ঝরা ফুলের বাসর !! Part- 07
হসপিটালের এই কেবিনে ওই কেবিনে ছুটছি আমি।আপুকে কোথাও খুঁজে পাচ্ছি না।যেভাবেই হোক হৃদের সত্যিটা আপুকে জানাতে হবে।সিঁড়ি থেকে নামার সময় কারও সাথে ধাক্কা লাগলো আমার।আমি পরে যেতে নিলে আমার কোমড়ে হাত পেচিয়ে নিজের সাথে শক্ত করে চেপে ধরল।চোখ তুলে তাকিয়ে দেখলাম হৃদ।এক ধাক্কা দিয়ে ওকে দূরে সরিয়ে দিলাম আমি।সয়তানি হাসি দিয়ে আমার দুই কাঁধে খামছে ধরে নিজের দিকে টেনে নিয়ে বলল,
-তোর সাহশ তো কম না।তুই আমাকে ধাক্কা দিয়েছিস।
আমি ওর মুখের দিকে তাকিয়ে রাগি দৃস্টি আরোপ করে বললাম,
-বেশ করেছি ধাক্কা দিয়েছি।ঘৃনা হচ্ছে আপনাকে দেখলে আমার।আপনি না ডাক্তার? কিভাবে একটা প্রেশেন্টের সাথে এমন করতে পারলেন হৃদ ভাইয়া?
-আমি করেছি?
-হ্যাঁ আপনি করেছেন।আপনি এতোটা নোংরা? একজন নিঃদোষ মানুষকে এইভাবে ফাঁসিয়ে দিলেন আপনি।মেঘ স্যার কত্ত ভালো।আজ আপনার জন্য উনি এতোটা অপমানিত হয়েছে।সেই অপরাধের শাস্তি পাচ্ছেন যেটা উনি করেনই নি।
কথাটা বলার সাথেই আমার গালটা শক্ত করে চেপে ধরে বলল,
-ওই তোর মুখে এতো কথা আসছে কি করে? কাল রাতে এতোকিছু হবার পরও তোর ভেতরে লজ্জা নেই। অন্য কোনো মেয়ে হলে আত্মহত্যা করতো।আর তুই মুখ ফুলিয়ে কথা বলিস?
আমি গাল থেকে হৃদের হাতটা ছাড়িয়ে দূরে সরিয়ে দিলাম। ওর মুখের দিকে তাকিয়ে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারলাম না।কষিয়ে ওর গালে দিলাম এক চড়! হৃদের মুখের সামনে আঙুল উঁচিয়ে বললাম আমি,
-কাল রাতে যেটা হয়েছে তাতে আমার কোনো দোষ ছিলো না।যা করেছেন আপনি করেছেন।সব সময় একটা মেয়েকে কেন মাষুল দিতে হবে?যেই ভুলটা আমি করিই নি তার মাষুল আমি কেন দেবো? অপরাধ আপনি করেছেন।আমার শরীরটা নিয়ে যা করেছেন আপনি করেছেন।আমি তো সজাক ছিলাম না।আত্মহত্যা আপনার করা উচিৎ।একটা মেয়ের সাথে এমন নোংরা কাজ করার জন্য।একজন ডাক্তার হয়ে পেশেন্টের লাইফ রিস্কে ফেলার জন্য।আর একজন নিঃদোষ মানুষকে ফাঁসানোর জন্য।কাকা, কাকিমা তো আপনাকে এই শিক্ষা দিই নি হৃদ।তাহলে কেন করলেন এসব? উত্তর দিন কেন করলেন? একবার ভেবে দেখুন। এসব জানতে পেলে আপনার বাবা-মায়ের মনের অবস্থা কি হবে? কাকিমা তো ভেঙে পরবে।ভাববে সে হয়তো তার ছেলেকে সঠিক শিক্ষা দিতে পারে নি।
হৃদ খপ করে আমার চুলের মুঠি টেনে ধরল।খিটখিটে মেজাজে দাঁত কটমট করে বলল,
-ওই জ্ঞান দিতে এসেছিস? তোর কোনো জ্ঞান আমি নিতে চাই না।ভালো হয়েছে তুই সবটা জেনে গেছিস।শুনে রাখ কান খুলে এই হসপিটালে থেকে আমি তোর জীবনটা নরক করে ছাড়বো।
-আপনার যা করার করতে পারেন।আমিও দেখবো আপনি কতটা নিচে নামতে পারেন।আমি যদি আপনার আসল মুখষটা টেনে সকলের সামনে না আনতে পারি তাহলে আমার নামও ফুল নয়। ছাড়ুন!
বলে একটা ধাক্কা মেরে নিজেকে ছাড়িয়ে নিচে চলে আসলাম।মিনি, প্রিয়া আর নিশির মধ্যে কথা হচ্ছে। নিশি বলছে,
-কত্ত হ্যান্ডসাম! মাশাল্লাহ! আমি তো প্রথম দেখাই ফিদা হয়ে গেছি।
কথাটা শুনে প্রিয়া বলে উঠলো,
-হ্যান্ডসাম না ছায়। মেঘ স্যারের সাথে কারও তুলনা হয় না।
নিশি চোখ পাকিয়ে প্রিয়া কাঁধ চেপে ধরে বলল,
-ওই এখন তো থাম।দেখলি না কি কান্ডটা করে এরেস্ট হলো।কত্ত ভালো জানতাম স্যারকে আমরা।আর সে কিনা এত্ত কেয়ারলেস একটা কাজ করল।
-ওই থামবো কেন রে? আমার তো মনে হয় স্যার না বুঝে আংটিটা ফেলেছে পেশেন্টর পেটে।আমরা যেমন মাঝে মাঝে হোম ওয়ার্ক করতে ভুলে যায়।পরীক্ষার হলে পড়া টপিকগুলো ভুলে যায়। স্যারও তেমনই আংটিটা খুলতে ভুলে গেছে।
-এ তুই থাকবি? স্যার যেটা করেছে সেটাকে ভুল বলে না অপরাধ বলে।ডাক্তার হয়ে কিভাবে অপারেশন এর সময় পেশেন্টের পেটে আংটি ফেলে।
মিনি বলে উঠলো,
-আহ! থামবি তোরা? ফুল আবার কোথায় গেলো? ওকে তো দেখছি না।কাল রাতে ওর কি হয়েছিলো কিছুই তো শুনতে পারলাম না।তোরা আর পকপক না করে চল ফুলকে খুঁজি।
অমনি আমি ওদের সামনে গিয়ে দাড়িয়ে পরলাম।ওদেরকে বললাম,
-আ..আআপুকে মানে ড.নূর ম্যামকে দেখেছিস তোরা?
মিনি বলল,
-ফুল তুই ঠিক আছিস? তোতলাচ্ছিস কেন?
-তোদের আমি পরে সব বুঝিয়ে বলবো।তোরা প্লিজ বলনা ড.নূর ম্যাম কোথায়?
ওরা তিনজন বলল,
-অপারেশন থিয়েটারে ঢুকেছে। কালকের সেই পেশেন্টের পেট থেকে আংটি বের করতে।কিন্তু কেন বলতো?
-অপারেশন থিয়েটারে? তার মানে তো তিন চার ঘন্টা পর আপু বের হবে।এখন কাকে বলবো? আর আপু কি বিশ্বাস করবে আমার কথা?
ওরা তিনজন আমাকে ঝাঁকিয়ে বলল,
-কি বিরবির করছিস?
-কিছু না।আমার কিছু ভালো লাগছে না।
কথাটা বলেই ওখান থেকে চলে আসলাম আমি।তিন ঘন্টা ধরে অপারেশন থিয়েটারের সামনে বসে রইলাম।আপু এখনো বের হলো না।সন্ধ্যা হয়ে গেলো।কিচ্ছু মাথায় আসছে না আমার।চট করে মনে পরল সন্ধ্যার পরই ওই নার্সকে হৃদের বাকি টাকাটা দেওয়ার কথা ছিলো।আমি উঠে হৃদের চেম্বারের সামনে আসলাম। দেখলাম নার্সটা এদিক ওদিক তাকিয়ে চুপিচুপি ওর চেম্বারে ঢুকছে।এটাই সুযোগ।একটু দরজাটা আলগা করে দেখতে পেলাম তারা নিজেদের অপরাধের কথা বলছে। আমি ঝট করে ওদের সব কথা আমার মোবাইলে ভিডিও রেকর্ড করে নিলাম।
নূর আপুর ফেসবুক আইডির মেসেঞ্জারে ভিডিওটা সিন্ড করে থানায় ছুটলাম আমি।হৃদ যে কতোটা খারাপ আমি জানি! এই ভিডিও করেছি জানলে যেভাবেই হোক এটা ডিলিট করে দেবে।তাই এখানে কাউকে না বলে সোজা থানায় আসলাম।আগে স্যারকে ছাড়াবো তারপর ওর মুখোশটা টেনে সকলের সামনে খুলবো।
চলবে,,,,,,