আমার ক্রাশ বর সিজন- 2 !! Part- 17
এমন সময় রিমা এসে মিষ্টি কে বলে,”এই মিষ্টি তোমাকে দাদী মা ডাকছে । যাও শুনে আসো কেনো ডাকছে।”
মিষ্টি জ্বি মা বলে ওর দাদী মার কাছে চলে যায়।
এবার রিমার অনুর পাশে বসে বলে,”তোর সমস্যা কি আজো কি চুপ করে থাকবি? সেই দিন হঠাৎ করে কোথায় থেকে কি ভাবে আসছিস তার কোনো উওর কিন্তু আমি আজও জানি না।”
অনু বলে,”এতো উওর জেনে কি হবে? ”
রিমা বলে,”সেদিন আমি ট্রেনে মাঝে কান্নাকাটি করে একাকার করে দিচ্ছিলাম।
ভাবছিলাম আমার আজ অনুকে ছাড়া যেতে হবে এর থেকে তো আমার মরে যাওয়া ভালো।
কিন্তু মাথা উঁচু করে দেখি আমার সামনে তুই সেদিন দাঁড়িয়ে ছিলি।ট্রেন চলতে শুরু করে।
আমি তোকে দেখে জড়িয়ে ধরি।
কিন্তু তুই আমাকে জড়িয়ে ধরিস নাই।
আমাকে ছাড়িয়ে হঠাৎ তুই তোর ব্যাগ থেকে ড্রেস নিয়ে চেঞ্জড করে আমার সামনের সিটে চোখ বন্ধ করে বসে থাকলি।
আমি তোকে কতো প্রশ্ন করলাম অনু তুই
কোথায় ছিলি।কেমন ছিলি কে তোকে ধরে নিয়ে গিয়েছিলো সে সবের কোনো উওর সেদিন তুই দিস নাই।একদম চুপ করে পাথরের মতো হয়েছিলি।সারপথ প্রশ্নের ঝড় তুলেছি কোনো উওর পাইনি। তবে সেদিন একটা কথার জন্য তোর হাতে থাপ্পড় উপহার পেয়েছিলাম।”
অনু বলে,”দেখো ভাবী সেদিন থাপ্পড় তোমার প্রাপ্তি ছিলো তাই দিয়েছিলাম।”
রিমা বলে,”একটা প্রশ্ন আমাদের সম্পর্ক টাকে বদলে দিলো ভাবা যায়। ”
অন বলে,”যেখানে বিশ্বাস সম্মান মরে যায় সেখানে সম্পর্কের কোনো মূল্য থাকে না।”
রিমা বলে,”হ্যাঁ সেদিন ভুল একটা প্রশ্ন করেছি তার মাসুল তো দিচ্ছি আমি।”
অনু বলে,”একটা মেয়ে হয়ে আরেকটা মেয়েকে সেদিন এমন একটা কথা বলতে তোর মুখে একটুও বাধে নাই রিমা।”
রিমা :হ্যাঁ মানছি।সেদিন আমি বলেছি তুই কি কারো রাতের খোরাক হয়েছিস যে এমন মরা মানুষের মতো চুপচাপ পাথর হয়ে আছিস?
এটা ভুল প্রশ্ন ছিলো তবে সময়টা প্রশ্ন করার জন্য উপযুক্ত ছিলো।
পাঁচ বছর আগের কাহিনী জানলে শুধু আমি না।সারা দুনিয়া তোকে হাজার প্রশ্ন করে মেরে দিতো। আমি তোকে ভালোবাসি বলে আজো সেই পাঁচ বছর আগের কথা কারো কাছে বলি নাই।তবে তুই আমাকে আর আগের মতো আপন ভাবতে পারিশ না কেনো? ”
অনু :আগে আমার চাচাতো বোন + বান্ধবী ছিলেন।এখন আমাদের বাড়ির বউ। আমার বড় ভাইয়ের বউ।সম্মান আর সম্পর্ক দুটোই তার স্থান চেঞ্জ করেছে।
রিমা :কি ভাগ্য আমার ট্রেনের মাঝে তোর সাথে সম্পর্ক খারাপ হলো তো।
আরেক দিকে ট্রেন থেকে নামতেই জানতে পারলাম আমার সাথে আবির ভাইয়ের বিয়ে ঠিক করে রাখছে বাবা।
অনু বলে,”হুম। ”
রিমা :চিটাগাং থেকে ঢাকা এসে আর তোর সাথে কথা বলার সুযোগ হলো না।
বাড়িতে এসেই দেখি বিয়ের তোড়জোড় শুরু হয়েগেছে।এরপর কয়েকদিন পরে আমার আর আবির ভাইয়ের বিয়ে হয়ে যায়।
আমি তোর আর আমার সম্পর্ক ঠিক করবো না নিজের আর আবিরের সম্পর্ক ঠিক করবো তা বুঝতে পারছিলাম না।
এসবের মাঝে এতোটা ব্যস্ত ছিলাম যে বিয়ে চার পাঁচ মাসের মধ্যে মিষ্টি পেটে চলে আসে তাও জানতে পারি না।
এরপর যেদিন মিষ্টির কথা জানতে পারে সেদিন থেকে তো আমার পৃথিবী জুড়ে নতুন অতিথির অাগমণের ব্যবস্থায় ব্যস্ত আমি।
এদিকে তুই ঠিকি তোর জীবনে মুভ অন করে গেছি।ভার্সিটিতে ভর্তি হয়ে অনার্স কমপ্লিট করেছিস।আর আমার পৃথিবী স্বামী সংসার আর বাচ্চার মাঝে আটকে গেলো?
কিন্তু কেনো বলতো।তোর জন্য দুই বছর আমি পরিবার থেকে দূরে থাকলাম তার ফলাফল এটা ছিলো যে আমার সাথে অন্যায় করা হলো?
অনু :কোথায় অন্যায় করেছে তোর সাথে? মিষ্টি জন্ম নেওয়ার পর কি তোকে সবাই লেখাপড়া করতে বলে নাই?
রিমা :হ্যাঁ বলেছে।
অনু বলে,”সেদিন তুই মিষ্টির জন্য লেখাপড়া ছেড়েছিস।বাড়ির কেউ বলে নাই লেখাপড়া ছেড়ে দিতে এটা তোর নিজের ব্যক্তিগত মতামত ছিলো।বাড়ির সবাই ছিলো মিষ্টিকে দেখার জন্য।
কিন্তু তুই নিজের মেয়েকে নিজের হাতে বড় করবি বলে জেদ ধরে বসে থাকলি।
আর আজ দোষ আমাদের বাহ এটাই আমাদের পাওনা ছিলো?
রিমা বলে,”আমি এমন কিছু মনে করে বলি নাই।”
অনু বলে,”আর হ্যাঁ একটা কথা তোমাদের বিয়ের পর আমাদের সম্পর্কের মাঝে কখনো কোনো কিছু বদলাই নাই।
যা বদলানোর তুই চেঞ্জ করেছিস।
ভুল তোর ছিলো তুই আমাকে ননদের মতো ট্রিট করেছিস।বান্ধবীর মতো ট্রিট করিস নাই।
তোদের পারসোনাল বেপারে আমি কখনো নাক গলাতে যায় নাই।আমি শুধু মিষ্টি কে নিয়ে নিজের মতামত জানিয়েছি সব সময়।
এটা হয়তো তোর খারাপ লাগে।
কিন্তু মিষ্টি কে আমি অনেক ভালোবাসি তাই যতোদিন এবাড়িতে থাকবো মিষ্টির উপর নিজের অধিকার ফোলাবো।
তোমাদের সবার সমস্যা হলে বলবে। আমি বাড়ি ছেড়ে চলে যাবো।”
রিমা বলে,”অনু এটা কিন্তু বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে। সব সময় বাড়ি ছেড়ে যাবার কথা কেনো বলিস? এটা যেমন আমার বাড়ি! ঠিক তেমন তোর বাবার বাড়ি এটা।আমার থেকে বেশী অধিকার তোর এখানে! ”
অনু বলে,”বিয়ের পর মেয়েদের আর বাবার বাড়িতে অধিকার থাকে না।শ্বশুর বাড়ির উপর তখন তার সব অধিকার থাকে যেমন তোর এই বাড়ির উপর আছে বলে সোজা ছাদে চলে যায়।”
রিমা নিজেকে বলে,”উফফ অনুকে নিয়ে আর পারি না।সব সময় মন খারাপ করে ছাদে চলে যায়।”
আবির এসে মিষ্টি কে বলে,”তোমার আম্মু আর ফুপি কোথায়? ”
মিষ্টি বলে,”মাম্মা ফুপির রুমে।”
আবির অনুর রুমে এসে দেখে অনু সেখানে নেই রিমা চুপচাপ বসে আছে।
রিমা বলে,”যাও দেখো তোমার অনু মনুর মুড ওফ ছাদে চলে গেছে।”
আবির তাড়াতাড়ি ছাদে চলে আসে।দেখে অনু একা একা দোলনাতে বসে আসে।
আবির চুপচাপ অনুর পাশে এসে বসে পড়ে।
অনু তা বুঝতে পেরে আবিরের কোলের উপর মাথা দিয়ে শুয়ে থাকে।
আবির বলে,”আমার অনু মনুর কি হয়েছে মন খারাপ কেনো? মাথার চুলে হাত বুলিয়ে দিতে থাকে।”
অনু বলে,”অফিসে নতুন বস এসেছে কাজের চাপ অনেক ভালো লাগছে না তাই মন খারাপ। ”
আবির বলে,”বুড়ি তুই এটা কোনো কথা বলছিস? কাজের চাপের জন্য এতো মন খারাপ করলে হয়।যতো কাজের চাপ আসুক না কেনো হা হাসি মুখে ভালোবেসে করবি দেখবি কোনো কিছু সমস্যা মনে হবে না।”
অনু এবার উঠে আবির কে বলে,”কোনো কিছু যদি কাটা ঘায়ে নুনেরছিটে দেয় তখন কি করবো? ”
আবির বলে,”নুনেরছিটে কেনো মনে করতে যাবি।ওটাকে মেডিসিন মনে করবি তাহলে দেখবি নিজের কাজের গতি বেড়ে যাবে।”
অনু আবির কে জড়িয়ে ধরে বলে,”ভাইয়া আশেপাশে সব কিছু বদলে গেছে তোমার ভালোবাসাটা আগের মতো আছে।”
এমন সময় রিমা কোলে করে মিষ্টি কে ছাদে নিয়ে আসে।
মিষ্টি বলে,”হ্যাঁ ফুপি তোমার ভালোবাসাতে ভাগ বসাতে আমি আর মাম্মা ও আছি কিন্তু। ”
অনু বলে,”এই ঠিক চলে আসছিস ভাগ বসাতে। যা পালা এখান থেকে। ”
মিষ্টি বলে,”তুমি পালাও হিংসুক মেয়ে।ভালবাসা নিয়ে হিংসা।”
অনু বলে,”কি আমি হিংসুক কোথায় হিংসা করছি আমি? ”
মিষ্টি বলে,”এখনো মাম্মার কোলে আছি। তোমাদের কাছে নিয়েছো আমাকে?”
আবির মিষ্টি কে কোলে নিয়ে বলে,”আমার পাগল সব গুলো।এদের নিয়ে আমি আছি বড় বিপদে।যাও অনু নিজের ঘরে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ো অনেক রাত হলো কাল সকালে আবার অফিস আছে তোর।”
মিষ্টি বলে,”ওহ হো পাপ্পা কি যে বলো না তুমি? রাতের খাবার না খেয়ে ফুপি ঘুমাবে না কি?
বলো খাবার খেয়ে তারপর ঘুমিয়ে পড়ো অনু।”
আবির বলে,”ওরে পাকনা বুড়ি আমার।
সব দিকে তার খেয়াল থাকে।”
তারপর সবাই নিচে এসে খাওয়া-দাওয়া করে নিজেদের ঘরে চলে যায়।
এদিকে নির্ঘুম রাএি পার করছে আরিয়ান।
পাঁচ বছর আগে তো সব কিছু শেষ হয়েগেছে। তাহলে এখন অনুর ফিরে আসা কি আমার জীবনে নতুনের শুরু না কি পুরাতন ইতিহাসের নতুন সূচনা করবে?
আমি আর অনুকে ভালোবাসে নিজেকে কষ্ট পেতে দিবো না।
অনুর জন্য পাঁচ বছর আগে এ হৃদয়ে রক্ত ক্ষরণ হয়েছে। তা অনেক কষ্টে মলম লাগিয়েছি।
সে ঘা আর তাজা করতে চাইছি না।
এদিকে পরেরদিন,,,,
.
.
.
.
চলবে…..