সম্পর্কের মারপ্যাঁচ

সম্পর্কের মারপ্যাঁচ ! Part- 04

তখনি রুবি বেগম সেখানে চলে এলেন।রুবি বেগম কে দেখে প্রভাতির হাত পা কাঁপতে লাগলো।সে কোনো রকমে নিজেকে ছাড়িয়ে নিলো।
“আরে তৌকির বাবা তুমি কত বড় হয়ে গিয়েছো?আমি তোমারই অপেক্ষা করছিলাম।”
“এইতো আন্টি ভালো।আসলে মাকে নামিয়ে দিয়ে আমি গাড়িটা পার্ক করতে গিয়েছিলাম।”
হয়েছে এখন যাও ফ্রেশ হয়ে নাও।আমি টেবিলে খাবার দিচ্ছি।
” প্রভাতি যা তো তৌকির কে ফ্রেশ হতে নিয়ে যা।”
প্রভাতি মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালো।সে হাটা শুরু করলো তৌকির তার পিছু পিছু যাচ্ছে।
“এই ছেলে এতো লম্বা কেনো। কোনো বাশের থেকে কম না।শোমা আন্টিকে এর আগেও আসতে দেখেছি।চাচি আর আন্টি নাকি ছোট বেলার বান্ধুবি।কিন্তু তার ছেলেকে তো আজ প্রথম দেখলাম।বাহ কি খাম্বার মতো ছেলে বানিয়েছে।” মনে মনে ভাবলো প্রভাতি।
“এই যে তুমি কি এতো ভাবছো?”
“উহু কিছু না। ঐ যে ওয়াশরুম ওখানটায় যেয়ে ফ্রেশ হয়ে নিন।”
“এটা রুদ্রের রুম না? ”
রুদ্রের নাম টা শুনের প্রভাতির মন টা খারাপ হয়ে গেলো।কতদিন তার সাথে কথা হয় না।
“হু তার রুম” বলেই সে সেখান থেকে চলে গেলো।
তৌকির ফ্রেশ হয়ে ডাইনিং টেবিলে বসলো।দুপুর ৩ টে বাজে তার খুব খিদে পেয়েছে।গপাগপ খেয়ে ফেললো সে। প্রভাতির খুব হাসি পাচ্ছে তার খাওয়া দেখে।ভাব এমন জীবনে কখনো খায়নি।
“আন্টি তোমার হাতের রান্না জাস্ট ওয়াও।তোমার মেয়ে থাকলে আমি ওকেই বিয়ে করতাম। আফসোস তোমার মেয়ে মেই কেনো।”
“ছেলে বলে কি!বড্ড পাজি হয়েছিস। ”
“তা তো একটু হওয়াই লাগে।” বলেই এক চোখ টিপ দিলো।
খেয়ে দেয়ে তারা রেস্ট নিলো।প্রভাতি ড্রেসিংটেবিলের কাছে বসে চুল আচরাচ্ছে আর আনমনে কিছু ভাবছে।হঠাৎ উঠে সে আলমারির কাছে গেলো।সেখান থেকে একটা ছবি বের করে দেখতে লাগলো।খুব মনোযোগ দিয়ে দেখছে সে ছবিটা। তখনি দরজায় টোকার আওয়াজ পেলো তাকিয়ে দেখলো তৌকির দাড়ানো।
তৌকির কে দেখে জলদি করে ছবিটা আলমারির ভেতর রেখে দিলো।ব্যাপারটা তৌকিরের চোখ এড়ালো না।
“কি দেখছিলে?”
“কই কিছুনা।” কিছুটা ভয় পেয়ে বললো প্রভাতি।
“তুমি আমাকে তোমাদের গ্রাম ঘুরিয়ে দেখাবে?”
তৌকিরের এমন প্রশ্নে কি জবাব দিবে ভেবে পাচ্ছে না সে।তার একদম যাওয়ার ইচ্ছে নেই।
“কি ভাবছো আন্টি কি বলবে? আরে আমি আন্টির থেকে পারমিশন নিয়েছি।উনিই আমাকে বলেছে তোমাকে নিয়ে যাতে একটু ঘুরে আসি।তোমার নাকি বের হওয়া হয়না। সারাদিন ঘরে বসে থাকো।”
প্রভাতি বুঝতে পারলো তার না যেয়ে উপায় নেই।কেনোনা দেখা যাবে না গেলে তার চাচি আবার এটা নিয়ে অশান্তি শুরু করবে।
“আচ্ছা আপনি যান।আমি রেডি হয়ে আসছি।”
“ওকে।”

★★★★★★★★★★★★
রুদ্র তিথির বাসায় ঢুকে দেখলো তিথি নীল শাড়ি পড়ে বসে আছে। ব্যাপারটা তার বেশ অদ্ভুত লাগলো তাও সে কিছু বললো না।
“কাল যে পড়া গুলো দিয়েছিলাম তা কম্পলিট করেছো? আর বেশিদিন কিন্তু বাকি নেই তোমার এডমিশনের। দয়া করে পড়াশুনায় মনোযোগ দাও।”
রুদ্রের এমন কথা শুনে তিথির মেজাজ চটে গেলো।
“এ কেমন বেরশিক ছেলে।আমি তার জন্য শাড়ি পরে বসে আছি।আর সে নাকি এডমিশন নিয়ে কথা বলছে।” মনে মনে বললো তিথি।
“কি বির বির করছো মনে মনে? বই টা দাও।”
“আচ্ছা আপনি কি এই পড়ালেখার বাহিরে কোনো কথা বলতে পারেন না? আপনি কি দেখতে পাচ্ছেন না আমি শাড়ি পরেছি?”
“তুমি শাড়ি পরেছো তো আমি কি করবো?” ভ্রু কুঁচকে বললো রুদ্র।
নগদেই তিথির চোখ দিয়ে পানি পড়তে লাগলো।এই ছেলেটা তাকে আর কত কষ্ট দিবে।সে কি কিছুই বুঝেনা।
“আপনি কি কিছুই বুঝেন না? নাকি বুঝেও না বুঝার ভান করে আছেন?”
“তোমার কি এইসব ছাড়া মাথায় আর কিছু ঢুকে না? আর কদিন বাদে তোমার এডমিশন। তুমি চান্স না পেলে আমি তোমার মা বাবাকে কি জবাব দিবো?তুমিই তো বায়না ধরেছিলে আমার কাছ ছাড়া কারো কাছে পড়বেনা।তোমার বাবা মা আমার কাছে রিকোয়েস্ট করেছে আর খালামনির পরিচিতো তোমরা তাই তোমাকে পড়াচ্ছি।তুমি এমন ফালতু কথা বার্তা বললে আমার তোমাকে পড়ানো বাদ দিতে হবে।” রাগ দেখিয়ে বললো রুদ্র।
রুদ্রের কথা শুনে তিথি অবাক হলো।সে তার কাছে এতোটাই মূল্যহীন।
“আপনি আমাকে নিজের ইচ্ছেতে পড়াচ্ছেন না?”
” না।তোমাকে পড়ানোর আমার কোনো ইচ্ছে নাই।যার পড়ালেখায় মনোযোগই নেই তাকে পড়িয়ে কি করবো আমি?”
“আপনি এক্ষুনি আমার বাসার থেকে বেড়িয়ে যান।”
তিথির এমন শীতল কন্ঠ শুনে রুদ্র চমকে উঠে।সে কি মেয়েটার সাথে বেশি খারাপ বিহেব করে ফেলেছে।
“আসলে আমি বলতে চাচ্ছিলা..”
রুদ্র তার কথা শেষ করতে পারেনা।
“আপনি বের হবেন? ”
রুদ্র কিছু না বলে তিথিদের বাসা থেকে বেড়িয়ে যায়।
রুদ্র যাওয়ার পরও তিথি ঝিম ধরে বসে আছে সেখানে।একটুও নরছে না।হঠাৎ খুব জোরে সে নিজের হাত টেবিলে বারি দিলো।হাতে পরা কাচের চুরিগুলো ভেঙে তার হাতে ঢুকে গেলো।তারপর ফ্লোরে বসে নিজের শাড়ী কেচি দিয়ে কুচিকুচি করে কাটতে লাগলো।নিজের চুল নিজে ছিড়তে লাগলো।আর থাকতে না পেরে চিৎকার করে কাঁদতে লাগলো।আর আবোলতাবোল বকতে লাগলো।তিথির কান্না শুনে তার মা পাশের রুম থেকে দৌড়ে তার রুমে এলেন।মেয়ের এমন অবস্থা দেখে সে রিতীমত ভয় পেয়ে গেলেন।তাড়াতাড়ি সে তিথির বাবাকে কল দিলেন।

★★★★★★★★★★★★
প্রভাতির হালকা কলা পাতা কালারের একটা থ্রিপিস পরেছে।চুল এক সাইডে নিয়ে বেনি করেছে।এতেই যেনো তাকে অনেক সুন্দর লাগছে।
তৌকির তো তাকে দেখে হা করে তাকিয়ে আছে।তার ভাবতেই অবাক লাগছে সে নাকি এই পিচ্চি মেয়ের উপর ক্রাশ খেলো।
তারা একসাথে ঘুরতে বেরুলো।তৌকির নানান কথা বলছে প্রভাতি শুধু হু হা করছে।
“এই মেয়স তুমি কথা বলো না কেনো?”
“কই বলছি তো।আপনি বলেন আমি শুনি।”
“এই আমাকে আপনি করে বলবে না তো।যদিও আমি তোমার থেকে ৮ বছরের বড় তাও আপনি আমার পছন্দ না।তুমি করে বলবে।”
প্রভাতি মাথা নাড়লো।
তৌকির ড্রাইভ করছে আর প্রভাতি বাহিরের বাতাস অনুভব করছে।তার মনে যে অজানা অনুভুতির জন্ম নিয়েছে এটা ইদানিং তাকে খুব ভাবায়।সে বুঝতেও পারছে না তার সাথে হচ্ছে টা কি।
তৌকির একটা খোলা মাঠে গিয়ে গাড়ি থামালো।সামনেই বড় নদী।বেশ সুন্দর জায়গাটা।তৌকির প্রভাতিকে গাড়িতে বসিয়ে দোকানে গেলো।দোকান থেকে দুটো আইস্ক্রিম এবং কিছু চকলেট কিনে নিয়ে এলো।
তারপর আবার গাড়ির কাছে এসে প্রভাতিকে নামিয়ে তারা একসাথে নদীর পারে গিয়ে বসলো।
প্রভাতিকে একটা আইস্ক্রিম আর চকলেট গুলো দিয়ে দিলো।
প্রভাতি চকলেট গুলোর দিকে তাকিয়ে আছে।আরো ২ বছর আগে এগুলো দেখে সে খুশিতে লাফাতো আর আজ। ভাবতেই দীর্ঘশ্বাস ফেললো।
“তুমি কি এমন চুপচাপ থাকো?”
তৌকিরের এমন কথায় তার মনে পরে গেলো সেই ২ বছর আগের কাহিনি। সেই কাহিনির পর থেকে সে যেনো কথা বলাই ভুলে গিয়েছে।আর কথা বলবেই বা কার সাথে তার কথা বলার মানুষ তো একজনই ছিলো আজ সে ও নেই।সময়ের ব্যাবধানে অনেক টা দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে।নাহ হয়েছে বললে ভুল হবে সে নিজে করেছে।
“এই যে তুমি কি এমন ভাবো সবসময় বলো তো? থেকে থেকে কোথায় হারিয়ে যাও?”
“কই কোথাও না।”
“রুদ্রের সাথে তোমার কেমন সম্পর্ক? ওকে দেখিনা কত বছর হয়েছে।দেশের বাহিরে যাওয়ার জন্য ওর সাথে আর দেখাই হইনি।”
রুদ্রের নাম শুনলেই তার মনের ভেতর হাজারো অনুভূতি জেগে উঠে ।এই একটা নাম তাকে এতো ভাবায় কেনো।এই একটা নামের মধ্যে কি আছে এমন যেটা শুনলে তার ভেতরটা তোলপাড় হয়ে যায়।এক চাপা কষ্ট কাজ করে।এর উত্তর খুঁজে পায়না সে।
রুদ্রের নাম নেওয়ার সাথে সাথে প্রভাতির এমন চুপ হয়ে যাওয়া দেখে তার কিছুটা খটকা লাগে।
তৌকির প্রসঙ্গ চেঞ্জ করতে তার ছোট বেলার কিছু মজার কাহিনি শুনায় প্রভাতিকে।
এমন কাহিনি শুনে প্রভাতি না হেসে পারে না।সে হেসে কুটি কুটি অবস্থা।অনেকদিন পর সে এমন প্রাণ খুলে হাসছে।
প্রভাতির হাসির দিকে এক নজরে তাকিয়ে আছে তৌকির। কারো হাসি এতোটা সুন্দর কি করে হয়।
“এই মেয়েতো আমাকে হেসেই পাগল করে দিবে।” মনে মনে বললো তৌকির।
প্রভাতির এখন তৌকির কে বেশ ভালোই লাগছে।সে ও অনেক কথা বলছে।এতোদিন পর কাউকে পেয়ে তার বেশ ভালোই লাগছে।
তাদের গল্প করতে করতে কখন সে সন্ধ্যা হয়ে গেলো বুঝতেই পারলো না তারা।
” অনেকটা সময় হয়ে গিয়েছে।চলো উঠি।”
“আচ্ছা”
প্রভাতি উঠতে নিলেই অসাবধানতা বসত পরে যেতে নেয়।তখনি তৌকির তাকে ধরে ফেলে।
“এই মেয়ে তুমি এতো পরে যাও কেনো?”
প্রভাতি লজ্জা পেয়ে যায় তৌকিরের কথায়।
তারা বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।প্রভাতি আবার ডুব দেয় তার ভাবনার জগতে।

★★★★★★★★★★
রুদ্র ঘর অন্ধকার করে বসে আছে।
রিয়া রুমে ঢুকে লাইট জ্বালিয়ে দেয়।
“এমন অন্ধকারে বসে আছো কেনো? আর কত একা থাকবে?তুমি প্রভাতিকে তোমার মনের কথা বলে দিলেই পারো।খালামনিকে না হয় আমরা ম্যানেজ করবো।”
রুদ্র তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে
“যেই মেয়ে আমার সাথে কথাই বলে না। আমার সামনেই আসে না তাকে প্রপোজ করতে বলছিস? ও যদি আমাকে ভুল বুঝে? আমার মা ওর সাথে যা করেছে এরপর কোন মুখ নিয়ে যবো ওর কাছে বলতে পারবি?”
রিয়া কিছু বলছে না।আসলেই তার বলার কিছু নেই।সে এভাবে তার ভাইকেও কষ্ট পেতে দেখতে পারছে না।রিয়া কিছু বলতে যাবে তখনি রুদ্রের ফোনে টুং করে আওয়াজ এলো।
রুদ্র ফোনটা নিয়ে হোয়াটসঅ্যাপ টা অন করতেই যা কিছু ছবি দেখতে পেলো।ছবি গুলো দেখে তার হাত থেকে ফোনটা পরে গেলো।
রিয়া ফোনটা তুলে ছবি গুলো দেখে চমকে গেলো।কিভাবে সম্ভব……
চলবে….