মেয়ে

মেয়ে !! Part- 02

আমার স্বামী হঠাৎ এই কাবিননামা দিয়ে কি করবে সে জন্য মনে অনেক প্রশ্ন জাগে!আচ্ছা যাইহোক রিজিকে যাহ লিখা অাছে তাই হবে।এই দিকে অনেকক্ষণ হয়ে গেলো রাত্রি মেয়েটা আসতেছে না তার বাবা তো এতক্ষণে গাড়ীতে উঠে গেছে,তাহলে রাত্রি আসতেছে না কেনো!কিছুক্ষণ পরে দূর থেকে দেখা যাচ্ছে মেয়েটা বাড়ির দিকে আসতেছে।বাড়ি আসলে তার হাতে দেখি ফুচকা,আমি তার হাতে ফুচকা দেখে অাচর্য্য হয়ে বলি-
.
_রাত্রি তুমি একা একা বাজারে গেছো?
_হ্যাঁ মা।
_তোমার বাবা কিছু বলে নাই?
_বাবা তো দেখে নাই বাবা চলে যাওয়ার পরে আমি বাজারে একা একা চলে গেছি তোমার জন্য ফুচকা আনতে।
_কেন আমি ফুচকা নিয়ে আসার জন্য বলছি নাকি?
.
আমার রাত্রি মেয়েটা কাঁদো কাঁদো কণ্ঠে বলে-
.
_বাবা প্রতিবার আসার সময় তোমার পছন্দের খাবার ফুচকা নিয়ে আসে কিন্তু এবার নিয়ে আসে নাই তাই আমি তোমার জন্য আমার জমা করা টাকা থেকে ফুচকা কিনে নিয়ে এসেছি।খাও মা তোমার পছন্দের খাবার খাও।
.
রাত্রিকে জড়িয়ে ধরলে আমি আর আমার চোখের জল আর লুকিয়ে রাখতে পারি নাই।আমার অশ্রুভেজা চোখ দেখে আমার মেয়ে রাত্রি বলে-
.
_মা আমি জানি বাবা তোমাকে আগের মতো ভালোবাসে না।
.
আসলেই আমার রাত্রি বুঝে গেছে তার বাবা যে আমাকে ভালোবাসে না মেয়েটার মাথায় প্রচণ্ড বুদ্ধি ভালো মন্দ সব কিছু বুঝে।কিন্তু আমার মেয়েটা এখনো জানে না তার বাবা আরেকটা বিয়ে করেছে হয়তো সেটাও একদিন ঠিকে বুঝে যাবে।আমার স্বামী কোথাও গেলে পৌঁছে আমার কাছে ফোন করে কিন্তু এবার কোনো যোগাযোগ নাই, এরপরেও নিজ থেকে কল দিলাম অনেকক্ষণ ট্রাই করার পরে সে কল ধরে,কল রিসিভ করার পরে সে আমাকে বলে-
.
_কি হয়েছে এতবার কল দাও কেন?
_না আপনি ঠিক মতো গেলেন কি না সেজন্য চিন্তিত ছিলাম।
_হ্যাঁ আমি মারা যাই নাই ঠিক মতো আসছি।
_আচ্ছা শুনেন আমার শরীর তেমন ভালো নাই সুযোগ পেলে এই সপ্তাহে আরেকবার বাড়ি আসিয়েন।
_আচ্ছা দেখা যাবে।
.
এই বলে আমার স্বামী ফোন রেখে দেয়, আমার স্বামী আমার সাথে এমন করে কখনো কথা বলে নাই।আমার চাচাতো’বোন অারশি’কে বিয়ে করার পর থেকে উনি এমন করে প্রায় সময় কথা বলে,যাহ আমার কাছে খুব খারাপ লাগে খুব।সাপ্তাহ চলে গেলেও আমার স্বামী আসে নাই।গভীর রাতে প্রচণ্ড প্রসব যন্ত্রণা উঠে এই বুঝি আমার ছোট মেয়ে দুনিয়াতে আসবে!অন্ধকার রাতে আমার খুব ভয় লাগে কিন্তু আমার স্বামীর হাত ধরে আমিও অন্ধকারে হাঁঠতে শিখে গেছি কিন্তু আজ এই সময়ে আমার স্বামী আমার পাশে নাই।আমার শুশুর একবার পাশের ঘরে যায় একবার তার ছেলেকে ফোন দেয় বৃদ্ধ মানুষ উনারা কি করবে আমার রাত্রি মেয়েটা মা মা করে কান্নাকাটি করতেছে আমার শাশুড়ি তার নাতীন’কে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বসে আছে।
.
কিছুক্ষণ পরে পাশের ঘরের সাজিদ ভাই এসে অামার শুশুর’কে বলে –
.
_কাকা এখানে বসে থেকে লাভ নাই চলেন ভাবীকে সদর ক্লিনিকে নিয়ে যাই।
.
সাজিদ ছেলেটা খুব ভালো এই গভীর রাতে বাজার থেকে গাড়ী নিয়ে আসে সেই,একসাথে আমাকে সদর ক্লিনিকে নিয়ে যায়।আমার শাশুড়ি আমার পাশে বসে অাল্লাহ্ অাল্লাহ্ করতেছে আসলে তারা দুইজন অনেক ভালো মানুষ আমার মেয়েদের অনেক অাদর করে।আমার শাশুড়ির ডাক মনে হয় অাল্লাহ্ কবুল করেছে কিছুক্ষণ পরে দুনিয়াতে অাসে আমার কলিজার টুকরা ছোট মেয়ে।আমার শুশুর শাশুড়ি দুইজন অনেক হ্যাপি তাদের নাতীনকে দেখে মেয়েটা অনেক কিউট।
.
পাঁচদিন ক্লিনিকে থাকার পরে বাড়ি চলে আসি,আমার ছোট মেয়ে দুনিয়াতে আসার পর থেকে অসুস্থ।ডাক্তার তখন বলেছে শহরে ভালো কোনো ডাক্তার দেখানোর জন্য।শহরে আমি একা কি করে যাবো! এই দিকে আমার স্বামীকে অনেকবার বলছি বাড়িতে আসতে, উনাকে আসার জন্য বললে উনি বলে-
.
_গ্রামে অনেক ভালো ডাক্তার আছে যারা শহর থেকে যায় তাদের দেখাও টাকা লাগলে আমি দিচ্ছি।
_আপনি মেয়েকে দেখতে আসবেন না?
_কিছুদিন পরে আসবো এখন কাজের ঝামেলা।
_আচ্ছা।
.
এমন করে একমাস চলে যায় কিন্তু আমার স্বামী আমার ছোট মেয়েকে দেখতে আসে নাই।আমার মেয়েটা অনেক সুন্দর,একবার তাকালে মন ভরে যায়।দৈর্ঘ্য একমাস অসুস্থ থাকার পরে গভীর রাতে আমার মেয়েটা শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করে অনেক কষ্ট করছে আমার মেয়েটা হয়তো শহরে নিয়ে গেলে ভালো হয়ে যেতো।আমার রাত্রি মেয়েটা বোন বোন করে কাঁদতেছে, রাতে এই ঘটনা শুনে সকাল হলে আমার স্বামী বাড়ি আসে,আমার স্বামী বাড়ি আসলে কি হবে আমার ছোট মেয়ে তার বাবাকে আর দেখবে না মেয়েটা সারা জীবনের জন্য ঘুমিয়ে গেছে,মেয়েটা চোখ খুলে নিষ্টুর পৃথিবীর আর কাউকে দেখবে না।
.
আমার স্বামীর মুখে একটুও কষ্টের চাপ নাই।শুনছি আরশি মা হতে যাচ্ছে ডাক্তার বলছে তার নাকি ছেলে বাবু দুনিয়াতে আসবে।আমার স্বামী নিজ হাতে তার মেয়েকে কবরে চিরদিনের জন্য রেখে আসছে অদৌ কি তার একটুও খারাপ লাগতেছে না?হয়তো না।কারণ অনেকগুলো মেয়ে বাবু তার পছন্দ না।আমার রাত্রি মেয়েটা তার বোনের জন্য এখনো হাউমাউ করে কাঁদতেছে আমার মেঝো মেয়েটা অবুঝ তার বাবাকে দেখলে ভয় পায় তার বাবা আমার পাশে দাঁড়িয়ে আছে তাই আমার কানে ফিসফিস করে বলে-
.
_মা তোমার ছোট মেয়ে কোথাই গেছে?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *