আমার ক্রাশ বর সিজন- 2 !! Part- 25
পরেরদিন সকালে অনু ঘুম থেকে উঠে নতুন স্টাইলে নিজেকে সাজিয়ে গুছিয়ে নেয়।
তারপর রুম থেকে বাহির হয়ে নিচে নেমে আসে।
আবির অনুকে দেখে বলে,”আরে অনু মনু যে এতো সুন্দর করে সাজগোজ করে কোথায় যাচ্ছিস? ”
অনু বলে,”ভাইয়া অফিসে যাচ্ছি।
আমি দুলাভাই এর পিএ বলে কথা।”
অাবির বলে,”যাও বাছাধন দুলাভাই এর অফিসে যাও।”
অনু বলে,”উঁহু ভাইয়া দুলাভাই এর অফিসে শালি হয়ে যাচ্ছি দেখো না কতো মজা করি।”
এরপর সোজা অফিসে এসে হাজির অনু।
অনু প্রতিদিনেন মতো আরিয়ানের কেবিনের সব কাজ কমপ্লিট করে বসে থাকে।
আরিয়ান কেবিনে ঢুকতেই অনু সোজা গলা জড়িয়ে ধরে বলে,”দুলাভাই আমি আপনার একমাত্র অবিবাহিত শালিকা তাও আবার আপনার পার্সোনাল সেক্রেটারি বলে কথা।
আপনার আর আমার সম্পর্ক সব থেকে বেশি ক্লোজ হওয়ার দরকার বুঝেছেন।”
আরিয়ান নিজের গলা থেকে অনুকে ছাড়িয়ে বলে,” এসব কি হচ্ছে শালিকা এই সব ফালতু সম্পর্ক অফিসে না অফিসের বাহিরে। ”
অনু বলে,”রিলেশন যখন হয়েছে সে অফিসে কি আর বাহিরে কি?
সম্পর্ক তো সম্পর্ক তাই না দুলাভাই। ”
আরিয়ান বলে,”তোমার কি মাথা খারাপ হয়ে গেছে? ”
অনু বলে,” আপনি যখন সবটা জেনে শুনে আমার বোনকে বিয়ে করতে রাজি হতে পারেন তখন আমি একটু পাগলামি করলেই তা দোষ হবে কেনো? ”
আরিয়ান বলে,” এটা আমার অফিস অনু এখানে কোন সিনক্রিয়েট করবা না। তোমার সম্মান না থাকতে পারে আমার সম্মান আছে। ”
অনু আরিয়ানকে বলে,” দুলাভাই এটা তো সবে শুরু দেখুন না প্রতিদিন আপনাকে কিভাবে জ্বালিয়ে মারি আমি। আপনার নাকের জল আর চোখের জল যদি আমি এক করে না ছাড়তে পারি তাহলে আমার নাম অনু না।”
অারিয়ান বলে,”দেখা যাবে কে কাকে কাঁদিয়ে ছাড়ে।”
অনু সোজা গিয়ে আরিয়ানের গালে একটা চুমা দিয়ে বলে,”দুলাভাই কে ভালবেসে একটা উম্মাহ দেওয়া যায় বলে এক চোখ টিপে চলে যায়।”
আরিয়ান বলে,”আল্লাহ এটা মেয়ে না অন্য কিছু!”
একটু পর রাজ আসে আরিয়ানের কেবিনে।
রাজ বলে,”কি রে তোর শালিকা তো দিনে দিনে দেখছি সেই সুন্দরি হয়ে যাচ্ছে।তার রুপের রহস্য কি জানতে পারি?”
অারিয়ান বলে,”পরের বউয়ের দিকে নজর দিতে নেই!পরের মেয়ের রুপের রহস্য জেনে তুই কি করবি? ”
রাজ বলে,”মানে কি?আমার বিয়ান হয় জানতেই পারি। ”
আরিয়ান বলে,”অনু এখন আমার অর্ধেক ঘরওয়ালী মানে অর্ধেক বউ যাকে বলে বুঝেছিস তো? ”
রাজ বলে,”হুম বুঝলাম তোর এই অর্ধেক বউ এর উপর তো আমারো অধিকার আছে।”
আরিয়ান তার দুই ভ্রু নাচিয়ে বলে,”তোর আবার অধিকার আসলো কোথায় থেকে? ”
রাজ বলে,”আহা তুই ভুলে যাচ্ছিস কেনো তোর শালি কিন্তু আমার বিয়ান লাগে।তার সাথে তো একটু আকটু লাইন মারতেই পারি তাই না বল।”
আরিয়ান বলে,”যদি পটাতে পারিস তাহলে লাইন মারতেই পারিস আমার সমস্যা নেই।
তবে যদি অনু কে পটাতে পারিস তাহলে তোকে আমি প্রেমিক পুরুষের খেতাব উপাধি দিবো।”
রাজ বলে,”রাখ তোর উপাধি, বাঘীনি কে বাগে আনা কি যে জ্বালা তা তুই বুঝবি না।”
আরিয়ান বলে,”আমার বুঝে কাজ নেই।
যার বোঝার সে বুঝলেই হবে।”
এমন সময় অনু আরিয়ানের জন্য একমগ কফি এনে দেয়।রাজ কে পাশে দেখে অনুর মাথায় শয়তানি বুদ্ধি কাজ করতে শুরু করে দেয়।
তারপর অনু সোজা রাজের হাত ধরে দাঁড়িয়ে বলে,”আরে আমার সাধের বিয়াই যে।
আমি আপনার মতো স্মার্ট ড্যাসিং গুড লুকিং বিয়াই পেয়ে খুব খুশি তা আমি আর কাউকে বোঝাতে পারবো না।”
আরিয়ান অনুকে রাজের হাত ধরে দাঁড়িয়ে থাকা দেখে বলে,”বাব্বাহ দিনে দিনে আরো কতো কিছু যে দেখবো।”
অনু বলে,”অনেক কিছু দেখবেন দুলামিঞা। ”
রাজ বলে,”এটুকু দেখে এতো জ্বালা? বন্ধু তোমার এতো জ্বলে কেনো গো? ”
আরিয়ান রাজ কে একটা ধমক দিয়ে নিজের কেবিন থেকে বাহির করে দেয়।
এরপর দুপুরবেলা সবাই ক্যান্টিনে বসে খাওয়া-দাওয়া করছিল।
এমন সময় অনু সেখানে গিয়ে দেখে রাজ আর আরিয়ান একসাথে লাঞ্চ করছে।
অনু সোজা গিয়ে রাজের পাশে বসে পড়ে।
রাজ বলে,”মেঘ না চাইতে বৃষ্টি পাওয়ার মতো তোমায় পেয়ে যাবো তা কখনো স্বপ্নেও ভাবতে পারি নাই।”
অনু বলে,”আরে বিয়াই এইসব বাদ দিয়ে আমাকে খাবার খাওয়াই দাও তো।
আমার খুব খুধা লাগছে।”
রাজ বলে,”সামনে তো তোমার সাধের হবু দুলাভাই আছে তাকে বলো সে তোমাকে খাওয়াই দিবে।”
অনু আরিয়ানের পাশে বসে বলে,”জানু তুমি কি আমাকে খাবার খাওয়াই দিবা না কি সকালের মতো মিষ্টি সবার সামনে দিবো? ”
অনুর মুখে এমন কথা শুনে আরিয়ানের মুখে থাকা খাবার পড়ে যায়।
রাজ বলে,”সকালে কি মিষ্টি দিয়েছে তোকে? আমাকে তো বলিস নাই? ”
অনু বলে,”আরে বিয়াই সব মিষ্টি তো সবার জন্য উপযুক্ত না।তা আপনার মতো মাথামোটা মানুষের বোঝার কথা না।”
আরিয়ান চুপচাপ অনুকে খাবার খাওয়াই দেয়।
এরপর এমন করে সারাদিন অনু আরিয়ান কে ডিস্টার্ব করতে থাকে চুমা দিবার ভয় দেখিয়ে।
অবশেষে বিকাল বেলা অফিস শেষে আরিয়ান হাঁফ ছেড়ে বাঁচে।অনু সবার আগে দৌড়ে এসে আরিয়ানের গাড়িতে বসে পড়ে।
আরিয়ান কে বলে,”আমাকে আমার বাড়িতে নামিয়ে দিয়ে তারপর তুমি নিজের বাড়িতে যাবে।”
আরিয়ান আর কোনো কথা না বাড়িয়ে গাড়ি ড্রাইভ করতে করতে বলে,”তুমি এসব কি শুরু করেছো? ”
অনু বলে,”আমি তো খারাপ মেয়ে তাই এসব কাজ করা তো আমাকে মানাই তাই না।”
আরিয়ান কিছু বলে না চুপচাপ থাকে।
অনু আবার বলে,”আপনি জেনে শুনে কেনো রিমি আপুকে বিয়ে করছেন?
শুধু আমাকে কষ্ট দিবেন বলে?
আচ্ছা আমাকে কি একটু ভালোবাসা যায় না? আমি কি সত্যি আপনার ভালোবাসা পাবার যোগ্যতা রাখি না?
দেখুন লেখাপড়া কমপ্লিট করে নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করতে ভাগ্যের নির্মম পরিহাসের স্বীকার হয়ে আপনার অফিসের পিএ আজ আমি।
সব সময় চোখের দেখা সত্যি নাও হতে পারে।অন্যের বলা কথা যদি এতো সত্যি হতো।
তাহলে প্রতিদিন মানুষের মুখের কথার উপর নির্ভর করে হাজার হাজার মানুষের ফাঁসি দেওয়া হতো।একবার আমাকে বুঝতে চেষ্টা করতেন। একবার বিশ্বাস করে দেখতে পারতে।হয়তো আজকের এই দিনটা দেখতে হতো না আমাদের। তবে তোমাকে আজও কোনো দোষ দিবো না।আমার ভাগ্যে হয়তো আরিয়ান নামটা লেখা নেই যদি থাকতো কখনো এমন একটা দিন আমাকে দেখতে হতো না।”
অনুর কথা শেষ না হতেই আরিয়ান গাড়ি থামিয়ে দিয়ে বলে,”তোমার বাড়ি চলে এসেছে এখন আসতে পারো।”
অনু বাহিরে তাকিয়ে দেখে তাদের বাড়ি।
চুপচাপ গাড়ি থেকে নেমে বলে,”ধন্যবাদ স্যার আমাকে সাহায্য করার জন্য।”
অনু সোজা বাড়ির ভেতরে চলে যায়।
আরিয়ান অনুর চলে যাওয়ার দিকে এক ভাবে তাকিয়ে থাকে কিন্তু অনু একবার ও পেছনে তাকিয়ে দেখে না।
আরিয়ান অনেক সময় পর চলে যায়।
অনু বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করতেই রিমা অনুর হাত ধরে তাকে ভেতরে নিয়ে যায়।
রিমা বলে,”দেখ অনু তুই আরিয়ান কে পছন্দ করিস ভালোবাসিস।তবে আজ সে আমার বড় বোনের হবু বর। তাই প্লিজ তোর মন থেকে আরিয়ানের নামটা মুছে দে! ”
অনু বলে,”যে নাম নিজের রক্ত দিয়ে হৃদয়ের গভীরে লিখে রেখেছি তা কিনা আজ মুছে দিবো? পাঁচ বছরে পৃথিবী বদলে গেছে তবে আমার মন থেকে এক মূহুত্বের জন্য আরিয়ানের নাম মুছেনি।কারণ আরিয়ান আমার নিশ্বাসে মিশে আছে।”
রিমা বলে,”তোর এক তরফা ভালবাসার কোনো মূল্য নেই।যদি থাকতো আরিয়ান রিমি আপুকে বিয়ের জন্য কখনো রাজি হতো না।তাই প্লিজ নিজেকে ওদের থেকে দূরে সরিযে নে প্লিজ। ”
অনু বলে,”ভয় পেওনা ভাবি আমার নিজের সংসার যেখানে গড়ার আগে ভেঙ্গে গেছে সেখানে তোমার বোনের সংসার ভাঙ্গার ভয় আমাকে নিয়ে করো না।
আমি তো আছি আমার ক্রাশ কে নিয়ে।
মনে যে আছে থাকতে দাওনা তাকে নিয়ে আমাকে।আমিতো কারো কাছে কোনো অধিকার নিয়ে যাচ্ছি না।”
রিমা বলে,”তুই তো আরিয়ানের মনে নিজের অধিকার তৈরি করতে পারিস নাই যদি পারতি তাহলে রিমি আপুর স্থানে আজ তুই থাকতি।”
অনু বলে,”বাদ দাও না এসব কথা যার যে স্থান সে পাবে তাই এতো ভয় করো না।
আমি তো মোমবাতি যেখানে জ্বালিয়ে দিবে সেখানে পুড়ে গলে যাবো।”
এভাবে বেশ কিছুদিন কেটে যায় অনু আর অফিসে যায় না।আর যদিও যায় আরিয়ান কে
এড়িয়ে চলে।
হঠাৎ একদিন সকালে রিদি অনুদের বাড়িতে চলে আসে আসে।
অনু রিদিকে দেখে বলে,”আরে আকাশের চাঁদ যে আজ আমাদের বাড়িতে! ”
রিদি বলে,”ফাইজলামি রাখ তাড়াতাড়ি রেড়ি হয়ে চল আমার সাথে। ”
অনু বলে,”আজব রেডি হয়ে কোথায় যাবো আমি? ”
রিদি বলে,”প্রেম করতে যাবি সমস্যা তোর? যেখানে খুশি নিয়ে যাবো।তোর যাবার দরকার তুই যাবি আর কোনো কথা হবে না।”
এরপর চুপচাপ রেড়ি হয়ে অনু রিদির সাথে খুশি মনে ঘুরতে বেড়িয়ে যায়।
(এদের যে কি হবে জানি না😒😒)
‘
‘
‘
চলবে……