স্যার যখন স্বামী

রোমান্টিক ভালোবাসার গল্প “স্যার যখন স্বামী” পার্ট—৬

আজকে সকালে শাওয়ারে গিয়ে উনি
সেখানে চিল্লিয়ে চিল্লিয়ে গান
গাওয়া শুরু করে দিলেন।
মে ফির ভি তুমকো চাহোঙ্গা
মে ফির ভি তুৃমকো চাহোঙ্গা
ইস চাহাত মে মার যাওয়োঙ্গা
মে ফির ভি তুমকো চাহোঙ্গা।
আর এদিকে উনার গান শুনে আমার কান
ফেটে যাচ্ছে।গান গাইতে না পারলে
এরকমভাবে চিল্লিয়ে গান গেয়ে মানুষের
কান খারাপ করার কি দরকার।দুহাত দিয়ে
কান চেপে ধরলাম।
রোমান্টিক ভালোবাসার গল্প “স্যার যখন স্বামী” পার্ট—৫
কিছুক্ষণ পর উনি বের হয়ে এলেন।
“মেঘ তুমি এখানে (অবাক আর লজ্জা
মুখে)।তুমি না রান্নাঘরে ছিলে?”
“হ্যা…হ্যা…ছিলামতো ঘর গুছানোর জন্য
এখানে এসেছি”
“আচ্ছা,তুমি কিছু শুনো নি তো”
“না কিছু শুনি নি,”
“ও,থ্যাংক গড,”
“তবে হ্যা বাথরুম থেকে কে যেন কাকের
কণ্ঠে কা কা করে গান গাচ্ছিল সেটা
শুনেছি”
“উহুম উহুম”(লজ্জিত হয়ে)।
উনার লজ্জা মাখা মুখ দেখে আমি ফিক
করে হেসে দিলাম।আহারে কি লজ্জা এই
বলে আমার মুখ দুইহাত দিয়ে চেপে
ধরলাম।মেঘ এই কথাটা মনে মনে বলতে
পারতি,জোরে বলার কি দরকার ছিল।
তাড়াতাড়ি করে কেটে পড়ি।না হলে
কপালে দুঃখ আছে।
চলে যাওয়ার জন্য পাটা বাড়ালাম আর
ওমনি উনি আমার হাত ধরে টেনে আমাকে
দেওয়ালের সাথে চেপে ধরলেন।
.
.
“কি বলছিলে জানি?”
“কিছ..ছু.. না…”
“কিছু না,তাই না?শুনো পিচ্চি, ছেলেদের
লজ্জা থাকতে নেই।ছেলেদের মধ্যে
লজ্জা কাজ করলে অনেক কিছু তাকে
মিস করতে হয়।আর আমার গানকে কাকের
সাথে তুলনা করলে?ছেলেদের গানের কণ্ঠ
এরকম একটু হয়ই।এতে লজ্জার কিছু নায়।
তোমার গানের কণ্ঠ মনে হয় যেন
কোকিলের।আজকে বাসায় এসে নি এরপর
তোমার কোকিল কণ্ঠের গান শুনব,
…..
“এরপর আমার কপালে,চোখে ভালবাসার
পরশ দিয়ে দিলে আমি সাথে সাথে চোখ
বন্ধ করে ফেলি।এর কিছুক্ষণ পর চোখ খুলে
দেখি উনি কেমন যেন নেশাকর চোখে
আমার দিকে তাকিয়ে আছেন।উনার চোখ
দুটি কি গভীর।এই চোখের দিকে তাকালে
মনে হয় উনার এই চোখে কারোর জন্য
গভীর প্রেম জমা আছে।
“মেঘ এই যে আমার লক্ষ্মী বউ আমার
চোখে ওমন করে কি দেখছ?”(আমার কানে
খুব নরম কণ্ঠে কথাটা বললেন)
“আপনার চোখ দুইটা এত গভীর কেন?”
“কারোর জন্য জমাট প্রেম এই চোখে
বেধে রেখেছি তাই হয়ত।কেন আমার এই
চোখের প্রেমে পড়ে গেলে নাকি বলে
কানের লতিতে একটা কামড় মারলেন।”
“উহ,এত জোরে কেউ কামড় মারে।”
“বউ এখন তুমি আমার চোখের দিকে
এইভাবে তাকিয়ে থাকলে আমি
ভার্সিটিতে যাব কেমন করে?”
“এই যে আমি আপনাকে আটকিয়ে রাখছি
নাকি?”
“তো আটকিয়ে রেখেছ তোই।এভাবে
তাকালে আমার তোমার সাথে রোমান্স
করতে ইচ্ছে করে” এই বলে উনার মাথার
চুলগুলো ঝাড়লেন। আর এতে আমার মুখে
পানির ছিটা এসে লাগল।
“এটা কি করলেন!”
“ভালবাসার রং মাখিয়ে দিলাম।”(মুচকি
হেসে)
.
.
“আচ্ছা একটা কাজ কর এখন আমার এই নীল
শার্টটা আয়রন করো।আজকে এটাই পড়ে
যাব”
“কালকে না এই শার্ট পড়ে গেলেন”
“হ্যা পড়েছি, কিন্তু এই শার্টের কালারটা
প্রিয়ার অনেক প্রিয় তাই আজকেও পড়ে
যাব”
“তাই না। দাঁড়ান এই শার্ট পড়া আমি বের
করছি”
“মেঘ কি হল,এখনো আয়রন হয় নি আমার
শার্টটা।”
এই যে নেন”
“ওমা এই শার্ট পুড়লো কি করে। এত
কেয়ারলেস কেমন করে হও তুমি।এটা
প্রিয়ার প্রিয় শার্ট ছিল।এখন আমি কি
পড়ে যাব”
“(আহারে,প্রিয়ার প্রিয় শার্ট
যত্তসব,ন্যাকা।)হায় হায় এখন আপনি কি
করবেন(হেসে)।একটা কাজ করুন আজকে
এই কালো শার্টটা পড়ে যান। এই রং
আপনাকে খুব মানায়।আর হ্যা আজকে
থেকে আমি নিজে আপনার জন্য শার্ট
বের করে রাখবো। আপনার পছন্দমতন কোন
শার্ট পড়তে পারবেন না এখন থেকে।ইটস
মাই অর্ডার বুঝতে পারছেন।”
“হ্যা করতে পারি একটা শর্তে”
“কি শর্ত!”
“প্রতিদিন আমার টাইটা বেঁধে দিতে
হবে।”
“আচ্ছা”
“মেঘ তুমি কি এইভাবে দাঁড়িয়ে থাকবে?”
“কেন কি হয়েছে”
“আমি এখন চেঞ্জ করব।অবশ্য তুমি চাইলে
তোমার সামনে চেঞ্জ করতে পারি
আমার কোন সমস্যা নেই”
“এই না,আমি যাচ্ছি,”
.
.
“মেঘ এই মেঘ,”(চিল্লিয়ে)
“এই তো আসছি।কি হয়েছে আবার”
“আরে ভুলে গেলে আমার টাই”
“এখনি লাগবে”
“হ্যা….কারণ আজকে তোমার দেওয়া
শার্টটা পড়েছি তাই আজকেই টাই পড়িয়ে
দিতে হবে”
“কিন্তু….”
“বাটি মেয়েদের এই এক সমস্যা,”
“কি বললেন” (রেগে)
“কয় কিছু না,বলছি এমনেতো পারবে না,
তাই আমার পায়ের উপর উঠে আমাকে টাই
পড়িয়ে দিতে পারো”
…….
“দেখো আমার আবার দেরি হয়ে যাচ্ছে।
তাড়াতাড়ি টাই বেঁধে দাও”
উনার পায়ের উপর পা দিয়ে টাই পড়িয়ে
দিচ্ছি।আর উনি আমাকে জড়িয়ে ধরে
আছেন।
“নেন হয়ে গেছে।এবার আমাকে ছাড়েন”
“এত তাড়াতাড়ি হয়ে গেছে”
“জ্বী,”
“আচ্ছা মেঘ আসি।”
“জ্বী।”
“মেঘ,শুনো তোমাকে না আজকে সুন্দর
লাগছে, আচ্ছা আসি।”
….
“মেঘ আপনি এখনো যান নি।”
“না,মেঘ বলছিলাম যে, আজকে আমি
তাড়াতাড়ি চলে আসবো”
“আচ্ছা,”
“আবারো আপনি,এবার কি বলবেন”
“আমার কানে এসে,আমার বউটাকে
আজকে সত্যিকারের বউ বউ লাগছে।”এই
বলে আমার কপাল,চোখ আর গালে
ভালবাসার স্পর্শ দিয়ে দিলেন।
.
.
রাতে,,
“আরে আপনি গিটার বাজাতে পারেন।”
“হুম, কলেজ লাইফে অনেক বাজিয়েছি।
এতদিন এটা লুকিয়ে রেখেছিলাম।আজকে
আবার বের করলাম।সকালের কথা মনে
আছে নিশ্চয়।”
“মানে,,”
“ওমা এত তাড়াতাড়ি ভুলে গেলে,সকালে
বলেছিলাম না তোমার কোকিল কণ্ঠের
গান আজকে শুনব।তাই এই গিটারটা
আজকে বের করেছি।আজকে আমি গিটার
বাজাবো আর তুমি গান গাবে।”
“আমি গান পারি না।”
“সে কথা বললে তো হবে না।গান তো
আজকে তোমাকে গেতেই হবে।আর
তোমার প্রিয় গানটায় গাবে। নাহলে,,”
“নাহলে কি,”
“কালকে সকালে ঘরের সব কাজ তোমাকে
দিয়ে করাবো।আম্মু কোন কাজ করবে না
আর তোমাকে সাহায্যও করবে না।রাজী
আছো,,”
“না, না,আমি গান শুনাচ্ছি।”
“হুম তোমার প্রিয় গানটা শুনাও।”
“আমার প্রিয় গানটা বাদে আরেকটা
গাই।”
“হবে না,যেটা শুনতে চেয়েছি সেটাই
শুনাও।”
বহত পেয়ার কারতিহো তুমকো সানাম(||)
কাসাম চাহে লেলো,কাসাম চাহে
লেলো,
খোদাকি কাসাম।
বহত পেয়ার কারতিহে তুমকো সানাম(||)
সাগারকি বাহুমে মোজিহে জিতনি
হামকোভি তোমসে মুহাব্বাত হে উতনি
কেয়ে বেকারারিনা,কেয়ে
বেকারারিনা
আব হোকি কাম,
বহত পেয়ার কারতিহে তুমকো সানাম(||)
“এখন কাকে ভালবাসো মেঘ,”
“মানে!?”
“আমি বলছি এখন কাকে ভালবাস।তুমি তো
এখন বিবাহিত।আর বিবাহিত মেয়েরা
তাদের স্বামীকেই ভালবাসে।তাহলে
তুমি কি আমাকে…..?আমার জন্য তোমার
মনে কিছু অনুভূত হয়।”
“না,একবার ভালবেসেছি ঠকেছি আর না।
ভালবাসা মানে কারও বিশ্বাস নিয়ে
খেলা তা চুরমার করে ভেঙ্গে ফেলা।
একবার এই ভুল করে অনেক কেঁদেছি,
দ্বিতীয়বার এই ভুল করার সাহস নেই।”
“মেঘ তুমি আগে যাকে ভালবেসেছিলে
তার ভালবাসা মিথ্যা ছিল এ কথা আমি
আগেও বলেছি এর এখনো বলছি।কিন্তু
তাই বলে তোমার জীবনে সত্যিকারের
ভালবাসা যখন তোমাকে হাতছানি দিয়ে
ডাকবে তখন তাকে দূরে সরিয়ে দেওয়ার
কোন মানে হয় না।যখন তোমার মনে হবে
কেউ তোমাকে সত্যিই চায় তাকে
ফিরিয়ে দিও না কারণ সত্যিকারের
ভালবাসা সবার কপালে জোটে না।আর
আজ নাহয় কাল তুমি এই কথাটা মেনে
নিতে বাধ্য হবে যে তুমিও আমাকে
ভালবাসো আর এই কথাটা খুব শীঘ্রই তুমি
নিজের মুখ আমাকে বলবে।আমি সেদিনের
অপেক্ষায় থাকব।”
.
.
শুক্রবার বিকালে,,
“মেঘ এখনো রেডি হওনি?”
“এইতো হব।”
“মেঘ তুমি কি এই থ্রিপীচ পড়ে বের হবে।”
“হ্যা”
“আজকে বরং শাড়ি পড়।নতুন বউ তুমি
সবসময় না পারো মাঝেমাঝে তো শাড়ি
পড়তে পার।”এই বলে আলমারি থেকে নীল
রঙয়ের শাড়ি বের করলেন।আজকে এই
শাড়িটা পড়।
“শুনুন”
“হ্যা বল”,
“আমি শাড়ি পড়তে পারি না।”
“আচ্ছা আমি পড়িয়ে দিচ্ছি।”
“না না চিৎকার করে খাটে উঠে গেলাম।”
ওমা কি হল?”(অবাক হয়ে)
“আমাকে শাড়ি পড়াতে হবে না”
“দেখ একতো শাড়ি পড়তে পারনা।তারউপর
আবার না না করছ।তুমি কি চাও আজকে
তোমাকে নিয়ে ঘুরতে গেলে সবাই বলে
বেড়াক আমি গার্লফ্রেন্ড নিয়ে ঘুরে
বেড়ায়।টিচার মানুষকে নিয়ে যদি সবাই
এরকমভাবে বলে বেড়ায় আমার মান
সম্মান সব যাবে। তুমি শাড়ি পড়লে
তোমাকে বউ বউ লাগবে।তখন আর কেউ
বলবে না আমি গার্লফ্রেন্ড নিয়ে ঘুরে
বেড়াচ্ছি।এমনেতেই সবাই বুঝবে তুমি
আমার বউ।”
“এটা কোন কথা হল।শাড়ি না পড়লে
আমাকে আপনার গার্লফ্রেন্ড আর পড়লে
আমাকে আপনার বউ লাগবে।”
“হ্যা এটা কথা হল।নাও শাড়ি পড়িয়ে
দিচ্ছি”
“না আমাকে শাড়ি পড়ানোর দরকার নাই
আর কোথাও ঘুরতে যাওয়ারও দরকার নাই।”
“কালকে যে আমাকে প্রমিস করছ সেটা
মনে আছে”
“ও আচ্ছা তাইতো বলি এত প্রমিস প্রমিস
করার কথা কেন বলছেন।হায় আল্লাহ
প্রমিস করতে যে কেন গেলাম।এইভাবে
যে আমাকে ব্ল্যাকমেইল করবেন ভাবতেও
পারিনি।”
“কি হল কি ভাবছ।”
“না কিছু না।”
“এত ভেবে লাভ নাই।প্রমিস করছ এর
মর্যাদা রাখতেই হবে।”
একবার ভাবলাম শাশুড়িমার কাছে যাব
কিন্তু উনি কেমন করে জানি আমার মনের
কথা ধরে ফেললেন।
“আমার মা এর কাছে গেলে যেতে পারো।
কিন্তু তিনি ভাববেন উনার এই অকর্মণ্য
মেয়ে রান্না জানে না আবার শাড়িও
পড়তে পারেনা।তখন উনি তোমাকে নিয়ে
কি ভাববেন।”
আসলেইতো স্যার ঠিক বলছেন।ভেবে
দেখলাম শাশুড়ি মার কাছে গেলে আমার
মান সম্মান যাবে। উনাকে এই ব্যাপার
বুঝতে দেওয়া যাবে না।তাই একপ্রকার
বাধ্য হয়েই প্রমিসটা রাখতে হল আর
শাড়ি পড়তে হল। উনি আমাকে সুন্দর করে
শাড়ি পড়িয়ে দিলেন।নিজ হাতে আমাকে
সাজিয়ে দিলেন।
“এইতো এখন না তোমাকে আমার বউ বউ
লাগছে।এখন থেকে শাড়ি পড়ার চেষ্টা
করবে।”
.
.
পুরোটা বিকাল উনার সাথে ঘুরলাম।
একমুহূর্তের জন্যও উনি আমার হাতটা
ছাড়েননি।আমার হাত ধরে উনি গল্প করে
যাচ্ছেন আর আমি বাধ্য ছাত্রীর মতন
চুপচাপ শুনে যাচ্ছি।
“আচ্ছা মেঘ তোমার কাছে ভালবাসা
মানে কি?”
…..
“থাক আর ভাবতে হবে না।যেদিন এই
প্রশ্নের উত্তর খোঁজে পাবে সেদিন
আমার প্রশ্নের উত্তর দিও।”
আস্তে আস্তে উনার আর আমার সম্পর্ক
বন্ধুত্বপূর্ণ হয়ে উঠল।এখন আর উনাকে
আমার সেই রাক্ষস আর শয়তান মনে হয় না।
আগেতো অনেক বকা দিত কিন্তু এখন
আমার উপর এখন তেমন রাগ দেখায় না আর
বকাও দেয় না।কিন্তু খুব মিস করি
বকাগুলো এখন।শাশুড়ি মা যতদিন এখানে
ছিলেন ততদিন আমাকে রান্নার কাজটা
একটু একটু শিখাত।কিন্ত আমি রান্নায়
এতটা জোর দিতাম না।আমাদের বাসায়
প্রতিদিন ছোট্ট সানজা মণির আনাগোনা
লেগে থাকত আর এটা খাব ঔটা খাব বলে
বায়না ধরত।আমিও এই ছোট্ট মেয়েটার
জন্য রান্না করতাম। নিজ হাতে রান্না
করে ওকে খাওয়াতে ভালো লাগত।আস্তে
আস্তে ওর কারণে আমি এখন মোটামুটি
ভালো রান্না পারি।ইদানীং স্যারের
কাছ থেকে নিজের রান্নার প্রশংসা
শুনার জন্য রান্না করি।এখন সকাল সকাল
ঘুম থেকে উঠি।সকালে নাস্তা
বানানো,উনার শার্ট আয়রন করে
দেওয়া,নিজ হাতে উনার জন্য শার্ট পছন্দ
করে দেওয়া,টাই বেঁধে দেওয়া এইসব করি।
অবসর সময়ে উনি আমাকে গিটার
বাজানো শিখান,কখনো বা উনি গিটার
বাজান আর আমি গান গাই।আর প্রতিদিন
রাতে আমরা বারান্দায় ঝোলানো দুলনায়
বসে ধোয়া উঠা গরম কফি খেতে খেতে
গল্প করি।গল্পে তিনি হচ্ছেন কথার ঝুড়ি।
উনার ছোটবেলার গল্প, বন্ধুবান্ধবদের
গল্প সব বলেন।উনি একবার কথা বলা শুরু
করলে আমি আর নিজের কথাগুলো বলতে
পারিনা।চুপচাপ উনার কথাগুলো শুনতে হয়।
অবশ্য উনার গল্পগুলো শুনতে ভালোই
লাগে।
.
.
কয়েকদিন পর,,,
আজকে ভার্সিটিতে যাব।সকালে উঠে
উনি আমাকে নিয়ে নাস্তা করিয়ে ম্যাথ
করাতে বসলেন।উনার কথামত এখন সবকথা
শুনা আর মানার চেষ্টা করি।শুধুমাত্র
ম্যাথ বাদে।এই ম্যাথে আমার একটুও
মনোযোগ নাই।আমাকে নিয়ে পুরো ১
ঘন্টা ম্যাথ করলেন।১ ঘন্টা পর,,
“মেঘ তোমার হল”
“হ্যা এইতো রেডি।”
“হুম চল।”
উনার সাথে গাড়িতে করে ভার্সিটিতে
গেলাম।
“মেঘ ক্লাস শেষ হলে আমার জন্য
অপেক্ষা করবে।তোমাকে নিয়ে একসাথে
বাসায় যাব।”
“আচ্ছা।”
“মন দিয়ে ক্লাস করবে।”
“জ্বী”
“আচ্ছা তাহলে ক্লাসে যাও। আর শুনো
আজকে তোমার ডিপার্টমেন্টে আমার
ক্লাস নেই। তাসপিয়া বা অন্য কারো
থেকে আমার পড়াগুলো নোট করে নিও।”
“জ্বী”
“শুধু জ্বী,জ্বী এই শব্দ ছাড়া কি আর কিছু
বলতে পারো না।”
…..
“আচ্ছা তাহলে ক্লাসে যাও।”
অনেকদিন পর এখানে আসছি।ক্লাসে
এসে বসামাত্র তাসপিয়া এসে ধরল।
“কিরে বিয়ে করে তোর বান্ধবীকে ভুলে
গেছিস একেবারে।একটাবারও তো খুঁজ
নিলিনা।”
“সরি দোস্ত আসলে সময় হয়ে উঠেনি।
তাছাড়া বিয়ের পর ভুলে মোবাইলটাও
বাবার বাড়ি রেখে আসছি তাই।”
“ও…, তুই আর দুলাভাই কেমন আছিস?”
“ভালো’
“হুম জানতাম সাগর ভাইয়া তোকে সুখে
রাখবে।”
“সাগর!”
“হুম, সাগর ভাইয়াতো। ভালবেসে বিয়ে
করেছিস সুখেতো থাকার কথা”
“তাসপিয়া তোর সাথে পড়ে কথা বলছি।
আমি আজকে ক্লাস করব না।বাসায় চলে
যাব।”
“কিরে মাত্র ১ টা না ক্লাস করলি?
অনেকদিন পর আসছস একটু থেকে যা না।
অনেক কথা আছে তোর সাথে,”
“পরে না হয় তোর কথা শুনবো। খুব খারাপ
লাগছে। বাসায় যাব। ”
.
.
ক্লাস থেকে বেড়িয়ে আসার সময় দেখি
স্যার আর প্রিয়া ম্যাডাম হেসেহেসে
কথা বলছে।আজব এত হেসেহেসে কথা
বলছে কেন?উনারা ক্লাস করাতে আসছেন
নাকি গল্প করতে!অসহ্য।
হেঁটে হেঁটে যাচ্ছি। কোন রিক্সাও
পাচ্ছি না।এমনিতেই তাসপিয়ার কথা
শুনে এবং স্যার আর প্রিয়া ম্যাডামের
হেসেহেসে গল্প করা দেখে অনেক রাগ
উঠে গেছে।আর এখন রিক্সা পাচ্ছি না।
“আরে মেঘ বাসায় যাচ্ছ নাকি?”
“হ্যা”
“ক্লাস না করে বাসায় চলে যাচ্ছ। কিন্তু
এইসময়তো কোন রিক্সা পাবে না।আমিও
আজকে ক্লাস করব না।আমার বাইকে উঠ।
আমি তোমাকে বাসায় পৌঁছে দিচ্ছি।”
“সাব্বির আমার হেল্পের জন্য এগিয়ে
আসছ ধন্যবাদ।সরি তোমার বাইকে যেতে
পারবো না।
কিছুক্ষণ দাঁড়ালে একটা রিক্সা পেয়ে
যাব।”
“তুমি এমন কেন বলত?কোনদিনও আমার
হেল্প নিতে চাও না।আচ্ছা আরেকটা
কথা তুমি এতদিন ধরে ভার্সিটিতে
আসোনি কেন?জানো তোমাকে কতদিন
ধরে দেখি নি।খুব মিস করেছি তোমাকে,”
“আ…সাব্বির ওইতো রিক্সা পেয়ে গেছি।
আসি তাহলে।”
“আচ্ছা।এতকিছু বললাম কোনকিছুর জবাব
না দিয়ে ও চলে গেল।”(চলবে)
খুব খারাপ লাগছে আমার।উনি আমাকে
বিয়ে করলেন অথচ কাউকে বলেননি উনি
বিবাহিত। এখনো সবাই জানে উনি
অবিবাহিত।আর তাসপিয়া সে এখন জানে
সাগরের সাথে আমার বিয়ে হয়েছে।
তাসপিয়ার সাথেতো উনার অনেক
বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক।উনি তাসপিয়াকেও এই
কথাটা বলেননি যে উনার সাথে আমার
বিয়ে হয়েছে।আমি সাগরের স্ত্রী না
আমি উনার স্ত্রী।তাছাড়া প্রিয়া
ম্যাডামের সাথে এত হেসেহেসে কথা
বললেন কয় আমার সাথেতো কখনো
হেসেহেসে কথা বলেননা।
আর সাগর এই অমানুষটার কথাতো আমি
ভুলেই গেছি।বিয়ের পর থেকে স্যার
আমাকে নানা কাজে ব্যস্ত রাখত।প্রথম
প্রথম উনার বকা খেয়ে আমার দিন যেত।
উনার বকা আর আমার কান্নাকাটির
কারণে সাগরের কথা ভাববার সময়
পাইনি।এরপর উনার সাথে আমার ভালো
সম্পর্ক হতে থাকে।তাই এখন সাগরের কথা
আমার মাথায় আসে না।আজকে
ম্যাডামের সাথে উনাকে দেখে খুব
খারাপ লাগছে।উনার পাশে অন্য কোন
মেয়েকে দেখে কেন জানি আমার সহ্য
হচ্ছে না।উনাকে ভালবাসি বলে অন্য
কোন মেয়ে উনার পাশে থাকলে আমার
সহ্য হয়না তা কিন্তু নয়।উনার প্রতি আমার
ভালবাসা না মায়া কাজ করে।আসলে
এতদিন হল মানুষটার সাথে আছি তাই
একটুখানি মায়া,না একটুখানি না
অনেকখানি মায়া জন্মে গেছে।এই মায়া
ভালবাসা কিনা জানি না আর বুঝতে
পারছিনা।ধূর কি আবোলতাবোল বলছি
উনাকে কেন আমি ভালবাসতে যাব।
একবার ভালবেসে কি তোর শিক্ষা হয়নি
মেঘ আবার ভালবাসার ফাঁদে নিজেকে
জড়াচ্ছিস তুই।আচ্ছা উনি কি আমাকে
ভালবাসেন।না তা কেমন করে হয়!কেউ
তোকে দয়া করে বিয়ে করলে,তোর
দেখাশুনা,তোর পড়াশুনোয় সাহায্য করছে
তারমানে এই নয় যে সেও তোকে
ভালবাসে।
.
.
বিকালে,
উনি বাসায় এসে আমাকে দেখামাত্র
একটা থাপ্পড় দিয়ে দিলেন।এখানে
এসেছি অনেকদিন হয়, অনেক ভুল করেছি
আমি কিন্তু সেজন্য উনি কখনো আমাকে
থাপ্পড় দেননি।কিন্তু আজ!
তোমাকে আমি বলেছিলাম না
ভার্সিটির গেইটে দাঁড়িয়ে থাকতে।তুমি
সেখানে না দাঁড়িয়ে চলে আসছ কেন?এই
মেয়ে তোমার কি মনে হয় তোমার পিছনে
আমি সারাদিন পাগলের মতন ঘুরে
বেড়াবো।তোমাকে বিয়ে করে আমি
তোমার দায়িত্ব নিয়েছি বলে আমাকে
চরকার মতন ঘুরাবে?আমাকে তোমার মানুষ
মনে হয়না।তুমি জানো কতক্ষণ ধরে
তোমার জন্য আমি সেখানে অপেক্ষা
করেছিলাম।তোমাকে সেখানে না পেয়ে
আমার মনে কত দুশ্চিন্তা কত আজেবাজে
ভাবনা এসে ঘুরপাক খাচ্ছিল।আমার
সাথে যদি আসার ইচ্ছা না হয় অন্তত
আমাকে একটা মেসেজ দিয়ে দিতে বা
আমাকে বলে আসতে পারতে।তাহলে
আমাকে এত দুশ্চিন্তায়ও থাকতে হতনা।
.
.
দেখো কথায় কথায় একদম কাঁদবেনা।দোষ
করবে অথচ বকা দিতে পারবনা তাই না!
এত ফ্যাসালিটি আমার কাছে পাবেনা।
তোমার কারণে আজকে আমার নিশ্চিত
হার্ট এ্যাটাক এসে যেত।আর এই ন্যাকা
কান্না বন্ধ কর।একতো আমাকে না বলে
বাসায় এসে আমাকে দুশ্চিন্তায় ফেলো
আর এখন আমি যখন বাসায় আসছি তোমার
অপরাধের জন্য তোমাকে কয়েকটা কথা
শুনালাম শুরু হয়ে গেল ন্যাকা কান্না।
তোমার জ্বালাই না বাইরে না বাসায়
শান্তি পাবো,অসহ্য।
.
.
কত কিনা বলে ফেললেন অথচ আমাকে
কিছু বলতে দিলেন না।আমারও যে কিছু
বলার থাকতে পারে তা বুঝতে চাইলেন
না।আসলে উনাকে অনেক জ্বালাচ্ছি।কত
কিনা করলেন আমার জন্য।অথচ আমি
উনাকে শুধু কষ্ট আর দুশ্চিন্তায় ফেলছি।
উনার জন্যও কিছু করা উচিত আমার।
উনাকে মুক্তি দিয়ে দিলে হয়ত উনি
শান্তি পাবেন।কিছুদিন আগে তাই করতে
চেয়েছিলাম।কিন্ত উনার এখানে থেকে
আমার শাশুড়িমা, সানজামণি,আর উনার
বকা,না বকা না এগুলো উনার শাসন
ছিলো সেগুলোকে ভালবেসে ফেলেছি।
উনাকে যদি মুক্ত করে দেই তাহলে সবকিছু
আমি হারিয়ে ফেলবো।আমি এইসব
হারাতে চাইনা।আরও কয়েকটাদিন দেখি
যদি মনে হয় সত্যিই উনার আমার সাথে
থাকতে কষ্ট হচ্ছে তাহলে উনাকে মুক্ত
করে দিবো।জোর করে তো আর সবকিছু হয়
না।
.
.
রাতে উনাকে ডাক দিলাম।কিন্তু খেলেন
না।আমিও আর রাগ করে খায়নি।উনার
এইরকম রেগে যাওয়া,বকা দেওয়াতো
আজকে নতুন নয়।এর আগে অনেকবার এরকম
হয়েছে।প্রথমে রেগে আমাকে বকা
দিবেন এরপর খাবারের সময় হলে বলবেন
খাবো না।কিন্তু পরে নিজে খাবারের
প্লেট এনে আমাকে খাওয়াবেন আর
নিজেও খাবেন।কিন্তু আজকে কি এমনটা
হবে।আজকে যা হল তাতে মনে হচ্ছে উনি
খুব রেগে আছেন।নিজের থেকেও খুব কষ্ট
হচ্ছে।আগে রেগে গেলে বকা দিতেন
কিন্তু আমার গায়ে কোনদিনও হাত
তুলেননি।আর আজকে!কাঁদলে উনি নিজ
হাতে আমার চোখের জল মুছে দিতেন
কিন্তু আজকে তা করেননি।সবকিছু
অস্বাভাবিক লাগছে।
.
.
অনেকক্ষণ হয়ে গেল কিন্তু মনে হচ্ছে
উনার রাগ ভাঙ্গেনি।চুপচাপ করে শুয়ে
আছেন।ঘড়ির সময় আস্তে আস্তে বাড়ছে
কিন্তু উনি…।এত্ত রাগ আমার উপর।ঘুমও
আজকে আসছে না।শুধু এইপাশ ওইপাশ
করছি।প্রতিদিন উনি আমাকে তার বুকে
টেনে নিয়ে ঘুমাতেন কিন্তু আজকে…।কত
সহজে আমার উল্টোপাশ ঘুরে ঘুমাচ্ছে।
অনেকক্ষণ ধরে ফুঁপিয়ে কাঁদলাম।কাঁদতে
কাঁদতে ঘুমিয়ে গেলাম।
.
.
সকালে ঘুম ভেঙ্গে গেল।মনে হচ্ছে শক্ত
কিছুর উপর ঘুমিয়ে আছি আমি।চোখ খুলে
দেখি উনার বুকে শুয়ে আছি।কি করে
সম্ভব এটা।আমি জানি আমি যেভাবে
ঘুমায় ঠিক সেইভাবে ঘুমিয়ে থাকি।এদিক
ওদিক এত নড়চড় করিনা।তাহলে কি করে
উনার বুকে চলে আসলাম।তাহলে কি উনি!
না তা কি করে হয় উনিতো আমার উপরে
অনেক রাগ করে আছেন।হিসাব মিলাতে
পারছি না।কি সুন্দর করে ঘুমাচ্ছেন উনি।
আগে কখনো উনাকে এইভাবে লুকিয়ে
দেখি নি।কেন জানি আজ তার এই
ঘুমমাখা মুখটা দেখতে খুব ভালো লাগছে।
আচ্ছা ঘুম থেকে উঠে যদি উনি আমার
নাম ধরে ডাক না দেন।প্রতিদিনতো সবার
প্রথমে উনি আমার নাম ধরে ডেকে কথা
বলা শুরু করেন।আজ যদি তা না হয়।কিছু
একটা করতে হবে যাতে উনি আমার নাম
ধরে ডাকেন।উনার রাগ যে করেই হোক
ভাঙ্গাতে হবে।
.
.
কিছুক্ষণ পর,
“মেঘ,এই মেঘ”
এইতো আমার প্ল্যান কাজ দিয়েছে।
দৌঁড়ে উনার কাছে গেলাম
“জ্বী,আমাকে ডাকছেন”
“মেঘ আমার চশমাটা কই?”
“কেন আপনার বালিশের পাশে নাই চশমা।
আপনি সবসময়তো ম্যাথ বই পড়া শেষ করে
ঘুমানোর সময় বালিশের পাশে চশমা
রাখেন”
“হ্যা রাখি।অনেকক্ষণ ধরে খুঁজছি পাচ্ছি
না।একটু দেখতো কোথায়”
“এই যে আপনার চশমা,টেবিলে রেখে এখন
আপনি বালিশের পাশে চশমা খুঁজে
বেড়াচ্ছেন।আপনি পারেনও বটে”
“কিন্তু আমিতো টেবিলে চশমা
রাখিনা,সবসময় বালিশের পাশে রাখি।
তাহলে কেমন করে সেখানে গেল এই বলে
আমার দিকে রাগি দৃষ্টিতে তাকিয়ে
আছেন”
“আপনি এইভাবে কেন আমার দিকে
তাকিয়ে আছেন।আপনার কি মনে হয় আমি
চশমাটা টেবিলে রেখেছি”
“এই বাসায় আমি আর তুমি ছাড়া আর কে
আছে শুনি।আমার স্পষ্ট মনে আছে আমি
কালকে চশমাটা কোথায় রাখছি।চশমা
কি হাঁটতে পারে যে বালিশ ছেড়ে
টেবিলে চলে গেছে।নিশ্চয় তুমি এই…”
“আপনি কি এখন এই বিষয় নিয়ে আমার
সাথে ঝগড়া করবেন(শান্ত কণ্ঠে)”
“আমার খেয়ে দেয়ে কাজ নেই না তোমার
সাথে ঝগড়া করব।আমি শুধু এইটুকু বলতে
চাই আমার পারসোনাল জিনিসে আমাকে
না বলে হাত দিবে না আর যেখানে
সেখানে রাখবে না।আমি এইসব পছন্দ
করিনা।”
“আচ্ছা,সরি”
.
.
উনার রাগ এখনো যায় নি।আমি জানি
উনি চশমা ছাড়া বইয়ের লেখা ভালো
করে দেখতে পারেন না তাই ম্যাথ বই
পড়ার সময় চশমা ব্যবহার করেন।আর
ঘুমানোর সময় তা বালিশের পাশে রেখে
ঘুমান।সকালে ম্যাথ বই পড়ার সময় উনার
চশমা লাগবে জানতাম আর সে সুযোগটা
আমি কাজে লাগিয়েছি।আর কিইবা এমন
করলাম চশমাটার জায়গা না শুধু বদল
করছি।ইচ্ছে করে তো আর এইসব করিনি।এই
চশমার অযুহাতে সকালে উনার মুখ থেকে
যেন আমার নামটা শুনি সেইজন্যই না এই
কাজটা করলাম।আচ্ছা এক কাজ করি
উনাকে একটা চিরকুট দেই।
.
.
চিরকুটে সরি লিখে সেখানে সরির ইমুজি
দিয়ে চিরকুটটা টেবিলে রেখে আসলাম।
যদিও জানি আমি কোন দোষ করিনি
কিন্তু তারপরও এই কাজ করলাম।আসলে
মাঝেমাঝে এমন কিছু পরিস্থিতি আসে
তখন যদি নিজের দোষ নাও থাকে তবুও
সরি কথাটা বলতে হয়।নিজের আর
আপনজনের মঙ্গলের জন্য মাঝেমাঝে এই
কাজটা করতে হয়। দেখি উনি কি করেন।
উঁকি দিয়ে দেখছি উনার রিয়েকশন কি
হয়।উনি চিরকুট হাতে পেলেন কিন্তু উনার
ভিতরে কি চলছে তা বুঝতে পারছি না।
নাস্তা করার পর আমাকে নিয়ে পড়তেও
বসলেন না।এখনো রাগ পুষে রেখেছেন।
ঠিকাছে দেখি কতক্ষণ পর্যন্ত উনার এই
রাগ থাকে।
.
.
কেউ যদি আমার সাথে ভার্সিটি যেতে
চায় তাহলে সে যেতে পারে।আমি
১০মিনিট পর রওনা দিবো। ১০মিনিটের
বেশি দেরি হলে আর কারোর জন্য
অপেক্ষা করবো না।এই আমি বলে দিলাম।
কথাটা যে আমাকে বললেন তা বুঝতে
পেরেছি।গেইটের বাইরে এসে দেখি উনি
গাড়িতে বসে আছেন।সকালে যে শার্টটা
পছন্দ করে রেখে দিয়েছিলাম সেটাই
পড়লেন।এটা দেখে খুশি লাগছে।এখন ইচ্ছে
করেই ৫মিনিটের মত বাইরে দাঁড়িয়ে
আছি।চাইছিলাম আমার সাথে কথা বলুক।
কিন্তু কথাতো বললোই না উল্টো জোরে
জোরে গাড়ির হর্ণ বাজিয়ে আমার কান
ঝালাফালা করে ফেলছে।মনে হচ্ছে
গাড়িতে না উঠে এভাবে দাঁড়িয়ে
থাকায় উনি ক্ষেপে উঠেছেন।আমি আর
উনার এক্সট্রা রাগ বাড়াতে চাই না তাই
গাড়ির পিছনের সিটে বসে গেলাম।
আমি এই গাড়ির ড্রাইভার না,আমার
গাড়ির পিছনের সিটে বসে কেউ যদি
ভার্সিটিতে যায় আর তা আমার
স্টুডেন্টরা দেখে ফেললে আমাকে নিয়ে
সবাই হাসাহাসি করবে,আমার মান-সম্মান
যাবে। যদি আমার সাথে ভার্সিটি
যেতেই হয় তাকে আমার সামনের সিটে
এসে বসতে হবে।
চুপচাপ সামনের সিটে এসে পড়লাম।
একবার উনার মুখের দিকে তাকালাম।
কিন্তু উনার কোন পাত্তাই নেই।
.
.
আজকে ১ম ক্লাসটা তন্ময় স্যারের।সেটা
আমার মনে ছিল না।ক্লাসে এসে
বসামাত্র উনি ক্লাসে এসে উপস্থিত।হায়
আল্লাহ আমিতো পড়া নোট করে নেয় নি।
আমি জানি ক্লাসে এসে সবার প্রথমে
আমাকেই দাঁড় করিয়ে প্রশ্ন জিজ্ঞাস
করবে।
“মেঘ,stand up”
…..
“অন্তরক সমীকরণ কি?”
“স্যার,….”
“পড়া শিখো নি”
“মাথা নিচু করে চুপ করে দাঁড়িয়ে আছি”
“তুমি এমন কেন?কতদিন হয়ে যাচ্ছে এই
চ্যাপ্টার ক্লাসে পড়াচ্ছি,এতদিন
সবাইকে সময় দিয়েছি যাতে ভালোভাবে
এই চ্যাপ্টার বুঝতে আর শিখতে পারে।
কালকে তো ক্লাসে এসেছিলে কারোর
কাছ থেকে পড়া নোট করে নিতে
পারোনি।অবশ্য পারবে কেমন করে এক
নাম্বারের ফাঁকিবাজ একটা।বাসায় তো
মনে হয় বই খুলে একটু দেখোও না বইয়ে কি
আছে না আছে।বই খুললে না পড়া পারবে”
রোমান্টিক ভালোবাসার গল্প “স্যার যখন স্বামী” পার্ট—৭