সাঁঝের প্রেম

সাঁঝের প্রেম !! Part- 16

সায়েম আর মাহবুব ব্রেকফাস্ট করে বাজারে যায়। নিশি ঘরে এসে বিছানায় বসে। বিছানার চাদরে হাত বুলায় নিশি আর মনে মনে হাসে। মাহবুবের মতো স্বামী পাওয়া সত্যিই ভাগ্যের ব্যাপার। নিশি আজীবন মাহবুবের দাসী হয়ে থাকতে প্রস্তুত যদি মাহবুব নিশিকে এইভাবে ভালবাসে। নিশি নাস্তা করে টিভি অন করে বসে। মাহবুব না আসা পর্যন্ত বসে বসে সময় কাটায় নিশি। কিছুতেই একা ভাল লাগছেনা। তখনি ক্যামেলিয়া আসে। ক্যামেলিয়ার সাথে নিশি গল্প করা শুরু করে। তার কিছুক্ষণ পরেই দুইভাই ফিরে আসে। মাহবুব নিশিকে বলছে,

-নিশি কি রান্না করবা করে ফেলো। সব বাজারই আছে এখানে।
-আচ্ছা তুমি গিয়ে ঘুমাও।
-যাচ্ছি।

মাহবুব খাটে শুয়েই ঘুমিয়ে যায় আর সায়েম নিজের কাজে ব্যস্ত। আগামীকাল সায়েম চলে যাবে কারণ ওর ছুটি শেষ। নিশি সায়েমের জন্য ভারী খাবার বানালো আর মাহবুবের জন্য সাদা ভাত করলো। দুপুরের রান্না শেষ করে নিশি ঘর মুছে ফেলে। সব কাজ একা হাতে শেষ করতে করতে দুপুর আড়াইটা বেজে গেছে। নিশি তখন ওদেরকে খেতে দিয়ে দেয়। ওদের খেতে দিয়ে নিশিও খাওয়া শেষ করে। মাহবুব আবার খেয়ে দেয়ে শুয়ে পরে। নিশি সব গুছিয়ে এসে মাহবুবের পাশে বসে। মাহবুব তখন ঘুমে ঝিমাচ্ছে।

-একরাত না ঘুমালে তার রেশ এমনই হয়। (মাহবুবের মাথায় হাত দিয়ে নিশি)
-একদম অসহ্য লাগছে জানো না! এত ঘুম আমি এর আগে কখনো ঘুমাইনি। একটু কাছে আসবা আমার?
-কেন? কাছে নেই নাকি?
-না নেই তুমি কাছে। আসো৷
-আচ্ছা।

নিশি দরজা বন্ধ করে দিয়ে মাহবুবের কাছে বসে। মাহবুব নিশির কোলে মাথা রেখে বলে,

-আচ্ছা যদি আমি মরে যাই তুমি কি আবার সংসার করবা?
-এইটা কি ধরনের কথা? তুমি মরবা মানে?
-যদি মরে যাই তাহলে?
-কিচ্ছু হবেনা তোমার। তোমার কিছু হওয়ার আগে আল্লাহ যেন আমায় তুলে নেয়।
-পরে আমি কাকে নিয়ে থাকব?
-তাহলে তোমার কিছু হলে আমি কিভাবে বাঁচব? কি নিয়ে থাকব আমি? কোনোদিন এইসব কথা বলবানা তুমি। কোনোদিন না।
-আচ্ছা বলব না। ঘুম পাড়িয়ে দাও আমায়।
-এখন কি ঘুম পাড়ানি গান গাইবো?
-হ্যা গাও।

মাহবুবকে ঘুম পাড়াতে গিয়ে নিশি নিজে ঘুমিয়ে যায়। নিশির ঘুমিয়ে যাওয়া দেখে মাহবুবের খুব আনন্দ হয়। মাহবুব নিশির মুখে হাত বোলায় আর নিশিকে বলে,

-আমি যে সত্যিই আর বাঁচবো না নিশি। এই কথাটা যদি আর পনেরোদিন আগে জানতাম তাহলে তোমায় বিয়ে করে তোমার জীবনটা নষ্ট করতাম না আমি। এই পাঁচবছর আমার বাঁচতে ইচ্ছে করেনি কিন্তু এখন বাঁচতে চাই তোমার সাথে কিন্তু সেইটা ও যে পারছিনা আমি। কিভাবে তোমার এই চাঁদমুখখানি না দেখে থাকব আমি? আল্লাহ এতটা নিষ্ঠুর কেন নিশি? আমার যে কলিজা চিঁড়ে টুকরা টুকরা হয়ে যাচ্ছে নিশি। আমি যে বাঁচতে চাই নিশি,বাঁচতে চাই আমি। (মনে মনে মাহবুব)

দুই মাস পর…..

মাহবুব এখন প্রায়ই অসুস্থ থাকে কিন্তু নিশিকে বুঝতে দেয় না। নিশিও হাল্কা বমির জন্য মাহবুবকে ওষুধ দেয় কিন্তু মাহবুব সেগুলো না খেয়ে ফেলে দেয়। কি হবে ওষুধ খেয়ে? যার দুইটা কিডনিই নষ্ট সেই মানুষ কিভাবে বাঁচবে? এইদিকে নিশি সম্প্রতি জেনেছে যে ও মা হতে যাচ্ছে। মাহবুব যে কি পরিমাণ খুশি এইজন্য যা বলার মতো না! নিশিও ভীষণ খুশি। ও মা হবে আর মাহবুব বাবা! ভাবতেই নিজের কাছে অষ্টমাশ্চর্য লাগছে আর খুশিতে মনটা ভরে যাচ্ছে। নিশি তখনো জানেনা মাহবুবের অসুখের কথা। নিশি মাহবুবের সেবা করে যাচ্ছে আর মাহবুব নিশির।

-আচ্ছা তুমি এত শুকিয়ে যাচ্ছো কেন? (নিশি)
-বাবা হচ্ছি সো হতেই পারি। বাট তুমি সুন্দরি হয়ে যাচ্ছো কিন্তু নিশি।
-এহ! আই লাভ ইউ।
-আই লাভ ইউ ঠু! আমার কি প্রিন্স হবে নাকি প্রিন্সেস হবে?
-একটা হলেই আমি খুশি। যে আসছে সে যাতে সুস্থ হয়ে দুনিয়াতে আসে।
-হ্যা এইটাই তো। দুইমাস আগে এইদিনে আমরা নিজেদের মতো করে সময় কাটিয়েছি, নিজেদেরকে ভালবেসেছি।
-হ্যা। আমি খুব খুশি ওইদিনটার জন্য। আল্লাহর কাছে শুকরিয়া ওই রাতটার জন্য।
-হ্যা আসলেই।

নিশির গর্ভে বেড়ে উঠছে মাহবুবের অনাগত সন্তান কিন্তু মাহবুবের অবস্থা দিন দিন খারাপ হচ্ছে। মাহবুব এখন মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। প্রতিটা সেকেন্ড মাহবুব ভাবে এই বুঝি তার শেষ নিঃশ্বাস পড়লো। মাহবুব রাতে কেঁদে বালিশ ভেজায় কারণ ওর সন্তানের মুখ দেখার আগেই ওর এই দুনিয়া ছেড়ে চলে যেতে হবে। মাহবুবের অবস্থা দেখে নিশি মাহবুবকে জোর করে স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করায়। ডক্টর জানে মাহবুবের কি সমস্যা। ডক্টর চুপ করেছিলো। নিশি ডক্টরের চুপ থাকার অর্থ বুঝলো না। নিশি বারবার বলছে,

-কেনো ওকে চেক করছেন না? (রেগে গিয়ে নিশি)
-তুমি শান্ত হও নিশি। তোমার শরীরে এখন অন্য কেউ আছে কিন্তু। (মাহবুব)
-ডক্টর আপনি বলুন ওর কি হয়েছে?
-দেখুন ম্যাডাম আপনার স্বামীর আয়ু আর মাত্র কয়েকদিন ই আছে৷ ওনার দুইটা কিডনিই ড্যামেজ আর সেইটা একদম শেষ মুহুর্তে ধরা পরেছে। আমরা কিডনী ট্রান্সপ্লান্ট করতে চেয়েছিলাম কিন্তু এইটা অনেক এক্সপেন্সিভ হওয়ায় আপনার স্বামী রাজি হয়নি।

কথাগুলো জাস্ট নিশি শুনলো কিন্তু মুখে কিছু বলল না। দু পা সরে এসে নিশি সেন্সলেস হয়ে যায়। ডক্টরের উপর ভীষণ ক্ষেপে যায় মাহবুব। মাহবুব বারবার না করেছিল যাতে নিশিকে কিছু না বলে ডক্টর। নিশি নিজেই অসুস্থ এই অবস্থায় এত বড় আঘাত সহ্য করতে পারেনি। মাহবুব উঠে যেতে পারছেনা বেড থেকে। কয়েকজন নার্স এসে নিশিকে তুলে এরপর নিশির জ্ঞান ফেরায়। জ্ঞান ফেরার পরেই নিশি চিৎকার করে কান্না শুরু করে। মাহবুব তখন ইঞ্জেকশন দেওয়া অবস্থায় বেডে ছিল৷ যতক্ষণ মাহবুবকে বাঁচানো যায় ওতটুকুই সাফল্য৷ নিশিকে কিছুতেই আর আইসিউতে ঢুকতে দেয়নি ডক্টর। নিশির পেটে প্রচন্ড পেইন হচ্ছে কিন্তু মনের ভেতর যেই যন্ত্রণা হচ্ছে এইটা তো নিশি বুঝছে৷ নিশি ওর আম্মুকে ফোন দিয়ে আসতে বলে। পাগলপ্রায় হয়ে গেছে নিশি ডক্টরের কয়েক মিনিটের কিছু কথায়৷ নার্সরা নিশিকে সামলাচ্ছে আর নিশি হাত পা ছুড়ে কাঁদছে। মাহবুবের কান পর্যন্ত এ কান্না পৌছাচ্ছেনা।

সায়েম, তুর্না, মা, মাহবুবের বাবা-ছোট মা সবাই রাতে হসপিটালে এসে পৌঁছায়। নিশির অবস্থা দেখে তুর্না আর আম্মু কেঁদে দেয়। নিশি পেটের ব্যাথায় দাঁড়াতে পারছেনা৷ সায়েম ও সাইডে দাঁড়িয়ে কাঁদছে৷ কি থেকে কি হয়ে গেলো এইটা? ছোট মায়ের চোখেও পানি। ছোট মা কোনোদিন মাহবুবকে আদর বা ভালবাসা কিছুই দেইনি আজ সে ও কাঁদছে কারণ আর যাইহোক তিনি চান না মাহবুব মরে যাক। নিশিকে কেউ সামলাতে পারছেনা৷ হঠাৎ করে নিশি এমন সিদ্ধান্ত নিলো যা কোনো সুস্থ ব্যাক্তি মেনে নিবেনা৷

চলবে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *