকে হারাতে চাই না।তুই তোর জীবনে অনেকটা এগিয়ে গেছিস দেখে ভালো লাগলো।আমি জানি তুই ভালো থাকবি।প্রিয়ার দিকে তাকালো আর বললো আপু, আমি বুঝতে পারছি না তোমাকে কি বলে ধন্যবাদ দেবো।তুমি এই পরিবারটাকে এইভাবে সামলেছো।যাই হোক এই বাড়িটা কখনো আমার জন্য ছিলো না।
স্যার এবার খুব রেগে গেলো।আপুকে উঠিয়ে দাড় করালো।আপুর গালে একটা কষিয়ে চড় মেরে বললো অনেক ভুল করেছিস আর না।নিজেকে খুব মহান মনে করিস।পাপ মোচন করেছিস তাই না? তোর সব ভুলের শাস্তি সারাটা জীবন শুধু আমাকেই পেতে হয়েছে।তোকে ভালোবাসি বলে।এখন তুই শুনে রাখ আমার সন্তান আমার কাছেই থাকবে।তুই যদি এতোই চাস নিজের সন্তানকে তাহলে এবাড়িতে থাকবি।নাহলে চলে যা।
প্রিয়া এগিয়ে এসে আপুকে বললো দেখেছেন নূর ম্যাম স্যার আপনাকে কতটা ভালোবাসে? চাইলেও আপনার থেকে দূরে থাকার কথা ভাবতে পারে না।এইজন্যই বারবার আপনাকে ক্ষমা করে দেয়।স্যারকে আর কস্ট দিয়েন না ম্যাম।সেদিন যা হয়েছে তার জন্য আমি লজ্জিত। আমি আমার ভুলের জন্য আপনার কাছে ক্ষমা চাচ্ছি। প্লিজ স্যারকে আর কস্ট দিবেন না।
আপু কিছু বলতে যাবে এমন সময় তুলি বেড়িয়ে এসে আপুকে দেখে মাম্মাম বলে ডেকে উঠলো।আপু তুলির দিকে তাকিয়ে আবার মিলির দিকে তাকালো।এমন সময় আমি আবির চৌধুরীর সাথে বাড়িতে আসলাম আর আপুকে দেখে বললাম তোমার দুই মেয়ে। আপু আমাকে জড়িয়ে ধরে বললো কেমন আছিস? ওতো তোর সন্তান।তোর পরিচয়ে বড় হওয়ার কথা আমাকে কেন মাম্মাম বলছে।
আবির চৌধুরী আপুর মাথায় হাত রেখে বললেন বৌমা।আমি না হয় একটা ভুল করেই ফেলেছি তারজন্য আমার ছেলেটাকে আর কস্ট দিও না।আমাকে আমার দাদুভাইদের থেকে দূরে রেখও না।আমি জানতাম তুমি খুব জেদি কিন্তু এইভাবে মেঘকে ছেড়ে চলে যাবে কখনো ভাবতে পারি নি।আবির চৌধুরী হাত জোড় করে আপুর সামনে বললো ক্ষমা করে দিতে।আপু হাতটা ধরে বললো এটা কি করছেন বাবা।প্লিজ আমাকে লজ্জা দিবেন না।আমি আপনার দাদু ভাইদের আপনার কাছে রেখে গেলাম।ওরা আপনার সাথে থাকুক।আমি চলে যাচ্ছি।একটা মেয়ে হয়ে অন্য একটা মেয়ের স্বামীর ভাগ নিতে আসিনি আমি।প্রিয়াকে বললো তুমি খুব ভালো তাই আমাকে মেনে নিয়েছো।কিন্তু আমি চাই না তোমার জীবনটা নষ্ট হোক আমার জন্য।

আমি আপুকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিয়ে বললাম পাগল হয়ে গেছো তুমি? কিসব বলছো? তোমার মনে হয় স্যার আবার বিয়ে করবে? যেই স্যার তোমার ক্যান্সার হয়েছে যেনেও তোমার প্রতি একটুও ভালোবাসা কমেনি।সে তোমার অনুপস্থিতিতে অন্য কাউকে বিয়ে করবে? তুমি চলে যাওয়ার পর তোমার সিগনেচার করা ডিভোর্স পেপার ছিড়ে নিজের বাবার মুখে ছুড়ে মেরেছিলো স্যার।তোমাকে বলা প্রতিটা কথার জন্য নিজের বাবাকে দোষারোপ করেছে।নিজেকে বন্দী করে রেখেছিলো স্যার।আমি তোমার সন্তানকে নিই নি আপু।স্যারের অবস্থা দেখতে পারছিলাম না আমরা কেউ।ধীরে ধীরে নিজেকে শেষ করে দিচ্ছিলো।আমার আর হৃদের মনে হয়েছিলো এই সন্তানটাকে পেলে এর জন্য অন্তত বাঁচবে।ঠিক তাই হয়েছে।মিলিকে পেয়ে নিজের দেহে প্রাণ খুঁজে পেয়েছে।মিলির জন্য নিজেকে সামলেছে।আর ওই মানুষটাকে তুমি আবার ছেড়ে চলে যেতে চাও?
মিলি আপুকে জড়িয়ে ধরে বললো যেও না মাম্মাম।বাবাইয়ের তোমাকে খুব প্রয়োজন।

প্রিয়া বললো ম্যাম আমার বিয়ে সাত বছর আগে হয়েছে।এইটা আমার আর স্যারের সন্তান নয়।এটা আমার আর আমার স্বামীর সন্তান।আপনার বুঝতে হয়তো ভুল হচ্ছে।
আপু সব শুনে মিলির মাথায় হাত রাখলো।স্যার বলে উঠলো কেউ আর কিচ্ছু বলবে না।ওর চলে যেতে মন চাইলে যাক চলে।কথাটা বলে স্যার নিজের রুমে চলে গেলো।
মিলিকে জড়িয়ে ধরে সারামুখে চুমু দিয়ে আপু বললো কোথাও যাবো না আমি।তারপর আপু স্যারের রুমে গেলো স্যারের রাগ ভাঙাতে।
হৃদকে ফোন করে আপু আর তুলির ফিরে আসার কথা বললাম। হৃদ খুব খুশি হলো।আমি বাড়িতে এসেই ছুটে হৃদের কাছে গেলাম। জানালার পাশে হুইলচেয়ারে বসে আছে হৃদ।আর ওই আকাশটা দেখছে।ভাবছে সেদিন যদি আমাদের সন্তানটা বেঁচে যেতো তাহলে আজ আমরাও বাবা মা হতাম।কথা বলতে বলতে হৃদকে ঘুরিয়ে দেখলাম ওর চোখে পানি।আমার হাতটা শক্ত করে চেপে ধরে বলে উঠলো আমাকে ক্ষমা করে দে ফুল।আমি অন্য হাতে হৃদের হাতটা ধরে বললাম ছরি বলো না হৃদ তোমার তো কোনো দোষ না।সব দোষ ভাগ্যের।তুমি আমার সাথে আছো আর কিচ্ছু চাই না।হৃদকে ওষুধ খাইয়ে শুইয়ে দিলাম আমি।
আপনারা হয়তো ভাবছেন হৃদের কি হয়েছে? আজ থেকে সাত বছর আগে একটা এক্সিডেন্টে হৃদের কোমড় থেকে পা পর্যন্ত অসর হয়ে গেছে।এই অংশটুকু কাজ করে না।

।।।।।সমাপ্ত।।।।।
বিঃদ্রঃ সব গল্পের এন্ডিং ইচ্ছানুরূপ হয় না।মাঝেমধ্যে ভিন্ন কিছু পড়তে হয়।আমাদের মনে রাখা উচিৎ প্রত্যেকটা মানুষের জীবন সুখের নয়।আজ যে সুখে আছে কাল সে সবচেয়ে বেশি কস্টেও থাকতে পারে।তাই যেকোনো পরিস্থিতিতে বাস্তবতাকে মেনে নিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়াটাই কাম্য।ছেড়ে যাওয়াটা খুবই সহজ।কিন্তু মেঘের মতোন সব ভুল ক্ষমা করে অপেক্ষা করা আর ফুলের মতোন হাতটি ধরে এমন একটা পরিস্থিতিতে পাশে থাকা কতজনই পারে? তাই ছেড়ে গিয়ে নয়।ঝরা ফুলের বাসর হয়ে হলেও হাতটা ধরে পাশে থাকুন সবসময়।ভালোবাসাকে ভালো রাখুন।তাহলে আপনিও সুখি হবেন।আল্লাহ হাফেজ।