মিশে আছো আমার অস্তিত্বে

মিশে আছো আমার অস্তিত্বে !! Part-12

রাস্তা দিয়ে যেতে যেতে তৃষা একহাত দিয়ে নিজের চোখের জল মুছছে আর ভাবছে আকাশ তাকে এতটা অবিশ্বাস কি করে করতে পারলো,,এতদিন ওর সাথে থেকেও আকাশ ওকে বুঝলো না।না আর সে থাকবে না আকাশ নামক মানুষের জীবনে,,সারা জীবনের জন্য চলে যাবে তার জীবন থেকে সে।উপরের আকাশের দিকে তাকিয়ে ছল ছল চোখে বলে উঠলো-;
-:মা আমাকে ক্ষমা করে দিও,,তোমার ছেলের কাছে আমার হয়তো আর থাকা হবে না,,যেখানে তোমার ছেলের মনে আমার প্রতি একবিন্দুও বিশ্বাস নেই সেখানে কি করে তার সাথে সংসার করবো??আমি তোমার ছেলের জীবন থেকে চলে যাবো সারাজীবনের জন্য কিন্তু তার আগে নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করাটা অত্যন্ত জরুরি। চিন্তা করো না যাওয়ার আগে তোমার ছেলের জীবন থেকে রিনা নামক অভিশাপকে দূর করে তবেই যাবো।আমি জানি তুমি আমাকে বুঝবে।
এইভাবে অনেকক্ষণ মায়ের সাথে কথা বলে।যে করেই হোক রিনার পর্দা ফাঁস করতেই হবে তাকে কিন্তু তার আগে একজনের সাথে দেখা করাটা অত্যন্ত জরুরী,,কিছু পুরানো হিসেব মেলাতে হবে।
আকাশ এখনো বুঝতে পারছে না তৃষা এটা কি করে করতে পারে।রিনা আকাশের পাশে বসে বলে উঠলো-;
-:আকাশ ওমন মেয়ের কথা ভেবে কষ্ট পেও না।
-:রিনা আমি এখনো বিশ্বাস করতে পারছি না,,তৃষা এমন মেয়ে নয় রিনা তাহলে ও কি করে এটা করতে পারে??আচ্ছা এটা কোনো চাল নয় তো??
-:কি বলছো আকাশ!!আমি নিজের চোখে তৃষাকে ওই ছেলের বাহুতে দেখেছি।বিশ্বাস করো প্রথমে আমিও এটা মেনে নিতে পারিনি কিন্তু এটা সত্যি আকাশ।আচ্ছা আকাশ আমরা আবার পারি না এক হতে??আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি আকাশ খুব ভালোবাসি।আমি জানি তোমার মনে তৃষা কে নিয়ে কিছুটা দুর্বলতা আছে কিনা সেটা শুধুমাত্র মায়া এ ছাড়া আর কিছুই নয়। তুমি ওকে খুব তাড়াতাড়ি ডিভোর্স দিয়ে আমাকে বিয়ে করে নাও।
রিনার কথায় আকাশ কিছুই বলল না শুধু নিরবতা পালন করলো সে কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না যে তৃষা এমন করতে পারে,,বেশ অনেকটাই জায়গা দখল করে ফেলেছে তৃষা আকাশের মনে তাই সে কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না।রিনা চলে গেলেও তার এতটা খারাপ লাগেনি যতটা আজ লাগছে তৃষা চলে যাওয়ায়।
এদিকে রিনার মাথা বিশাল গরম হয়ে যাচ্ছে,, এক্ষুনি তার ইচ্ছা করছে আকাশের গালে ঠাঁটিয়ে দুটো চড় বসাতে কিন্তু আফসোস তার হাত পা বাঁধা সে কিছুই করতে পারবে না।
বিশাল বড় এক চকচকে সাদা বাসার সামনে দাঁড়িয়ে আছে তৃষা,,চোখে পানিতে টলমল করছে।কিছু বছর আগে এ বাড়িটা তার বাবা ছিল কিন্তু এখন!!ভাবতেই ভিতর থেকে এক দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এল।পুরানো গেটম্যান চাচা এখনো আছে,,তাই তিনি তৃষাকে চিন্তে পেরে বলে উঠলো-;
-:আরে মামনি কেমন আছো তুমি?? কতদিন পর দেখলাম তোমায়??বড়ো স্যার আর বড়ো মেমসাহেব কেমন আছেন??আর ছোটো সাহেব,,সে কেমন আছে??
তৃষা একটা মলিন হেসে বলে উঠল-;
-:সবাই ভালো আছে চাচা। তুমি কেমন আছো??
-:আমি ভালো আছি মামনি।তুমি এখানে বসো আমি ছোটো সাহেবকে এক্ষুনি ডেকে আনছি।
-:না না চাচা তার দরকার নেই,,আমি নিজে গিয়ে দেখা করে আসছি।
-:আচ্ছা ঠিক আছে,,এসো।
বিশাল বড়ো গেটটা ঠেলে তৃষা প্রবেশ করলো শ্বেত পদ্মে,,তৃষা শখ করে এই বাসার রং এর সাথে মিল দিয়ে বাসার নাম রেখে ছিলেন “শ্বেত পদ্ম”,, এতদিন হয়ে গেলেও নেম প্লেট বদলানো হয়নি।নিজের বাবার শখ করে বানানো বাসাটা এখন তার চাচার।
বিকালে একটু তাড়াতাড়িই বাসায় ফিরেছেন নাঈম শেখ।আর ফিরবে নাই কেন?তার মে কিছুক্ষণ আগেই এক চরম সু সংবাদ দিল। অবশেষে তার সমস্ত পথের কাঁটাকে সে দূর করতে পেরেছে এটা ভেবেই নিজের মনের আনন্দকে উজাড় করে দিতে মন চাইছে বারবার কিন্তু এখন সেটা সঠিক সময় নয় আগে আকাশ আর রিনার বিয়ে হোক তারপর আকাশের সমস্ত পপার্টি নিজের হাতের মুঠোয় চলে এলেই সে বিশাল বড়ো এক পার্টি দেবে।এসব ভাবতে বেশ অনেকটাই মগ্ন ছিলেন তাই তৃষার আগমন তাকে বুঝতে দিল না।তৃষা চাচার সামনে দাঁড়িয়ে বলে উঠলো-;
-:কেমন আছো চাচা??
তৃষার কথাই নাঈম সাহেব বেশ চমকে গেলেন,,নিজের ভাতিজিকে এইসময় অন্তত নিজের বাসায় তিনি আসা করেন নি,,তাই কিছুটা তুতলিয়ে বলে উঠলেন-;
-:আ..আরে তৃষা তুই??কেমন আছিস মা??
-: তুমি আর তোমার মেয়ে যেমন রেখেছো চাচা।
-:মানে!!
-:মানে টা খুব পরিষ্কার চাচা।আপুকে যে তুমি তোমার শিক্ষায় খুব ভালো ভাবেই মানুষ করেছো,, তা আজ আপুকে না দেখলে বুঝতাম না।ক্ষমতার লোভ তোমাদের চোখকে পুড়োপুড়ি অন্ধ করে দিয়েছে।এখনো সময় আছে চাচা তুমি আর আপু দুজনে ভালো হয়ে যাও ন‌ইলে আল্লাহ্ তোমাদের কোনোদিন‌ও ক্ষমা করবেনা।এমনিতেও আমার বাবাকে তো জোর করে পথের ভিখারি বানিয়েই দিয়েছো,,এবার অন্তত বাপ-মা হারা ছেলেটার জিবন নষ্ট করো না।
-:তৃষা!!বেশ অনেকক্ষণ ধরে তোর বিয়াদবি সহ্য করছি কিন্তু আর নয় এক্ষুনি বেড়িয়ে যা আমার বাসা থেকে।
তৃষা তাচ্ছিল্য হাসি দিয়ে বলে উঠলো-;
-: তোমার বাসা?চাচা তোমার তো লজ্জা বলতে কিছুই নেই,, নিজের ভাইয়ের দুঃসময়ে তাকে ঠকিয়ে এই বাসাটা নিজের নামে করতে একটুও তোমার বিবেকে বাঁধেনি? এমনিতেই আমি এই বাসায় বেশিক্ষন থাকবো না কারণ এই বাসাটা আমার বাবার অসহায়ত্ব আর তোমার জলুমের কথা বারবার মনে করিয়ে দেয় আমাকে।আর একটা কথা আমার বাবার যে ক্ষতি করেছো সেই ক্ষতিটা আমি আকাশের জিবনে আসতে দেব না,,অন্তত আমি বেঁচে থাকতে এটা কখনোই দেব না।
এই বলে তৃষা বেড়িয়ে গেল সেখান থেকে,,নাঈম সাহেব রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে নিজের ফোন বের করে,,পরিচিত নাম্বারে ডায়েল করলো।
কিছুক্ষণ পর নাঈম সাহেব বলে উঠলেন-;
-: কোথায় তুমি??
-:……
-:তাড়াতাড়ি বাসায় এসো,,দরকারি কিছু কথা আছে,,হারি আপ।
-:……
-:রিনা!!ইউ হেভ ওনলি ওয়ান আওয়ার,,হারি আপ।(রেগে চিৎকার করে)
-:ওকে বাপি।
নাঈম সাহেব ফোনটা রেখে দিলেন কিছুতেই তিনি তার প্ল্যানকে ফ্লপ হতে দেবেন না।
-:ওকে বাপি।
.
.
.
নাঈম সাহেবের রুমে বসে আছে রিনা,,, কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলে উঠলো-;
-:আব্বু তুমি টেনশন করো না।সব আমাদের প্ল্যান মতোন হচ্ছে।আকাশকে অনেক কষ্টে তৃষার বিরুদ্ধে নিয়ে এসেছি,,কিন্তু আকাশ তৃষাকে ডিভোর্স দেওয়ার ব্যাপারে কিছু ক্লিয়ার করে বলছে না এখনো।
-: তুমি তৃষার থেকে দূরে থাকবে আর আকাশকে যত তাড়াতাড়ি পারো কনভেন্স করো বিয়ের জন্য।
-:জি আব্বু।
-:আর হ্যা হোটেলের ছেলেটাকে বেশি বেশি টাকা দিয়ে এই শহর থেকে দূরে কোথাও পাঠিয়ে দাও,,ও এখানে থাকলে সমস্যা হতে পারে।আকাশ কিংবা তৃষার নজরে পরলে আমাদের সব প্ল্যান মাটি হয়ে যাবে।
-:ওকে আব্বু।আমি ওর সাথে কথা বলবো বাট কিছুদিন পর।
-:কেন??
-:আ..আসলে রাসেলের সাথে দেখা করতে যাবো আব্বু।
-:উফ্ কতবার বলেছি রাসেলের সাথে এমন হুটহাট করে দেখা করবে না বাই এনি চান্স আকাশ যদি জানতে পারে,,তাহলে আমরা শেষ।
-:আব্বু কিচ্ছু হবে না,,এতদিন যখন আকাশ জানতে পারে নি তাহলে এবার‌ও জানতে পারবে না।
-: কিন্তু এখন তোমার আকাশের পাশে থাকা জরুরি ন‌ইলে ও তোমার জালে আটকাবে না।
-: চিন্তা করো না আব্বু আকাশ কিছুদিন একা থাকতে চাই,,সে নাকি একটু সময় চাই তৃষাকে ভোলার,,যত্তসব ন্যাকামি‌।ওকে আব্বু আমি আসছি।
-: হুম যাও।
নাঈম সাহেব কিছুটা হলেও শান্তি পেলেন।এবার দেখা যাক ভবিষ্যতে তাদের জন্য কি অপেক্ষা করছে।
.
.
.
[বাকিটা নেক্সট পর্বে]
.
.
.
“”ভুল ত্রুটি হলে ক্ষমা করবেন।আগামী কাল লাস্ট পর্ব,, আশাকরি সবাই অপেক্ষা করবেন।””