শালুক ফুলের লাজ নাই !! Part- 34
দীর্ঘদিন পর আফিফা বাড়িতে এসেছে। তার জীবনটা সবচেয়ে বেশি এলোমেলো। কিছুতেই সে সংসারী হতে পারছে না শত চেষ্টা করে ও।
ননদেরা এলে আফিফার সব এলোমেলো লাগে।কিছুক্ষণ পর পর নাশতা, খাবারের নানা আইটেম এসব আফিফা ঠিক মতো করতে পারে না।
আর যখনই কোনো ভুল হয় দুই ননদের মুখ কালো হয়ে যায়।
আর সেই সাথে সাথে আফিফার হাজব্যান্ড এর মুখও আষাঢ় মাসের আকাশের মতো কালো হয়ে যায়।
দুপুরে খাবার পর আফিফা,শাপলা, শালুক মিলে শাপলার রুমে বসে আড্ডা দিচ্ছিলো।শাপলা আফিফার চুলে তেল দিতে দিতে বললো, “আপা,তোমার সংসার কেমন কাটছে?কিভাবে অবসর কাটাও তুমি? কলেজে যাও? ”
আফিফা হেসে বললো, “আমার আর পড়ালেখা। কাজ করতে করতে নিজের নিশ্বাস নেওয়ার সময় ও হয়ে উঠে না।সেই কবে চুলে তেল দিয়েছি নিজেও জানি না।”
শালুক অবাক হলো শুনে।সে তো তার বাসায় করার মতো কোনো কাজ খুঁজে পায় না।অথচ আফিফা আপা কি বলে এসব!
অবাক হয়ে শালুক জিজ্ঞেস করলো, “কিসের কাজ আপা এতো তোমার? ”
আফিফা হেসে বললো, “সবসময় আমার দুই ননদ এই বাসায় থাকে নিজেদের স্বামীদের নিয়ে।ধর একজন এলো তো আরেকজন যাবার সময় হলো। দুজনেরই বাচ্চাকাচ্চা আছে।মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ ৭ দিন তারা নিজের শ্বশুর বাড়ি থাকে।
দুই বোন যখন একসাথে হয় তখন তো মনে হয় যেনো দুনিয়ার খবর থাকে না ওদের।বাচ্চাদের একবার একটা চাই,সব কিছু আমাকেই করতে হয়।কারো বাচ্চা শুধু চিকেন খায় কারো বাচ্চা আবার ফিশ ফ্রাই খায়।আবার বাচ্চারা নিজেদের হাতে খাবার ও খায় না,আমাকে খাইয়ে দিতে হয়।
বাচ্চারা যদি বলে নিজের হাতে খাবে ওদের মায়েরা রেগে যায়।নিজের হাতে খেলে ওরা না-কি খাবার কম খায় সেজন্য আমাকে খাইয়ে দিতে হবে।
কিন্তু বিশ্বাস কর,খাবার মুখে নিয়ে ওরা সারা দুনিয়া ঘুরে আসে কিন্তু মুখের খাবার গিলে না।ঘন্টার পর ঘন্টা লাগে ওদের খাওয়াতে গেলে।
বাড়িতে কাজের মহিলা ছিলো ওদের,বিয়ের পর পরেই আমার বড় ননদ ওই মহিলাকে কাজ থেকে ছাড়িয়ে দিয়েছেন।সকালে তোর ভাইয়া দোকানে চলে যাবে তো আমাকে সেই হিসেবে খুব ভোরে উঠে নাশতা বানাতে হয়।রুটি,ডিম,সবজি,দুধ চা করার পর করতে হয় বাচ্চাদের জন্য নাশতা। এরপর ভাত রান্না করা লাগে,ভাতের সাথে নিম্নে ৪ আইটেম যদি না করি সেদিন ওনাদের সে কি রাগ।
সাথেসাথে ভাইকে কল দিয়ে জানায় তারা আসায় আমি অখুশি, এজন্য ঠিক মতো রান্না করি না তাদের জন্য।
আর এরপর ওনার কল আসে,সেই কল আমার জন্য কি যে আতংকের তা আমি জানি শুধু।গম্ভীর হয়ে বলেন,আমার বোনেরা আমি যতোদিন বেঁচে আছি এই বাড়িতে থাকবে,তোমাকে ওদের ইচ্ছেমতো চলতে হবে।যে যা চায় সব করতে হবে। আর যদি না পারো তবে তোমার বাবা মাকে বলে দাও এসে যাতে তোমাকে নিয়ে যায়।আমার এরকম স্ত্রী চাই না।
অথচ ওনার মুখ থেকে আমি কখনো একটা ভালোবাসার কথা শুনি নি। ”
শালুক হতভম্ব হয়ে বললো, “কি বলো আপা এসব!আমার কিছুই মাথায় ঢুকছে না।স্বামীরা এরকম হয় স্ত্রীর সাথে? ”
আফিফা বললো, “সবাই তো ধ্রুব না রে শালুক, সবাই তো আর বউকে ভালোবাসতে জানে না পাগলের মতো। ”
শালুকের ভীষণ কষ্ট হলো আফিফার জন্য।
আফিফা বললো, “ভেবেছিলাম বিয়ের পর স্বামীর ভালোবাসা পেয়ে জহির ভাইকে সহজেই ভুলে যেতে পারবো কিন্তু এখন দেখছি উল্টো হয়ে গেছে ব্যাপারটা। আমি আরো বেশি মনে করতে থাকি তাকে।সবসময় মনে হয় ওনার জায়গায় জহির ভাই থাকলে আমার সাথে এরকম কিছুতেই করতো না।
আমি জানি আমি পাপ করছি স্বামীর সাথে পর পুরুষের তুলনা করে। কিন্তু আমার বেহায়া মনটা যে মানে না শালুক। আমি কি করতাম তোরা বল!
বাবা মা’কে ও এসব জানাতে ইচ্ছে করে না।একে তো আদনান ভাইকে নিয়ে দুজনের মনে কষ্ট এখন যদি আমার এসব কথা শুনে তবে দুজনেই ভেঙে পড়বে।
ওনারা পয়সাওয়ালা জামাই চেয়েছে আমার জন্য, কিন্তু একটা ভালো মানুষ চায় নি।
সবচেয়ে কষ্টের কথা কি জানিস,ওনার বোনদের সেবা যত্ন করার জন্য উনি আমাকে আমার বাপের বাড়ি আসতে দেয় না।পুরুষ মানুষ এটা বুঝে যে তার বোন তাদের বাড়ি সবসময় আসবে,তবে এটা কেনো বুঝে না তার স্ত্রী ও কারো মেয়ে,কারো বোন।তার ও ইচ্ছে করে তার বাপের বাড়ি যেতে!”
শালুক কোনো জবাব দিতে পারলো না। আল্লাহ তাকে কি পরিমাণ সুখে রেখেছে হঠাৎ করেই শালুক তা টের পেলো।
বিকেল হতেই আফিফার হাজব্যান্ড আফিফাকে রেডি হবার জন্য তাড়া দিতে লাগলো। এখনই চলে যাবে তারা।তার ছোট বোন এসেছে বাসায়।
শুনে আফিফা স্তব্ধ হয়ে গেলো। আস্তে করে বললো, “আপা তো এক সপ্তাহ আগে গিয়েছে এই বাড়ি থেকে,আমি আজ কতো মাস পরে এসেছি বাড়িতে? আপনার কি একটু ও মায়া দয়া,বিবেক নেই?
দুপুরে এলাম আর এখনই আপনি চলে যাবার জন্য বলছেন।”
তেড়ে এসে আফিফার চোয়াল চেপে ধরে আফিফার হাজব্যান্ড সজিব বললো, ” খুব সাহস বেড়েছে মনে হয় তোমার বাবার বাড়ি এসে?আমার বোনের সাথে তুলনা করতে চাইছো কোন সাহসে?আমি এখন বলছি তো তুমি এখনই চলে যাবে।তুমি কোনো ডাক্তার না যে তোমাকে এখানে থাকতে হবে।আর যদি তবুও থাকতে চাও তবে মনে রেখ,এখানেই সম্পর্ক শেষ তোমার সাথে।”
ধ্রুব আফিফার রুমের দিকে আসছিলো বিকেলে সবাই মিলে বাহিরে ফুচকা খেতে যাবে এই কথা বলার জন্য।শালুক কেঁদে কেঁদে আফিফার কষ্টের কথা বলেছে ধ্রুবকে।শুনে ধ্রুবর নিজের ও কেমন দমবন্ধকর অনুভূতি হয়েছে। বাহিরে থেকে আফিফার স্বামীর এসব কথা শুনে চমকে গেলো ধ্রুব। কপালের রগ দপদপ করতে লাগলো রাগে তার।তারমানে এই লোকটা সবসময় আফিফার সাথে এরকম দুর্ব্যবহার করে!
আফিফার চাপা কান্নার শব্দ শুনে ধ্রুবর রাগ আকাশ ছুঁলো।
দরজায় নক করে বজ্রকঠিন স্বরে বললো, “আফিফা,আফিফা দরজা খোল তো।শালুক বললো, সবাই মিলে বাহিরে যাবে,তোর একটা ব্লু কালার হিজাব দিতে বলেছে শালুক।”
আফিফা তাৎক্ষণিক চোখ মুছে নিজেকে সামলে দরজা খুললো। তারপর হিজাব দিতেই ধ্রুব হেসে বললো, “তুই আর ভাইয়া ও রেডি হয়ে নে।আজ আমরা সবাই মিলে বাহিরে বের হবো।একটা পিকনিক পিকনিক আমেজ আসবে।”
আফিফা বললো, “তোরা যা ধ্রুব,আমি চলে যাবো এখন।”
ধ্রুব বললো, “মানে কি?দুপুরে এলি আর এখনই যাবি কেনো?ভাইয়া কই?”
সজিব দুই হাত ভাঁজ করে বুকের উপর রেখে গম্ভীর হয়ে বসে রইলো। ধ্রুব এগিয়ে গিয়ে বললো, “আফিফা কি বলছে ভাইয়া,যেতে চাইছে কেনো ও?কতোদিন পর এলো বাড়িতে, সবাই একসাথ হয়েছি আমরা। আজ থাকুন না আপনারা। ”
সজিব বললো, “না ধ্রুব,থাকা যাবে না।আমার বোন এসেছে। ওকে যেতে হবে।”
ধ্রুব হেসে বললো, “ভাইয়া,আফিফা ও কিন্তু আমার বোন।আপনার বোন এসেছে ভালো কথা,আজকের রাতটা থেকে আগামীকাল যান আপনারা। ”
সজিব বিরক্ত হয়ে বললো, “আমার দুই বোন বেড়াতে এসেছে, আফিফা এখানে থাকলে ওরা কিভাবে থাকবে?ওদের জন্য রান্নাবান্নার ব্যাপার আছে। ”
ধ্রুব অবাক হয়ে বললো, “আপনার বোনদের জন্য রান্না করতে হবে বলে আপনি আমার বোনকে নিয়ে যেতে চাচ্ছেন?আপনার বোনদের এক রাত রান্না করে খেতে কষ্ট হবে,তো আমার বোনের কি কষ্ট হবে না ওনাদের জন্য রান্না করতে? ”
সজিব হতভম্ব হয়ে গেলো ধ্রুবর কথা শুনে।কিছু বলার আগে ধ্রুব বললো, “সজিব ভাই,দরজার বাহিরে থেকেই আপনার কথা আমি শুনেছি। আফিফা অনেক মাস পরে বাড়িতে এসেছে। ও মিনিমাম এক সপ্তাহ বেড়াবে এখানে।আপনার যদি থাকতে অসুবিধা মনে হয় তবে আপনি যেতে পারেন, এক সপ্তাহ পর এসে ওকে নিয়ে যাবেন।”
সজিব রেগে বললো, “তোমার কথা মতো হবে না-কি? তুমি কে সিদ্ধান্ত নেওয়ার?আমার অনুমতি ছাড়া আমার স্ত্রী এখানে এক মুহূর্ত ও থাকতে পারবে না ইসলামের আইনানুযায়ী তা জানো তুমি? ”
ধ্রুব বললো, “বেশ তো,নিয়ে যান তাহলে। কিন্তু ইসলামের আইনানুযায়ী কিন্তু আফিফার উপর ও এরকম কোনো ফরজ নিয়ম নেই যে আপনার বোনদের রেঁধে বেড়ে খাওয়াতে হবে।আফিফা যাবে কিন্তু ও আপনার বোনদের জন্য কোনো কাজ করবে না।”
সজিব হতভম্ব হয়ে গেলো ধ্রুবর কথা শুনে। আফিফা ধ্রুবকে ধাক্কা দিয়ে বের করে দিতে চাইলো রুম থেকে।ধ্রুব আফিফাকে ধমক দিয়ে বললো, “খুব বড় হয়ে গেছিস মনে হয় তুই?আমরা কি সবাই ম/রে গেছি না-কি? নাকি আমাদের কাঁধে তুই বোঝা হয়ে ছিলি যে বিয়ে দিয়ে ঝামেলামুক্ত হয়েছি আমরা। সব শুনেছি আমি,সব জানি।আপনি আফিফাকে এতো দুর্বল ভাবছেন কোন সাহসে? আদনান ভাই নেই, আমি আছি।আমার বোনের সাথে কথা বলতে সাবধানে, ভেবে কথা বলবেন।ওকে একেবারে বাবার বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়ার ধমক তো সবসময় দেন।
আপনি কি ভেবেছেন আমরা এতোটাই অসহায় যে নিজের বোনকে রাখতে পারবো না?
বিয়ে করে বউ নিয়েছেন, নিজের অর্ধাঙ্গিনী নিয়েছেন। তাকে কাজের মহিলার মতো ট্রিট করবেন না।তাকে যদি ভাবেন সে আপনার বাড়ির কাজের মহিলা, তবে তার থেকে তেমন ব্যবহারই পাবেন।তাজে যদি ভাবেন আপনার মনের রানী,তবে দেখবেন আপনাকে ও সে রাজার মতো সম্মান করছে।
নারীরা কাদামাটির দলার মতো, ভালোবাসা দিয়ে তাকে যেকোনো রূপ দেওয়া যায়।
যখন তখন তাকে হুমকি দিয়ে, ধমকি দিয়ে কথা বলার মধ্যে পুরুষত্ব লুকিয়ে থাকে না।পুরুষত্ব থাকে নিজের ভালোবাসা, নিজের বুদ্ধি দিয়ে তার মন জয় করে কিভাবে দুজনে সুখী হওয়া যায় সেই কাজ করার মধ্যে।
আপনার কি একবার ও মনে হয় না আপনার স্ত্রী ও একটা মেয়ে,আপনার যেমন ভালো লাগে আপনার বোনদের কাছে পেলে, ওর বাড়ির মানুষের ও তেমন ভালো লাগে ওকে কাছে পেলে।
মানছি আপনার বাসায় মা নেই,তাই আফিফার দায়িত্ব বেশি। কিন্তু দায়িত্ব মানে কি এই যে বিয়ের পর নতুন নতুন অবস্থায় দুই তিন বার বাবার বাড়ি আসার পর আর তাকে এই বাড়িতে আসতে না দেওয়া?
সপ্তাহের বৃহস্পতিবার বিকেলে আপনি ওকে একবার নিয়ে এসে শুক্রবার বিকেলে নিয়ে চলে যান।একটা দিন আপনার দুই বোন ম্যানেজ করে নিতে পারবে।তাতে আফিফার ও মন খুশি থাকবে।বিশ্বাস করেন,ও নিজে থেকেই তখন আপনার, আপনার বোনদের ভালোবাসবে।
এভাবে সংসার হয় সজিব ভাই,কিন্তু সেই সংসারে সুখ আসে না।একই বিছানায় থেকেও দুজনের মনে যোজন যোজন দূরত্ব থাকে।দিনে হাজার হাজার টাকা আয় করার মধ্যে কোনো সুখ নেই সজিব ভাই,সুখ আছে বাসায় ফিরে একটা বেলি ফুলের মালা স্ত্রীর খোঁপায় গুঁজে দিলে যেই স্বর্গীয় হাসি দেখতে পাওয়া যায় তার মধ্যে। সুখ থাকে বাসায় ফিরতে দেরি হলে স্ত্রীর চিন্তিত মুখখানা দেখার মধ্যে। ”
সজিব চুপ হয়ে বসে রইলো। ধ্রুব হিজাব নিয়ে চলে গেলো। সবাই মিলে রেডি হয়ে বের হবার সময় দেখলো আফিফা আর সজিব ও রেডি হয়ে নিচে বসে আছে। আফিফার দুই চোখ ভেজা কিন্তু মুখে হাসি।
ধ্রুবকে দেখে আফিফা জড়িয়ে ধরে কেঁদে উঠে বললো, “দুনিয়ার সব বোন যাতে তোর মতো একটা ভাই পায়,সব স্ত্রী যাতে তোর মতো স্বামী পায়।বিশ্বাস কর ভাই,তাহলে আর কোনো নারী স্বামী নিয়ে অসুখী হবে না,স্বামীকে নিয়ে বুকে চাপা কষ্ট জমিয়ে রাখবে না।”
রিকশায় সজিব বললো, “আমি ধ্রুব ভাইয়ের সাথে বসতে চাই।”
শাপলা, শালুক,আফিফা এক রিকশায় বসলো। সজিব ধ্রুবর পাশে বসে ধ্রুবর হাত ধরে বললো, “সবসময় আশেপাশের সবাই বলতো,বিয়ের পর বউকে কঠিন শাসনের মধ্যে রাখবি।উঠতে বসতে ধমক দিবি।মহিলাদের টাইটের মধ্যে রাখা লাগে নয়তো তাদের পাখনা গজায়।স্বামীদের মূল্য দেয় না।
আমার মা ছাড়া সংসার। আত্মীয় স্বজন সবাই বিয়ের আগে বলে দিয়েছিলো,বউ আসলে আর আমার বোনদের সহ্য করতে পারবে না।আমার বোনদের হিংসা করবে।বিশ্বাস করো ধ্রুব আমার তখন খুব খারাপ লাগতো। সবার বুদ্ধি,যুক্তি শুনে আমি বুঝলাম যে আমি যদি সবসময় গম্ভীর হয়ে থাকি,আফিফাকে রাগারাগিতে রাখি তবে আফিফা সোজা থাকবে।আমার বোনদের হিংসা করবে না।যখন তখন ওদের নামে নালিশ জানাবে না।
সেই ভাবনা থেকে আমি সবসময় ওর সাথে একটা গাম্ভীর্য নিয়ে কথা বলি,কিছু হলেই ধমকাতে থাকি।আমার বোনদের দোষ দেখেও আফিফাকে শাসাই,আমি জানি আমার বোনদের দোষ আছে কিন্তু তবুও ওদের কিছু বলি না।
আফিফা ও ভয়ে সবসময় চুপ থাকে।কিন্তু সবকিছুর পরেও আমি বুঝতাম আফিফার সব ঠিক থাকলেও আমার সাথে ওর মনের মিল নেই।আমি বাসায় আসলে আফিফার চোখমুখ শুকিয়ে যায়।আমি যেনো ওর কাছে মূর্তিমান আতংক।
তবুও আমি ভাবতাম থাকুক এভাবে,তবুও যদি আমার বোনদের হিংসা না করে তাহলেই হলো।
আমি আসলে স্ত্রী ও বোনদের মধ্যে ব্যালেন্স করতে পারি নি। এখন মনে হচ্ছে আমি আমার এসব ব্যাপারে আগেই সতর্ক হওয়া উচিত ছিলো, মানুষের কথা না ধরে নিজের বুদ্ধিকে কাজে লাগানো উচিত ছিলো।
আজ তোমার কথা শুনে বুঝলাম তুমি ভুল কিছু বলো নি।আফিফার মন খারাপের কারণ আমি কখনো জানতে চাই নি।আফিফা কখনো আমার সাথে হেসে কথা বলে নি, আমি ও বলি নি। আমাদের সম্পর্কটা আসলেই কেমন ম্যাড়ম্যাড়ে।
আমার উচিত ছিলো আফিফার মন বুঝতে চাওয়া।”
ধ্রুব হেসে বললো, “আমার কথায় কষ্ট পেয়ে থাকলে ক্ষমা করে দিবেন আমাকে।আপনার যেমন আপনার বোনের মন খারাপ সহ্য হয় না ভাই,আমার বোনের মন খারাপ ও আমাকে তেমন যন্ত্রণা দেয়।স্ত্রী আর বোন দুজনের জায়গা আলাদা। দুজনকেই প্রায়োরিটি দিতে হবে।কিন্ত একজনের জন্য অন্যজনকে আঘাত দেওয়া কোনো কাজের কথা না।এটুকু ভরসা করুন,আফিফা যৌথ পরিবারে বড় হয়েছে। ছোট থেকেই দেখে এসেছে সবাই মিলেমিশে থাকতে হয় কিভাবে।অন্তত আফিফার পক্ষ থেকে এরকম ব্যবহার আপনি পাবেন না যা আপনার বোনদের জন্য কষ্টের হয়।এটুকু আমি লিখে দিতে পারি। ”
সজিব বললো, “তুমি দয়া করে এসব আমার শ্বশুর শাশুড়িকে বলিও না।ওনারা জানলে ভীষণ কষ্ট পাবেন।আমি আমার ভুল বুঝতে পেরেছি।”
সবাই মিলে ফুচকার দোকানে এলো। আফিফা বারবার শালুককে জড়িয়ে ধরে বলছে,”খবরদার শালুক,আমার ভাইকে কষ্ট দিবি না।আজ ধ্রুবর জন্য তোর দুলাভাইয়ের চোখের পর্দা সরে গেছে। এই প্রথম সে আমাকে ভালোবাসি বলে জড়িয়ে ধরেছে।আমার তো খুশিতে ম/রে যেতে ইচ্ছে করছে এখন।”
শাপলা, শালুক দুজনেই হাসতে লাগলো শুনে।নয়না বললো, “তোরা এতো হাসছিস কেনো?”
আফিফা নয়নাকে জড়িয়ে ধরে বললো, “আজ আমি খুব খুশি আপা।”
চলবে…….
রাজিয়া রহমান