ও আমায় ভালোবাসেনি- সিজন ২ – Part- 15
রান্নাবান্না শেষ করে রাইদ কে ডাকতে গেলো মিথি । রাইদ গম্ভীরমুখে কাউকে বারবার কল দিচ্ছিল ।
মিথি দরজায় নক করে বললো_
— রাইদ? খেতে আসুন ।
— হু যাও আসছি ।
ওপাশে ঘুরেই জবাব দিলো রাইদ । কিন্তু মিথিলা গেলো না । ও দরজায় দাঁড়িয়েই আবার প্রশ্ন করলো_
— কিছু কি হয়েছে রাইদ? কোনো সমস্যা?
— নাহ্ না কোনো সমস্যা নেই তুমি যাও আমার একটা জরুরি কল আছে এটা করেই আসছি ।
— ফোন রাখো তো অনেক রাত হয়েছে চলো খেতে ।
অগত্যা রাইদ কে মিথির সাথে যেতে হলো ।
খেতে বসে নীরার খোঁজ করলো কিন্তু নীরা নেই । রফিক ওর ফোন বের করে দেখালো নীরা মেসেজ দিয়েছে আজকের দিনটা বাসায় থাকবে রাইদ কে যাতে বলে দেয় ।
মিথিলা লক্ষ করছে রাইদ অমনোযোগী হয়ে খাচ্ছে । সে একটু কেশে বললো_
— রাইদ কাল আমরা ঢাকায় ব্যাক করবো না ।
— আচ্ছা ।
— কাল কিন্তু নীরার বাসায় বেড়াতে যাবো ।
— আচ্ছা ।
— রাইদ! কাল নীরার বাসায় বেড়াতে যাবো । কথাটা একটু জোরে বললো মিথিলা । এবার রাইদ চিন্তার জগত থেকে বাইরে বেরুলো যেন ।
মাথা নেড়ে বললো_
— কাল যে ঢাকায় যাওয়ার কথা?
— সেটাই তো বললাম কাল যাবো না বরং নীরার বাসা থেকে ঘুরে আসবো ।
— আচ্ছা ঠিকাছে ।রফিক নীরা কে ইনফর্ম করে দিও ।
— জ্বী স্যার ।
খাবারটুকু নিঃশব্দে খেয়ে উঠে গেলো রাইদ । ওর অন্যমনস্কতা মিথিলার চোখে বেশ ভালোভাবেই পড়ছে । রফিক আইডিয়া করছে কোনো ঝামেলা হয়েছে তাই সে মেকআপ দেয়ার জন্য মিথিলা কে উদ্দেশ্য করে বললো_
— ম্যাম বুঝলেন আমাদের যেই আমড়া গাছ টা আছে না? ওখানকার আমড়া এত্ত টেস্টি কি বলবে আপনাকে । আপনারা তো রাগারাগি করে ঘুরেই দেখলেন না । কাল সকালে অবশ্যই ঘুরে দেখবেন বাগান টা ঠিকাছে ।
— হ্যাঁ অবশ্যই৷ রফিক ভাই আপনার স্যারের হঠাৎ কি হলো?
— ও কিছুনা ওয়েদারের সাথে মাইন্ড চেঞ্জ । এই যে দেখুন বাইরে বৃষ্টি । বৃষ্টির দিনে স্যার আবার উদাসীন হয়ে যায় । সম্ভবত ছোট বেলাকার কথা মনে পড়ে । এই লাইফে তো কম সাফার করেনি!
— আপনার স্যার আসলেই অদ্ভুত ।
— জ্বী ম্যাম আপনি ঠিক ।
বোকার মত হাসলো রফিক ।
ওর ধামাচাপা দেয়া কথাগুলো একদমই বিশ্বাস হলো না মিথিলার । নিশ্চয়ই কোনো ঝামেলা হয়েছে , বোঝাই যাচ্ছে । কিন্তু ঝামেলা টা কি এটা শুনতে হবে ।
খাওয়াদাওয়া শেষ করে সবটা গুছিয়ে ওপরে এসে দেখলো রাইদ বারান্দায় অনবরত পায়চারি করছে আর কাউকে ফোন দিচ্ছে । এদিকে বৃষ্টির পানি বারান্দায় এসে ওর গা হাল্কা ভিজিয়ে দিয়েছে ।
এমনিতেই শীত কাল তার মধ্যে বৃষ্টি । শীতের তীব্রতা এত যে লেপ কম্বল দিয়েও আজ ঠান্ডা কমবে না তার মধ্যে এই লোক ভিজছে কি অদ্ভুত!
মিথিলা একটু রাগত স্বরেই বললো_
— রাইদ এই ঠান্ডায় ভিজছেন কেনো?
মিথিলার ঝাঁঝালো গলা পেয়ে রাইদ ফোনের থেকে দৃষ্টি সরালো । আরেহ্ আসলেই তো বৃষ্টি ।
চটপট ঘরে চলে আসলো ও ।
— আমি খেয়ালই করিনি ।
— আপনার খেয়াল কোন দিকে বলেন তো?
— নাহ্ আসলে
— আমাকে বলুন রাইদ কি হয়েছে?
— আসলে আমার একটা ফ্রেন্ড মিসিং , ওকেই বারবার কল দিচ্ছি বাট বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে ।
— কবে থেকে মিসিং?
— আজ বিকেল থেকেই ।
— পুলিশে ডায়েরি করাবেন?
— হু দেখি কাল সিদ্ধান্ত নিবো ।
— আচ্ছা , চিন্তা করার দরকার নেই পেয়ে যাবেন খোঁজ ।
— আচ্ছা তুমি শুয়ে পড়ো?
— আপনার কি ঘুম পাচ্ছে?
— নাহ্ আমি একটু বারান্দায় বসবো ।
— তা’হলে আমিও বসবো ।
— এই ঠান্ডায় বসবা?
— হ্যাঁ বসি । চা খাবেন?
— খাওয়া যায় । আপনি বসুন আমি চা নিয়ে আসি?
— আচ্ছা ।
পনেরো মিনিটের মধ্যেই চা বানিয়ে নিয়ে আসলো মিথিলা ।
বারান্দায় বেতের সোফায় বসলো দু’জন চায়ের কাপ হাতে । বাইরে রুম ঝুম বৃষ্টি , থেকে থেকে মেঘের গর্জন ।
ঠান্ডা বাতাসে গায়ে কাঁপুনি ধরে যায় তখন উষ্ণ চায়ের কাপে চুমুক দেয় দু’জনে ।
— আচ্ছা কাল কখন নীরার বাসায় যাবো?
— তুমি কখন যেতে চাও?
— এগারোটার দিকে? আচ্ছা শুনুন আগে আমাকে আমাদের বাগান টা ঘুরে দেখাবেন ?
— অবশ্যই কেনো নয়!
— আর দোলনাতেও বসবো আমি ।
— ডান৷
আর কথা খুঁজে পেলো না মিথিলা । রাইদও চুপচাপ , চা খাওয়াও শেষ । মিথিলা বারবার চাইছে ওর সাথে কথা বলতে কিন্তু কি দিয়ে শুরু করবে বুঝতে পারছে না ।
নিস্তব্ধতা ভেঙে রাইদ ই বললো_
— একটা প্রশ্ন জিজ্ঞেস করি?
— হ্যাঁ করুন ।
— তোমার কি কারো সাথে প্রেমের সম্পর্ক ছিলো? বিয়ে ঠিক হবার আগে?
— নাহ্ তবে আমি ভালোবেসেছি একজন কে । তানভীরের তার সাথে বেশ খাতির , আমাদের বাসায় যাতায়াত ছিলো । তার সাধারণ লুক টা আমার বড্ড ভালো লেগে গেছিলো । আমি তাকে প্রতিদিন দেখার আশায় এতবড় হয়েও প্রাইভেট পড়েছি জানেন!
কিন্তু সে আমার ভালোবাসা গ্রহণ করেনি । একটা মিষ্টি মেয়ের সাথে তার সম্পর্ক আছে । একে অপরকে তারা খুব ভালোবাসে । তার মুখে না শুনে আমার খুব খারাপ লেগেছিল , ভেঙে পড়েছিলাম আমি তখন হঠাৎ কোথা থেকে শব্দ এহসান আসলো । জানালো তার সাথে নাকি আমার বাবা বিয়ে ঠিক করে গেছেন । আমি প্রথমে বিশ্বাস করিনি কিন্তু মা সম্মতি দিলেন , বাবা নাকি তার কলিগের ছেলের সাথে বিয়ে ঠিক করেছে এটা মা জানতো কিন্তু ছেলেটাকে কখনো দেখেনি ।
শব্দ মানুষ হিসেবে খাঁটি ছিলো । তার কথাবার্তা , দায়িত্ব বোধ সব আমাদের মুগ্ধ করে । আমি অনিচ্ছা সত্বেও তাকে সুযোগ দিই আমার মন জয় করার । তাকে নিয়ে মাত্র ভাবতে শুরু করবো তখনই তো বিয়ে ঠিক হয় আর বিয়ের দিন দূর্ঘটনা..
— এসব নিয়ে কষ্ট পাও খুব তাই না? আচ্ছা তুমি আমাকেও অনিচ্ছাকৃত ভাবে মেনে নিয়েছো?
— কষ্ট তো হওয়ারই কথা । খুব রিসেন্ট ঘটনা এগুলো । আর সত্যি বলতে আমি নিয়তি তে বিশ্বাস করতাম না ফয়সাল কে না পাওয়ার কারণে কিন্তু আপনার সাথে বিয়ের পর সেই রাতটা আমার কাছে বিষাক্ত ছিলো । আমি দ্বিতীয় বার ভেঙে গুড়িয়ে পড়লাম । অতিরিক্ত কষ্টটা নিবারণের জন্যে আমার সাপোর্টের দরকার ছিলো । সেই রাতে আপনি আমায় সাপোর্ট দিলেন সেটা মেন্টালি না হোক ফিজিক্যালি ।
সেই রাতেই আমি ভেবেছিলাম আমার লাইফে যাই হোক আমি খুশি খুশি মেনে নেবো । আপনার সাথে করা অতীতের একটা অপরাধ আমাকে এতই কুড়ে কুড়ে খেয়েছে যে আমি আপনাকে বাঁধা দেয়ার মুখ পাইনি । যতবারই কাছে এসেছেন নিজের প্রতি ঘৃণা হয়েছে সস্তা মনে হয়েছে নিজেকে । সবই মেনে নিয়েছি , একটাই আশা ছিলো আপনি একদিন ঠিক হবেন । এই চিন্তাধারাটা টিপিক্যাল হলেও আপনি কিন্তু আমার জীবনের শেষ পুরুষ । আপনাকেই আমি শেষ সুযোগ টা দিয়েছি । আপনি আমার সাথে বিট্রে করলে আমাকে ছেড়ে গেলে হয়তো আমার পুরুষ জাতির ওপর বিতৃষ্ণা চলে আসবে এমনকি নিজের ওপরেও।
আপনাকে আমি মেনে নিয়েছি স্রেফ এটা বলতে পারবো ।
— আমি তোমায় কখনো ধোঁকা দিবো না । তুমি আমাকে ছেড়ে যেও না মিথি । আমি সারাট জীবন ভালোবাসা পাওয়ার জন্য তড়পেছি ।
— ছেড়ে যাবো না । বিশ্বাস রাখতে পারেন ।
রাইদের আঙুলের ভাঁজে আঙুল গুঁজে দিলো মিথিলা । রাইদ মুচকি হেসে ওকে বুকে জড়িয়ে নিলো এবং প্রতিজ্ঞা করলো ও এই লিন্ডার পার্ট চুকিয়ে অন্ধকার জগৎ থেকে বেরিয়ে আসবে ।
সব অতীত পেছনে ফেলে এগিয়ে যাবে সুন্দর জীবনের পথে ।
বন্দুক কপালে ঠেকিয়ে বসে আছে নীরা । রাগে সমস্ত গা জ্বলে যাচ্ছে তার ।
সামনে বসে আছে তার বড় ভাই । তার মুখও গম্ভীর ।
নীরা বন্দুক টা টেবিলের ওপর রেখে চট করে দাঁড়ালো । চেয়ারটা সশব্দে লাত্থি মেরে চিৎকার করে উঠলো_
— ভাই তোর সমস্যা কি? আর কতদিন বাঁচায় রাখবি ঐ কুত্তার জাত গুলারে! আমার মায়ের খুনি টাকে প্রতি মুহুর্তে চোখের সামনে দেখি আমার শরীরের রক্ত টগবগ করে ওঠে শুধু ।
— কাম ডাউন নীর । খুব জলদিই ও মরবে কিন্তু আমাদের টার্গেট শুধু ওকে মারা নয় ঐ ডায়মণ্ড টাও হাতে পাওয়া ।
— ঐ বুড়ো ভাম টা মরলো মরলো মরার আগে ডায়মণ্ড মেয়ের জন্য রেখে গেলো উফফ অসহ্য ।
— সব তো ঠিক ভাবেই এগোচ্ছিলো কিন্তু তোর ঐ রাইদ যদি মেয়েটার প্রতি আকৃষ্ট না হয়ে যেত আর আমাদের ইনফর্ম করে দেশে আসতো তা’হলে অভিনয় এতদূর করতে হতো কি?
আমি তো আগেই পেয়ে যেতাম ডায়মণ্ড টা তারপর ওরে মেরে গুম করে চলে আসতাম ।
— দোষ তোরও আছে গেলি তো গেলি রাইদের শত্রুর ছেলে সেজে গেলি কেনো? জানিস না পাগলা কুত্তার মত বাপের খুনিদের নির্বংশ করতে বসে আছে ও ।
— আরেহ্ আমি জানতাম নাকি! ও আমাকে কখনোই বলেনি এসব ।
— ভালো হয়েছে এখন কি করবি? কাল আবার ঐ দু’টো আমাদের বাসায় আসবে ।
— উঁহু তা করানো যাবে না । এই বৃষ্টির মাঝে হুট করে বাসা খুঁজে সাজানো পসিবল না ।
— তা’হলে কি করবি? ওদের ইমিডিয়েট ঢাকায় পাঠাতে হবে ।
— কিছু ভাবতে হবে জলদি ।
— ইয়েস আমি আইডিয়া পেয়েছি ।
–কি আইডিয়া?
— কালকেই দেখতে পারবি । ঢাকায় আমাদের কয়েকজন লোক পাঠা এক্ষুণি বাকিটা আমি ওদের বলে দেবো ।
— ওকে ডান ।
— আমি জাস্ট ওয়েট করছি রাইদের মরা মুখ টা দেখার জন্য ।
— তুই শিওর ওর বউ ওকে মারবে?
— ইয়েস । লাস্ট সুযোগ দিয়েছে বলে কথা! নিজের বাবা আর হবু স্বামীকে মারতে দেখলে ওর মাথা ঠিক থাকবে? হয় নিজে মারবে নয়তো পুলিশে ধরিয়ে দেবে ।
— আমরা যদি পুলিশ কেইসে ফেঁসে যাই?
— উঁহু যাবো না । ভাই বউ কে নিয়ে ব্যস্ত থাকলে এক রাতে গিয়ে ডায়মণ্ড টা নিয়ে নেবো ।
— তুই যত সহজ ভাবছিস আসলেই কি এত সহজ হবে ব্যাপারটা?
— হবে । ডোন্ট ওয়ারি । জাস্ট অপেক্ষা কর ।
বাঁকা হাসলো নীরা ।
খুব সকালে উঠে হাঁটতে বেরিয়েছে তানভীর আর রাফনিদ । গতকাল রাতে বৃষ্টি হয়েছে রাস্তার অবস্থা ভালো না । তানভীর বার বার বলেছে বের হওয়ার দরকার নেই কিন্তু ম্যাডামের বাইরে না বেরুলে নাকি দম বন্ধ হয়ে আসে ।
বাধ্য হয়েই ওকে নিয়ে বেরুতে হয়েছে ।
রাফনিদের হাত ধরে হাঁটছে তানভীর৷ বারবার জিজ্ঞেস করছে কোনো সমস্যা হচ্ছে কি না!
রাফনিদ বিরক্ত হয়ে যাচ্ছে এতে ।
একবার হাত ছেড়ে দিয়ে বললো_
— তুমি আমাকে এভাবে ট্রিট করছো কেনো? পেটে বাচ্চা আমার খেয়াল নেই? আমি তো সাবধানেই হাঁটবো ।
— রাগছো কেনো ডিয়ার । আমার চিন্তা হয় তো ।
— হয়েছে হয়েছে আর চিন্তা করা লাগবে না । একটু ব্যাগ থেকে পানির বোতল বের করো পিপাসা পেয়েছে ।
— আচ্ছা দাঁড়াও করছি ।
রাফনিদের হাত ছেড়ে দিতেই ও একটু এখানে ওখানে হাঁটছিলো ।
তানভীর পানির বোতল টা বের করে মাত্র চেইন লাগিয়েছে এমন সময় রাফনিদের চিৎকার ভেসে আসলো । সামনে তাকিয়ে দেখলো উপুড় হয়ে পড়ে গেছে রাফনিদ ।
দৌড়ে ওর কাছে গেলো তানভীর । রাফনিদ কান্না করতে করতে কেবল বললো_
— কে যেন ধাক্কা দিলো আমায় তানু ।
ব্যাথায় চোখ মুখ নীল হয়ে উঠতে থাকলো রাফনিদের ।
তানভীর দিশেহারা হয়ে ফোন বের করে ডায়াল লিস্টের প্রথম নাম্বারে কল দিয়ে ওদের অবস্থাটা আর লোকেশন জানাতে পারলো ।
ফোনের শব্দ পেয়ে ঘুমটা ভেঙে গেলো মিথিলার৷ হাতড়ে ফোন কানে নিতেই ওপাশ থেকে মায়ের কান্নাভেজা কন্ঠস্বর ভেসে আসলো । সবটা শুনে সেও কেঁদে ফেললো । কোনো রকমে ফোন রেখে রাইদ কে ডেকে তুললো ।
রাইদ গাড়ি বের করতে বললো জলদি ।
খুব তাড়াতাড়ি দু’জন রেডিও হয়ে গেল । বেরুবার সময় কোথা থেকে নীরা এসে হাজির । ও সবটা শুনে জলদি হাতে ব্যাগ গুলো গুছিয়ে নিতে হেল্প করলো ।
এই তাড়াহুড়ো করে ওঠা নামা করতে গিয়ে অসাবধানতা বশত নীরা পড়ে পা মচকে ফেললো ।
ওকে আবার ধরাধরি করে সোফায় বসানো হলো ।
রফিকের দ্বারা বরফ আনিয়ে পা লাগানোর সময় হুট করে রাইদের নজরে আসলো পায়ের আঙুলের সেই আংটি টা ।
মাথায় নাড়া দিয়ে গেলো ব্যাপারটা । কোথায় দেখেছে মনে করতে পারলো না ।
প্রাথমিক চিকিৎসায় নীরা একটু সুস্থ বোধ করলে ওকে রফিকের দায়িত্বে রেখে বেরিয়ে পড়লো রাইদ রা ।
গাড়িতে বসে রাইদের মাথায় বারবার আংটি টাই ঘুর ছিলো । একটু প্রেশার ক্রিয়েট করতেই ওর মনে পড়ে গেলো লিন্ডার পায়েও একটা আংটি দেখেছে ও ।
কিন্তু অনেক মেয়েই আংটি পরে হুট করে নীরা কে লিন্ডা ভাবা কি ঠিক হবে?
এই সংশয়ে সিদ্ধান্ত নিলো নীরার ওপর সে নজর রাখবে । রফিক কে টেক্সট করে দিলো নীরা যাতে এই বাড়িতেই থাকে সে ঢাকা থেকে ব্যাক না করা পর্যন্ত ।
ঢাকায় পৌঁছাতে ওদের দুপুর হয়ে গেলো । ততক্ষণে রাফনিদের অপারেশন হয়ে গেছে ওকে আইসিইউ তে রাখা হয়েছে ।
আইসিইউ’র কাঁচের দেয়াল দিয়ে ওকে এক ঝলক দেখে বাচ্চাদের খোঁজ করলো ।
তানভীর বসে বসে কাঁদছে । ওকে শান্তনা দেবার জন্য ওর পাশে বসলো রাইদ । ওর কাঁধে হাত রাখতেই ও রাইদের হাত ধরে কাঁদতে লাগলো ।
এদিকে মিতা জানালেন রাফনিদের দুটো বাচ্চা হয়েছিল তার মধ্যে একটা মারা গেছে আরেকটা বাচ্চারা অবস্থা বিশেষ ভালো না । খুব ছোট এবং অক্সিজেনের ঘাটতি । শিশু ওয়ার্ডে রাখা হয়েছে ।
তানভীর কে নিয়ে পরে ওরা রওয়ানা হলো শিশু ওয়ার্ডের দিকে ।
ইনকিউবিটরে একটা ছোট্ট বাচ্চা ঘুমিয়ে আছে চাদরে মোড়ানো তার নাকে অক্সিজেন আবার স্যালাইন চলছে ।
বাচ্চাটাকে দেখেই চোখের কোণে পানি এসে গেলো মিথিলার ।তানভীর ইনকিউবিটরের কাঁচের দেয়ালে হাত রেখে জড়ানো গলায় বললো_
“কিচ্ছু হবে না চ্যাম্প , বাবা আছে”
মিথিলা রাইদের দিকে তাকালে রাইদ মাথা নেড়ে ওকে আশ্বস্ত করলো ।
মিথিলার ভয়ে ভেতর টা শুকিয়ে আসছে । ও শক্ত করে রাইদের হাত চেপে ধরে রাখলো আর আল্লাহর কাছে দুআ করলো বাবুটা যাতে সুস্থ হয়ে যায় ।
চলবে,