লাভার নাকি ভিলেন ! সিজনঃ ২ !! Part- 07
নিরবঃ সবাই শোনো মেঘলা আমার বন্ধুর বোন তাই ওর সাথে কেউ খারাপ ব্যবহার করবা না ঠিক আছে?সবাইকে বলে দিয়েছি এখন আর তোমাকে কেউ কিছু বলবে না. এবার হাত টা ছাড়ো মেঘলা ভয় পাওয়ার দরকার নেই বলে নিরব বাইরে চলে গেল।
নিরব যাওয়ার সাথে সাথেই মেঘলা বিছানার উপড়ে দাঁড়িয়ে বলল এই যে জল্লাদ টাইপের লোকজন সবাই শোন এখানে এখন থেকে কোন রকম মারামারি হবে না সবাই সবাইকে ভালবাসবে।আমি খুবি লক্ষি মেয়ে তাই এসব মারামারি পছন্দ করি না।আমার কথা না মানলে সবাইকে আমি বিদায় করে দিব।
যেহেতু নিরব বলে গেছে তাই মেঘলার কথা শুনতে বাধ্য হল সবাই।সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত মেঘলা সবার সাথে গল্প করেছে কে কিভাবে কেন নেশা খাওয়া শিখেছে সব শুনেছে।সবার কষ্টের কথা শুনে মেঘলা সবাইকে শান্তনা দিল এর মধ্যে সবার সাথেই বেশ ভাব জমিয়ে ফেলেছে মেঘলা।
সকাল গড়িয়ে দুপুর হয়ে গেছে নিরব বাসা থেকে লাঞ্চ করে আবার রিহাবে এসেছে।এসে জানতে পারল সবাই খেয়েছে কিন্তু মেঘলা খায় নি।
নিরব নিজেই খাবার নিয়ে মেঘলার কাছে গেল।
নিরবঃ কি হচ্ছে এসব? খাও নি কেন?এক্ষনি খেয়ে নাও।
মেঘলাঃ তুই খা তোর আকাশ কে খাওয়া আমি খাব না।
নিরবঃ এসব বেয়েদবি আমি পছন্দ করি না বলে মেঘলা খাও বলছি।
মেঘলাঃ খাব না বলেছি না? বলেই মেঘলা খাবারটা ফেলে দিল।
নিরবঃ এই কে আছিস আমার লাঠি টা নিয়ে আয় তো…
গার্ডসরা নিরবের অর্ডার শুনেও না শুনার ভান করল কারন এতক্ষনে মেঘলা সবার মন জয় করে নিয়েছে তাই গার্ডসারও চায় না মেঘলা মার খাক।
নিরব মনে করল সবাই হত কাজে ব্যাস্ত তাই নিজেই লাঠি আনতে গেল।
একজন গার্ডস বলল খাবার টা কেন ফেললে এখন তো মার খেতে হবে।
মেঘলাঃ সত্যি মারবে
গার্ডঃ হ্যা
মেঘলাঃ তাহলে আমি লুকিয়ে পড়ি বলে চোখের পলকেই মেঘলা ভেনিস হয়ে গেল।
নিরব একটা লাঠি নিয়ে এসে বলল মেয়েটা কোথায়?
কারো মুখে কথা নেই একজন বলল ছোট মেয়ে বুঝেনি স্যার ক্ষমা করে দিন না।
নিরবঃ আগে বলো মেয়েটা কোথায়?
না কারো মুখে কোন কথা নেই।নিরব সারা ঘরে চোখ ঘুরিয়ে দেখে অবাক হল কারন মেঘলা কোথাও নেই।কিছুক্ষন খোঁজাখুঁজির পর
হটাৎ তার চোখ পড়ল বেডের নিচ থেকে ইঁদুরের বাচ্চার মত মুখ বের করে আছে মেঘলা।
নিরবঃ ইয়াক ছি ছি ছি তুমি বেডের নিচে কি করছো ? তাড়াতাড়ি বের হও। এটা কেমন মেয়ে বাবা ঘৃনা বলতে কিছু নেই।
মেঘলাঃ মার খাওয়ার চেয়ে এখানে থাকা অনেক ভাল
নিরবঃ আচ্ছা মারব না বাবা তবুও তুমি বের হও।
মেঘলাঃ ১ সত্যি ২ সত্যি ৩ সত্যি বলুন
নিরব তাই করল।
মেঘলা এবার বেরিয়ে এলো।
নিরবঃ হাজার হোক তুমি নাবিলের বোন না খেয়ে থাকলে খারাপ দেখায় খেয়ে নাও প্লিজ।
মেঘলাঃ খেলে বাড়ি যেতে দিবেন? তাহলে খাব।
নিরবঃ খাবে কি না?ধর্য্যের সীমানা পেরিয়ে যাচ্ছে।
মেঘলা কোন উপায় না পেয়ে খেয়ে নিল।খাওয়া দাওয়া শেষে নিরব বলল এখন ঘুমানোর সময় সবাই ঘুমাবে তুমিও ঘুমাও।
মেঘলাঃ নিকুচি করেছে ঘুমের আমি এখন সবার সাথে গল্প করব।
নিরবঃ কি গল্প করবে?
মেঘলাঃ যানেন এদের সবার কত কষ্ট?
নিরবঃ কিসের কষ্ট?
মেঘলাঃ ওই যে মেয়েটাকে দেখছেন ওর না মেয়ে হয়েছিল বলে শ্বশুরবাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে।আর ওই ছেলটা অনেক পড়াশুনা করেও চাকরি পায় নি তাই প্রেমিকাকে বিয়ে করতে পারেনি, বাবা মার মুখেও হাসি ফুটাতে পারেনি তাই যন্ত্রনা ভুলার জন্য নেশা খাওয়া শুরু করেছে।আর এই মেয়েটার প্রেমিক তো অন্য মেয়েকে বিয়ে করে নিয়েছে।সবার কত কষ্ট আর আপনি তবুও ওদের মারেন।
নিরবঃ হুম মারি কারন ওরা একজনের কথা ভাবতে গিয়ে বাকি সবার কথা ভুলে গেছে।
জীবন মানেই সুখ দুঃখ কিন্তু ওরা তা ভুলে গেছে দেখো এই মেয়েটাকা শ্বশুরবাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে কিন্তু ওর বাবা মা তো ওর আশায় বসে আছে ওর মেয়েটা মা মা করে সারাদিন কাঁদে কিন্তু ও সেসব ভুলে গিয়ে নেশার মধ্যে ডুবে গেছে তাই শাস্তি দেওয়া হচ্ছে ও যখন এত কষ্ট থেকে বের হবে বাবা মার কাছে গিয়ে স্বর্গসুখ অনুভব করবে ভুলে যাবে সব দুঃখ তখন সে হবে একজন সুখী মানুষ একজন মমতাময়ি মা।এই নেশা ওকে ওর বাবা মা আর বাচ্চার কাছ থেকে আলাদা করে দিয়েছে তেমনি এরা প্রত্যেকেই যারা আজ আমাকে খারাপ বলছে সবাই একদিন আমাকে ভালবাসবে। কাঁটা দিয়েই কাঁটা তুলতে হয়। ওদের দেখানো হচ্ছে জীবনে কত দুঃখ হতে পাড়ে।যানো এরা যখন এখান থেকে বের হবে তখন অনেক স্ট্রং হতে যাবে তখন যত কষ্টই আসুক আর কখনো কাঁদবেনা।
তুমিও তো ভাবো যে তোমায় কেউ ভালবাসে না তুমি খুব একা কেউ তুমায় আদর করে না আকাশ তোমায় ভালবাসে না তাই না?কথায় কথায় কষ্ট পাও কাঁদো তাই না?
মেঘলা অবাক হয়ে নিরবের কথা শুনল। তারপর বলল আপনি তো সত্যিই একটা ভাল কাজ করছেন। এটা তো খারাপ কাজ না।
যানেন ওদের সব কষ্টের কথা শুনে নিজেকে খুব সুখী মনে হচ্ছে এদের তুলনায় আমার তো কোন কষ্টই নেই।আকাশ আমাকে কত আদর করে সব কিছু থেকে আগলে রাখে। আমি এই পৃথীবির সবচেয়ে সুখি মানুষ আমার সব আছে কোন কিছুর অভাব নেই। তবুও আমি এসব ট্যাবলেট খাই ভাইয়া নিষেধ করার পরেও খাই।
আমি এখানেই থাকব ভাইয়া ওই ওষধটা কখনো খাব না যতদিন না পুরোপুরি ওষধ টাকে ভুলতে পারছি ততদিন আমি এখানে থাকব।
আকাশ যা করেছে আমার ভালর জন্যেই করেছে এখানে না আসলে নিজেকে এতটা সুখি কখনো ভাবতে পারতাম না। আকাশ কে ছেড়ে থাকতে কষ্ট হবে যানি তবুও আমি মন খারাপ করব না। আফসোস একটাই ও যদি আজ না দিয়ে অন্য কোনদিন নিয়ে আসত। আসলে আজ আমাদের ভালবাসার প্রথম ভেলেন্টাইন ডে ছিল।তাই একটু খারাপ লাগছে।
নিরবঃ আজ ভেলেন্টাইন ডে বলেই হয়ত ও তোমাকে আজকেই এখানে এনেছে।
মেঘলাঃ মানে…
নিরবঃ কিছু না লক্ষি মেয়ে এবার ঘুমিয়ে পড়ো প্লিজ…
মেঘলা আর কথা বাড়াল না ঘুমিয়ে গেল…..
।
।
।
।
।
।
।
।
।
।
।
।
।
।
।
।
।
সন্ধ্যা নেমেছে চারদিক অন্ধকার হয়ে গেছে মেঘলার ঘুম আদো আদো ভেংগেছে। মিট মিট করে তাকিয়ে দেখলো চারদিকে যেন মোমবাতি জ্বলছে মেঘলা উঠে বসে দেখল সত্যি সত্যি চারদিকে মোমবাতি জ্বলছে আর মেঝেতে মোমাবাতি দিয়ে লিখা
i love you magla
সাথে গোলাপের পাঁপড়ি ছড়ানো সবার হাতে একটা করে মোমবাতি।মেঘলা ব্যাপারটা পুরো টা বোঝার আগেই কেউ এসে মেঘলার পায়ের কাছে হাঁটু ঘেরে বসে এক গুচ্ছ গোলাপ এগিয়ে দিয়ে বলল,
Haply valentine’s day jan
মেঘলা নিজের অজান্তেই কেঁদে ফেলেছে।
আকাশ দাঁড়িয়ে বলল কি হল আমি কি খুব অন্যায় করে ফেলেছি? কাঁদছিস কেন?
মেঘলা আকাশ কে জড়িয়ে ধরে বলল এই কান্না কষ্টের না আনন্দের জীবনে কখনো এত খুশি হয় নি আজ তুমি আমায় যে খুশি উপহার দিলে সেটা হয়ত কেউ কোনদিন দিতে পারত না।কারন আজ তুমি আমাকে প্রকৃত সুখি করে দিলে।আমি আজ একজন সুখি মানুষ আকাশ। সবার দুঃখ দেখে আমি আমার সব দুঃখ ভুলে গেছি।আমি ধন্য আমার এমন একজন বয়ফ্রেন্ড আছে।
আমি এখানে থাকব জান যতদিন তুমি বলবে ততদিনেই থাকব।
আকাশঃ পাগল হয়ে গেছিস নাকি?
আকাশ যে তার মেঘলাকে ছাড়া থাকতে পারেনা সেটা তুই জানিস না? যে মেঘলাকে তার নিজের বাসায় দিয়ে ১ রাত থাকতে পারিনা তাকে রিহাবে দিয়ে আমি শান্তিতে থাকতে পারব তুই এটা ভাবলি কি করে?
আমি তো তোকে একটু শিক্ষা দিতে চেয়েছিলাম।আর তাছাড়া তোকে মারার জন্য আমি নিজেই যথেষ্ট রিহাবের দরকার নেই। আমি ত নিরবকে বলেও গিয়েছিলাম রাতে এসে তোকে নিয়ে যাব। আমি জানতাম এখানে একবেলা থাকলে তুই আর কোনদিন আর ওই ওষধ টা খাবি না।
মেঘলাঃ হুম কখনো খাব না….যারা আমায় ভালবাসে তাদের কথার অবাধ্য হয়ে তাদের কষ্ট দিব না আমি তাদের ভাল রাখব।
আকাশঃ আজকের দিনে আমার জন্য এর ভাল গিফট আর কি হতে পারে?
মেঘলাঃ আজ তুমিও আমায় বুঝিয়েছো জীবন কতটা সুন্দর এর চেয়ে ভাল ভেলেন্টাইন আর কি হতে পারে?
সবাই হাত তালি দিল মেঘলা আকাশ কে জড়িয়ে ধরল। আকাশ মেঘলার কপালে চুমু খেল
নিরবঃ বেঁচে থাকুক এই ভালবাসা সারাজীবন।
আকাশঃ মেঘলা ওখানে চকলেট আছে সবাইকে দে আর সবার কাছে দোয়া চেয়ে বিদায় নিয়ে নে
বাসায় যেতে হবে নাবিল তোর জন্য অপেক্ষা করছে।
মেঘলা সবাইকে চকলেট দিচ্ছে সবাই খুশিতে মেঘলাকে আশির্বাদ করছে।মেঘলা খুব এখন খুশি মেঘলার হাসিতে যেন মুক্তা ঝরছে…
নিরবঃ সত্যি আকাশ মেঘলা অনেক ভাগ্যবতী এমন বয়ফ্রেন্ড কজনের হয়?এত সুন্দর করে প্রেমিকার ভুল গুলি শুধ্রে দিতে কজম পাড়ে বল?
আজ যদি অন্য সবার মত ওকে নিয়ে পার্কে ঘুরতি ও হয়ত সাময়িক সময়ের জন্য খুশি হত কিন্তু এখন সারাজীবনের জন্য সুখি হয়ে গেল জীবনের মানে যেনে গেল অন্যদের দুঃখ দেখে নিজেকে সুখি বলে আখ্যায়িত করল এতদিন ওর ধারনা ছিল ওকে কেউ ভালবাসে না কিন্তু আজ যানলো ওর সব আছে কোন কিছুর অভাব নেই। আকাশ ওকে কতটা ভালবাসে সেটাও যেনে গেল।
সকালের এত কষ্ট পাওয়ার পর এখনের এই সুখ ওর কাছে আকাশ ছোঁয়া ভালবাসা মনে হচ্ছে।
তুই আসলেই অনেক ভাল প্রেমিক। মেঘলাও হয়ত আজকের পর তোকে ভুল বোঝবে না।
আকাশঃ থাক থাক মেঘলার কথা আর বলিস না বাবা ও যে কি মেয়ে তুই ভাবতেও পারবি না ওকে কলিজা কেটে দিলেও বিশ্বাস করবে না একটু পরেই ভুলে যাবে।এখন এত ভালবাসা দেখছিস না একটু পরেই ভুলে যাবে আকাশ ওকে কত ভালবাসে কোন ছোট কারনেই আকাশ কে পর করে দিবে।
আফসোস আমার ভালবাসা না তো বুঝে মেঘলা আর নাত বুঝে পাঠক সবাই অযথা বকাবকি করে…আসলে সবার মত হতে পারিনি আমি একটু অন্যরকম তাই হয়ত কেউ আমাকে বুঝে না😔
।
।
।
।
চলবে…!!!!