সে কি জানে ! Part- 09
বারান্দায় দাঁড়িয়ে বৃষ্টির এক এক ফোটা অনুভব করছি।।মনটা অনেকটাই শান্ত হচ্ছে এতে।।আবার যখন হঠাৎ বাতাস এসে ছুঁইয়ে দেয় শরীরকে।। তখন শরীরটা শিউরে উঠে আমার।।এক অজানা অনুভূতি কাজ করা শুরু করে ।।কিছুক্ষন এভাবে থেকে এক প্রশান্তির নিশ্বাস নিয়ে চোখটা খুললাম আমি।।ঝড়ের শেষটা আমার পছন্দ।।যখন ঝড় থেমে যায় তখন প্রকৃতিটা অনেক শান্ত শান্ত লাগে।।এখন ঠিক তেমনই লাগছে আমার চারপাশটা।।প্রকৃতি যেন এক আলাদা সৌন্দর্যে মেতে আছে।।
হঠাৎ নিচে তাকাতেই কাউকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখি আমি।।লেমপোস্টের আলোতে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে এটা রেয়ান।।বৃষ্টিতে ভিজছে সে।।প্যান্টের পকেটে দু’হাত রেখে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সে আমার দিকে।। আচ্ছা রেয়ান এমন কেন?? তার সবকিছুতেই যেন একটা নিজস্ব স্টাইল আছে।।এ-ই যে,,, সে যে এখন প্যান্টের পকেটে হাত রেখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।।এটাও যেন তার এক নিজস্ব স্টাইল।।ভেবেই একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেললাম…….
আর দাঁড়ালাম না বারান্দায়।।রুমে চলে আসলাম।।কেন যেন ভালো লাগছে না আর সেখানে দাঁড়াতে।।হয়তো রেয়ান আছে বলে!! রেয়ানকে দেখলেই মনে হয় তার ভেতরে কত শত রহস্য।।আসলেই আছে,,, অনেক রহস্যই আছে তার মাঝে।।যা দিন দিন মনে হচ্ছে বেড়েই যাচ্ছে।।আচ্ছা,,, রহস্যের জোট খুললে কি খুব বেশি ক্ষতি হবে?? হয়তো না,,তাই না?? তাহলে সব কিছু এত ধোয়াশা কেন?? রহস্য খোলার চেয়ে যে আরও বেড়েই চলছে।।কিন্তু কেন যেন মনে হচ্ছে রহস্যের সব জোট খুলবে।।আর তা খুব তাড়াতাড়িই হবে।। রেয়ানই বলবে সেটা।।কিন্তু কখন?? তার যে কিছু ঠিক নেই।।একসময় এটা করবে তো একসময় সেটা।। তার সব কর্মকান্ডতেই আমি হতাশ।।এবারও তাই!!!
.
.
.
রেয়ানের হাতে রক্ত দেখে আমি চমকে গেলাম।।কিন্তু তবুও শান্ত দৃষ্টিতে রেয়ানের দিকে তাকিয়ে হালকা কন্ঠে বললাম……
—” আপনার হাতে রক্ত কেন??”
রেয়ান কিছু বলল না।। তার দৃষ্টি এখনও আমার দিকে।। কিছু একটা আন্দাজ করতে পেরে আমি মাকে বলে উঠলাম……
—” মা রিহানকে নিয়ে যাও তো।। আমার রেয়ানের সাথে কিছু কথা আছে।। ”
—” মানে?? এ ছেলের সাথে তোর কি কথা??আর আমরা যাবো কেন?? ”
—” মা আছে কথা।।তুমি প্লিজ যাও।।কথা শেষ হতেই ডাকছি তোমায়।।”
—” কিন্তু…”
—” প্লিজ মা ”
মা আর কিছু বললেন না।। গোমড়া মুখ করে রিহানকে নিয়ে সেখান থেকে চলে গেলেন।।মা আর রিহান চলে যেতেই আমি রেয়ানকে নিয়ে সোফায় বসি।।সে এখনও চুপ করে আছে।।নিচের দিকে তাকিয়ে কি যেন ভাবছে ।।তার যে হাত কেটে গেছে,,,আর সেখান থেকে যে রক্ত পড়ছে,,, এতে যেন তার কোনো খেয়াল নেই।।
কিন্তু আমি তো এড়াতে পারছি না এটা।।একটা মানুষের হাত থেকে এভাবে রক্ত পড়ছে।। আর আমি হাতে হাত রেখে বসে থাকবো।। জীবনেও না!! তাড়াতাড়ি গিয়ে ফাস্টএড বক্স নিয়ে আসি।।তারপর ঔষধ লাগাতে থাকি রেয়ানের হাতে।।ঔষধ লাগানো শেষে রেয়ানের দিকে তাকাতেই দেখি সে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আমার দিকে।।তার চোখ দু’টো যেন অনেক কিছু বলছে আমাকে।। কিন্তু আফসোশ!! আমি সেগুলো বুঝতে পারছি না।।
রেয়ানের এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে আমার খুব অস্বস্তি হচ্ছে।।সাথে অজানা কিছু প্রশ্নও।। নরম কণ্ঠেই তাকে জিজ্ঞেস করলাম……
—” আপনার হাত কাটলো কিভাবে?? ”
—” আমি একজন পুলিশ।।আমার কাজই মৃত্যুর সাথে লড়াই করা।।এখানে এটা তো সামান্য হাত কাটা।।হয়তো কোনো ভাবে কেটে গেছে??”
—” সত্যি তো?? ”
—” হুম ”
তার উত্তর শুনে হাসলাম আমি।।হেসে হেসেই বললাম……
—” খুব ভালো মিথ্যে বলতে পারেন আপনি রেয়ান।।কিন্তু আফসোস,,,সে মিথ্যেটা আমার সামনে বেশিক্ষন টিকলো না।। ”
—” মানে??”
—” এতক্ষন আপনি আমার দিকে তাকিয়ে ছিলেন।।কিন্তু যখনই আমি আপনাকে প্রশ্ন করলাম,,তখন আপনি মাথা নিচু করে উত্তর দিলেন।।একটা কথা কি জানেন।।আপনি কখনও কথা বলার সময় মাথা নিচু করেন না।।সবসময় চোখে চোখ রেখে কথা বলেন।।একমাত্র মিথ্যা বলার সময়ই আপনি নিচের দিকে তাকিয়ে কথা বলেন।। ”
কথাটা শুনে রেয়ান বাঁকা হাসলো।।পরক্ষনে শান্ত কণ্ঠে জবাব দিলেন…….
—” সকালে বাবার সাথে দেখা করতে গিয়েছিলাম।।দেখা করে আসার সময় কিছু মিডিয়ার লোক আমাকে দেখে ফেলে।।তারপর শুরু হয় তাদের নানা প্রশ্ন।।আমি সুন্দর ভাবেই তাদের সব কথার উত্তর দিচ্ছিলাম।। বাট,, একটা রিপোর্টার তোমাকে নিয়ে একটা বাজে প্রশ্ন করে।।যা আমার সহ্য হয় নি আর আমি তাকে মারা শুরু করি।।মারার এক পর্যায়ে ভুল বশত আমার হাত পাশে থাকা কাঁচের দেওয়ালে লেগে কেটে যায়।।”
কথাটা বলেই তিনি চুপ হয়ে যান।।আমি তার দিকে তাকিয়ে আছি।।গভীর ভাবে পর্যবেক্ষন করছি তাকে।।এত কিছু হয়ে গেলো কিন্তু তাও তার মুখ স্বাভাবিক।।সে স্বাভাবিকভাবেই সামনের দিকে তাকিয়ে আছে।।
—” আপনি কি জানেন,,,আপনার এমন করায় কি হতে পারে??”
—” হুম ”
—” তাহলে এমন করলেন কেন??আপনি কি বুঝতে পারছেন আপনার এমন করায় মিডিয়ার লোক কতটা খারাপ খারাপ নিউজ বানাতে পারে আমাদের নামে।।রাগটা কি একটু কন্ট্রোল করা যায় না?? বুঝে শুনে কাজ কেন করেন না আপনি?? ”
আমার কথায় রেয়ান এবার কিছুটা গম্ভীর হয়ে গেল।।সামনের দিকে তাকিয়ে থেকেই গম্ভীর কণ্ঠে বলল……
—” আমি বুঝে শুনেই সব কাজ করি।।তোমাকে আমাকে শিখাতে হবে না।।আর রইল খারাপ নিউজের কথা,,,সেগুলো কোনোভাবেই কেউ বানাতে পারবে না।। আমি বানাতে দিবো না।। ”
—” কি করবেন আপনি??”
রেয়ান আবার চুপ হয়ে গেলেন।।তার এভাবে বারবার চুপ হয়ে যাওয়ায় বিরক্ত হচ্ছি খুব!! বিরক্তি নিয়েই বললাম……..
—” চুপ থাকতে তো এখানে আসেন নি নিশ্চয়ই?? কি জন্য এসেছেন তা বললে খুশি হবো।। ”
—” না মানে,,,আমি ভেবেছিলাম ওই রিপোর্টাস গুলো আবারও হয়তো তোমার বাসায় এসেছে।।তাই দেখতে আসলাম।।”
—” সকালেও তো এসেছিলো তারা।।আমাকে অনেক বাজে বাজে কথাও শুনেয়েছে।। তাহলে তখন কেন কিছু করেন নি আপনি??এখন এত রাগছেন যে?? ”
—” কে বলল আমি তাদের কিছু করিনি?? ”
বলেই বাঁকা হাসলেন তিনি।।তার হাসির মানে কি?? সে কি কিছু করেছে নাকি ও-ই লোকগুলোর সাথে।।কৌতূহল নিয়ে তাকে জিজ্ঞেস করলাম…..
—” কি করেছেন ওদেরকে?? ”
—” ওয়েল আমার কাজ শেষ।।তাই আমার যাওয়া উচিত এখন।। ”
বলেই আর এক মুহুর্তও দাঁড়ালেন না তিনি।।সোজা চলে যান বাসার বাইরে।।এদিকে তার কথায় আমি স্পষ্ট বুঝতে পারছি সে আমার কথা এড়িয়ে যাচ্ছে।।কিন্তু কেন?? কিছু খারাপ তো করেনি সে তাদের সাথে??
.
সকালে মানুষের চেঁচামেচিতে ঘুম ভাঙ্গে আমার।।চোখ খুলতেই দেখি রিহান এখনও ঘুমাচ্ছে।।তাকে পাশে শুইয়ে দিয়ে আমি নিচে চলে যাই।।কি হয়েছে তা দেখার জন্য।।নিচে যেতেই দেখি যে লোকগুলো আমার নামে বাজে বাজে কথা বলে বেড়ায় তারাই আজ আমার কাছে ক্ষমা চেতে এসেছে।।তাদের এমন ব্যবহারে আমি অনেক অবাক।।হঠাৎ আমার কাছে ক্ষমা চেতে এসেছে কেন তারা??আমি লোকগুলোর দিকে তীক্ষ্ম দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলি……
—” আপনারা তো সবসময় মানুষের কাছে আমার বদনামই করে এসেছেন।।আজ হঠাৎ ক্ষমা চাচ্ছেন যে??”
আমার কথা শুনে একজন করুণ কণ্ঠে বলে উঠে……
—” আমরা তো আর জানতাম না ও-ই পুলিশ তোমার কি হয়।।জানলে হয়তো ওসব বাজে কথা বলতাম না।। মাফ করে দাও আমাদের মা।। ”
এবার আমি বুঝতে পারছি তারা কেন এমন ভালো ব্যবহার করছে আমার সাথে।।রেয়ান যে এমনটা করেছে তা স্পষ্ট।। কেন যেন মনে হচ্ছে সে এখানেই কোথাও আছে।।।তাই আর দেড়ি না করে বাসার বাইরে চলে যাই রেয়ান আছে কিনা তা দেখার জন্য।।বাইরে যেতেই দেখি রেয়ান গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে ২হাত প্যান্টের পকেটে রেখে দাঁড়িয়ে আছে।।আমাকে দেকতেই চোখ থেকে সানগ্লাস খুলে ঠোঁট নাড়িয়ে বলে…….
—” কেমন দিলাম মরুভূমি?? ”
.
.
.
#চলবে🍁🍁