শালুক ফুলের লাজ নাই

শালুক ফুলের লাজ নাই !! Part- 16

দিগন্ত জুড়ে মেঘ জমেছে। বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে ভীষণ। এই বুঝি বর্ষণ শুরু হবে।
শীতল হাওয়া ছেড়েছে প্রকৃতি।
শালুকের মনটা উদাস হয়ে গেলো। দুপুরে নামমাত্র কিছুটা খেয়েছে সে।আজ তো আফিফার বৌভাত হবে।সবাই নিশ্চয় গিয়েছে। খুব আনন্দ করছে নিশ্চয় সবাই মিলে।
নিজের অদৃষ্টকে নিজেই জিজ্ঞেস করলো, “কি দোষ ছিলো আমার? আমার আনন্দময় জীবনে কেনো এভাবে নেমে এলো অন্ধকার? যে জীবন ছিলো বসন্তের উৎসব সেই জীবনে কেনো আজ শীতের রিক্ততা? ”
রিমা এনে তার ফোন দিয়ে গেলো শালুককে।শালুক হ্যাঁ বলতেই ধ্রুব বললো, “এদিকে ভীষণ বৃষ্টি হচ্ছে শালুক।ওদিকে ও হয়তো বৃষ্টি নামবে যেকোনো মুহুর্তে। তুই খবরদার বারান্দায় এসে দাঁড়াবি না কিছুতেই।বৃষ্টির পানি যাতে কিছুতেই না লাগে তোর গায়ে।সাবধানে থাকবি শালুক।কোনো চিন্তা করবি না।আমি আছি তো।”
শালুককে উত্তর দিতে না দিয়ে কল কেটে দিলো ধ্রুব। শালুক একটা নিশ্বাস ফেলে বারান্দার দরজা বন্ধ করে দিলো। গুড়িগুড়ি বৃষ্টি নেমেছে।
রিমা ফোন নিতে এসে জিজ্ঞেস করলো, “লেবু মাখা খাবে শালুক?”
শালুক মাথা নাড়িয়ে অসম্মতি জানালো।রিমা শালুকের হাত ধরে বললো, “কি হয়েছে তোমাদের শালুক?এভাবে ভেঙে পড়েছ কেনো?এতো তাড়াতাড়ি বিয়ে করে নিলে কেনো?ধ্রুব দেখলাম আমাকে টেক্সট দিয়ে বললো শালুককে বিয়ে করে নিয়ে এসেছি, তোর বাসায় এক-দুই রাত থাকবে।এরপর এতো জানতে চাইলাম কিছুই বললো না কি হয়েছে। ”
শালুক একবার ভাবলো বলে দিবে কিভাবে কি হয়েছে। পরমুহূর্তে মত পাল্টালো।যেখানে ধ্রুব কিছু বলে নি সেখানে শালুক বলে দেওয়া ধ্রুবর অপমান। তাই আস্তে করে জবাব দিলো, “কিভাবে কি হলো আমি নিজেও কিছু বুঝতে পারছি না আপু।আপনি ধ্রুব ভাইয়ের থেকে জেনে নিয়েন।”
রিমা হেসে বললো, “এখন তো হাজব্যান্ড হয়ে গেছে শালুক,এখন আর ভাই বলছ কেনো?শুধু ধ্রুব বলো।”
শালুক আঁতকে উঠলো সে ধ্রুব ভাইকে শুধু নাম ধরে বলবে!মরেই যাবে তাহলে। এটাও কি সম্ভব কখনো!
রিমা হেসে ফেললো শালুকের লজ্জা দেখে।তারপর বললো, “আচ্ছা থাক,লজ্জা পেতে হবে না।তোমাদের টোনাটুনির ব্যাপার সেটা। নিজেদের সংসার হলে তখন সব ঠিক হয়ে যাবে।”
রিমা চলে যেতেই শালুক ভাবতে লাগলো। নিজেদের সংসার! কাকে নিয়ে সংসার করবে শালুক!
সে তো সংসার বলতে জানে মা বাবা ভাই বোন,চাচা,চাচী,দাদা,দাদী,ফুফু সবাই মিলে একসাথে এক বাড়িতে থাকা।
সংসার মানে সকালে সবাই মিলে চায়ের আড্ডা,সন্ধ্যা বেলায় ছোট চাচীর হাতের ঝালমুড়ি, মায়ের হাতের নুডলস, বড় চাচীর হাতের পাকোড়া ভাজা।
সংসার মানে দুপুরে ঝেতে বসলে মুরগির রান না পেলে কেঁদেকেটে সব একাকার করে ফেলা।
বড় চাচার হুমকি-ধমকি শুরু হয়ে যাওয়া। মুরগির রান দুই পিস একসাথে শালুককে দিতে হবে বলে আদেশ জারি করা।
পুকুরে সবাই মিলে দাপাদাপি করে গোসল করা।সংসার মানেই তো যৌথ পরিবারে সবাই মিলে থাকা।
দুজন মিলে কি সংসার হয় না-কি?
বৃষ্টিতে ভিজে ধ্রুব বাসা খুঁজতে লাগলো। কিছুতেই পছন্দসই বাসা পাচ্ছে না।আবার বাসা পছন্দ হলে সেখানে ভাড়া বেশি। ধ্রুবর ব্যাংকে মোটামুটি ৫০ হাজারের উপরে টাকা আছে।
সকাল থেকে ঘুরতে ঘুরতে ধ্রুব বাসা পেলো আসরের নামাজের পর।
রোডের সাথেই ছোট একটা বাসা,তিনতলা পর্যন্ত। বাড়ির বাহিরের দিকে থেকেই দেখে বুঝা যায় এই বাসার ভেতরটা তেমন সুবিধাজনক নয়।বাহিরের দেয়ালে শ্যাওলা ধরা,বাড়ির নীল রঙ উঠে জায়গায় জায়গায় সাদা সিমেন্ট দেখা যাচ্ছে।বাসার সামনে একটা বাগানবিলাস গাছ আছে সাথে একটা কামিনী গাছ।অন্যপাশে দুটো নারিকেল গাছ। ধ্রুব আল্লাহ আল্লাহ করে ভেতরে গেলো। বাহির থেকে যেমন দেখাচ্ছে ভেতরটা তেমন নয়।
ভেতরে রঙ ঠিক আছে যদিও দেয়াল খুব মসৃণভাবে ঘষে নি রঙ করার সময়। অফ হোয়াইট কালার রঙ দেওয়া দেয়ালে।এক তলায় দুটো করে ফ্ল্যাট। এক ফ্ল্যাটে দুটো বেডরুম, দুটো ওয়াশরুম একটা কমন আর একটা এটাচড মাস্টার বেড রুমের সাথে।
একটা ডাইনিং আর একটা কিচেন। স্বস্তির ব্যাপার হলো দুই রুমেই বারান্দা আছে।
উপরের তলায় ও ভাড়াটিয়া আছে,নিচের তলায় ও আছে,শুধু এই দ্বিতীয় তলায় এই ফ্ল্যাট খালি গত মাসে ভাড়াটিয়া চলে যাওয়ায়।তাছাড়া উপরের তলার ভাড়া ১২ হাজার,দুই তলার ভাড়া হচ্ছে ১৫ হাজার টাকা। এজন্য উপরের তলার ওরা নিচের তলায় আসে নি।
ধ্রুবর পছন্দ হলো বাসা।শালুককে কল দিলো আবারও ধ্রুব।শালুক রিসিভ করতেই জিজ্ঞেস করলো, “শোন,একটা বাসা পেয়েছি বুঝলি।একটু ছোট রুম,দুই বেডরুম,একটা ডাইনিং ড্রয়িং, একটা কিচেন,দুইটা ওয়াশরুম,দুইটা বারান্দা। গ্যাস,পানি বিদ্যুৎ সব আছে।যদিও বিদ্যুৎ বিল আমাদের। ১৫ হাজার টাকা ভাড়া।
এখন তুই কি বলিস,নিবো?
সারাদিন অনেক তো খুঁজলাম।কিন্তু এরকম পেলাম না।বড় বাসা নিতে হলে ভাড়া আরো বেশি, আবারও খুব ছোট দুই রুমের বাসাও নিতে ইচ্ছে করছে না।”
শালুক অবাক হলো ধ্রুবর কথা শুনে।তারপর সেই অবাক গলায় জিজ্ঞেস করলো, “আমাকে জিজ্ঞেস করছ কেনো তুমি?আমার অনুমতির কি আছে?তোমার যেটা ভালো মনে হয় তাই করো।”
ধ্রুব বিরক্ত হয়ে বললো, “বাসা কি আমার জন্য নিচ্ছি?আমার একার সংসার হবে এখানে?বাসা তো তোর জন্য,দিন শেষে এই সংসার তোর,তুই ঘরের কর্ত্রী হবি।তোকে জিজ্ঞেস করবো না আমি?তোর পছন্দ না হলে আমি আরো হাজারটা খুঁজবো বাসা।ছোট বাসা শুনে রাগ করেছিস না?আমি রিমার মেসেঞ্জারে ছবি পাঠাচ্ছি বাসার তুই দেখ আগে।”
ধ্রুব কল কেটে দিলো। শালুক কিছুই বুঝতে পারলো না মাথামুণ্ডু। এসব ব্যাপারে শালুককে জিজ্ঞেস করার কি আছে তাই ভেবে পাচ্ছে না শালুক।
ধ্রুব ছবি পাঠাতেই শালুক দেখতে লাগলো। কিন্তু তার মাথায় ঢুকলো না এখানে ভালো খারাপের কি আছে?এসব ব্যাপার সে কিভাবে বুঝবে?
ধ্রুব এবার ভিডিও কল দিলো। শালুক ভিডিও কল দেখে কল কেটে দিলো। ভিডিও কলে কথা বলতে লজ্জা লাগবে তার এখন ধ্রুবর সাথে।
ধ্রুব অডিও কল দিলো আবার। তারপর জিজ্ঞেস করলো, “পছন্দ হয়েছে? ”
শালুক বললো, “হ্যাঁ হয়েছে পছন্দ।”
ধ্রুব মুচকি হেসে বললো, “মন খারাপ করিস না শালুক।আমি তোকে আরো বড় বাসায় রাখবো ইনশাআল্লাহ। আমাদের এই দুরবস্থা থাকবে না শালুক।সব ঠিক হয়ে যাবে দেখিস।একদিন তোকে আমি একটা ডুপ্লেক্স বাড়ি করে দিবো।আমাদের সংসার জীবনের শুরুটা একটু কষ্টের হবে হয়তো, আমি প্রমিস করছি শালুক তোর সেই কষ্ট আমি আমার ভালোবাসা দিয়ে দূর করে দিবো।”
শালুক ভীষণ লজ্জা পেলো এই কথা শুনে।ধ্রুব ভাই এভাবে কথা বলছে কেনো?শালুকের কান লাল হয়ে যাচ্ছে লজ্জায়।কেমন একটা অদ্ভুত শিহরণ জেগেছে শরীরে। দেহের প্রতিটি লোমকূপ পর্যন্ত শিহরিত হলো।
ধ্রুব জিজ্ঞেস করলো, “আজ রাতটা রিমার সাথে থাক,সকালে বাসায় নিয়ে আসবো তোকে।”
শালুক রাজি হলো না কিছুতেই এখানে থাকতে। ভেজা গলায় বললো, “আমি এখানে থাকবো না ধ্রুব ভাই,আমি এখানে থাকলে তুমি এই বাসার সামনের রাস্তায় দাঁড়িয়ে সারারাত মশার কামড় খাবে আর মশা মারবে।আমার তা সহ্য হবে না।ঢাকা শহরের মশারা মনে হয় খাবার পায় না বহু বছর ধরে। কাল সারারাত তোমার দুই হাত থামে নি এক মুহূর্তের জন্য।”
ধ্রুব অবাক হয়ে বললো, “তুই সারারাত জেগে ছিলি কেনো শালুক?আমার তো এসবে অভ্যাস আছে।তোর তো নেই।তুই কেনো জেগে ছিলি!”
শালুক উত্তর দিলো,”যেই কারণে আমাকে এখানে রেখে তুমি অন্য কোথাও গিয়ে থাকতে পারো নি,পাহারা দিতে চলে এসেছ তেমনি আমিও পারি নি তোমাকে রাস্তার পাশে এভাবে বসে থাকতে দিতে একা।তোমাকে পাহারা দিয়েছি আমিও।”
ধ্রুব ইমোশনাল হয়ে গেলো শুনে।তবে অতি দ্রুত নিজেকে সামলে বললো, “আমি আসছি তোকে নিয়ে আসতে।এটাই প্রথম আর এটাই শেষ রাত শালুক।এরপর থেকে আর তোকে একটা রাত ও আমি একা থাকতে দিবো না।”
ধ্রুব এলো মাগরিবের সময়। মিষ্টি নিয়ে এলো রিমাদের জন্য।বাসার নিচে দাঁড়িয়ে থেকে রিমাকে কল দিলো শালুককে নিয়ে নিচে যাওয়ার জন্য।
রিমার হাতে মিষ্টির প্যাকেট দিয়ে বললো,”আসি রিমা।অনেক উপকার করেছিস।সারাজীবন কৃতজ্ঞ থাকবো আমি তোর কাছে। ”
রিমা হেসে বললো, “তোর বউয়ের জন্য তো কিছুই করতে পারলাম না।ভালো থাকিস দুজনে।”
একটা রিকশা ডেকে শালুককে নিয়ে উঠে গেলো রিকশায়।প্রথমে গেলো শালুকের জন্য জামা কাপড় কিনতে।তিনটি জামা,এক জোড়া জুতা, তেল,সাবান,শ্যাম্পু নিলো।নিজের জন্য দুটো লুঙ্গি আর দুটো টিশার্ট,একটা তোয়ালে একটা গামছা নিলো,এক প্যাকেট কয়েল,দেশলাই,দুটো লাইট নিলো বাসার জন্য।হোটেল থেকে রাতের খাবার নিয়ে নতুন বাসায় গেলো।
জামাকাপড় দেখে শালুকের মনে হলো আজ সারাদিন সে গোসল করে নি।সারা শরীর ঘামে চটচটে হয়ে আছে।বাথরুমে ঢুকে শালুক গোসল করে এলো।শালুকের পর ধ্রুব গোসল করতে গেলো।
বারান্দায় দাঁড়িয়ে আনমনা শালুক ভাবতে লাগলো জীবন নিয়ে।
এক জীবন এভাবে রঙ বদলাবে তা কি কখনো জানতো শালুক!
————–
আদনান বৌভাতে গেলো না। বাসায় রয়ে গেলো। কেউ তাকে যাবার জন্য সাধলো না।একা বাড়িতে আদনান রয়ে গেলো। নিরব নিস্তব্ধ বাড়িটিকে আদনানের কাছে পোড়াবাড়ি বলে মনে হচ্ছে,যেনো এই বাড়ির প্রাণ শালুক ছিলো।
বুকের ভেতর কেমন হাহাকার করতে লাগলো। রাতে আশা কল দিয়ে আদনানকে জানিয়েছে তাদের বিয়ের কথা। আশার কাছে বিয়ের কথা জানার পর থেকে আদনানের বুকের ভেতর অস্থিরতা আরো বেড়ে যাচ্ছে। কি হতো বিয়েটা আরো কিছুদিন আগে হয়ে গেলে।তাহলে তো শালুককে হারাতে হতো না।
বউ নিয়ে সবাই ফিরলো সন্ধ্যা বেলায়। আফিফা আদনানের সামনে দিয়ে চলে গেলো একটা বার আদনানের দিকে ফিরে তাকালো না।আদনানের মনে হচ্ছে নিজেকে জড় পদার্থ একটা। সবাই নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত আদনানের দিকে কেউ ফিরে ও তাকাচ্ছে না।
বিশেষ করে শালুকের মা হাসনা আদনানের ছায়া ও মাড়ায় না।
আদনানের বুকের ভেতর থেকে একটা দীর্ঘশ্বাস বের হয়ে এলো।
দাদীর কাছে গিয়ে আদনান বসলো। সিতারা বেগম নাতির মুখের দিকে তাকিয়ে বললেন,”কি কাজ করলি ভাই,সবার মনে কষ্ট দিলি।ধ্রুব তো তোর ভাই,শালুক তোর বোন।ওগো বদনাম কইরা কি সুখ পাইলি তুই?”
আদনান জবাব দিতে পারলো না। দাদীর পা চেপে ধরে বললো, “আমি যা চেয়েছি তা হয় নি দাদী।আমার বুকের ভেতর জ্বলেপুড়ে যাচ্ছে। কষ্ট আমার ও কম হচ্ছে না দাদী।”
সিতারা বেগম বললেন, “কি চাইছিলি তুই?”
আদনান মাথা নিচু করে বললো, “তা বলা যাবে না দাদী।এই দুনিয়ায় কেউ জানে না তা,আমি নিজেই হেরে গেছি দিনশেষে। ধ্রুব তো জিতে গেছে দাদী,সবাই ওকে ভালোবাসে।পোড়া কপাল তো আমার। ”
সিতারা বেগম আদনানের কথার মানে বুঝতে পারলেন না।
————–
রাতে ঘুমাতে গিয়ে শালুক বিপাকে পড়ে গেলো। বালিশ নেই,বিছানা নেই,তোশক নেই।কিভাবে ঘুমাবে এখানে?শালুকের বালিশ তিনটা লাগে।দুটো মাথার নিচে আর একটা কোলবালিশ।ধ্রুব কোমল গলায় বললো, “আজকের রাতটা একটু কষ্ট কর শালুক,আগামীকাল সব পেয়ে যাবি।আগামীকাল গিয়েই খাট,তোশক,বালিশ সব নিয়ে আসবো।”
জামা কাপড়ের ব্যাগে মাথা দিয়ে শালুক শুয়ে পড়লো। ফ্যান না আনায় ভ্যাপসা গরমে শালুকের ঘুম এলো না।গ্রামে নিজেদের বাড়িতে আরামদায়ক বিছানায় শুয়ে ঘুমানো মেয়েটাকে এভাবে কোনোদিন ফ্লোরে শুয়ে ঘুমাতে হবে তা কি ভেবেছে কেউ কখনো?
ধ্রুবর ভীষণ খারাপ লাগলো। আরাম,আয়েসে,বিলাসিতায় যেই মেয়ে থেকেছে তাকে এভাবে রাখতে ধ্রুবর বুকের ভেতর জ্বলেপুড়ে যাচ্ছে। ইচ্ছে করছে শালুককে নিজের বুকের উপর নিয়ে শুয়ে থাকতে যাতে শক্ত ফ্লোরে শালুকের কষ্ট না হয়।কিন্তু চাইলেও তা সম্ভব না।শালুক ছটফট করছে গরমে।ধ্রুব উঠে বসলো, তারপর শালুকের জন্য আনা জামার ক্যাটালগের কাগজ তিনটা বের করে শালুককে বাতাস করতে লাগলো।
কিছুক্ষণ গড়াগড়ি করার পর শালুক ঘুমিয়ে গেলো। আজকের রাত ও ধ্রুবর কাটলো নির্ঘুমভাবে।
শালুকের মুখের দিকে তাকিয়ে ধ্রুব ভাবতে লাগলো একটা চাকরি জোগাড় করতে হবে,আগামীকাল থেকে চাকরি খুঁজতে হবে।শালুককে বই খাতা সব কিনে দিতে হবে।শালুকের পড়াশোনা করাতে হবে।
মাথায় এতো চাপ থাকার পরেও ধ্রুবর ভালো লাগছে এই ভেবে যে শালুক তার কাছে আছে।আজীবনের জন্য শালুক শুধু তার হয়ে গেছে।
শালুককে ভালো রাখার জন্য দরকার হলে কলুর বলদের মতো পরিশ্রম করবে ধ্রুব,তবুও ভালোবাসা ভালো থাকুক।
শেষ রাতের দিকে বৃষ্টি নামলো ঝমঝমিয়ে। শীতল বাতাস বইতে লাগলো। ধ্রুব শালুকের মাথাটা নিজের বুকের উপর টেনে নিয়ে শুয়ে পড়লো। এক হাতে তবুও শালুককে বাতাস করতে লাগলো।
এভাবেই ঘুমিয়ে গেলো ধ্রুব ফজরের নামাজের কিছুক্ষণ আগে।ভালোবাসার মানুষকে পাশে নিয়ে মানসিক শান্তিতে রাত কাটলো ধ্রুবর।
চলবে…
রাজিয়া রহমান