সবসময় কি এমনই হয়

সবসময় কি এমনই হয় !! Part- 06

তারপর ভালো করে তাকালো ফারহানের দিকে।
সাদা একটা টি শার্ট আর একটা জিন্স পরা। টি-শার্টের উপরের দুটো বোতাম খোলা। তিন নাম্বার বোতামটাও কোনরকম আটকে রয়েছে। চোখের নিচে কালি পড়ে গর্ত হয়ে গেছে আর চোখ দুটো ও লাল হয়ে আছে। গাল ভর্তি খোঁচা খোঁচা দাড়ি। উস্কোখুস্কো চুল। তবে এমন এলোমেলো চুল আর লাল চোখেও কাউকে এতটা সুন্দর লাগতে পারে, তা ফারিয়া কল্পনাই করতে পারেনি!

ফারিয়া আস্তে করে হাত রাখে ফারহানের গালে। অধীর কন্ঠে বলে,
_আপনার এই অবস্থা কেন?
_ভালো হওয়ার চেষ্টা করছি তাই!
_তাই বলে……………। আপনি ঘুম খাওয়া-দাওয়া কিছুই ঠিকমতো করেননি দেখা যায়।
ফারহান চোখ বন্ধ করে শান্তভাবে বলে,
_ভালো হতে বলে তুমি আমায় মারার প্ল্যান করলে রিয়া!!
ফারিয়া কেঁপে উঠে। এগুলো কি বলছে সে!
_আপনার কি খারাপ লাগছে?
_নাহহ!! অত্যন্ত ভালো লাগছে। আচ্ছা, তুমি কি বুঝনা? তোমার সাথে কথা না বললে যে আমার ঘুম হয় না। তোমার সাথে একটা বার দেখা না হলে আমার দিন কাটে না। তোমার সাথে…………… ফারহান এর কন্ঠ জড়িয়ে আসে।
ফারিয়া চুপ করে থাকে। ওর ও তো একই অবস্থা। নিজের সময়গুলো কি খুব ভালো কেটেছে নাকি!!

_রিয়্যুওওও………।
_জি।
_আমি কি এখানে একটু শুতে পারি? তুমি আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিবে। আই রিয়েলি নিড আ সাউন্ড স্লিপ!……… প্রপার স্লিপ!!
ফারিয়া না করতে পারেনা। ফারহান শুয়ে পড়লে ও ফারহানের মাথায় আলতো হাত বুলিয়ে দিতে থাকে। ফারহানের ঘুমোতে দুই মিনিটও লাগেনা। ফারিয়া লক্ষ করে ফারহানের ভ্রুর শেষের দিকে উপরে একটা কুচকুচে কালো তিল। নিজের অজান্তেই ও সেখানে একটা চুমু খেয়ে ফেলে। নিজের কাছে নিজেই লজ্জা পেয়ে যায় ও। ফারহানের খাড়া নাক আর মোটামুটি চিকন সুগঠিত ঠোট ও খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে থাকে। তাকে অন্যরকম নিষ্পাপ ধরনের সুন্দর লাগছে। আচ্ছা! ঘুমন্ত অবস্থায় সব ছেলেদের কেই কি এমন ইনোসেন্ট টাইপ লাগে??

🖤

সকালে ঘুম ভেঙে ফারিয়া আর ফারহানকে দেখতে পায়না। খাট থেকে নামার সময় পাশের টি টেবিলে চোখ যায় ওর। অ্যালার্ম ক্লক টি একটা কাগজ চাপা দেয়া। কাগজটা হাতে নেয় ও।
“তোমাকে জাগিয়ে বিরক্ত করতে চাইনি। আর শোনো, আমি কিন্তু আমার কথা রেখেছি। আমাদের কিন্তু মোটামুটি সবই ঠিক। তোমার আব্বু ফোন দিয়েছিল। আমরা আজকে দেখতে আসবো তোমাকে। তুমি খুশি তো?! এন্ড লিসেন, তোমার সীম আর আইডিটা একটিভ করিও। এতগুলা ভালোবাসা টু মাই……. পুসুমা!”
এতক্ষণ সব ঠিকঠাক থাকলেও, লাস্ট লাইনের লাস্ট ওয়ার্ড টা পড়ে ওর ভ্রু আপনাআপনি কুঁচকে আসে।
“পুসুমা”!!!
এটা আবার কেমন নাম? কাইন্ড অফ গুজামিল এন্ড বিচ্ছিরি!!অনেক চিন্তা ভাবনা করে ও এর কোন অর্থ বের করতে পারলো না।

🖤

আসরের নামাজ পড়ে গোল জামা ছেড়ে একটা সাদা আর আকাশী সংমিশ্রনের কামিজ পড়ে নিল ফারিয়া। ফিটফাট হয়ে বসে রইল ও। মনের মধ্যে খুশি আর টেনশন একসাথে কাজ করছে। তখন আহমদ সাহেব রুমে প্রবেশ করলেন।
_বাহ ! কত সুন্দর লাগছে আমার আম্মুটাকে!!
ফারিয়া তার আব্বুকে বলে,
_আব্বু! তারা কখন আসবে? এখনো আসছে না কেন??
_এত তাড়াহুড়ো!!
ফারিয়া লজ্জা পায়। আহমেদ সাহেব মুচকি হেসে পা বাড়ান নিজের রুমের দিকে।

কিছুক্ষণ পর ফারহানরা এলো। ফারিয়ার বাবার সাথে কথা বললো। কথায় কথায় ফারিয়া জানতে পারল, ফারহান এখন অনেক পরিবর্তন হয়েছে। নিয়মিত জামাতে নামাজ পড়ে, আচার-আচরণেও নম্রতা এসেছে। বাজে ছেলেপেলেদের সাথে ঘোরাঘুরি করে না……… ইত্যাদি ইত্যাদি আরো অনেক ভালো দিকের উদয় হয়েছে। আর ফারহানের আব্বু আম্মুর ও ফারিয়াকে অত্যন্ত পছন্দ। ফারহানের আম্মু তো ফারিয়াকে আজই আংটি পরিয়ে দিয়েছে। এমন মেয়েকে তারা কোন ভাবে হাতছাড়া করতে চান না। ফারিয়ার তো এখন তার বাবাকে জড়িয়ে ধরে অনেকগুলো থ্যাংকস জানাতে ইচ্ছে করছে। কয়জনের থাকে এরকম বাবা যে কিনা মেয়ের ভালো বুঝে মেয়ের খুশির জন্য কাজ করেন। রিয়েলি মাই আব্বু ইজ গ্রেট!!

ফারহানের গাড়ি স্টার্ট দিয়ে দেয়। ফারিয়ার মোবাইলের টুং করে মেসেজ আসে………
“সব ঠিক হয়েছে তো……..? রাতে দেখা হচ্ছে নাকি!! তুমি না বললেও হবে। লাভ ইউ! পুসুমা!!”

(চলবে)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *