যদি তুমি জানতে

যদি তুমি জানতে !! Part- 08

লাল মরিচের মশলা মাখা মোমেন্টে ব্যাঘাত ঘটার পর থেকে ভাইয়া রুম থেকে বের হচ্ছেনা। এদিকে আপু ভাইয়ার উটকো উক্তির সারসংক্ষেপ মিলানোর জন্য লাগাতার দরজা ধাক্কিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু ফলাফল গোল্লা!!

আজ খালামনি মেজো খালামনির বাসায় থাকবেন। এখানে আসবেন না। মেজো খালামনির বড় ছেলে, দিপ ভাইয়ার বিয়ে পাকাপাকি হয়ে গিয়েছে। আমি, বড় আপু আর সাঈদ ভাই কাল পরশু যাব বিয়ের আমেজে মাতামাতি করার জন্য। আহহ্!!! কতদিন পর একটা বিয়ের দাওয়াত পেলামম!! জমিয়ে মজা করব!!

কিন্তু এদিকে আপু ব্যর্থ প্রেমের, প্রেমিকার মতো দরজা ধাক্কানো শেষে রুমে চলে গিয়েছে। আহারে !! বেচারা আপু।ওমন মুহুর্তে আসতে নেই তা জানতে না।।

হঠাৎ দেখি ফোনে একটা মেসেজের টিউন বেজে উঠল। ফোন হাতে নিয়ে দেখি একটা চেনাচেনা নাম্বার থেকে মেসেজ এসেছে। ঠিক এরকম-“ওই বেক্কল রুমে আয় ! আমার ব্যান্ডেজ খুলে দিয়ে যা।”

যা বুঝার সব বুঝা হয়ে গেছে, মেসেজ কে দিতে পারে।। উনার নাম্বার আমার নতুন ফোনে সেভ নেই। তাই নাম্বারটা সেভ করলাম। বলা যায় না আবার কোন না কোন মসিবতে পড়ি।। ফোন রেখে ভাইয়ার রুমের দিকে যেয়ে দেখি দরজা এখনো লাগানো। দরজা ধাক্কালাম। খুললো না। আরো কয়েকবার ধাক্কা দিয়ে আমার রুমে এসে বসলাম। বসা মাত্রই ভাইয়া মেসেজ দিয়ে বললেন- “আমার রুমে আসার রাস্তা দুইটা। আই হোপ দ্বিতীয় রাস্তা টা জানোস।”

দরজা ছাড়া দ্বিতীয় রাস্তা কোনটা আবার? জানালা টু বারান্দার রাস্তা নয়তো!! ও আল্লাহ !! এ কোন পাপের খেসারত দিতেছি??? এখন ওই দ্বিতীয় রাস্তা দিয়ে গেলে নির্ঘাত যদি নিচে পড়ে যাই!! আমি শেষ!!!

আমি ভাইকে করলাম। কল দিতেই দেখি রিসিভ। কিন্তু ওপাশ থেকে কোনো আওয়াজ আসছে না। শেষে আমিই বলতে লাগলাম- “মিস্টার জুনায়েদ সাঈদ! আমি আপনার জন্য দ্বিতীয় রাস্তা দিয়ে আসতে পারব না। ভালোয় ভালোয় বলছি দরজা খুলে দিন। আমি ব্যান্ডেজ করে দেই।”

ওমা! কে শুনে কার কথা!! কোনো জবাব না দিয়ে ফোন টুট করে কেটে দিল। উনি না দরজা খুললো, না ব্যান্ডেজ করতে দিল।আমিও ঘাপটি মেরে বসে থাকলাম। যাবো না। যত্তসব!!

.

.

রাতে বড় আপু আর আমি ভাইকে ছাড়া একাই ডিনার করে নিলাম। এমনেই ভয়ডরে থাকি কখন জানি ওই অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি এসে পড়ে। তার মধ্যে সাঈদ ভাইয়ের এসব জ্বালা। দরকার নেই উনাকে এতো ঘাড়ে চড়ানোর !! ফালতু লোক !

খাওয়া শেষে আপু আমি রুমে চলে গেলাম।আজ আমি একা ঘুমাতে গেলাম। আপুর শোয়া ভালো না। ঘুমের মধ্যে পা তুলে দেয়।এজন্য আমরা দুবোন আলাদা ঘুমাই।কাল রাতে না পারতে ঘুমিয়ে ছিলাম।

আপু তার রুমের দরজা আটকিয়ে ঘুমাতে গেল। কিন্তু আমি আমার রুমের দরজা খোলাই রেখেছি। লাইট জালিয়ে রেখেছি।ইশশ! দুপুরের পর থেকে ভাইয়া কিছু খাননি। না খেলে ওষুধও নিতে পারবেন না।ধুর! তাতে আমার কি! যার টা সে বুঝুক।

গায়ে কাথা দিয়ে ঘুমাতে নিলে মনে হয় দরজার ওখানে কেউ দাড়িয়ে আছে। মনের ভুল ভেবে আবারও গায়ে কাথা টেনে শুতে নিলে পায়ের ‘ঠক ঠক ঠক’ আওয়াজ পাই। কেউ এদিকে এগিয়ে আসছে! হঠাৎ লাইট টাও অন-অফ করতে লাগল। রুমের আশপাশে তাকিয়ে দেখতে মনে হলো বিপদ হয়তো আবারও হানা দিচ্ছে। কাথা ফেলে বিছানা থেকে নেমে দাড়াতেই লাইট একদম অফ! ভয় আরও তীব্র ভেবে গ্রাস করলো!ততক্ষনে সে দরজা দিয়ে কেউ রুমে ঢুকে আমার দিকে এগিয়ে আসছে। বাইরের জোৎস্না আলোতে বোঝা যাচ্ছে সে বেশ লম্বা। হুডি দেয়া কালো পোশাক পরা। মাথা থেকে পা পযর্ন্ত ঢাকা। হাতে সাদা গ্লাভস। মুখে মাষ্ক। সাদা গ্লাভসের কারণে বাইরে থেকে আসা জোৎস্না আলোতে ঝকঝক করছে। ওই অবস্থা ভয়ানক লাগছে !!!

চোখ গেল তার হাতে থাকা ধারালো ছুড়ির দিকে। খুব চকচক করছে। ভয়ে ভেতরটা কামড়ে এলো! সে এক পা করে ‘ঠক ঠক’ শব্দে এগুচ্ছে। রুম থেকে হাজারটা চিৎকার দিলেও যে আপু শুনবে না তা জানি।।।সে এতক্ষনে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন।। আর অন্যদিকে সাঈদ ভাই দৌড়ে আসলেও তার আগে এখানে সেই অঘটন ঘটে যাবে।

পিছাতে লাগলাম আমি। আর রুমের চারপাশে চোখ বুলাতে লাগলাম। উপায় ঠাওরাচ্ছি আত্মরক্ষার জন্য! দরজা বরাবর সে অবস্থান করছে। ওখান দিয়ে চাইলেও যাওয়ার উপায় নেই। এমন ভীতিকর অবস্থায় সে পৈশাচিক হাসি হাসছে। মূহুর্তটা খুবই ভয়ংকর। তার হাসির আওয়াজে আমার ভেতরটা শুকিয়ে হাহাকার। হৃদস্পন্দের বেগ যেন ঘড়ির কাটাকেও হার মানিয়ে ছুটছে। এত জোরে জোরে ধুকপুক করছে যে এখনই হৃদপিন্ডটা আমার বেকাবু হয়ে ছিড়ে পড়বে। কপাল বেয়ে গড়গড় করে ঘাম ঝড়ছে। সে আমার থেকে আর ছ’হাত দূরে। হঠাৎ সে ওখানেই দাড়িয়ে গেল। মুখ দিয়ে একটা শিষ বাজাল। বাজাতেই কিছু একটা জিনিস ধপধপ করে লাফিয়ে রুমে প্রবেশ করল। জোৎস্না আলো জিনিসটার উপরেও গেল, দেখা যায় সেটা সেই কিউট নীলনীল চোখওয়ালা বিড়াল। দাড়িয়ে থাকা অজ্ঞাত ব্যক্তির পাশে বিড়ালটা পরমে তার গা ঘষছে। কালো হুডির ব্যক্তিটি একহাতে বিড়াল টিকে উপরে তুলে অন্যহাতের ছুড়ি নিয়ে চোখের সামনেই ক্যাচং করে তার গলা বরাবর বসিয়ে দিল। বিভৎস এক অবস্থা ! বিড়ালটা তার হাতে থাকা অবস্থায় মৃত্যুযন্ত্রণায় কাতরাতে লাগল। একপর্যায়ে এতো সুন্দর বিড়ালটাকে আমার দিকে ছুড়ে ফেলে দিল। আমি ঘটনার আকষ্মিকতায় নিচে গুজে বসলে বিড়ালটা আমাকে ওভার করে মাথার উপর দিয়ে যেয়ে জানালা দিয়ে নিচে পড়ে যায়। আমি সাথেসাথে উঠে দাড়িয়ে জানালা দিয়ে তাকিয়ে দেখি নিচে বিড়ালটা পড়ে গড়াগড়ি খাচ্ছে। সে আবারও পৈশাচিক হাসি দিচ্ছে। হাত পা নিজের অজান্তেই কাপতে থাকে।ভেতরে ঘনঘন ঢোক পড়ছে। গলা দিয়ে কথা বা শব্দ করার বিন্দুমাত্র জো নেই। সে আবারও আমার দিকে ধীরে ধীরে পা ফেলে এগুচ্ছে।

আমি জানালার ওখানে ঠেকে গেলে উপায় হিসেবে মাথায় একটাই জিনিস ঘুরপাক খেতে থাকে। সাঈদ ভাইয়ের
“দ্বিতীয় রাস্তা “!! আমি ঘটনাক্রমে ঝাপ মেরে জানালা ধরে ঝুলে শরীরের শেষটুকু জোর খাটিয়ে সাঈদ ভাইয়ের বারান্দা বরাবর পা ফেলি। ভাগ্যের খেল আমার সাথ দিল!! বারান্দায় পা রাখতেই জানালা থেকে একহাত ছেড়ে বারান্দার দিকে খিচে রেলিং ধরি। এখন শুধু আরেকটা হাত দিয়ে বারান্দার রেলিং ধরা বাকি। ওমনেই আরেকহাত জানালা থেকে ছেড়ে বারান্দার দিকে বাড়াব তার আগেই সেই ভয়ংকর ব্যাক্তি আমার জানালায় ধরা হাতে ছুড়ি বসিয়ে দেয়। আঘাতে হাত থেকে রক্ত গড়াছে। প্রচণ্ড যন্ত্রণা করছে।কিন্তু তবুও হাত ছাড়ছি না। জানালা থেকে হাত সরালে উচু থেকে পড়ে থেতলে যাব। হাতের ব্যাথায় চোখের জলের বাধ মানছে না। অঝোরে জল পড়ছে চোখ থেকে।। জানালায় তাকাতেই দেখি সে তার দুহাত দিয়ে ছুড়ি ধরে উচু করে আমার রক্ত ঝরা হাতের ওপর নিশানা করছে। আর কয়েক সেকেন্ড লেট করলে হাত ভেদ করে ছুড়ি ঢুকে যাবে। ফলাফল নিচে পড়ে মৃত্যু।। ছুড়ির ওমন নিশানা দেখে চোখমুখ খিচে জোর খাটিয়ে খিচে বারান্দা বরাবর রেলিং ধরে ফেলি।।

দুহাতে ভর করে রেলিংয়ে দিঙিয়ে বারান্দায় ঢুকি। আবার পিছন ফেরে রুমের জানালায় চোখ নিয়ে তাকাতেই দেখি সেই মুখোশধারী নিশানা অনুযায়ী ছুড়ি বসিয়েছে ঠিকি। কিন্তু সে ব্যর্থ!! মাত্র কয়েক সেকেন্ডের ব্যবধানে আজ আমি বারান্দায় !! নাহলে….

.

বারান্দার দরজা লাগানো। ধাম ধাম করে দুহাত দিয়ে ধাক্কিয়ে যাচ্ছি। কান্না থামছেনা। হাত বেয়ে টপটপ করে রক্ত পড়ছে। চোখের পানি হাত দিয়ে মুছলে আবারও চোখ ভরে আসছে। নিজের এতো কাছ থেকে এমন ভয়ানক দৃশ্য কখনো দেখিনি। সেই মুহুর্তের কথা মনে পড়তেই ধাক্কার জোর আরো বাড়িয়ে দিলাম।আবার ধাক্কা দিতেই সাঈদ ভাই দরজা খুলে যেন ভূত দেখার মতো তাকিয়ে রইলেন। ভাইয়া কিছু বলতে যাবে তার আগেই ভাইয়াকে শক্ত করে জাপটে ধরি। দুহাতে এতো জোরে জাপটে ধরেছি যে ভাইয়া বারবার প্রশ্ন করছেন কি হয়েছে, এতো ভয় কেন পেয়েছি, এভাবে কেন আসলাম।।

ভাইয়া আলতো করে ছেড়ে দিতে চাইলে আমি আরো শক্ত করে চেপে ধরি। আমি ছাড়ছিনা, কোনো কথার উত্তরও দিচ্ছিনা। শুধু বেগতিক কেদেঁ যাচ্ছি। সাঈদ ভাইয়াও জড়িয়ে ধরে মাথায় হাত বুলিয়ে বুলিয়ে বললেন-

-নাবিলা, ঠান্ডা হ। কান্না করিস না। কী হয়েছে? এই রাতে এভাবে আসলি কেন? কাম ডাউন, নাবিলা প্লিজ!!
-…………………
-সর গড সেক নাবিলা, কাম ডাউন। কী হয়েছে? আমি আছি তো প্লিজ সব খুলে বল।প্লিজ।।
-…………………..
-আচ্ছা তোর বলতে হবেনা। আমি জিজ্ঞেস করছি। তুই শুধু “হ্যাঁ না” নাতে এ্যান্সার দিবি। শান্ত হ
-……………………
-চুপ থাকিস না রে !! এমনেই তোর কান্না দেখে টেনশন হচ্ছে।। তুই খারাপ স্বপ্ন দেখেছিস?
-….না
– তাহলে? খারাপ কিছু হয়েছে?
-…………………….
-তোর ওই অজ্ঞাত ব্যক্তি এসেছিল???

ভাইয়ার মুখে প্রশ্ন শুনে আর জবাব দিতে পারলাম না। হুহু করে কেদে দিলাম….

এ আবার কেমন আদর?
-লাল মরিচের মশলা মাখা আদর ! বেশশরম! ফালতু লোক কোথাকার!
-ঝাল ছাড়া আদর। ইটস টেষ্টলেস নাবিলা।
-স্যাভনল কি ঢেলে দিব! আমার তো মনে হয় ঢালার পরেই ঝাল বুঝবা!
-নাবিলা তুই কার সাথে রাগ দেখাচ্ছিস জানিস তো?
-হ্যাঁ ! এক কুলাঙ্গার সাথে!

যা তা বকতেই ব্যান্ডেজ করা ডান দিয়ে খপ করে আমার মুখ চেপে ধরলেন সাঈদ ভাই। আমি অবাক! মুখ চেপে ধরেই ভাই টান মেরে তার কোলে বসিয়ে নিলেন।এখনো মুখ চেপে রেখেছেন। ছাড়েননি। ডান হাতের ব্যান্ডেজটা আমার ঠোঁট ছুচ্ছে।হঠাৎ সাঈদ ভাই বললেন-

-নাবিলা তুই এতো সুন্দর রাগ দেখাতে পারিস,তা আমার জানা ছিলো না।
-উম…উম..
-আহ্, নড়িস না। হাতে ব্যাথা পাচ্ছি। ছেড়ে দিচ্ছি। ওয়েট।

বলেই মুখ থেকে হাত সরিয়ে নিলেন সাঈদ ভাই। কিন্তু আমাকে তার কোল থেকে উঠতে দেননি। ভাই যে নিত্য নতুন রুপ দেখিয়ে আশপাশের কোনো এক মানুষ কে পাগল করে চলছেন, তা কি তিনি জানেন না!! ভাই তুমি যে খুন করে চলছো !! তা কি জানো!!

বাতাসের বেগ কিছুটা বেড়েছে তাতে আমার চুলগুলো এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে।সামনে আসা চুলগুলো মুখের ওপর থেকে সরিয়ে আমার কানের পিছনে গুজে দিলেন। আর বললেন-

-এই জুনায়েদ সাঈদকে কেউ এতো অকথ্য ভাষায় বকেনি। এমনকি আম্মু আব্বুও না। বাইরের মানুষদের তো গলার স্বর উচু করার সাহস পেতো না। আজ তুই এই জুনায়েদ সাইদকে একদম চুপ বানিয়ে ছাড়লি!!কি আছে রে তোর মধ্যে?
-ভাই সরি। আমি ইচ্ছে করে করিনি। কেন যেনো তোমার হাতের অবস্থা দেখে ওমন রিয়েক্ট করে ফেলেছি। সরি ভাই।
-কী যেনো বলছিলি..ও হ্যাঁ লাল মরিচের মশলা মাখা আদর। ওটা আসলে কেমন, জানি না। আই ওয়ান্ট টু টেষ্ট নাবিলা!!
-না না.. মানে ওটা তো মুখ ফসকে বের হয়ে গেছে ভাই। ওমন কিছু আসলে নেই।।
-নো ! আমার সেটা চাই। আমার যেটা লাগবে তা আমার চাই-ই চাই!

ধুরর!! কী এক মসিবত! এমনেই রাগের মাথায় মুখ ফসকে বলে ফেলেছি তার মধ্যে উনার কিনা টেষ্ট করতে ইচ্ছে করছে!! ও আল্লাহ !! এখন আমি কই যাই!

-ওই বেক্কল ! বললাম না দিতে!
-পারি না ভাই।
-তাহলে বললি কেন!
-জানি না ভাই।
-রাগ কেন দেখালি!
-বুঝিনি ভাই।
-ওই তুই কেমন মেয়ে বলতো ! যা-ই জিজ্ঞেস করি খালি না না আর না!তোর জামাই যে সংসারে সুখ পাবে না এইটা আমি গ্যারান্টি দিলাম। গর্দভ কোথাকার!
-ভাই তুমি না অনেক সুন্দর গান করো। কেমন জানি নেশা ধরে যায় ভাই!!গিটার ছাড়া আরেকটা শুনাবা!!!
-আগে লাল মরিচের মশলা মাখা আদর খাব দেন গান গাবো।তার আগে না।
-ভাই ওমন আদর তো নেই। কোথা থেকে দেই বলো?
-একটা ছেলের কোলে বসে আছিস।এতো কাছাকাছি। চারিদিকে বাতাস। জোশশ একটা ওয়েদার। তার মধ্যে আমার শুধু ওই স্পেশাল আদর টা চাই। এতটুকু না পারলে আমার জন্য কি করলি!
-সাঈদ ভাই তুমি ফিহা আপুর থেকে ভালো আদর নিতে পারবে। আমি তো কিছুই পারি না। নিরামিষ। সে তোমাকে ভীষন আদর করবে।।

আমি বলা শেষ করতেই সাঈদ ভাই এক সেকেন্ডও লেট করেনি..ওমনেই আমাকে ধপ করে কোল থেকে ফেলে দিলেন। মুহূর্তেই উনার মুখ কালো হয়ে গেল।উনি অন্যদিকে মুখ করে নিলেন। এতক্ষন কি সুন্দর হাসিমাখা মুখে ছিলেন। আমার কথায় ভাইয়া কষ্ট পেয়েছেন।। ইশশ! আমিও না! দরকার কি ছিলো ওমন কিছু বলার !! ভাইয়া যে বলে, আসলে ঠিকি বলে!! আমি সত্যিই একটা আস্তা গর্দভ ! মাথামোটা একটা! এত সুন্দর একটা মোমেন্টে ওই পাষ্টের কথা তুলে সব লন্ডভন্ড করে দিলাম।

ভাইয়া এমনেই অসুস্থ। তার মধ্যে এমন ধোকা দেওয়া মেয়ের ব্যাপারে আর না বলাই ভালো হতো। ভাইয়ার মুড যে এখন ঠিক করতে হবে!! উঠে আবার উনার কোলে বসলাম। তার কাধে হাত জড়িয়ে নিলাম।কিন্তু ভাইয়া বাধা দিলেন না। কোলে বসেই ভাইয়ার মুখ আমার দিকে করে নিলাম। আজ ভাইয়ার চোখজোড়া অনেক কাছ থেকে দেখছি। চোখ দুটোতে মায়া ভরা!! আচ্ছা ভাইয়া যে এতো সুন্দর কোনো পরী ধরেনি?? এজন্যই হয়তো খালামনি কোরআন খতম দেওয়াতেন।।

বাতাসের শো শো বেগ পড়ন্ত বিকেলে আরো বাড়ছে। বাতাসের হালকা ঝাপটানিতে সাঈদ ভাই চোখ বন্ধ করে নিচ্ছেন বারবার। চোখের কাছে চুলের খেলা চলছে।আমি হাত দিয়ে চুল সরিয়ে দিলাম কিন্তু বাতাসের ঝাপটানিতে বাধ মানছেনা। আবারও কপালের কাছে লুকোচুরি করছে। ডানহাত দিয়ে আলতো করে সামনের চুল গুলোকে পেছনে নিলাম। তার কিছুটা কাছে আসলাম। কাধের কাছে জড়িয়ে নেওয়া বাম হাতটা প্রসারিত করে তার মাথার পেছন দিকের চুলে ডুবিয়ে দিলাম।কপাল একটু কাছে এনে আলতো করে ঠোঁট ছুয়িয়ে দিলাম। ভাইয়া চোখ বন্ধ করে আছেন। ঘোর লেগে আসছে!!! দু হাত ছেড়ে কোল থেকে উঠতে নিলে ভাইয়া বলে উঠেন-

-নাবিলা বা হাতটা ব্যান্ডেজ করে দিবি না??
-দিচ্ছি।
-নাবিলা লাল মরিচের মশলা মাখানো আদর টা কিন্তু মিষ্টি।। নামে ঝাল হলেও কাজে কিন্তু টেষ্ট আছে!!

কী লজ্জা !! ভাইয়ার কাছে বসতে যে লজ্জায় মরে যাচ্ছি!! এই ব্যক্তি কি বুঝে না। আমি যে অলরেডি মেন্টাল হয়ে আছি!! তাকে দেখলে যেকেউ যে পাগল হবে, সেটা কি উনি বুঝেননা!!মেয়েরা তো তোমার এটিটিউডেই ফিদা হয়ে যাবে মিস্টার জুনায়েদ সাঈদ!! এইভাবে নিজেকে কেন গড়েছেন বলুন তো!!আপনার সাথে রাস্তায় বেরুলে যে মেয়েদের হা করে তাকানো দৃশ্যটা দেখতে পেতাম!!

সাঈদ ভাইকে লাল মরিচের মশলা মাখা আদর দেওয়ার পর থেকে আমার দিকে ড্যাবড্যাবে তাকিয়ে আছেন। আমি উনার দিকে না তাকালেও আড় চোখে সেটা বুঝতে পারছি !!

ব্যান্ডেজ করা শেষ হলে ভাইয়া-“নাবিলা তোর আদ…” বলতে নেবে তার আগেই ছাদে এসে উপস্থিত হয় বড় আপু। সাঈদ ভাই একবার আমার দিকে আরেকবার বড় আপুর দিকে তাকাচ্ছেন!! শেষে আমার দিকে এমন ভাবে তাকিয়ে আছেন যে, এই অসময়ে বড় আপুকে যেন আমি ইচ্ছে করে ডেকেছি!! কেমন ভয়ংকর চাহনি!! বাপরে!এই বুঝি সাঈদ ভাই আমার গলা টিপে খেল!!

বড় আপুর এই ব্যাঘাত ঘটানোর পর সাঈদ ভাই আর বসে থাকলেন না।উঠে দাড়ালেন। আর বড় আপুকে উদ্দেশ্য করে বললেন-

-তুই লাড্ডু তে চিনির পরিবর্তে ভুলবশত ঢেলে দেয়া লবনের মতো ! যেখানে এতো স্বাদের মজাদার খাবারটাকে মিষ্টির পরিবর্তে বিষ বানিয়ে ছাড়ে !

সাঈদ ভাইয়ের এমন উটকো উক্তি শুনে বড় আপু ইয়া বড় এক হা করে আছেন। বড় আপু তার ডিপার্টমেন্টে কেমিস্ট্রির শতশত বিক্রিয়া মিলাতে পারলেও আজ সাঈদ ভাইয়ের এমন অদ্ভুত উক্তির সারামর্ম কোনোভাবেই মিলাতে পারছেন না। হাবার মতো দাঁড়িয়ে রইল আপু।

সবকিছু উপেক্ষা করে সাঈদ ভাই রেগেমেগে ঢুলুঢুলু পায়ে ছাদ থেকে নেমে যাচ্ছেন। আমি সাহায্য করতে চাইলে বারবার সরিয়ে দিচ্ছেন। হায়রে আরেক জালা মাথায় এসে পড়ল !! কী করব আবার এই ব্যক্তির রাগ ভাঙানোর জন্য!!!

-চলবে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *