শারীরিক সম্পর্ক- তুমি আমার ভালোবাসা !! Part- 06
মৃন্ময়ের সাথে রিমির সম্পর্কটা বেশ কয়েকদিন ভালো চললেও ইদানীং ভালো যাচ্ছে না। রিমি চাইলেও মৃন্ময় কেন জানি সম্পর্কটা আগের মত করতে পারছেনা। মৃন্ময়ের সবসময়ই মনে হয় কি যেন একটা মিসিং কি যেন মিসিং! কিন্তু কি সেটা বুঝতে সময় লাগলেও বাকি রয় নি! মিসিং বিষয়টা প্রিয়াকে নিয়ে। না চাইতেও প্রিয়াকে নিয়ে কাটানোর স্বল্প স্মৃতিগুলোই বারবার পিছু ডাকে মৃন্ময়কে। মনের বিরুদ্ধে সম্পর্কও আর এগিয়ে নিয়ে যেতে পারছেনা। এটা যেন এক নিদারুণ কষ্ট। এভাবেই ইচ্ছের বিরুদ্ধে ইগনোর করে চলছে রিমিকে। রাস্তার ফুটপাত ধরে হাঁটছিল রিমি আর মৃন্ময়। মৃন্ময় অন্য মনষ্ক হয়ে হাঁটছিল। রিমি হাত ধরে বললো,
“কি ভাবছো?”
“কই কিছু না তো।”
“সত্যিই কিছু ভাবছো না?”
“না।”
তারপর কিছুক্ষণ নিরবতা। হাঁটতে হাঁটতে একটা লেকের পাশে বেঞ্চিতে বসলো দুজনে। রিমি বললো,
“মৃন্ময়!”
“হু।”
“একটা জিনিস খেয়াল করেছো?”
“কি?”
“তুমি আগের মত নেই।”
“আগের মত বলতে?”
“আগের মত আমায় ভালোবাসো না।”
“আমারও কেন জানি মনে হয় আমি খুব অন্যায় করে ফেলেছি।”
“কার সাথে?”
“প্রিয়ার সাথে।”
“মানে!”
“হ্যাঁ। অনেক বেশি কষ্ট দিয়ে ফেলেছি। জানি ওর সাথে অনেক অল্প সময় কাটিয়েছি কিন্তু এই অল্প সময়েই আমায় অনেক ভালো ভালো মুহুর্ত উপহার দিয়েছে। জানিনা ওর মধ্যে কি এমন ছিল যেটা ওর প্রতি আমায় খুব বেশি টানতো। এখন আমি ফিল করতে পারি যে আসলে আমি ওকে কতটা ভালোবেসে ফেলেছি।”
“মৃন্ময় তুমি কি বলছো এসব?”
“আমি ঠিকই বলছি রিমি। আমি এখন এটা উপলব্ধি করতে পেরেছি, আমি তোমায় নয় প্রিয়াকে ভালোবাসি। হয়তো দেড়ি হয়ে গিয়েছে বুঝতে। তবে আমি চাই সব ভুল বুঝাবুঝি মিটিয়ে ফেলতে।”
“এমনটা করো না মৃন্ময়। আমি তোমাকে ভালোবাসি।”
“কেমন ভালোবেসেছিলে আমায়? আমার সাথে রিলেশন থাকার পরেও তুমি অন্য ছেলের সাথে রিলেশন করেছো। আমার সাথে প্রিয়ার বিয়ে ঠিক হওয়ার পর আমার কাছে কান্নাকাটি করেছো পায়ে ধরে। আমিও ইমোশোনাল হয়ে গিয়েছিলাম তোমার কান্না দেখে। আর তাই এত বড় ভুলটা করে ফেলেছিলাম। আসলে এভাবে মিথ্যা সম্পর্ক আর রাখা সম্ভব না তোমার সাথে। আমায় ক্ষমা করো।”
এতটুকুনি বলেই মৃন্ময় উঠে দাঁড়ায়। হাঁটা শুরু করে। গন্তব্য প্রিয়ার বাড়ি। পেছন থেকে রিমি অনেকবার ডাকা সত্ত্বেও পিছু ফিরে তাকায়নি মৃন্ময়।
প্রিয়ার বাসায় গিয়ে দরজায় নক করলো। দরজা খুলে দিলো এক অপরিচিত মহিলা। ভদ্র মহিলা মৃন্ময়কে জিজ্ঞেস করলো,
“কাকে চাই?”
“জ্বী প্রিয়া আছে?”
“প্রিয়া কে?”
“ওরা তো এই বাসাতেই থাকতো।”
“স্যরি চিনিনা আমি। আমরা এই বাড়িতে নতুন এসেছি।”
“তার মানে ওরা বাড়ি ছেড়ে চলে গিয়েছে?”
“হয়তো।”
“আচ্ছা ঠিক আছে। ধন্যবাদ।”
মৃন্ময় বাড়ি থেকে বেড়িয়ে এলো। ভাবতে লাগলো এই অল্প সময়ে বাড়িও চেঞ্জ করে ফেললো। এখন কার থেকে প্রিয়ার খবর নিবে। বাড়ির সামনে মস্ত বড় একটা মাঠ আছে। বিভিন্ন খেলাধুলা কিংবা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এখানেই হয়। বিকেলের দিকে ছোট ছোট বাচ্চারা খেলাধুলা করে। এদের মধ্যে একজনকে চিনে মৃন্ময়। প্রিয়ার সাথে একদিন কথা বলতে দেখেছিল। মৃন্ময় ছেলেটিকে ডেকে বললো,
“এই পিচ্চি প্রিয়া কোথায় বলতে পারবে?”
“আপুরা তো বাড়ি পাল্টে চলে গেছে।”
“নতুন বাড়ি চিনো?”
“না।”
“তোমাদের বলে যায়নি কোথায় বাড়ি নিয়েছে?”
“না। শুধু যাওয়ার আগে হাতে চকোলেট দিয়ে বলছে ঠিকমত পড়বি। নিজের যত্ন নিবি। ভালো থাকিস।”
মৃন্ময় পিচ্চিটার মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,
“আচ্ছা।”
অজানা এক ভয়ে মৃন্ময়ের বুকে মোচর দিয়ে উঠলো। তবে কি মৃন্ময় হারিয়ে ফেললো প্রিয়াকে! মৃন্ময় ফোন বের করে প্রিয়ার নাম্বার খুঁজতে লাগলো কিন্তু পেলো না। হুট করেই মনে হলো রিমি প্রিয়ার সব ছবি, নাম্বার ডিলিট করে দিয়েছিল। নিজের ওপর নিজেরই রাগ হচ্ছিলো মৃন্ময়ের। ফেসবুকে গিয়ে দেখলো আইডিও ডিএক্টিভ। খুঁজে বের করার সব পথ বন্ধ করে দিয়েছে প্রিয়া।
.
.
অফিস টাইমগুলো এখন ভালোই কাটে প্রিয়ার। আগে খুব বেশি বিরক্ত লাগতো। এখন নতুন নতুন ফ্রেন্ড হয়েছে। কাজ করে, এদের সাথে সময় কাটিয়ে দিব্যি চলে যাচ্ছে সময়। কিন্তু বসের মুখোমুখি হলেই ঝগড়া হবেই। সেই প্রথমদিনের রাগ এখনো পর্যন্ত ঝাড়ে বস। প্রিয়া শুধু মনে মনে বলে,
“চান্দু একবার শুধু ভালো একটা চাকরী পাই আপনার অফিসকে সালাম দিয়ে বিদায় হবো।”
লাঞ্চ টাইমে ক্যান্টিনে যাচ্ছিলো প্রিয়া। হঠাৎ ই সামনে পড়ে বস। তার পিএ-এর সাথে হেসে কথা বলছে। প্রিয়া সেখানেই থমকে দাঁড়িয়ে ভাবতে থাকে,
“এই গোমড়ামুখো আবার হাসতেও পারে? হ্যাঁ পারেই তো। সবার সাথে হাসতে পারে শুধু আমার সাথেই ঘ্যানঘ্যান করবে। না জানি কোন জন্মের শত্রুতা তার সাথে।”
এরমধ্যে ফাহাদের সাথে প্রিয়ার চোখাচোখি হয়ে যায়। প্রিয়া দ্রুত চোখ সরিয়ে নিয়ে ক্যান্টিনে চলে যায়। সবাই খাবার খাচ্ছে। প্রিয়া গিয়ে পৃথার পাশে বসলো। অফিসে একমাত্র পৃথার সাথেই প্রিয়ার সবচেয়ে ভালো সম্পর্ক। পৃথা মুচকি হেসে বললো,
“লেট হলো কেন সুন্দরী?”
“ঐ একটু হয়ে গেলো আরকি!”
একসাথে লাঞ্চ করার সময় আশেপাশের কলিগদের কথা কানে ভেসে আসছিল। আলোচনার টপিক হচ্ছে ফাহাদ। একেকজন একেক কথা বলছে। কেউ বলছে, বস কত্ত হ্যান্ডসাম!! কত কিউট। আরেকজন বলছে, দেখ গিয়ে গার্লফ্রেন্ডও হয়তো আছে। আরেকজন বলছে, এভাবে বলিস না কষ্ট লাগে। সবার কথা শুনে প্রিয়া এটাই ভেবে পায় না ঐ মানুষটার মধ্যে এমন কি আছে যে সব মেয়ে তাকে নিয়ে এমন মাতামাতি করছে। বিরক্তিকর একটা লোক!
রাত ৮টায় অফিস ছুটি হয়ে যায়। ফাহাদ গাড়ি নিয়ে গেটের কাছে যেতেই প্রিয়াকে দেখতে পায়। পেছন থেকে বলে,
“এইযে চাশমিস লেট লতিফ।”
প্রিয়া দাঁত কটমট করতে করতে তাকায়। ঐ একটা দিনের মাশুল প্রতিটা মুহুর্তে দিতে হচ্ছে প্রিয়ার। প্রিয়া বিড়বিড় করে বললো,
“আল্লাহ্ কোন কুলক্ষণে যে তার সাথে প্রথম সেদিন দেখা হলো।”
“কিছু বললেন?”
“জ্বী না।”
“সবসময়ই কি আপনি লেট লতিফ? সবাই চলে গিয়েছে অথচ আপনি এখনো যাননি।”
“পৃথার জন্য অপেক্ষা করছিলাম স্যার।”
“কোথায় সে?”
“ঐতো আসতেছে।”
“ওকে। সাবধানে যাবেন। রাতে চোখে দেখেন তো?”
প্রিয়ার মেজাজ এবার বিগড়ে যায়। মাছের কাঁটার মত গলায় আটকে আছে। ইচ্ছে থাকলেও তুলে ফেলতে পারছে না। ফাহাদ বিশ্বজয়ের মুচকি হেসে বললো,
“আসি।”
প্রিয়া অস্পষ্ট স্বরে বলে ফেললো,
“আপনি গেলেই আমি বাঁচি শালা।”
তখনই দুম করে ফাহাদ গাড়ি থামিয়ে দিলো। প্রিয়ার জান তখন যায় যায় অবস্থা। না জানি, কথাটা শুনে ফেলেছে….
চলবে….