আলোছায়া !! Part- 08
বাড়ছে রাত। সেই সাথে বাড়ছে উল্লাসীর অস্থিরতা। বুকের ভেতরটা তার কষ্টে দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছে। ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদার দরুন বারেবারে নিঃশ্বাস আটকে আসছে। এই তার ভালোবাসার নমুনা? এই তার আগলে রাখার নমুনা? তবে দরকার নেই এমন ভালোবাসার। ডাইনিং ছেড়ে উঠে শোবার ঘরের দিকে পা বাড়াতেই ফোনের রিংটোনে থেমে গেল উল্লাসী। পাশ ফিরে ফোনের সন্ধান করতে পাশের ঘরের দিকে এগুলো সে।
জাভেদ ভাই কেনো এত রাতে কল করলো তাকে? আগুনে ঘি ঢালতে? তার কষ্ট বাড়াতে? তাকে আরও কাঁদাতে? দাঁতে দাঁত চেপে কল কেটে দিয়ে বিছানায় বসে পড়লো উল্লাসী। এই পৃথিবীতে কেউ তাকে বোঝে না। কেউ তার কষ্ট অনুভব করতে পারেনা। তবে জাভেদ নামের লোকটি আর যাই হোক তার খারাপ চায়না। আজ পর্যন্ত দেয়নি কোনো বাজে পরামর্শও। তাহলে কেনো লোকটির উপর রাগ দেখাচ্ছে সে? লোকটি কী এমন খারাপ করেছে তার সাথে? ভাবামাত্রই ফোন হাতে নিয়ে জাভেদের নাম্বারে ডায়েল করলো উল্লাসী। দু’বার রিং হবার পর ওপাশ থেকে জাভেদ কল ধরতেই উল্লাসী বললো,
“আপনি ঠিক বলেছিলেন জাভেদ ভাই। উনি কেয়ারলেস একটা লোক.. প্রচুর কেয়ারলেস।”
“তুমি কাঁদছো কেনো উল্লাসী?”
জাভেদের সে প্রশ্নের জবাব না দিয়ে নাক টেনে নিল উল্লাসী। তারপর সময় নিয়ে ভাঙা গলায় বললো,
“জানেন উনি আমায় কত বকেছে? অথচ উনি একটা বারও এটাই লক্ষ্য করলো না আমি এসব কোত্থেকে পেয়েছি!”
“আচ্ছা.. এবার থামো।”
“উনি কেনো এমনটা করলেন? কেনো আমার সাথে রাগ দেখিয়ে এত রাতে আমাদের একা ফেলে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেলেন? জানেন উনি কতটা কেয়ারলেস! বিয়ের পর যখন নতুন নতুন এখানে এসেছিলাম তখন উনি আমাকে একা একটি ঘরে আটকে রেখেছিল! আমি কত কেঁদেছিলাম.. উনাকে বারবার বলেছিলাম আমি ভয় পাই তবু্ও উনি শোনেনি।”
“আমি জানতাম উনি তোমায় ছোট পেয়ে তোমার উপর জুলুম চালাচ্ছে। তুমি এক কাজ করো.. নিজেকে আলাদা রাখো। উনাকে নিজের কাছে ঘেষতে দিও না।”
“আমি ঘেষতে দিব না কী! উনি নিজেই তো ঘেষবে না। উনার এত অহংকার যেন ডাক্তার হয়ে দিন দুনিয়া সব কিনে নিয়েছেন উনি!”
কিছুক্ষণ নীরব থেকে ওপাশ থেকে জাভেদ বললো,
“তোমার আপনজন বলতে কাছের কে কে এখনো তোমার সাথে কনটাক্টে আছে?”
“নানাজান.. নানাজান ছাড়া কেউ আমাকে আসল ভালোবাসে না। সবাই দেখাই.. কিন্তু কেউ ভালোবাসে না।”
চোখের পানি মুছে জবাব দিল উল্লাসী।
“কারণ তুমি মানুষ চিনতে জানো না.. চিনতে জানলে ঠকতে জানতে না। অবশ্য ঠকেই তো মানুষ শেখে তাই না?”
“জানি না..”
মৃদু হাসির মতো শব্দ করে জাভেদ বললো,
“একটা গান শুনাই কেমন? মন ভালো হয়ে যাবে তোমার।”
“না.. ভালো লাগছে না।”
“ভালোলাগবে.. একবার শুনেই দেখো।”
নড়েচড়ে বসলো উল্লাসী।
“আপনি গানও জানেন?”
“হ্যাঁ.. তবে শুরু করা যাক!”
গলা খাঁকরে উঠলো জাভেদ। তারপরই স্পষ্ট গলায় ধরলো গান।
“পথ হারাবো বলেই এবার পথে নেমেছি
সোজা পথের ধাঁধায় আমি অনেক ধেঁধেছি।
নিষেধের পাহারাতে ছিলেম রেখে ঢেকে
সে কখন গেছে ফিরে আমায় ডেকে ডেকে
নয়ন মেলে পাবার আশায় অনেক কেঁদেছি
এই নয়নে পাবো বলেই নয়ন মুদেছি।”
কয়েক চরণ গেয়েই থেমে গেল জাভেদ। কোমল কন্ঠে উল্লাসীর উদ্দেশ্যে বললো,
“হেমন্ত মুখার্জির গান.. শুনেছিলে আগে?”
ঘাড় নেড়ে কিছু একটা স্মরণের চেষ্টায় সফল হতেই চোখমুখ জ্বলজ্বল করে উঠলো উল্লাসীর। উৎসাহী গলায় সে বললো,
“হেমন্ত মূখোপাধ্যায়? মা শুনতো তো উনার গান। মার কাছে উনার গানের অনেকগুলো ক্যাসেট প্লেয়ার ছিল..”
“তাই? তবে তো তোমার মায়ের বেশ পছন্দের গায়ক ছিলেন উনি!”
“হয়তো.. জানেন আমার এখন মায়ের চেহারাটা আর চোখ বুজলেই আমার সামনে ভেসে উঠে না। কেমন যেনো আবছা হয়ে গেছে সবটা.. তবে এখন কেনো যেনো মনে হয় মা তার শেষ সময়ে বুঝেছিলেন মা তার বাবার সিদ্ধান্তের বিপরীতে গিয়ে ভালো নেই৷”
“কেনো বলোতো? এটা কেন মনে হলো তোমার?”
নিজেকে সামলে নিল উল্লাসী। বাইরের অপরিচিত এক ব্যক্তির কাছে তার বাবামায়ের ব্যক্তিগত সম্পর্ক নিয়ে কেনো আলোচনা করছে সে? প্রসঙ্গ বদলাতে হালকা কেশে উঠলো সে। ক্ষীণ স্বরে বললো,
“জনার ও নদীরে গানটাও মা অনেক শুনতো। শুনাবেন এখন ওই গানটা?”
“অবশ্যই.. কেনো নয়!
ও নদীরে, একটি কথা শুধাই শুধু তোমারে।
বলো কোথায় তোমার দেশ
তোমার নেই কী চলার শেষ! ও নদীরে…
তোমার কোনো বাঁধন নাই তুমি ঘর ছাড়া কি তাই,
এই আছো ভাটায় আবার এই তো দেখি জোয়ারে…”
চোখজোড়া বুজে বিছানায় শরীর এলিয়ে দিল উল্লাসী। জাভেদের গাওয়া গানের তালে তালে হাতের আঙুল নড়াতেই তার সামনে ভেসে উঠলো তার মায়ের অবয়ব প্রতিচ্ছবি।
চাঁদের আলোয় আলোকিত আঁধার। চারিপাশটা দৃশ্যমান করে তুললেও মেঘেদের আনাগোনায় তাতে ব্যাঘাত ঘটছে খানিকক্ষণ পরপর। তবুও চারিদিকের ঝকঝকে আলো তাদের মুগ্ধতা ছড়াতে ব্যস্ত হয়ে উঠেছে নিজেদের মতো। ছাদের চিলেকোঠার জানালার গ্রিল ধরে দাঁড়িয়ে আরেকটি সিগারেট ধরালো মেসবাহ। জানালা ডিঙিয়ে মেঝেতে আঁচড়ে পড়া চাঁদের নরম আলোয় নিজের ছায়া পড়াতে সেদিকে তাকিয়ে নাকমুখ দিয়ে ধোঁয়া ছাড়লো সে। এতক্ষণে উল্লাসী হয়তো কিছুটা শান্ত হয়েছে। তবে কি সে এবারে বাসায় ফিরবে? সময় নিয়ে সিগারেটটি শেষ করে ছাদ থেকে নেমে নিজের ফ্ল্যাটের দিকে এগুলো মেসবাহ। তবে ফ্ল্যাটের সদর দরজা সেভাবেই খোলা পেয়ে হতাশা ঘিরে ফেললো তাকে। নিজেকে এতটা ভবঘুরে দেখানোর চেষ্টায় কেনো লেগে পড়েছে উল্লাসী?
দরজা আটকে ধীর পায়ে শোবার ঘরের দিকে এগুলো মেসবাহ। বুকের ভেতরটায় তার চিরচিরে ব্যথা অনুভব হচ্ছে। বারেবারে চোখের পাতায় ভেসে উঠছে উল্লাসীর অসহায় মুখের ছবি। তবে মেয়েটি গেলো কোথায়? শোবার ঘরে ঢুকতেই মৈত্রীকে একা পেয়ে পাশের ঘরের উদ্দেশ্যে পা বাড়াতেই নজর পড়লো বন্ধ দরজার দিকে। ভেতর থেকে দরজা লাগিয়ে খোলা বাসায় একা মেয়েটিকে ফেলে কী বোঝাতে চাইছে উল্লাসী? উত্তরে বুকচিরে বেরিয়ে আসা গভীর একটি দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো মেসবাহ। আবারও শোবার ঘরে ফিরে বিছানায় শুয়ে মেয়েকে টেনে নিল বুকে। মেয়েটির কবে বুঝ হবে? কবে সে বুঝবে তার দায়বদ্ধতাগুলো?
সকালে উঠে মৈত্রীকে ডেকে তুলে করিমুন্নেসাকে বলে খাবার তৈরি করে তা খেয়েদেয়েই বাবা মেয়ে দুজনে বেড়িয়ে পড়লো নিজেদের কাজে। হাসপাতালে রোজকার ডিউটি শেষে মেয়েকে নিয়ে আবারও বাড়ি ফিরতে ফিরতে দুপুর দুটো বেজে যাওয়ায় মেসবাহ ঠিক করলো দুপুরের খাওয়াটা বাসা থেকেই একদম সেরে বেরোবে সে। তবে সংসারে চলা অশান্তির কথা স্মরণ হতেই সেই সিদ্ধান্ত বাতিল করে মেয়েকে মায়ের রাগ ভাঙাতে পাঠিয়ে দিয়ে সে দাঁড়িয়ে রইলো দরজার পাশে।
“ও মা.. আমার মা। মাই সুইট মা..”
উল্লাসীকে ডাকতে ডাকতে মৈত্রী তার ঘাড়ে চড়ে বসতেই ক্ষেপে চেঁচিয়ে উঠলো উল্লাসী। মেয়েকে বিছানা থেকে নামিয়ে দিয়ে তাকে শাষিয়ে বললো,
“চেঁচাচ্ছিস কেনো? বের হ বলছি.. বের হ। নয়তো একটা থাপ্পড় মেরে তোর সবগুলো দাঁত ফেলে দেব।”
গাল ফুলিয়ে মৈত্রী বললো,
“বাবা তো বাইরে যাবে। আমাকে যে গোসল করিয়ে দিতে বললো!”
“পারবো না আমি। এই ঘরে আরেকবার ঢুকলে তোকে মেরে আমি বস্তা বানাবো মৈত্রী৷ বের হ বলছি।”
মুখ ছোট করে মৈত্রী ঘর ছেড়ে বেরিয়ে আসতেই তাকে জামাকাপড়সহ নিয়ে মুন্নি সরকারের কাছে দিয়ে এলো মেসবাহ। তারপর করিমুন্নেসাকে দরজা লাগাতে বলে সে বেরিয়ে পড়লো লিমনের হাসপাতালের উদ্দেশ্যে। গোল্লায় যাক সমস্ত কাজকর্ম! এমন অশান্তি নিয়ে করতে পারবে না সে কোনো কাজ। তাছাড়া কার জন্যই বা করবে? যার জন্যই এত খেটেখুটে, অক্লান্ত পরিশ্রম করে বেড়ায় সে কি বোঝে তার কষ্টগুলো? সে কি মূল্য দেয় তার অনুভূতির?
“ভাবি ভালো?”
লিমনের চেম্বারে ঢুকতে না ঢুকতেই এমন প্রশ্ন শুনে কপাল কোঁচকালো মেসবাহ। সামনে থাকা গ্লাস হাতে নিয়ে ঢকঢক করে পুরো একগ্লাস পানি খেয়ে শান্ত স্বরে বললো,
“ভালো কিনা খারাপ সেটাই বুঝতে পারছি না..”
“কেনো? কী হলো আবার?”
“জানি না। শুধু জানি আমি অশান্তির ভেতরে আছি..”
“কাহিনী কি খুলে বলা যাবে?”
কপালে চিন্তার রেখা ফুটিয়ে মেসবাহ পুরো ঘটনা খুলে বলতেই ম্লান হাসলো লিমন। মেসবাহর কাঁধে টোকা মেরে রসিকতা করে বললো,
“শালা তুমি হলো নাক কোঁচকানো বুড়ো ডাক্তার। আর ওদিকে ভাবির আমার উঠতি যৌবন! সেই যৌবনে আগুন জ্বালিয়ে তুমি এখন ব্যস্ততা মারাও!”
বিরক্ত হলো মেসবাহ।
“চুপ কর তো। আসলাম একটু ফুয়েল নিতে। আর তুইও কীনা..”
“শোন আমি যা বলেছি সেটা সিরিয়াসলি বলেছি।”
“অন্যের বউয়ের বেলায় নারীবাদী কথাবার্তা আসেই.. তবে নিজের টা আসলে তখন সব চুপসে যায়।”
হেসে উঠলো লিমন।
“আমার বউ বাচ্চা বউ না মাম্মা.. এখন যখন তুই বাচ্চা মানুষ বিয়ে করেছিস একটু তো বুঝেশুনে চলতে হবেই। সাথে ভাবির আমার উঠতি যৌবন! এটাই তো ঢেলে পড়ার সময়.. তোর তো এখন বালতি ধরে বসে থাকা উচিৎ! আর তুই কিনা সেসব বাদ দিয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছিস! অন্যকেউ এই সুযোগে এসে বালতি ধরলে? তখন কিন্তু মামা পথের ভিখারি হয়ে ঘুরতে হবে।”
চোখ রাঙালো মেসবাহ।
“এটাই তোর সিরিয়াসনেসের নমুনা?”
“আহা! রাগছিস কেনো? শোন.. তুই নিজে যেহেতু বড় তাই না হয় তুই-ই ছাড় দে।”
“আর আমার শান্তি? ওর বোঝা? ওর যথেষ্ট বয়স হয়েছে। তবুও আমি সব সময় আগলে রাখি। অথচ ও বুঝতেই চায়না আমিও একটা মানুষ।”
“তবে তুই বোঝ.. তুই ম্যাচুরিটি দেখা। ওকে সময় দে। আরেকটু ম্যাচুয়র হতে দে.. আজ না হয় তুই স্যাকরিফাইস কর কাল ও করবে।”
গভীর এক শ্বাস ফেললো মেসবাহ। মাথা নেড়ে লিমনকে আশ্বস্ত করে বললো,
“আচ্ছা.. তা তোর মেয়ের কী অবস্থা? জ্বর হয়েছিল পরশু বললি। কমেছে?”
“হ্যাঁ। কমেছে। শুনেছিস ইভানা আসছে?”
“কই? আমাকে তো কিছু বলেনি।”
গাল চুলকোতে চুলকোতে লিমন বললো,
“আমাকেও ও কিছু বলেনি। তবে কাল খালাম্মা কল করেছিল। ছেলে দেখতে বললো। এবার নাকি বিয়েটা দিয়েই দম নেবে।”
“ও বিয়ে করবে? তাছাড়া যা বয়স হলো এখন তো বর খোঁজাই একটা টাফ জব।”
“আরে পাবো পাবো৷ কারো বউ মরে গেছে বা কারো যৌবনে বিয়ের কুড়কুড়ানি না উঠলেও বুড়োকালে সাধ জেগেছে এমন কাওকে খুঁজে তাদের একটার সাথে ঝুলিয়ে দিবো। ওসব ব্যপার না!”
তাচ্ছিল্যের সুরে বললো লিমন।
পাশ থেকে উদ্বিগ্ন স্বরে মেসবাহ বললো,
“এর চেয়ে ওখানে সেটেল হলেই তো পারে!”
“ওর মনমতলব বোঝা কঠিন! কী চায় না চায় ওই জানে!”
“সেটাই.. আসুক তাহলে।”
“হয় হয়.. আসুক। তা লাঞ্চ হয়েছে? হয়নি বোধহয়! চল একসাথেই সেরে নেয়া যাক।”
রাতে বাড়িতে ইচ্ছে করেই একটু দেরিতে ফিরলো মেসবাহ। ল্যাবএইড থেকে বেরিয়ে সে গিয়েছিল লিমনকে নিয়ে গাড়ির বাদবাকি কাজটা সারতে। যা মোটামুটি শেষের দিকে। সব ঠিকঠাক থাকলে আগামীকাল সকালের ভেতরই গাড়ি চলে আসবে তার ঠিকানায়। ভেবেই খুশিমনে বাড়িতে ফিরে শরীরটা ঝরঝরে করার জন্য গোসল সেরে নিল মেসবাহ। তারপর ঘুমন্ত মেয়ের মাথায় চুমু দিয়ে এল ডাইনিংয়ে। উল্লাসী সেই যে দরজা খুলে দিয়ে পাশের ঘরে গিয়ে ঢুকেছে আর বেরোইনি। তাকে কি একবার ডাকবে সে?
দরজার পাশে গিয়ে কয়েকবার উল্লাসীকে ডাকলেও ভেতর থেকে কোনো সাড়াশব্দ না পাওয়ায় আবারও ডাইনিংরুমে ফিরে এল মেসবাহ। চুপচাপ খানিকক্ষণ বসে থাকার পর উঠে রান্নাঘরে ঢুকে ভাতের হাড়িতে নজর বুলিয়ে নিল। এখনো খায়নি উল্লাসী। উপর থেকে দু’চামচ ভাত নিয়ে মৈত্রীকে খাওয়ালেও সে মুখে তোলেনি একমুঠো দানাও.. উদ্বিগ্ন মনে ডাইনিংয়ের আলো নিভিয়ে ঘরে এসে শুয়ে পড়লো মেসবাহ। খানিকক্ষণ এপাশ ওপাশ করে কাটিয়ে দেয়ার পর উঠে পানি খাওয়ার জন্য ডাইনিংয়ের দিকে এগুতেই দেখতে পেলো পাশের ঘরের দরজা খুলে রেখেছে উল্লাসী। একদন্ড ভাবলো সে। তারপর শোবার ঘরে এসে মেয়েকে কোলে উঠিয়ে সে পা বাড়ালো পাশের ঘরের দিকে।
খুব সন্তর্পণে মৈত্রীকে একপাশে শুইয়ে দিয়ে নিজের শরীর মাঝে মেলে দিল মেসবাহ। তারপর মেয়ের মাথায় খানিকক্ষণ হাত বুলিয়ে ফিরলো উল্লাসীর দিকে। বেশ আরামে ঘুমোচ্ছে সে। গভীর ঘুমের কারণে নিঃশ্বাসের দরুণ উঠানামা করছে তার বুক। সেদিকে তাকিয়েই উল্লাসীর নেয়া একেকটি নিঃশ্বাসের তালে তালে তার কোমরে হাত নিয়ে মেসবাহ আঙুল বোলাতে শুরু করতেই নড়েচড়ে উঠলো উল্লাসী। তার সেই ঘুমের রেশ কাটাতে মেসবাহ নিজের ঠোঁটজোড়া নিয়ে উল্লাসীর ঠোঁটে চেপে ধরতেই চোখ মেললো সে।
“ছোঁবেন না আমায়। সরুন এখান থেকে.. সরুন।”
উল্লাসী হাসফাস করে উঠতেই তার ঠোঁটে হাত দিয়ে ঘাড় ঘুরিয়ে মেয়ের দিকে তাকালো মেসবাহ।
“মেয়ে আছে.. ধীরে।”
“ওকে কেনো এনেছেন?”
“তো ওকে একা ফেলে রেখে আসবো?”
সে প্রশ্নের জবাব না দিয়ে উল্লাসী পাশ ফেরার চেষ্টা করতেই উঠে তার শরীরের উপর নিজের ভর ছেড়ে দিল মেসবাহ। তারপর তার কানের কাছে ঠোঁট নিয়ে ফিসফিসিয়ে বললো,
“এত রাগ? আমার মতো গোবেচারা, আলাভোলা একটি মানুষের উপর এত রাগ করে থাকতে পারো তুমি?”
“আলাভোলা না কাঁচকলা! আপনাকে খুব করে চিনি আমি। কোথায় গিয়েছিলেন কাল রাতে? মনে করেন কিচ্ছু বুঝিনা?”
“কী বোঝো তুমি? করো তো সব উদ্ভট উদ্ভট চিন্তাধারা। করিম খালা, রশ্নির মা.. এরা কে? আমাদের ভেতরে তাদের অস্তিত্ব কোথায় উল্লাসী?”
“জানি আমি.. পুরুষ মানুষদের কাজই এখন সারাদিন যৌনতা নিয়ে ভাবা আর মেয়েদের দিকে লোভী দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকা! উদাহরণ চান? মুন্নি ভাবির চাচাতো বোনের স্বামী.. উনি তার কাজের মেয়েকে প্রেগন্যান্ট করে দিয়েছিল।”
ছোট্ট একটি নিঃশ্বাস ছাড়লো মেসবাহ।
“এইতো.. থলের বিড়াল এবার বেরিয়ে এসেছে। সব তাহলে ওই ভুড়িওয়ালা ভাবির কথায় হচ্ছে?”
“বয়েই গেছে আমার তার কথায় চলতে! আমার মাথায় কি কম বুদ্ধি আছে?”
উল্লাসীর নাকে নাক ঘষলো মেসবাহ। তারপর কোমল স্বরে বললো,
“উহু..”
“তাহলে? আর সরুন.. আপনার মতো কেয়ারলেস লোক কেনো আমার উপরে উঠে থাকবে? সরুন..”
“তো কি তোমার নিচে থাকবো? তুমি উপরে উঠবে?”
“ইশ কী বাজে কথাবার্তা!”
উল্লাসী মুখ ফিরিয়ে নিতেই হাত দিয়ে তাকে নিজের দিকে ফেরালো মেসবাহ। তারপর ঠোঁট হাত দিয়ে চেপে ধরে বললো,
“বলি না বলেও দোষ.. আজ বলছি তাও দোষ! তাহলে আমি যাবো কোথায়?”
“আপনি নিজেই তো একটা দোষের ভান্ডার।ছাড়ুন তো.. এভাবে চেপে ধরেছেন কেনো? লাগছে তো!”
উল্লাসীর কথায় তাল না দিয়ে নিজের ঠোঁটজোড়া তার গলায় ডুবিয়ে দিল মেসবাহ। ধীরেধীরে সময়ের সাথেসাথে শতশত চুমুতে ভরিয়ে দিতেই শিহরিত হয়ে উঠলো উল্লাসী। মেসবাহর আদরের মাদকতা পুরো শরীরে ছড়িয়ে পড়তেই সে বুজে ফেললো দুচোখের পাতা।
“চলো.. ভাতটা খেয়ে আসি।”
হঠাৎ মুখ তুলে মেসবাহ এমন কথা বলতেই হতবাক হলো উল্লাসী। হাতের মুঠ থেকে মেসবাহ মাথার চুল ছেড়ে সে চোখজোড়া মেলে কড়া গলায় বললো,
“ব্যাটা যা করছিস কর না! এর মাঝে ভাত এলো কোত্থেকেরে?”
(চলবে)