ঝরা ফুলের বাসর

ঝরা ফুলের বাসর !! Part- 08

থানায় এসে ভিডিওটা মেঘ স্যারকে দেখিয়ে বললাম আমি আপনাকে আর এখানে থাকতে হবে না স্যার।আমি সব প্রমাণ নিয়ে এসেছি।আপনি নির্দোষ।যে অপরাধ করেছে সে শাস্তি পাবে।হাত বাড়িয়ে মোবাইলটা স্যারের কাছে চাইলাম।বললাম,
-দিন স্যার এটা পুলিশকে দেখাবো।
স্যার নিরবে ভিডিওটা ডিলিট করে দিলেন।দেখা মাত্র আমি মোবাইলটা স্যারের হাত থেকে টেনে নিলাম।অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললাম,
-এটা আপনি কি করলেন স্যার? কতো কস্টে জোগার করেছিলাম ভিডিওটা আমি।
স্যার আমার মাথায় হাত রেখে দুচোখ বন্ধ করে আস্তে করে বললেন,
-ফুল এখান থেকে চলে যাও তুমি।

আমি কান্নাজড়িত কন্ঠে বললাম,
-আপনাকে আমি ছাড়াতে এসেছিলাম স্যার।আমি জানি আপনি কিছু করেন নি।টিভিতে নিউজ আসছে, হসপিটালে বলাবলি হচ্ছে আপনি খুব খারাপ।কিন্তু আপনি তো একজন সৎ আর আদর্শবান ডাক্তার।সবাইকে জানতে হবে আপনি কোনো অপরাধ করেন নি।আর আসল অপরাধীর শাস্তিও পেতে হবে।
-তাতে কি লাভ? আমার নিজের বাবাতো আমাকে বিশ্বাস করে নি।আর নূর? ওকে তো আমি নিজের থেকেও বেশি ভালোবেসেছিলাম।ও কখনো আমার ভালোবাসাটা বোঝে নি।এই ছেলেটাকেই ভালোবাসে এসেছে আমার নূর।জানো, যেদিন ওকে আমি প্রপোজ করেছিলাম।আমার উপর হেসেছিলো খুব।বিশ্বাসই করলো না।ভেবেছিলো আমি মজা করেছি ওর সাথে।তারপর হসপিটালে জয়েন করার পর বদলে গেলো নূর।বন্ধু হিসেবেও আগের মতোন কথা বলতো না আমার সাথে।সারাক্ষণ কাজ নিয়ে বিজি থাকতো।আর আমি আগের মতোই বন্ধুদের নিয়ে পার্টি, হই, হুল্লোড় করে বেড়াতাম।বাবার আমার উপর থেকে বিশ্বাসই উঠে গিয়েছিলো।বুঝে গিয়েছিলো আমার দ্বারা কিচ্ছু হবে না।তাই ওকে হসপিটালের সিনিয়র পজিসন দেয়।আর ও আমাদের প্রত্যেককে শাসন করে।আমাদের ভুলগুলো চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়।এর জন্য ওর সাথে কত্ত ঝগড়া করেছি আমি।কিন্তু ধীরে ধীরে বুঝতে পেরেছিলাম।শুনেছিলাম ওর ভালোবাসা দেশে ফিরছে।খুব তারাতাড়ি বিয়েও করবে তাকে।আমি বুঝে গিয়েছিলাম ওকে আর কখনো পাবো না।তাই সব ছেড়ে।নিজের যতো খারাপ অভ্যাস ছিলো সব পরিবর্তন করে হসপিটালের কর্তব্যে মন দিয়েছিলাম।বুঝতে শিঁখেছিলাম পেশেন্টদের ঠোঁটে হাসি ফুটানোর মধ্যেই জীবনের আসল সুখ।আজ যখন বলেছিলাম এমন কাজ আমি করি নি।বাবাও নিজের ছেলের মুখের কথা বিশ্বাস করল না।আমি যাবো না এখান থেকে।গিয়ে কিবা হবে? নূরকে তো পাবো না।বরংচ ও খুব কস্ট পাবে এটা জানলে যে ওর ভালোবাসার মানুষটা এতো জঘন্য একটা কাজ করেছে।তারচেয়ে বরং আমি এখানেই থাকি।বেশ ভালো আছি।কারও বকা খেতে হচ্ছে না।কারও সাথে ঝগড়াও হচ্ছে না। তুমি চলে যাও ফুল।

আমার একটা অনুরোধ রেখও।আর এসো না এখানে।কাল হয়তো কোর্টে নেওয়া হবে আমাকে।আর আমার দিক থেকে কোনো উকিলই লড়বে না এই কেস।আমার যদি জেল হয় তাহলে আমার বাবাকে একটু দেখও।যতটুকু সময় হসপিটালে থাকবে তার একটু যত্ন নিও।বাবার লো পেসার।মাঝে মাঝে অসুস্থ হয়ে পরে একটু পাশে থেকো তোমরা।
-স্যার থামুন।প্লিজ আর কিচ্ছু বলবেন না।আমি আপনাকে কিছুতেই জেলে যেতে দিবো না।কথা দিচ্ছি আমি কাল কোর্টে উঠার আগেই আপনাকে নিজে এসে আপনার বাবা আর আপু ছাড়িয়ে নিয়ে যাবে।তুলে নেবে আপনার বাবা এই কেসটা।
-কিভাবে আসবে?

-আমি জানি না স্যার।কিন্তু কথা যখন দিয়েছি যখন তখন নিশ্চয় পারবো।আপনি শুধু আমাকে একটু দোয়া করুন আমি যেন পারি।
-তুমি শুধুই কস্ট করছো ফুল।এটা কখনো সম্ভবই না।
-একটু ভরসা রাখুন স্যার।আমি আপনাকে বের করবো এখান থেকে।আমি আসছি এখন।নিজের যত্ন নিবেন।আর রাতে এসে খাবার দিয়ে যাবো আমি।এখানের খাবার খেতে হবে না।
কথা শেষ করে থানা থেকে বের হলাম আমি। তখনি মোবাইলটা বেজে উঠলো। রিসিভ করলে মাম্মাম বলল এক্ষুণি বাড়িতে চলে যেতে।কাল সকালেই পারিবারিক ভাবে নূর আপু আর হৃদের বিয়ে দেওয়া হবে।লক ডাউন শেষ হলে তারপর ঢুমঢামে আমেজে অনুষ্ঠান করে আত্মীয় স্বজন, বন্ধুবান্ধব, প্রতিবেশীকে জানানো হবে।
মাম্মামের সাথে কথা শেষ হবার পর নিজেকেই নিজে বললাম আমি,
-অসম্ভব! নূর আপুকে মেঘ স্যার খুব ভালোবাসে।এতো ভালো একজন মানুষের সাথে এতোটা খারাপ হতে পারে না।হৃদ খুব খারাপ।আমি কিছুতেই আমার আপুর বিয়ে ওর সাথে হতে দেবো না।আর মেঘ স্যারকে দেওয়া কথাও রাখতে হবে।কিভাবে কি করবো আমি? নিজের ভেতরে এসব ভাবতে ভাবতে রাস্তার এক সাইট দিয়ে হাঁটছি আমি।হুট করে একটা গাড়ি এসে থামলো আমার সামনে।দেখলাম গাড়ি থেকে আবির চৌধুরী বেড়িয়ে আসলো।তার পার্সোনাল এসিস্টেন্টকে বলল,
-ছেলেটা কিছু খেয়েছে কিনা জিজ্ঞাসা করো।আর আমি যে তোমাকে পাঠিয়েছি সেটা বলো না ওকে।
এসিস্টেন্ট মাথা কাত করে সম্মতি জানিয়ে থানার ভেতরে ঢুকলো।আবির চৌধুরীর আমাকে দেখার আগে আমি নিজের মুখটা ঘুরিয়ে নিলাম।উনি তারপরও চিনে ফেললো আমাকে।এগিয়ে আমার পেছনে এসে দাড়িয়ে নাম ধরে ডাকলো।আমি কেঁপে উঠলাম।পেছনে ঘুরে দাড়ালে জিজ্ঞাসা করল আমায়,
-এখানে তুমি কি করছো? থানাতে আমার ছেলেকে দেখতে এসেছো? জবাব দাও?
-হ্যাঁ স্যার আসলে..

-আসলে কি? যেইখানে সবাই ওকে গালি দিচ্ছে সেইখানে এমন একটা কাজ করার পর তোমারও তো ওকে দেখতে আসার কথা না।
-কেন আসার কথা নয়? স্যারকে আমি যথেষ্ট সম্মান করি।তাই এখানে এসেছি।আর যেই অপরাধের শাস্তি আপনি আর আপু মানে ডা.নূর ম্যাম স্যারকে দিচ্ছেন সেটা স্যার করেই নি।যেদিন বুঝবেন অনেক দেরি করে ফেলবেন আপনারা।
কথাগুলো বলে ইজিবাইকে উঠে গেলাম আমি।আর আবির চৌধুরী আমার যাওয়ার পানে তাকিয়ে আছেন।আজ পর্যন্ত তার মুখের উপরে কেউ এভাবে কথা বলে যায় নি।তবে আমি বলেছি দেখেও কেন জানি তার মধ্যে কোনো রাগ কাজ করছে না।বরংচ ভালো লাগছে এটা ভেবে যে পৃথিবীতে একটা মেয়ে অন্তত পাওয়া গেছে যে তার ছেলের কথা ভাবে।এতো বড় অন্যায় করার পরও তার ছেলেকে বিশ্বাস করে।আজ যদি মেঘ এই অপরাধটা না করতো তাহলে এই মেয়েটার সাথেই মেঘের বিয়ে দিতো।যদি বিয়ের পর একটু ওর মধ্যে বিবেক বোধ আসে।
ওদিকে হসপিটালে,, আপু অপারেশন শেষে ওয়াশরুমে গিয়েছে নিজের হাত মুখ ধুয়ে ফ্রেশ হতে।এরই মধ্যে মায়ের কল আসে।আপু মোবাইলটা উঠিয়ে রিসিভ করে কাঁধে রেখে মাথা নিচু করে কান মিশিয়ে বিয়ের কথা শুনেই খুশিতে লাফ দেয়।আর ফোনটা বেসিনের মধ্যে পরে যায়।কলের পানিতে বন্ধ হয়ে যায় ফোন।
আমি হসপিটালে এসে ভাবছি এতোক্ষণে আপু মেসেঞ্জার ঢুকে ভিডিওটা হয়তো দেখে নিয়েছে।কিন্তু না।ওয়াশরুমের থেকে চিন্তাপূর্ণ মুখ করে বের হয়েছে আপু।আমি জানার জন্য জিজ্ঞাসা করলাম,
-আপু আমি একটা ভিডিও পাঠিয়েছিলাম তোমাকে।তুমি কি দেখেছো?
আপু কিছু বলবে এরই মধ্যে হৃদ ইয়া বড় একটা ফুলের তোরা এনে আপুর চেম্বারের দরজায় নক করে উঠলো।আপু খুশিতে গদগদ হয়ে আমাকে বলল মাম্মাম ফোন করে বলেছে কাল ওদের বিয়ে হবে।একটু প্রাইভেসির জন্য এখান থেকে বেড়িয়ে যেতে।হৃদ আমার মুখের দিকে চেয়ে সয়তানি হাসি হাসলো।আর আমি ধরে নিলাম ফোনে মাম্মামের সাথে কথা যখন বলেছে তখন আপু ভিডিওটা নিশ্চয় দেখেছে।আপু কি তবে হৃদের প্রেমে অন্ধ হয়ে গেলো? যে এতো বড় সত্যিটা জানার পরও হৃদকে বিয়ে করবে? হৃদের ভালোবাসায় কি আপু পাগল হয়ে গেছে? নাহ আমি কিছুতেই এ বিয়ে হতে দেবো না।আমার আপুর সাথে হৃদের মতো নোংরা ছেলের বিয়ে কিছুতেই হতে পারে না।
চলবে,,,,

Comments