ঝগড়া !! Part- 02
_তুই কি আমার সাথে ভালোয় ভালোয় লক্ষী মেয়ের মত একাই যাবি?
নাকি আরেক কানের নিচে আরেকটা দিয়ে তোকে টানতে টানতে গরুর মত নিয়ে যাবো?
_আমি যাবোনা যাবোনা যাবোনা।
যা পারিস কর তুই।
যেহেতু ওর উপর রাগ টা ছিলো আমার মাত্রাতিরিক্ত।তাই জেদ করে বলেই দিলাম যাবোনা আমি।
_সত্যি যাবিনা?
_না যাবোনা,
দেখছিস না তুই আমি কনে সেজে বসে আছি?
একটু পরেই আমার বিয়ে।
তুই যেহেতু এক সময় আমার স্পেশাল কেউ ছিলি।
আর আমার বিয়েতে দাওয়াত ছাড়া যখন এসেই পড়েছিস।সেহেতু খেয়ে কিন্তু যাস।
আমার কলিজা টা এত্ত বড়।তাই না খাইয়ে বিদায় করলাম না তোকে।
_তোর ওই কলিজা শুনে মনে পড়লো।
একদিন তোর ওই কলিজা টা আমিই ছিলাম।
_হ্যাঁ ছিলি,তবে এখন আর..
_কি?বল।
_না কিছুনা।
এদিকে রিলেটিভ রা সব এসে দাঁড়িয়েছে।
_এই ছেলে কি হচ্ছে এসব?
ওর সাথে তুমি এই ভাবে কথা বলছো কেন?
_দেখুন,আমি আমার বউ এর সাথে কথা বলছি।
দয়া করে আমাকে কেউ কিছু বলবেন না এখন।
মাথা এমনিতেই খারাপ আছে।
পরে আমি ভুল ভাল বলে ফেললে তখন আবার বলবেন না যেন,
আমাদের মেয়ের জামাই ভালো না।
_এই ছেলে,মাথা ঠিক আছে তোমার?বিন্দু তোমার বউ কবে হলো?
একটু পর ওর বিয়ে।
তারপর ও আরেক জনের বউ হবে।আর মাঝ খানে তুমি এসে গুণ্ডামো শুরু করে দিয়েছো।
_বউ কিভাবে হলো ও আমার?
ওকেই জিজ্ঞেস করুন না।
আহা!একটা সময় কত মধুর সুরে বলেছিলো,
শোনোনা,আজ থেকে আমি তোমার বউ।আর তুমি আমার বর।
আমি তোমাকে আজ থেকে স্বামী বলে মেনে নিলাম।
বলো কবুল।
আর আমিও এই বেঈমান টার কথায় নাচতে নাচতে বলেছিলাম,
আমিও তোমায় আমার স্ত্রী রুপে মেনে নিলাম।
কবুল কবুল কবুল।
আমি কি জানতাম?শালী আমাকে স্বামী মেনে,আমাকে কবুল বলে বিয়ে করে অন্য কারো জন্য কনে সেজে বসে থাকবে?
_ওই তোর বউ সাজার খুব শখ হয়েছে তাইনা?আমাকে বলতি,আমি তোর বউ সাজার শখ মিটাতাম।
_আমি তোর কেউ না।
তুই যা এখান থেকে।তুই কে চিনিনা আমি তোকে।
তুই না আমাকে মুক্তি দিয়েছিলি?বলেছিলি আই হেট ইউ?
তাহলে আজ কেন এসেছিস এখানে?
কি ভেবেছিস?তুই এলেই আমি তোর সাথে নাচতে নাচতে চলে যাবো?
কক্ষণোইনা।
হ্যাঁ আমার বউ সাজার শখ হয়েছে,তাই আমি বউ সেজে বসে আছি।
তোর কোন সমস্যা?যা ফট।
_আয় আমি তোর বউ সাজার শখ মিটাই।
ঠাস…
রণ আমার অপর কান বরাবর দিলো আরেক চর।
লম্বা মানুষ,হাতের পাঞ্জাও বড়।
থাপ্পড় টা সোজা গাল আর কান বরাবর লাগলো।
আমার মাথা পুরো ঝিম ধরে গেলো।
এক চরেই আমি অজ্ঞান।
আজ মনে হচ্ছে রণ কে আদর করে কলিজা না ডেকে।
শক্তিমান ডাকলে আরো ভালো হতো।
রণর সাথে রিলেশন চলাকালীন সময় যত টুকু না সুখের মুহূর্ত কাটিয়েছি।
তার থেকে কাটিয়েছি দুঃখের মুহূর্ত বেশি।
ঝগড়া যেন আমাদের হ্যবি ছিলো।
একদিন একটা আপু একটা মেয়ের শাড়ী পরা পিক আপ্লোড করে ক্যাপশন দিলো,
দেখো আপুরা,কি সুন্দর শাড়ী।এই শাড়ীটা যার বফ বা বর কিনে দিতে চাইবে বা দিবে।
এবং এই শাড়ীটা পরে তোমায় ঘুরতে বেড় হতে দিতে চাইবে।ঠিক এই রকম ভাবে।
বুঝে নিবে তার বফ বা বর কিপ্টুস না।
আর তারা তোমায় খুব ভালবাসে।
তবে ঠিক এই শাড়ী আর ব্লাউজ টাই হতে হবে।
আমিও আমার বফ কে পিক টা সেন্ড করে বলেছিলাম,ও বলেছে আমায় ঠিক এরকমই কিনে দিবে।আর এই শাড়ী পরিয়েই আমাকে ঘুরতে নিয়ে যাবে।
উফফ আমার জানটা কত্ত ভালো।
শুধু মাত্র এই পোস্ট এর কারণে যে কত আপুর বফের সাথে আপু গুলোর ঝগড়া আর মারামারি হইছে তার হিসেব নেই।
কারণ সব আপু ওখান থেকে পিক টা কালেক্ট করে তার বফ কে দেখিয়ে বলেছে,
এটা আমায় কিনে দিবা?
আমিও আর দেরি না করে শাড়ী আর ব্লাউজ পরা মেয়েটার পিক টা আমার রণকে সেন্ড করলাম,
আর বললাম,কলিজায়ায়া আমায় এই শাড়ীটা কিনে দিবা?
আর ব্লাউজ টাও ঠিক এমনই হবে।
রণ উত্তর দিলো,কি আছে এই শাড়ীতে যে এই শাড়ীটাই কিনতে হবে?
আমি তো ওর রিপ্লাই দেখে রেগে গেলাম।
কিন্তু অতি কষ্টে রাগ টাকে কন্ট্রোল করে বললাম,
_শাড়ীটা তুমি আমায় কিনে দিবে কিনা বলো?
_হুম দিবো,তবে এই মেয়ে যেভাবে পরেছে তুমি সেই ভাবে পরতে পারবানা।
_না আমি এইভাবেই পরবো।
_বাজে লাগতেছে (সাথে এংড়ি রিয়েক্ট)
_এমন করো কেন?কত্ত হট লাগতেছে।
_রাগ কিন্তু বাড়তেছে।এত হট লাগার দরকার নাই।
_আমি এই ভাবেই শাড়ী আর ব্লাউজ টা পরবো।
ঠিক এই মেয়েটার মত।কত্ত কিউট লাগবে আমায়।তাইনা বলো?
_আচ্ছা ঠিক আছে,ওই মেয়ের মতই পরো।
তবে তা শুধু আমি দেখবো।
আর কেউ দেখতে পারবেনা।তুমি ওই শাড়ী আর ব্লাউজ পরে বাইরে বেড় হতে পারবেনা।
_না আমি বাইরে বেড় হবো।
ঘুরতেও যাবো।
_মাইরা আলুর ভর্তা বানায় খেয়ে ফেলবো।
পরে ঘুরার চিন্তা করো।
_উফফ এত কথা ভালো লাগছেনা,তুমি।আমায় শাড়ীটা কিনে দিবে কিনা সেটা বলো।
_হুম দিবো,কিন্তু ওই যে বললাম না বাইরে বের হতে পারবেনা।শুধু আমি দেখবো।
_তুমি আমায় একটুও ভালবাসোনা বুঝছি।
কি লাভ হইলো তোমারে ভালবাইসা,যদি এই শাড়ী পরে ঘুরতেই না দাও।
_বাসি কি বাসি না তার হিসাব পরে।
কিন্তু এইরকম খোলামেলা ভাবে শাড়ী পরার ইচ্ছে হওয়ার জন্য তোকে আমার মারতে মন চাচ্ছে।
_আমি কিচ্ছু জানিনা,কিচ্ছুনা।এই শাড়ী আর ব্লাউজ টা আমি চাই ই চাই।
আর তুমিই আমায় কিনে দিবা।
আর তারপর আমি এই শাড়ী আর ব্লাউজ পরে ঘুরতে বের হবো।
কিনে দিবে কিনা বলো?
_ফোন দাও।
_কেন ফোন দিবো?
_ফোন দেয় কি করতে?
_আমি ফোন দিবোনা।আগে তুমি বলো,এই শাড়ীটা আমায় কিনে দিবে,আর এইটা পরে ঘুরতে যেতে দিবে।তাহলেই আমি ফোন দিবো।নইলে আমি তোমার ফোন ই রিসিভ করবোনা।আর কথাও বলবোনা।
_দাঁড়া,শাড়ী দেয়ার আগে তোরে আমি কবর দিমু।
_যা লাগবেনা তোর শাড়ী আমার।ব্রেকাপ।
সেদিনও হলো আমাদের ঝগড়া।
ও আমাকে শাড়ীটা পরতে দিবেনা।কারণ শাড়ী আর ব্লাউজ টা ছিলো খোলামেলা ধরণের।
আর কোন ভদ্র ছেলে চাইবেনা তার ভালবাসার মানুষটা ওই রকম ভাবে শাড়ী পরে রাস্তায় বের হোক।
আর অন্য কেউ তার ভালবাসার মানুষটাকে দেখুক।
সেটা তখন না বুঝলেও এখন বুঝি।
এই সব হালকা পাতলা বিষয় নিয়েই লাগতো আমাদের ঝগড়া।
থাক ওসব কথা।
ঝগড়ার কথা বলা শুরু করলে তা আর শেষ হবেনা।
তো এক থাপ্পড়ে অজ্ঞান হবার পর যখন আমার জ্ঞান ফিরে,
তখন আমি চোখ খুলে যেখানে দেখতে পাই,তা দেখার জন্য আমি প্রস্তুত ছিলাম না।
চোখ খুলেই দেখি আমি রণর কাঁধে মাথা দিয়ে শুয়ে আছি।
_আমি এখানে?আমি এখানে কিভাবে?
ওর কাঁধ থেকে মাথা টা সরিয়ে নিয়ে আশেপাশে তাকাতেই দেখি আশেপাশে থাকা গাছ গুলো দৌড়াচ্ছে।
ওমা তা কি করে সম্ভব?
এখন ভালো করে চোখ ডলে দেখি,
গাছ গুলো দৌড়াচ্ছেনা।
আমি বাসে বসে আছি।আর বাস চলছে,
তাই মনে হচ্ছে গাছ দৌড়াচ্ছে।
এক থাপ্পড়ে মাথা ঘুরে গেছে আমার।আর সাথে চোখ ও ঝাপসা হয়ে গেছে।
কিন্তু আমি এখানে এলাম কি করে?
আমার তো এখন স্টেজে থাকার কথা।
বর পক্ষও তো এত ক্ষণে এসে গেছে।
আর আমি কিনা এই বদমাইস টার সাথে এখানে?
_ওই আমি এখানে কি করে এলাম?
তুই কি আমায় কিডন্যাপ করেছিস?
_হ্যাঁ কিডন্যাপ করেছি।
_কেন করেছিস হ্যাঁ?
_কারণ আমার অনেক টাকা দরকার।
আর তোকে দিয়ে অন্যের বাড়ীর বাসন মাজিয়ে টাকা ইনকাম করবো তাই।
_কিইই?
_আর একটা কথা যদি বলিস তাহলে আরেক থাপ্পড়ে আবার অজ্ঞান করে ফেলবো।
চুপচাপ কাঁধে মাথা রাখ আর ঘুমা।
বাসায় পৌছে গেলেই ডেকে তুলবো।
আমি রণ কে কিছু বলতে যাবো,আর তখনই আমার ওয়াক ওয়াক করে বমি শুরু,
বমি করতে করতে এমন কাহিল অবস্থা হলো যে শেষমেস আবার রণর কাঁধেই আমার হেলে পড়তে হলো।
বমি করতে করতে আমার জান যায়,তবুও আমার তেজ কমেনি।
রণকে বললাম,
তুই জানিস না আমার বাস জার্নিতে প্রবলেম?
তাহলে কেন তুই আমায় বাসে করে নিয়ে এলি?
_আমিতো ভেবেছি বাসে করে নিয়ে এলে জ্ঞান ফিরলেও তুই বমি করতে করতে আবার বেহুঁশ হয়ে যাবি।
আর তোর চিল্লাচিল্লি আমার আর শুনতে হবেনা।
কিন্তু কে জানতো,এরপরও যে তোর তেজ কমবেনা।
দাঁড়া আজ শুধু বাসায় নিয়ে নেই,
তারপর দেখিস,তোর একদিন কি আমার একদিন।
আমিও ওয়াক ওয়াক করতে করতে বললাম,আমিও দেখাবোনে তোরে তোর একদিন আর আমার কত দিন।
চলবে?