সে কি জানে ! Part- 05
অন্ধকারে কিছুটা হলেও বুঝতে পারছি কেও আমার দিকে ক্রমশই এগিয়ে আসছে।।তার পায়ের শব্দ পাচ্ছি আমি।।এতে যেন আরও ভয় পেয়ে যাই।।হাত-পা ছোটাছুটির চেষ্টা করছি আর বলছি….
—” রেয়ান!! এটা কি আপনি??প্লিজ সামনে আসুন।।আমার অনেক ভয় লাগছে ”
কথাটা বলে আমি থেমে যাই।। কেউ কিছু বলে নাকি তা শুনার জন্য অপেক্ষা করতে থাকি।।কিন্তু না!!কারো কোনো কথাই শুনা যাচ্ছে না,,,আর না শুনা যাচ্ছে সেই কাছে আসার শব্দ।। আবারও বলে উঠি…..
—” রেয়ান আপনি কোথায় প্লিজ সামনে আসুন।।আমি জানি আপনি এখানে।।”
বলতে না বলতেই কেউ হাওয়ার গতিতে এসে আমার হাত ২টো চেপে ধরে।।চারদিকে অন্ধকার বিরাজ করেছে রুমটায়।। তাই হয়তো চিনার উপায় নেই এটা কে!! কিন্তু আমার বুঝতে বেগ পেতে হয়নি।।এটা যে রেয়ান,,তা খুব ভালো ভাবে বুঝতে পারছি আমি।।তাছাড়া রেয়ান ছাঁড়া কে হতে পারে যে আমাকে এভাবে হাত-পা বেঁধে রাখবে……
হঠাৎ রেয়ান আমার কানের কাছে এসে ফিসফিসিয়ে বলে উঠে….
—” শাস্তি পাওয়ার জন্য তুমি তৈরি তো মরুভূমি?? ”
কথাটা শুনে বেশভাবে বুঝিতে পারছি আমার সাথে কিছু হতে চলেছে।। কিন্তু এখন ভয় পেলে হবে না।। এখান থেকে বের হতে হবে আমার।।আমার ছোট্ট ছেলেটা যে আমার অপেক্ষা করছে।।কোনোমতে কাঁপাকাঁপা কন্ঠে বলি…..
—” প্লিজ রেয়ান আমাকে যেতে দিন।।আমি…..”
—” কি খালি,, যেতে দিন,,যেতে দিন করছো।।আমি বলেছি না যেতে দেব না,,,, মানে যেতে দেব না।। [ আমার কানে আলতো করে কামড় দিয়ে আবারও বললেন ] আচ্ছা আমার কাছ থেকে তুমি এত পালাতে চাও কেন??তোমার পাখা গজিয়েছে তাই না?? যদি পাখাটা কেটে দি তাহলে কেমন হয়??”
রেয়ানের কথায় স্পষ্ট রাগ অনুভব করতে পারছি আমি।।সাথে আমার ভয় তো আছেই।।কিন্তু কথাটা দ্বারা কি বুঝাতে চাচ্ছে রেয়ান??কোনো কি খারাপ কিছু করবে সে…..
—” কেন এমন করছেন আপনি রেয়ান??”
—” কারনটা তোমার অজানা নয় ”
—” রেয়ান বুঝার চেষ্টা করুন।।আমি একজন ডিভোর্সি আর আমার একটা ছেলেও আছে।। ”
—” সো ওয়াট!! এতে আমার কোনো আপত্তি নেই।।আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাই ব্যস!!”
—” এটা সম্ভব না রেয়ান।। আমার একটা অতীত আছে,,, একবার বিয়ে হয়েছে আমার,, কারও বউও হয়েছি আমি।।এখন আর কাউকে বিয়ে করার ইচ্ছে নেই আমার,,,আর না আছে কারও বউ হওয়ার।।”
—” তাহলে রক্ষিতা হয়ে থাকবে তুমি আমার সাথে ”
—” মানে??”
—” তুমিই তো বললে কারও বউ হওয়ার ইচ্ছে নেই তোমার।।তাহলে রক্ষিতা হয়ে থাকো আমার সাথে।।”
—” আপনি আসলেই একটা অমানুষ রেয়ান।।কথাগুলো বলতে আপনার বিবেকে বাঁধে না??কিভাবে বলছেন এগুলো??কোনো পুলিশ কি এমন হয়?? হয়তো,,, নাহলে আপনার মতো একটা জানোয়ার পুলিশ হলো কিভাবে।।”
কথাটা শুনে রেয়াম মনে হয় রেগে গেল।।আমার গাল শক্ত করে চেপে ধরে রাগি কণ্ঠে বলল…….
—” তোমাকে পাওয়ার জন্য আমি সব করতে পারব জান।।তোমাকে চাই আমার।।এট এনি কস্ট।।আর কি যেন বললে?? আমি অমানুষ,,জানোয়ার তাই না?? এখন জানোয়ার কি কি করতে পারে তা তো তোমাকে দেখাতেই হয়।।”
—” ক,,,কি করবেন আপনি?? ”
রেয়ান আমার কথায় পাত্তা না দিয়ে আবার বলতে শুরু করলেন……
—” জান,,, তুমি অনেক বোকা জানো।।এটা জানা সত্ত্বেও যে তোমার ছেলে আর মা আমার কাছে বন্দী।।তাও আমাকে এত বড় বড় কথা শুনাচ্ছো।।এটা জন্য এখন তোমাকে শাস্তি তো দিতে হয়,,, কি বলো??”
বলতে বলতেই রেয়ান অন্ধকারে মিলিয়ে যায়।।আগে রেয়ানের অস্তিত্ব অনুভব করতে পারলেও এখন সেটার ছিটেফোটাও নেই।।খুব ভয় লাগছে আমার।।রেয়ান কি করবে আমার মা আর ছেলের সাথে??ভয়টা ক্রমশই বেড়ে চলেছে।।জোড়ে জোড়ে চিল্লিয়ে বলে উঠি…..
—” প্লিজ রেয়ান আমার মা আর ছেলেকে কিছু করবেন না।। আপনি যা বলবেন আমি তাই-ই করব।। প্লিজ ওদের কিছু করবেন না।। ”
এভাবে অনেক কাকুতিমিনতি করার পরও কোনো লাভ হলো না।। কেউ আসলো না এ-ই অন্ধকার রুমে!!
.
.
.
.
সকালে…….🍁🍁
অনেক কষ্টের পর একটু আগেই চোখ লেগে আসে আমার।।।তখনই কেউ একজন এক জগ পানি আমার মুখে মেলা মারে।।সাথে সাথে আঁতকে উঠলাম আমি।।সামনে তাকাতেই দেখি রেয়ান প্যান্টের পকেটে ১হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।।আর বাঁকা হাসছে।।রাগে আমার গা জ্বলে যাচ্ছে।।কিছু বলতে যাবো তার আগেই রেয়ান আমার কানে ফোন ধরে।।যেখানে আমার ছোট্ট ছেলে কান্না করছে আর আমাকে বলছে……..
—” মা কোথায় তুমি?? প্লিজ তাড়াতাড়ি আসো আমার কাছে।। আমার না তোমাকে ছাঁড়া ভালো লাগছে না।।খুব কষ্ট হচ্ছে।। প্লিজ চলে আসো মা।। ”
কথাটা শুনে আমার বুক ধক করে উঠে,,,চোখ দিয়ে আপিনা- আপনি পানি পড়ছে।।আমার ছেলের সাথে কথা বলতে যাবো।।তার আগেই রেয়ান এক ঝটকায় ফোনটা কান থেকে সরিয়ে ফেলে।।একটু কথাও বলতে পারলাম না আমি আমার ছেলেটার সাথে।।
একরাশ ঘৃণা নিয়ে রেয়ানের দিকে তাকাই আমি।।ভেবেছিলাম রেয়ান হয়তো বাঁকা হাসছে।। কিন্তু না,,,,, তার মুখে বিরাজ করেছে বিরাট বড় গম্ভীরতা।।হুট করে রেয়ান আমার সামনে হাটু গেড়ে বসে পড়ে।।তারপর এক এক করে আমার হাত-পায়ের বাঁধন খুলতে শুরু করে।। গম্ভীর কন্ঠে বলে……
—” আমাকে যতটা খারাপ ভাবো ততটা খারাপ আমি নই।।কিন্তু অত ভালোও নই।।এখন যেমন ভালো,,, তেমন খারাপ হতেও আমার বেশি সময় লাগবে না।। আর রইল বিয়ের কথা,,,,সেটা আমি তোমাকেই করব।।তোমার ইচ্ছায় কিংবা তোমার অনিচ্ছায় ।।বউ তো তুমি আমারই হবে।।আর যদি বউ হতে না চাও,,রক্ষিতা হিসেবে রাখব তোমায়।।ভালোই ভালোই আমি যখন বলব তখন বিয়ে করবে আমাকে,,,নাহলে আমার থেকে খারাপ কেও হবে না।। ”
বলেই উঠে দাঁড়ায় রেয়ান,,,এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি তার দিকে।।আর ভাবছি,,,,,একদিক দিয়ে সে কি চায় তা বুঝতে পারছি,,,কিন্তু অন্যদিক দিয়ে সব ধোয়াশা।। আসলে সে কি চায়?? আমাকে নাকি অন্য কিছু??
হঠাৎ রেয়ান আমার হাত টান দিয়ে দাঁড় করায়।।তারপর বলে…..
—” চলো ”
—” কোথায়?? ”
—” তোমার ছেলের কাছে ”
বলেই আমার হাত টানতে টানতে নিয়ে যেতে থাকে।।এদিকে আমি হাঁটতে পারছি।।এতগুলো ঘন্টা এক ভাবে বসে থাকায় পা অবশ হয়ে গেছে আমার।।কোনোভাবে লেছড়িয়ে লেছড়িয়ে হাঁটছি আমি।।আমাকে এভাবে হাঁটতে দেখে রেয়ান হয়তো বুঝতে পেরেছে আমার অবস্থা।।সাথে সাথে কোলে তুলে নেয় সে আমাকে।। এতে কিছুটা চমকে যাই আমি।।নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করতে করতে বলি……
—” রেয়ান কি করছেন?? ছাঁড়ুন আমাকে?? ”
আমার কথা শুনে সে আমাকে একটা ধমক দেয় ।। তারপর বলে…..
—” হাঁটতে পারছে না আবার দেমাগ কত!! যেভাবে হাঁটছ।। গাড়ির কাছে যেতেই ১০ঘন্টা লাগবে।। তখম আর যাওয়া লাগবে না নিজের ছেলের কাছে।।”
কথাটা শুনে আমি চুবসে গেলাম।।সে তো ঠিকই বলছে,,,কিন্তু তার জন্যই তো আমার এ-ই অবস্থা।।মনে মনে রেয়ানকে বকতে লাগলাম আর অপেক্ষা করতে থাকলাম কখন আমি রিহানের সাথে দেখা করব।।পুরো একটা দিন আমাকে ছাড়া থেকেছে সে।।হয়তো অনেক কান্না করেছে আমার জন্য।।
.
.
.
.
বাসায় ডুকতেই আমার ছেলে আমাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিলো।।আমিও কাদঁছি।।ওর সারা মুখে চুমু দেওয়া শুরু করি।।তারপর খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলি……
—” কিচ্ছু হবে না রিহান।।মা এসে গেছি না।। আর কাঁদিস না।। ”
—” তুমি অন্নেক পঁচা মা।।তুমি বলেছিলে আমাকে রেখে এভাবে আর যাবে না।। কিন্তু তুমি ঠিকই গিয়েছো।।জানো কত কান্না করেছি তোমার জন্য!!”
—” মাফ করে দে মাকে।।মারও তো কষ্ট হয়েছে তাই না।। মা ইচ্ছা করে যাই নি বাবুন।।”
এরই মাঝে রেয়ান বলে উঠল…..
—” তোমাদের মা ছেলের ভালোবাসা – বাসি শেষ হয়েছে?? ”
কথাটা শুনে মা রেগে গেলেন।।এতক্ষন মা রেয়ানকে খেয়াল করেন নি।। তিনি তো আমাদের মা-ছেলেকে দেখছিলেন।।এখন রেয়ানকে দেখে তার রাগ উঠে গেল।।ঝাঁঝালো কণ্ঠে বললেন…..
—” মিরা এ ছেলে এখানে কেন?? একে বের কর আমাদের বাসা থেকে।। এমন বেহায়া আর বেয়াদব ছেলে আমি জীবনেও দেখি নি।। ”
কথাটা শুনে রেয়ান তীক্ষ্ম দৃষ্টি দিয়ে মাকে একবার দেখল।।তারপর গম্ভীর কণ্ঠে বলল…..
—” আপনার কিছু দেখতে হবে না শাশুমা।।আপনার মেয়ে দেখলেই হবে।। আর ভালোভাবে কথা বলবেন আমার সাথে,,, জানেন তো কি করতে পারি আমি।।”
রেয়ানের কথা মা ঠিক হজম করতে পারলেন না।। আবার কিছু বলবেন তার আগেই রিহান বলে উঠে…..
—” নানু!!উনাকে বকছো কেন?? উনি তো অনেক ভালো বাবা।। উনাকে আমার অন্নেক ভালো লাগে ”
রিহান কি বলল এইমাত্র??অনেক ভালো বাবা।।রেয়ানকে সে বাবা বলছে।। কেন??কিছুটা আগ্রহি কন্ঠে রিহানকে জিজ্ঞেস করলাম…..
—” বাবা মানে?? ”
—” হুম বাবা।।উনি অনেক ভালো জানো মা।। আমাকে কালকে অনেক গল্প শুনিয়েছে,,,সাথে বলেছিলো তোমাকে আমার কাছে আজকে নিয়ে আসবে।। দেখো উনি উনার কথা রেখছে।। ”
—” বুঝলাম।।কিন্তু তুমি উনাকে বাবা কেন ডাকছো??”
কথাটা আমি রেয়ানের দিকে তাকিয়ে বললাম।।সে আমার দিকেই তাকিয়ে আছে আর বাঁকা হাসছে।। তার চোখ দিয়ে সে কিছু বলছে,,,, যার অর্থ “তুমি আমাকে পছন্দ না করলে কি হয়েছে মরুভূমি।।তোমার ছেলে আমাকে পছন্দ করেছে!!ধীরে ধীরে তুমিও করবে।। ” তার চোখের ভাষা বুঝতে পারলেও না বুঝার ভান করে রিহানের দিকে তাকালাম উত্তরের আশায়।।সাথে সাথে সেও বলল……
—” মা বাবা আমাকে বলেছিলো যদি উনি তোমাকে আমার কাছে সকালের মধ্যে এনে দেয় তাহলে আমাকে উনাকে বাবা ডাকতে হবে।। উনি তো উনার কথা রেখেছেন তাই না??।।তাছাড়া আমি বাবাকে প্রমিসও দিয়েছিলাম।।আর তুমিও তো বলো প্রমিস ভাংতে হয় না।। তাই আমিও উনাকে বাবা ডাকছি।।আর ভালোই হলো না মা??আমার একটা বাবাও হয়েছে।। ”
কথাটা শুনে কি বলব বুঝতে পারছি না।। আমার ৪বছরের বাচ্চাটা কিই বা বুঝে।। তার যেটা ভালো মনে হয়েছে সে সেটাই করেছে।। তাকে কিছু কি বলা উচিত আমার।।হয়তো না।। তার তো কোনো দোষ নেই।।
হঠাৎ রেয়ানের কণ্ঠ শুনতে পাই।।সে নিজের হাতের ঘড়ি দেখতে দেখতে বলে…..
—” তোমাদের হয়েছে?? আমার কাজ আছে অনেক।। ”
জানি না কেন রেয়ানের কথাটা শুনে রেগে যাই।।রাগি কন্ঠে তাকে বলি…..
—” তো আপনার দেড়ি হলে আমরা কি করব ”
কথাটা বলতে না বলতেই সে আমার দিকে তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে তাকায়।।পরক্ষনে বলে উঠে…..
—” আমার ক্ষুধা লাগছে ”
—” তো আমি করব?? ”
—” যাও আমার জন্য বিরিয়ানি বানাও আমি খাবো “[ দাঁতে দাঁত চেপে ]
উনার কথা আর কথাবলার ভঙ্গি দেখে আমি অবাক,, সাথে বিরক্তও।।ক্ষুধা লাগছে তো বাইরে গিয়ে খাবে-এ না।। আমাকে বলার কি আছে?? তার উপর কত শখ,,আমি তার জন্য বিরিয়ানি বানাবো।। খেয়ে দেয়ে কি কাজ নেই আর আমার।।রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে ।।কোনোমতে ক্যাবলা হাসি দিয়ে বললাম……
—” কঁচুর ডাল খাবেন ”
—” মরুভূমি তুমি তো দেখি বয়রাও!!”
—“মানে??”
—” মানে,, আমি তোমাকে বিরিয়ানি বানাতে বলেছি,,,কঁচুর ডাল না।। বাই দা ওয়ে,,, এ কঁচুর ডাল কি?? ”
—” এটা আমাদের স্পেসাল ডিস।। খাস কুত্তাদের জন্য তৈরি ”
কথাটা শুনে রেয়ান আমার দিকে চোখ রাঙ্গিয়ে তাকায়।।রাগি কন্ঠে বলে উঠে…..
—” অনেক বাড়া বেড়েছো তুমি তাই না?? কালকে কি করেছি মনে আছে তো,,,ভালো ব্যবহার করছি দেখে ভেবো না মাথার উপর উঠিয়ে রাখব।। খারাপ হতে কিন্তু আমার বেশি সময় লাগবে না।।। আর যা বলছি তা যেন ১ঘন্টার মধ্যে হয়ে যায়।।আমি বাইরে যাচ্ছি,,এসেই যেন দেখি বানিয়ে ফেলেছো।।আর যদি না দেখি তাহলে কি হবে তার কল্পনাও তুমি করতে পারবে না।। ”
বলেই রেয়ান চলে যায়।।আর আমি,,, আমি তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছি।। আচ্ছা মানষটা এমন কেন?? এ-ই ভালো তো এ-ই খারাপ,,,অনেক রহস্য ভরা এ-ই মানুষটার ভেতর!!
.
.
.
.
.
#চলবে🍁🍁