শালুক ফুলের লাজ নাই

শালুক ফুলের লাজ নাই !! Part- 17

আজান হতেই ধ্রুবর চোখ খুলে গেলো আপনাতেই।ঘন্টাখানেক ঘুমিয়েছে সে।বাহিরে এখনো অন্ধকার।পাখিদের ডাক শোনা যাচ্ছে।শালুক ধ্রুবকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে আছে। ধ্রুবর ডান হাতের উপর মাথা রেখে এক পা ধ্রুবর গায়ের উপর তুলে দিয়ে ঘুমাচ্ছে শালুক।একটা হাত ধ্রুবর গলা পেঁচিয়ে ধরে আছে।
শালুকের হাত নিয়ে হাতের উল্টো পিঠে ধ্রুব আলতো করে একটা চুমু খেলো। তারপর কি মনে করে নিজের ফোনটা নিয়ে একটা ছবি তুললো।
ঘুমন্ত শালুকের গালে দুটো ব্রণ লাল হয়ে আছে,কি যে ভীষণ সুন্দর লাগছে এই ব্রণ দুটো ধ্রুবর কাছে!
ভালোবাসা বুঝি এরকমই হয়?ভালোবাসার মানুষের সবকিছুই বুঝি মানুষের ভাল্লাগে!
উত্তর পায় না ধ্রুব।
আলগোছে শালুকের হাত পা সরিয়ে ধ্রুব উঠে গেলো। শালুকের গায়ের ওড়নাটা ঘুমের ঘোরে শালুক সরিয়ে রেখেছে পায়ের পাশে। ওড়না নিয়ে শালুকের গায়ে জড়িয়ে দিলো ধ্রুব।যাতে ঘুম থেকে উঠে শালুক বিব্রত না হয় গায়ে ওড়না না পেলে।
ওজু করে এসে শালুককে ডাকলো।শালুকের ঘুম ভীষণ ভারী ধ্রুব জানে।চুলে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে ধ্রুব আস্তে আস্তে ডাকতে লাগলো শালুককে।১৫-২০ মিনিট ধরে তপস্যার পর অবশেষে শালুক চোখ খুলে তাকালো।
ধ্রুবকে পাশে দেখে চমকে উঠলো শালুক।ধ্রুব এখানে কেনো?ওর রুমে কিভাবে এলো ধ্রুব?তাড়াতাড়ি নিজের ওড়না ঠিক করতে গিয়ে দেখে ওড়না গায়েই আছে ঠিকঠাক। স্বস্তি পেলো শালুক।তারপর হতভম্ব হয়ে জিজ্ঞেস করলো, “আপনি এখানে কেনো?আমার রুমে কিভাবে এলেন?”
শুনে ধ্রুব হাসলো।তারপর বললো, “আপনার রাজ্যের এক নিরীহ প্রজা আমি, আপনার ঘুম ভাঙ্গাতে এসেছি মহারানী সুলতানা শালুক।আর হ্যাঁ, আপনি হয়তো ভুলে গেছেন এটা আপনার পিতার প্রাসাদ নয়,এটা শুধু আপনার রাজ্য।এখানে আমি আপনার নিয়োগ দেওয়া এক প্রজা।এই রাজ্যের অধিবাসী শুধু আপনি আর আমি। ”
শালুকের কয়েক মুহুর্ত লাগলো ব্যাপারটা বুঝতে। তারপর হঠাৎ করেই মনে হলো তারা এখন ঢাকায় আছে। এটা তাদের নতুন বাসা।
ভাবতেই শালুকের মন খারাপ হয়ে গেলো। বুকের ভেতর কেমন চিনচিনে ব্যথা শুরু হলো। আর বুঝি দেখা হবে না কারো সাথে!
শালুককে অজু করে আসতে বললো ধ্রুব।গামছা দিয়ে ফ্লোর মুছে নিয়ে নামাজে দাঁড়ালো শালুককে পাশে নিয়ে।
নামাজ শেষ করে শালুকের ডান হাতটা টেনে নিয়ে বললো,”জীবনের সেরা প্রাপ্তি আমি পেয়ে গেছি শালুক।আল্লাহর কাছে এটুকুই চাইবো আজীবন যেনো দুজন একসাথে থাকতে পারি।”
শালুকের মন খারাপ হলো। ধ্রুব কি তাহলে তার কেশবতীকে ভুলে গেছে শালুককে বিয়ে করে। আহারে! সেই মেয়েটা নিশ্চয় শালুককে অনেক গালাগাল দিচ্ছে যেমন করে শালুক একসময় আশাকে দিয়েছিল।
মনে মনে শালুক বললো, “কেশবতী মেয়ে,তুমি আমাকে মাফ করে দিও।আমি চাইনি এভাবে তোমার ভালোবাসা কেড়ে নিতে।”
অন্ধকার কেটে বাহিরে আলো ফুটতে শুরু করেছে।সেই সাথে বেড়ে গেছে পাখিদের কলকাকলী।বাহিরের কামিনী গাছে অসংখ্য পাখি বসে কিচিরমিচির শব্দ তুলছে।
শালুককে দরজা বন্ধ করতে বলে ধ্রুব বের হলো নাশতা কিনে আনার জন্য। যাবার আগে ভালো করে বলে গেলো, “আমার গলার শব্দ না পাওয়া পর্যন্ত দরজা খুলবি না।এই পীপহোল দিয়ে তাকিয়ে দেখবি আগে কে এসেছে। আমি ছাড়া অন্য কেউ এলে কিছুতেই দরজা খুলবি না। বাহিরের মানুষটা মরে গেলে মরে যাবে তুই খবরদার দরজা খুলবি না কারো জন্য একা বাসায় থাকলে।এটা আমাদের গ্রাম নয় শালুক।এটা ঢাকা শহর। এই শহরের লোকেদের ভালো মানুষি মুখোশের আড়ালে অন্য চেহারা লুকিয়ে থাকে। কার মনে কি আছে তা কেউ জানে না।সাবধানে থাকবি কিন্তু তুই। ”
শালুক কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো ধ্রুবর দিকে। তারপর বললো, “এমনভাবে সব উপদেশ দিয়ে যাচ্ছো যেনো তুমি বিদেশে চলে যাচ্ছো আমাকে বাসায় রেখে।”
ধ্রুব মুচকি হেসে বললো, “আমার জায়গায় তুই থাকলে বুঝতি নিজের প্রাণটা এভাবে কোনো অচেনা জায়গায় একা রেখে যাওয়া কতোটা যন্ত্রণার।তুই দেখছিস আমি এই বাসায় শালুককে রেখে যাচ্ছি আর আমি দেখছি আমার প্রাণপাখি রেখে যাচ্ছি। ”
শালুক নাক ফুলিয়ে বললো, “ছাতার মাথা কি বলছো তুমি এসব?তোমার কথার কিছুই আমার মাথায় ঢুকছে না।”
ধ্রুব হেসে বললো, “না ঢুকলেই ভালো। যা আমি আসছি নাশতা নিয়ে। কিছুক্ষণ পর বের হবো তোকে নিয়ে সব কেনাকাটা করার জন্য।”
শালুক দরজা বন্ধ করে দিয়ে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালো। ওপাশের বারান্দায় তাকিয়ে দেখলো একটা লুঙ্গি,একটা সেলোয়ার-কামিজ,বাচ্চাদের জামাকাপড়, কাঁথা দেওয়া। রাতের বৃষ্টিতে সব ভিজে চুইয়ে চুইয়ে পানি পড়ছে।নিশ্চয় ওখানে কোনো বাচ্চার আব্বু আম্মু থাকে।শালুকের নিধির কথা মনে পড়ে গেলো।
ভেজা মাটির ঘ্রাণ আসছে নিচ থেকে। সামনের রাস্তায় লোকজন হাটছে,একটা দুইটা রিকশা আসা যাওয়া করছে।
শালুকের ভীষণ অবাক লাগছে এসব দেখে।এই শহরের জীবন শালুকের কাছে একেবারে অজানা ছিলো। এর আগে কখনো শালুক শহরে আসে নি।
যাই দেখছে নতুন লাগছে তার।
ব্যাগ কাঁধে নিয়ে ছেলেমেয়েরা যাচ্ছে। শালুক অবাক হলো। এতো সকালে এরা পড়তে যাচ্ছে!
ছ্যাঁ ছ্যাঁ ছ্যাঁ!
শালুকের মন বিষিয়ে গেলো। কি দরকার এতো ভোরে পড়তে যাবার?এই সময় কোথায় বাসায় বসে আরাম করবে তা না এরা পড়তে যাচ্ছে। বাড়িতে থাকলে শালুক এখন চা খেতো। দাদীর রুমে গিয়ে গল্প করতো। শাপলার সাথে মারামারি করতো।ধরে বেঁধে ও কেউ পড়তে বসাতে পারতো না।
এখানে শালুক ভীষণ একা।কান্না পাচ্ছে শালুকের খুব।লজ্জায় ধ্রুবর সামনে কান্না করে না বাড়ির কথা মনে করে। কিন্তু প্রতিনিয়ত বুকের ভেতর জ্বলেপুড়ে ছাই হয়ে যায় শালুকের।
আর বুঝি নয়না আপার মেয়েটা শালুককে তাতুক বলে ডাকবে না।
মতির মা তার আর মতির বাপের বিয়ের সেই পুরনো গল্প বারবার বলে কান ঝালাপালা করে দিবে না।
আফিফা আপার শ্বশুর বাড়িতে বুঝি শালুকের আর যাওয়া হবে না।বিয়েতে আফিফা আপা কেমন করে সেজেছে? জহির ভাইয়ের জন্য কান্না করেছে কি?
কবুল বলতে কতো সময় নিয়েছে?
শালুককে যখন কবুল বলতে বলা হলো তখন সে কি করেছে?
তখন শালুকের মনে হয়েছিলো পৃথিবীর সবচেয়ে ভারী শব্দ এই কবুল শব্দটা।কোনোমতে মুখ থেকে বের হচ্ছিলো না।বুকের ভেতরটা কেমন ক্ষত-বিক্ষত হয়ে যাচ্ছিলো সেই সময়।
তবুও শালুককে কবুল বলতে হয়েছে। দাদা এসে শালুকের হাত ধরে কেঁদে দিয়ে বলেছিলেন,”কবুল বল বোইন আমার।চুপ কইরা থাকিস না বোইন।”
শালুক দেখেছে তার বাবা মাথা নিচু করে বসে আছে। চাচারা দুজনের চোখ টলমল করছে।
মা মুখে আঁচল গুঁজে দিয়ে কাঁদছে অন্যদিকে ফিরে।
কি যন্ত্রণা, কি যন্ত্রণা!
শালুক কবুল বলেছে তারপর।
আর ধ্রুব!এক দৃষ্টিতে শালুকের দিকে তাকিয়ে থেকে যন্ত্রের ন্যায় কবুল বলে দিলো।
কি অসহ্য লাগছে৷ শালুকের এসব মনে পড়লেই।না এসব আর ভাববে না শালুক।এসব ভাবলেই শালুকের ভীষণ যন্ত্রণা হয়।
শালুক এসব মন থেকে সরিয়ে কামিনী গাছের ফুলের দিকে নজর দিলো।কি মিষ্টি একটা ঘ্রাণ আসছে এই ফুল থেকে।ছোট ছোট থোকা থোকা সাদা ফুলগুলো।
ধ্রুব বাসা থেকে বের হয়ে ফোন বের করলো। আগের টিউশনি ছিলো চারটি, ছেড়ে দিয়ে বাড়িতে চলে গিয়েছিলো তখন।
কল দিয়ে নিরাশ হলো ধ্রুব।তিনজনই নতুন টিচার রেখেছে।সবাই ধ্রুবকে বললো এই মাসটা অপেক্ষা করতে।তারা নতুন টিচারকে বাদ দিয়ে দিবে মাস শেষ হলে।কিন্তু ধ্রুব তাতে রাজি হলো না। যারা ওদেরকে পড়াচ্ছে তারা নিশ্চয় শখ করে পড়াচ্ছে না,প্রয়োজনের তাগিদেই টিউশনি করছে।ধ্রুব ওদের কাছ থেকে এভাবে টিউশনি ছিনিয়ে নিতে পারবে না।তার বিবেকে বাঁধছে ব্যাপারটা।
শুধু একজন ছাত্রর এখনো টিচার রাখা হয় নি।ধ্রুব এসেছে শুনে স্টুডেন্টের মা ভীষণ খুশি হলো। যদি পারে তবে আজকে থেকেই যেনো ধ্রুব পড়াতে যায় বলে অনুরোধ করলো।ধ্রুব জানালো আগামীকাল থেকে পড়াতে আসবে।
রাস্তার দুই পাশের দেয়ালে,পিলারে নজর বুলাতে বুলাতে গেলো ধ্রুব।কয়েকটা বিজ্ঞপ্তিতে কল দিলো। কল দিয়ে একটা টিউশনি মোটামুটি ঠিক হয়ে গেলো। বিকেল ৫টায় গিয়ে কথা বলে কনফার্ম হবে বাকিটা।
ধ্রুব হিসেব করলো, আগের টিউশনিতে পেতো ৪ হাজার টাকা,নতুন টাতে কতো পাবে?৩-৪ হাজার।
এখনো অনেক টাকা লাগবে।মিনিমাম ২০-২৫ হাজার টাকা উপার্জন করতে হবে মাসে।নয়তো শালুককে ভালো রাখা খুব কঠিন হয়ে পড়বে।
ধ্রুব আর শালুক একই বাড়িতে জন্ম নিলেও,শালুক বড় হয়েছে সোনার চামচ মুখে নিয়ে। কোনোদিন অভাব দেখে নি শালুক।সেখানে ধ্রুব?বাবার সাথে দূরত্ব হবার পর থেকেই তো নিজের খরচ নিজে চালানো শুরু করেছে।বাবা,চাচা,দাদা শত চেষ্টা করে ও ধ্রুবকে এক টাকা দিতে পারে নি। ধ্রুব কখনো নেয় নি কারো থেকে।
ধ্রুবর তো এসব পরিস্থিতিতে মানিয়ে নেয়ার অভ্যাস আছে।কিন্তু শালুক তো তা পারবে না।হোটেল থেকে মুরগির গিলা-কলিজা ভুনা,মুগ ডাল আর ভাজি, পরোটা, পানি নিয়ে ধ্রুব বাসায় গেলো।
নিচ থেকেই দেখতে পেলো শালুক বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে। ধ্রুবর মাথা থেকে সব চিন্তা বের হয়ে গেলো মুহুর্তেই।
এই যে বাসায় ফিরতেই শালুক দরজা খুলে দিবে,এই সুখ কি ধ্রুব লক্ষ কোটি টাকা দিয়ে ও কিনতে পারতো কখনো?
এই মানসিক শান্তির কাছে সব কষ্ট, পেরেশানি তুচ্ছ হয়ে যাবে।দরকার হলে ধ্রুব সারাদিন পরিশ্রম করবে শালুককে ভালো রাখার জন্য। বিনিময়ে বাসায় ফিরলেই শালুকের চাঁদমুখ দেখতে পাবে।এটুকু পাওয়ার জন্য সব করতে পারে ধ্রুব।
শালুক চুপচাপ হোটেলের প্যাকেটে করে খেতে বসলো। ধ্রুব খাচ্ছে আর শালুকের খাওয়া দেখছে।শালুক মাথা নিচু করে খাচ্ছে বসে বসে।
খাওয়া শেষ হতেই ধ্রুব জিজ্ঞেস করলো, “মন খারাপ শালুক?”
শালুক জবাব দিতে পারলো না। দুচোখ জুড়ে বর্ষণ শুরু হলো শালুকের।ধ্রুব শালুককে কাছে টেনে নিয়ে একটা হাত ধরলো। তারপর বললো, “কান্না করছিস কেনো?বাড়িতে যাবি?তাহলে বল,আমি তোকে বাড়িতে দিয়ে আসবো।”
শালুক মাথা নাড়িয়ে বললো, “যেই বাড়িতে আমাদের এতো বড় আঘাত দেওয়া হয়েছে সেই বাড়িতে আমি কখনো যাবো না ধ্রুব ভাই। যেই বাড়িতে আদনান আছে সেই বাড়ির আশেপাশে ও আমি যাবো না।
আমার বুকের ভেতর কেমন করছে ধ্রুব ভাই। আমি সামলাতে পারছি না নিজেকে।”
ধ্রুব হেসে বললো, “সব ঠিক হয়ে যাবে শালুক।সব ব্যথা ধীরে ধীরে কমে যাবে,ক্ষত শুকিয়ে যাবে।প্রথম প্রথম একটু খারাপ লাগবেই।সব ঠিক হয়ে যাবে আবার। ”
এরপর দুজন বের হলো নিউমার্কেটের উদ্দেশ্যে। গৃহস্থালির যাবতীয় জিনিসপত্র কেনার জন্য। এতো বড় মার্কেট, এতো লোকজন শালুক এর আগে আর দেখে নি।হতবাক হয়ে শালুক তাকিয়ে দেখতে লাগলো সবকিছু। বাজার বলতে শালুক ভাবতো এলাকায় তাদের বাজার যেমন তেমনই বুঝি সব।এখন দেখছে যে না,তার ভাবনা ভুল।হরেক রকম জিনিসপত্র এখানে।শালুকের মাথা ঘুরতে লাগলো এসব দেখে।
মার্কেট ঘুরে ঘুরে কাঠের একটা খাট,চারটি বালিশ, একটা কোলবালিশ, বিছানার চাদর,হাড়ি পাতিল, কড়াই,প্লেট বাটি,গ্লাস জগসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় গৃহস্থালির সব কিছু কিনলো।এক ফাঁকে শালুকের জন্য বই,খাতা,কলম কিনে নিলো ধ্রুব।একটা বাটন ফোন কিনলো,নতুন একটা সিম কার্ড কিনলো।
চাল,ডাল,তেল,মশলা,আলু,পেঁয়াজ,রসুন,মাংস সব কিনে দুজন যখন বাসায় ফিরলো তখন চারটে বেজে গেছে ।
খাট বসিয়ে সেখানে তোশক বিছিয়ে, বিছানার চাদর বিছিয়ে দিলো ধ্রুব।বাহিরে থেকেই দুজন খেয়ে এসেছিলো। ঘড়িতে সাড়ে চারটে বাজতেই ধ্রুব বের হয়ে গেলো নতুন টিউশনিতে।
যাবার আগে আবারও শালুককে বলে গেলো কোনোমতেই যেনো বাসার দরজা না খোলে শালুক।শালুক একা বাসায় বসে কি করবে ভেবে পেলো না। তাই কিচেনে গিয়ে হাড়িপাতিল,প্লেটবাটি সব কিচেন কেবিনেটে সাজিয়ে রাখলো।
কার্টুন ছিড়ে নিচে বিছিয়ে সেখানে আলু,পেঁয়াজ,রসুন,আদা এসব রাখলো।
ধ্রুব টিউশনিতে গিয়ে কনফার্ম হয়ে এলো।ক্লাস সেভেনের দুটো ছেলেকে পড়াতে হবে।বেতন আট হাজার টাকা দিবে।সপ্তাহে চারদিন পড়াবে সন্ধ্যায়।
ধ্রুব রাজি হলো। আগেরটা বিকেল সাড়ে চারটে থেকে সাড়ে পাঁচটা। নতুন টিউশনি ছয়টা থেকে সাতটা।
হিসেব করলো ধ্রুব,একাউন্টে ছিলো ৫৬ হাজার টাকা।আজকে খরচ হয়েছে প্রায় ১৬ হাজার টাকা। বাড়ি ভাড়া অগ্রিম দিতে হিয়েছে ১৫ হাজার টাকা।আছে আর ২৫ হাজার টাকা একাউন্টে।
দুইটা টিউশনি মিলিয়ে মোট বারো হাজার টাকা হয়।বাসা ভাড়া যেখানে পনের হাজার টাকা।
তবুও নিরাশ হলো না ধ্রুব।আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করলো। আল্লাহ নিশ্চয় একটা ব্যবস্থা করে দিবেন।
বাসায় ফিরে নিজের ফোনটা ধ্রুব শালুককে দিলো।একা বাসায় থাকলে শালুকের মন খারাপ হবে বেশি। ত্নুও ফোনে গান শুনে,নাটক দেখে কিছুটা সময় কাটাতে পারবে।বাটন ফোনে নিজে সিমকার্ড লাগিয়ে নিলো।তারপর গেলো কিচেন রুমে রান্না করার জন্য। চাল,ডাল,আলু,মুরগির মাংস মিক্স করে খিচুড়ি রান্না করে নিলো ধ্রুব।
অবাক হয়ে শালুক জিজ্ঞেস করলো, “তুমি রান্না ও জানো?”
ধ্রুব হেসে বললো, “হ্যাঁ,বিয়ের পর বউয়ের কষ্ট কমানোর জন্য শিখে রেখেছিলাম।এখন কাজে লেগে গেলো। না জানলে এখন কেমন বিপদ হতো বল তো!
তুই তো রান্না করতে পারতি না।এজন্য সব কাজ শিখে রাখা উচিত। কোনো কাজ ছোট নয়,তুচ্ছ নয়।”
খিচুড়ি খেতে বসে শালুক টের পেলো ধ্রুব ভীষণ ভালো রান্না করে। কি সুন্দর ঝরঝরা খিচুড়ি। তৃপ্তি নিয়ে শালুক খাবার খেলো।
টোনাটুনির সংসার শুরু হলো এভাবেই।
চলবে……
রাজিয়া রহমান