রঙধনু-সিজন

রঙধনু !! Part- 05

চোখ দিয়ে অনর্গল পানি পরছে মোহর..সামনে থাকা ব্যক্তিটির উপস্থিতি তাকে পোড়াচ্ছে নাকি উষ্ণতা দিচ্ছে বুঝতে পারছে না..তিন বছর পর..হ্যা তিন বছর পর স্বশরীরের সে মানুষটাকে দেখছে যে তাকে ফেলে চলে গিয়েছিলো,সেই মানুষটাকে দেখছে যেই মানুষের ছবি দেখে তার সকালটা শুরু এবং রাত টা শেষ হয়..হ্যা তার ফারিশ শুধু তার মনের গহীনে বাস করা সুপ্ত আলোর এক তরফার মাঝে বিরাজমান..

ফ্ল্যাশব্যাক,

দুপুরে সবার সাথে খেতে আসছে যখন ফারিশ কেও কোন কথা তুলেও নি..ফারিশ ও কিছু বলে নি..খাওয়া শেষে ফারিশ ফারিহাকে বললো,

“তোকে খাওয়া শেষে যেন রুমে পাই?” এই বলে ধপাধপ পা ফেলে উপরে চলে গেলো

ফারিহার মুখখানা তখন এরকম”😑”

ফারিহাও প্রস্তুতি নিয়ে খাবার শেষবকরে ফারিশের রুমে গেলো..সুলেমান একটু হলেও আন্দাজ করতে পেরেছে কি বলতে পারে ফারিশ,এভ্রিল জিজ্ঞেস করতে যেয়েও থেমে গেছে।।

“ভাই আসবো” নক করে ফারিহা বললো

“তুই আবার কখন থেকে নক করে আসছিস ঘরে?” ফারিশ ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করলো বইয়ের উপর থেকে মুখ উঠিয়ে।

“এটা ভদ্রতা” মুখ ভেঙচি দিয়ে

ফারিশ কথা বাড়ালো না..সোজা প্রশ্ন করলো,

“আগে ত সবসময় ফ্রি থাকতি??আজ দুইদিন যাবত তুই কি নিয়ে এতো বিজি যে আমার কল, টেক্সট কিছুই উত্তর দেস নাই??” ফারিশ থমথমে গলায় জিজ্ঞেস করলো।।

“এই রে সারছে..কুরবানির জন্য মনে হয় আমারে পাইছে আজ” বিড়বিড় করে বলে উঠলো ফারিহা

“হুয়াই ইউর মাউথ শাট নাও??ফারিশ কিছুটা রেগে বললো

” ইয়ে মানে সত্যি দুইদিন ব্যস্ত ছিলাম ভাই”ফারিহা ভাইয়ের রাগ দেখে বললো,যতই বাঘিনী হয়ে ঘুরে বেড়াক না কেন ফারিশের সামনে বিড়াল হয়ে যায় সে।।

“দেখ আমি কোনকিছু ঘুরিয়ে পেচিয়ে জিজ্ঞেস করবো না..তুই যে ইচ্ছা করে এইসব করছোস আমি জানি সেটা..এখন আমার একটা কথার সোজাসাপটা উত্তর দে” ফারিশ বসা থেকে দাড়িয়ে জিজ্ঞেস করলো

“কি😑” ফারিহা বললো

“এটা কি সেই মেয়ে যার সাথে আমি বিয়েতে আবদ্ধ হয়েছিলাম??” ফারিশের গলা কাপছে বলার সময়

ফারিহা কিছু বলছে না,শুধু একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বললো,

“ডিভোর্স দিতে আসছো ভাবীকে??

এই কথা শুনে ফারিশ শতভাগ সিউর হয়ে গেলো যাকে দুইদিন আগে দেখে দিওয়ানা হয়েছে সে,যার জন্য দুই রাতের ঘুম হারাম হয়েছে..যার জন্য এই মন যেটা কখনো তার অবাধ্য হতো না তার মন এখন ওই মেয়ের এক পলক দেখার জন্য অস্থির হয়ে আছে..এখানে আসার পর তার চোখ শুধু যে তাকেই খুজে বেড়াচ্ছে..

“কোথায় সে?” ফারিশ জিজ্ঞেস করলো

ফারিহা কিছু বললো,শুধু হেসে কিছু কথা জানিয়ে দিলো,

“তুমি যার জন্য তিনটা বছর বাড়ি আসো নি..যার কথা উঠলেই তুমি কথা না বলার হুমকি দিয়েছো??যাকে নববধুর সাজে ফেলে চলে গেছো…তুমি কি ভেবেছো যারে তুমি ঘেন্না করো সে তোমার সামনে এতোদিন আসে নি,আবার এখন আসবে?”

“প্লিজ বোন বল না..কই সে..আমি জানি আমি ভুল করেছি..অনেক বড় ভুল..ওকে দেখার জন্য আমার ভিতরটা হাসফাস করছে..ভিতরটা পুড়ে যাচ্ছে..ওকে না পেলে মনে দম টা এখনি বের হয়ে যাবে মনে হচ্ছে..দুইটা দিন আমি খাইতে, ঘুমাতে কিছু করতে পারি নি..একটা সেকেন্ডের জন্য আমি শান্তি পাই নি..মনে হচ্ছে ওকে না দেখলেই আমি মরে যাবো” ফারিশ বললো

“ভাইয়া মাত্র দুইটা দিন??আর ভাবী তিন বছর..এই তিন বছরে তার ভিতরটা কুড়ে কুড়ে খেয়েছে এইসব স্মৃতি.. তিনটা বছরে সে কাদতে কাদতে প্রতি রাতে ঘুমাইছে..পারবে কি মুছে দিতে??” ফারিহা বিদ্রুপ করে বললো

“আমি জানি না ওর ঘা মুছতে পারবো কি না..বাট আই নিড হার এনিহাও..ও চাক বা না চাক ওই যখন আমার সামনে ধরা দিয়েছে,আমাকে ওর কাছেই থাকতে হবে” ফারিশ চোখমুখ শক্ত করে বললো

“যদি না চায়??যদি যে মুক্তি চায়??যদি সে তোমাকে এখন দেখে মানতে না পারে??যদি সে ভাবে যে আমাকে এতো কষ্ট দিয়েছে তার কাছে কেন যাবো আমি??” ফারিহা অনেক কথা বললো

“ওর চাওয়াটা আমি আগে রাখি নি..এখন রাখবো..ওই চাইলেও ওই আমার আর ওই না চাইলেও ওই আমার..আই নিড হার বাই এনি কস্ট” ফারিশ চোখমুখ শক্ত করে বললো

ফারিহা কি বলবে বুঝে উঠে পারছে না,সে অন্তত এতোটুক বুঝতে পারছে তার ভাই এখন মোহর জন্য পাগল..মোহকে পাওয়ার আকুল আবেদন দুই চোখ জুড়ে..

এদিকে বিকাল হয়ে গেছে মোহ বাড়ি আসে নি এখনো..সন্ধ্যার আগ দিয়ে বাড়ি আসলো মোহ..বাড়ি এসে এসে গোসলে ঢুকে গেছে সে..বাহিরে যে গরম পরেছে..

এদিকে ফারিশের বুক ধকধক করছে মোহর বাড়ি আসছে যখন..অবশ্য খবরটা ফারিহাই নিজেই দিয়েছে..ফারিশ ফারিহার রুমে যেয়ে দেখলো মোহ গোসলে,ওয়াশরুম থেকে পানির আওয়াজ আসছে..

সোফাই পা তুলে মোহর ওয়েট করছে..এদিকে আধাঘন্টা পর মোহ গোসল সেরে সালোয়ার কামিজ পরে বের হয়ে আসছে..ওড়না তার বাইরে..ভিজা চুল গলাতে লেপ্টে আসছে..তোয়ালে দিয়ে চুল মুছতে মুছতে বের হচ্ছে।।

মোহর বের হয়ে যখন আসলো…সামনে বসে থাকা মানুষটার উপরের যখন চোখ গেলো সে ভূত দেখার মতো চমকে উঠলো..শরীর টা মনে হচ্ছে অসাড় হয়ে আসছে..দাড়িয়ে থাকার ভারসাম্য টা হারিয়ে ফেলছে..

নাহ আর পারছে না সে,দৌড়ে যেয়ে ওয়াশ্রুমের ভিতরে যেয়ে দরজা লক করে ডুকরে কেদে উঠলো..

এতোক্ষন ফারিশ মোহ্র দিকে এক দৃষ্টিতে নেশাভরা চোখে তাকিয়ে ছিলো..কোন মেয়ের নেশা এতোটা গ্রাস করে নি,যতটা এক পলকে সে করে গেলো..গলায় পেচানো ভিজা চুল..উফফ…লম্বা এক নিঃশ্বাস নিয়ে বললো,”আমার বউ”

বর্তমান,

ওয়াশরুমের দরজাতে ধপাধপ আওয়াজ পরছে..

“ওপেন দ্যা ডোর ড্যাম ইট..ভিতরে কি করছো তুমি??” ফারিশ চিল্লিয়ে বের হতে মোহকে

কিন্তু মোহ ওয়াশরুমে কেদে বেহুশ হয়ে পরেছে..লাস্টে যখন কোন রেসপন্স না পেলো ফারিশ,তার ভিতরটা অজানা ভয়ে নাড়া দিলো..ধাক্কাধাক্কির আওয়াজে উপরে সবাই এক দৌড়ে আসলো..

দরজা যখন ভেঙে ফেলা হলো..ফারিশ ভিতরে যেয়ে দেখলো মোহ ফ্লোরে বেহুশ হয়ে পরে আছে..

তার জানটা মনে হচ্ছে বের হয়ে গেলো..ফারিশ দ্রুত পদে কোলে তুলে এনে বেডে শুইয়ে দিলো..

এভ্রিল নিষেধ করতে গেলে সুলেমান বাধা দেয়..

“যার দায়িত্ব তাকে করতে দাও এখন..পুরোনো কিছু ধরে থাকতে বর্তমানটা আমাদের নষ্ট হবে” সুলেমান এভ্রিলের হাত ধরে বললো

চলবে🍁

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *