সে কি জানে

সে কি জানে Season 2 ! Part- 05

জানালা দিয়ে বাইরের দৃশ্য দেখে যাচ্ছি।প্রকৃতির সব কিছুই যেন মনোমুগ্ধকর। দেখলেই মনটা শান্ত হয়ে যায় বরাবরই!তবে আমি শান্ত হতে পারছি না। এক রকম অস্বস্তি কাজ করছে আমার মাঝে।মাথা-টা ব্যথায় ফেটে যাচ্ছে। কোনো শক্ত কিছু দিয়ে যদি মাথায় বারি দেওয়া যেত, তাহলে হয়তো এ ভয়ংকর ব্যথা থেকে মুক্তি পেতাম। কিন্তু আফসোস! তেমনটা করতে পারবো না আমি। নির্বাক কষ্টগুলো সহ্য করতে হবে আমায়। ভেবেই দীর্ঘ শ্বাস ফেললাম। রেয়ানের বুকেই মাথা রেখে আছি। সে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে মাথায়। আমাদের সামনেই এক দম্পতি বসে আছেন। দেখে মনে হচ্ছে কয়েকদিন হলো বিয়ের। অনেক যত্ন নিচ্ছে দু’জন দু’জনের। হঠাৎ সামনে থাকা ছেলেটা বলে উঠল…..
—” ভাবী কি অসুস্থ ভাইয়া? ”
কথাটাশুনে দু’জন দু’জনের দিকে তাকালাম। গলা দিয়ে কথা বের হচ্ছে না আমার। কেমন যেন শুকিয়ে গেছে ভেতরটা। কষ্ট করে কিছু বলতে যাবো তার আগেই রেয়ান কিঞ্চিত হেসে বলে উঠলেন…..
—” হুম!একটু অসুস্থ। ”
হতবাক আমি! ডক্টরের আগে বলা উচিত আমি তার স্ত্রী না।তারপর নাহয় এ কথাটা বলতে পারতেন। কিন্তু উনি কি করলেন?রাগ হলো আমার। রেয়ানকে খোঁচা দিয়ে চোখ রাঙ্গিয়ে তাকালাম তার দিকে। আমার এভাবে করার কারন জানা সত্ত্বেও উনি চুপ করে রইলেন।পরক্ষণেই বাঁকা হাসলেন উনি। সামনে থাকা ছেলেটার উদ্দেশ্যে আবার বলে উঠলেন……

—” আমরা হানিমুনে যাচ্ছি। আপনারা?? ”
চোখ বড় বড় করে তাকালাম রেয়ানের দিকে। কিন্তু এতে তার কোনো হেলদোল নেই। সে আগের নেয়-ই বসে আছে। হয়তো ছেলেটার উত্তরের অপেক্ষায়। ছেলেটা মুচকি হেসে বলে উঠল…..
—” হ্যাঁ!! আমরাও ”
পরক্ষনেই নিজের এক হাত এগিয়ে দিলো রেয়ানের দিকে। আর বলল…..
—” আমার নাম তন্ময়। আমার স্ত্রীর নাম কুহু। ”
হাসলো রেয়ান। তারপর তন্ময়ের সাথে হাত মিলিয়ে বলল…..
—” আমি রেয়ান।উনি হচ্ছেন মিরা। ”
—” ও! তা আপনারা হানিমুনে কোথায় যাচ্ছেন? ”
—” রাঙামাটি। ”
আড়চোখে তাকালাম রেয়ানের দিকে।তাহলে উনি আমাকে রাঙামাটি নিয়ে যাচ্ছেন।কিন্তু কেন? উফফ! ভালো লাগছে না কিছু। এভাবে জোর করে কোথাও নিয়ে যাওয়ার মানে আছে। এসব কোনো ডাক্তারের কাজ? আমার তো কোনো এঙ্গেলেও এ মানুষটাকে ডাক্তার মনে হয় না।অসভ্য লোক কোথাকার!
এতক্ষন রেয়ানের বুকে মাথা রেখে থাকলেও এখন মোটেও ভালো লাগছে না সেটা।একটু সরে আসতে নিলেই আমার কোমড় শক্ত করে চেপে ধরলেন রেয়ান। কানের কাছে এসে ফিসফিসিয়ে বলে উঠলেন……
—” মিস মরুভূমি! এত নড়াচড়া কেন করছেন আপনি? আর একবার নড়াচড়া করলে কিন্তু ওদের সামনে চুমু দিয়ে দিবো।সো বি কেয়ার ফুল! আমি কিন্তু আমার কথা রাখি। ”
চোখ টিপ মেরে সোজা হয়ে বসলেন রেয়ান।আমাকে তার বুকের সাথে আরেকটু চেপে ধরে তন্ময়ের সাথে আড্ডা দিতে লেগে গেলেন। আর আমি! আমি তো এখনও শকে আছি। এতটা অসভ্য একটা মানুষ কিভাবে হয়? কিচ্ছু আটকায় না মুখে! নির্লজ্জ,বেহায়া ডক্টর।
.
প্রতিনিয়তই একটা অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে আগাচ্ছে আবদ্ধ।পরবর্তিতে কি তার আর দীঘির সম্পর্ক-টা আগাবে?নাকি এটা ক্ষণিকের জন্য?আদও কি দীঘি তাকে ভালোবাসবে?প্রশ্নগুলো বেশ জটিল আবদ্ধের জন্য।আপাতত এসব জটিল প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে চায় না সে। থাক না এভাবে! যেভাবে আছে সেভাবেই তো ভালো আছে সে। দীঘির সাথে তো দেখা করতে পারছে।এটাই অনেক তার জন্য। পিচ্চি মেয়েটাকে যে কিভাবে যেন ভালোবেসে ফেলেছে। মেয়েটার মিষ্টি চেহারা,কথায় কথায় লজ্জা পাওয়া,আবদ্ধের দিকে ভয়ার্তক দৃষ্টিতে তাকানো।সবই যে আবদ্ধ কে ঘায়েল করে।একবার নয় শত শত বার করে! ভাবতেই মুচকি হাসলো সে।নদীর দিক থেকে নজর সরিয়ে দীঘির দিকে তাকালো। গাছের সাথে হেলান দিয়ে বই পড়ছে মেয়েটা। আবদ্ধের কঠিন আদেশ বলে কথা! অমান্য করা যাবে না।
—” পড়া শেষ হয়েছে তোর? ”
—” আর একটু! ”
—” আচ্ছা আর পড়তে হবে না। রাস্তায় হাঁটবি? ”
—” পা ব্যথা করছে আমার। ”
চোখ ছোট ছোট করে দীঘির দিকে তাকালো আবদ্ধ। তারপর দুষ্ট হেসে বলল…..
—” কোলে নিবো? ”

লজ্জা পেল দীঘি। তাড়াতাড়ি মাথা ডানে-বামে ঝাকালো সে। হালকা সরে বলে উঠল…..
—” আপনি অনেক নির্লজ্জ! ”
জোড়ে জোড়ে হেসে উঠল আবদ্ধ।দীঘির গাল টেনে বলে উঠল….
—” তাই নাকি পিচ্চি?? ”
জবাব দিলো না দীঘি।মুখ অন্য দিকে ফিরিয়ে নিলো।এতে আরেক দফা হাসলো আবদ্ধ। দীঘির হাত ধরে একটানে দাঁড় করিয়ে সে।তারপর বলল…..
—” পিচ্চিরে এ-ই বুড়োটা যে তোকে ভালোবেসে ফেলেছে। এখন তো তোকে প্রতিনিয়ত কষ্ট করতে হবে।এতটুকুতেই যদি হাপিয়ে যাস তাহলে পরবর্তিতে কি করবি? এখন তো মাত্র পথ চলা! ”
প্রতিউত্তরের আর অপেক্ষা করল না আবদ্ধ। দীঘিকে নিয়ে হাঁটতে লাগলো অজানা গন্তব্যে!!

রেয়ানের বুকে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম আমি।ঘুম থেকে উঠতেই দেখি আমাদের সামনের সিটে যে দম্পতি ছিল তারা আর নেই। হয়তো নেমে গেছে।মাথা তুলে তাকাতেই দেখি রেয়ান আমার দিকেই তাকিয়ে আছেন।আমার দিকে একটা মিষ্টি হাসি ছুঁড়ে মারলেন উনি। সেই হাসিটা ছিল ভূবন-ভুলানো হাসি।কেন যেন আমিও হেসে দিলাম তার সাথে। পরক্ষনেই হুশ ফিরলো আমার। তাড়াতাড়ি সরে আসলাম তার কাছ থেকে। কিন্তু এবার আরও ভয়ংকর কিছু ঘটে গেল! আমার কাছে এসে আমার কপালে আলতো করে ঠোঁট ছুঁইয়ে উনি বলে উঠলেন…..
—” গুড আফটারনুন মরুভূমি! ”
সাথে সাথে চোখ বড় বড় হয়ে গেল আমার।
.
.
.
#চলবে🍁🍁