ভালোবাসি হয়নি বলা

ভালোবাসি হয়নি বলা !! Part- 34

দেখতে দেখতে বিয়ের দিন টা একদম নিকটে চলে আসলো

আজকে হঠাৎ করে উনি ফোন দিয়ে বলতেছে আমার সাথে নাকি ওনার কিছু কথা আছে তাই বিকেলে পার্কে দেখা করার জন্য ডাকলো আমি কিছু না বলে চুপচাপ রাজি হয়ে গেলাম কারণ কয়েকদিন থেকে আমিও তাকে দেখি না তাকে দেখার ইচ্ছা করতেছে

বিকেল বেলা হালকা সাজুগুজু করে বেড়িয়ে পড়লাম উদ্দেশ্য হলো পার্কে যাব

বাসা থেকে বাহির হয়ে উনাকে একটা ফোন দিলাম জেনে নিলাম উনি এখন কোথায় আছে উনার সাথে কথা হওয়ার পর জানতে পারলাম উনি পার্কের কাছাকাছি চলে এসেছে আমাকে খুব তাড়াতাড়ি সেখানে যেতে হবে তাই আমি একটা রিকশা ডেকে নিলাম এবং সেখান থেকেই রওনা দিলাম পার্কের উদ্দেশ্যে।।।

কিছুক্ষণ পরেই রিক্সাওয়ালা মামা আমাকে পার্কের গেটে নামিয়ে দিয়ে চলে গেলেন আমি

আস্তে আস্তে হেঁটে পার্কের ভিতরে প্রবেশ করলাম পার্কের ভেতরে প্রবেশ করে আমি বেশ অবাক হয়ে গেলাম

কারণ এখানে সবাই কাপল কেউ সিঙ্গেল নেই

যে যার মতো বসে তাদের খুন ছুটি প্রেম চালিয়ে যাচ্ছে

আপনাকে খুঁজতে লাগলাম একটু দূরে তাকিয়ে দেখি তুমি একটা গাছের নিচে বসে আছে তা হয়তো আমার জন্য অপেক্ষা করতেছে তাই আমি আর দেরী না করে ওনার কাছে চলে গেলাম

আমিঃ কতক্ষণ আগে এখানে এসেছেন???

মাহিনঃ বেশিক্ষণ হয়নি মাত্র আসলাম রাস্তায় আসতে তোমার কোন সমস্যা হয়নি তো???

আমিঃ না আমার কোন সমস্যা হয়নি তাহলে বলেন এত জরুরি তলব কি জন্য???

মাহিনঃ তুমি না আমার মনটা এখনো বোঝোনি তুমি তো জানো কত দিন থেকে তোমাকে দেখতে পাই না তাই মনটা আমার ছটফট ছটফট করতেছে তাই আর থাকতে পারলাম না

আর কালকে থেকে বিয়ের সব কার্যক্রম শুরু হতে যাচ্ছে তাই তোমার সাথে তেমন একটা কথা বলতে পারব না তাই আজকে তোমার সাথে একটু সময় কাটাতে চাই তোমাকে সমস্যা আছে??? সমস্যা থাকলে বলতে পারো আমি এখনই বাসায় চলে যাচ্ছি।

আমিঃ এই যে মিস্টার আপনি সবসময় যত বেশি বুঝেন কি জন্য?? আমি কি একবারের জন্য বলেছি যে আমার সমস্যা আছে আপনি চলে যান আমি আপনাকে সময় দিতে পারবো না???

মাহিনঃ না আমার মনে হল তাই জিজ্ঞেস করলাম।।।

আমিঃ আপনার মনে যা হবে তাই আমাকে জিজ্ঞেস করতে হবে???

মাহিনঃ আচ্ছা আমরা কোন ঝগড়া করতেছি কিসের জন্য?? সবাই দেখো কিরকম চুটিয়ে প্রেম করতেছে আর আমরা এখানে ঝগড়া করতেছি!!!

আমিঃ এই যে মিস্টার শুনছেন চওড়া কিন্তু আমি লাগাইনি আপনি লাগিয়েছেন সুতরাং সব দোষ আপনার এখন চলেন একটু হাঁটাহাঁটি করি লেকের পাড়ে

মাহিনঃ এই যে মহারানী লেকের পাড়ে হাঁটতে গেলে এখান থেকে অনেক দূর যাইতে হবে তার থেকে ভালো এই পার্কের পুকুরপাড়ে হাটি অনেক ভালো লাগবে।।।।

আমিঃ এই যে মিস্টার আমাকে বাদাম কিনে দেন বাদাম খেতে খেতে কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি করি।।।

তারপর উনি আমাকে বাদাম এনে দিলেন

বাদাম কিনে এনে আমার হাতে না দিয়ে উনি বাদামের খোসা সারিয়া বাদামগুলো আমার হাতে দিচ্ছে আমি ছোট বাচ্চাদের মতো খাইতেছি

দুজনের মাঝে চলতে থাকলো কোন চটিকথা ঘুম ছুটে কিছু ঝগড়া

তারপর আমরা দুজনে এক জায়গায় বসে পড়লাম পুকুর পাড়ে

দুজনেই বসে পড়লাম বলতে ভুল হবে আমি বসে পড়লাম আর উনি আমার কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়লেন

আমিঃ আরে আজব তো আপনি এসব এখানে কি শুরু করছেন???

মাহিনঃ কই কখন আমি আবার কি করলাম??

আমিঃ দেখেন একদম ন্যাকামো করবেন না এসব কি হচ্ছে সবাইকে ভাবে তাকিয়ে আছে আমাদের দিকে দেখেন তো।।।

মাহিনঃ তাদের হিংসে হচ্ছে আমাদের ভালোবাসা দেখে তাই তারা আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে।।।

আমিঃ এইরকম একটা পাবলিক প্লেসে কেউ এরকম করে আমার প্রচুর পরিমাণ লজ্জা লাগতেছে প্লিজ উঠে বসুন,,

মাহিনঃ দেখো মানুষ দেখতেছে দেখতে দাও আর আমরা যেটা করতেছি করতে দাও।।

আমিঃ দেখেন এটা আমাদের রুম না বা আমাদের বাড়িও না কত মানুষ আমাদের দিকে কি রকম ভাবে তাকিয়ে আছে দেখেন তো আমার কিরকম লজ্জা লাগতেছে প্লিজ উঠুন

মাহিনঃ আর একটা কথা হচ্ছে না চুপচাপ আমার মাথায় বিলি কেটে দাও।।

আমি অবশেষে ওনার কাছে হার মেনে নিলাম কারণ যতই বলি না কেন উনি উঠবে না,,

তাই আমিও মাথা নিচু করে ওনার মাথায় বিল্লি কেটে দিতে লাগলাম

আর মনে মনে ভাবতে লাগলাম ছিলাম কি আর হয়ে গেলাম কি

যার কাছে টাকার জন্য দেহ টা বিক্রি করতে গেলাম আজকে তাকেই স্বামী হিসেবে পেলাম,,,

ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস হয়তো আজকে আমাকে সমাজে সবার কাছে কলঙ্কিনী বা পতিতা হয়ে থাকতে হতো কিন্তু ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস আজকে সেখানে আমাকে কেউ একজন পাগলের মত ভালবাসে

কিন্তু এমন একটা দিন ছিল যার ভালোবাসাটা আমিই বুঝতে পারিনি যদি ঠিক সময়ে বুঝতে পারতাম তাহলে আজকে হয়তো এর থেকেও ভালো কিছু আমার জীবনে ঘটে যেত,,,

মাহিনঃ এই পাগলি কি ভাবতেছ???

আমিঃ কই কিছু নাতো।।

মাহিনঃ দেখো আমার থেকেও লুকানোর চেষ্টা করবে না তোমার চোখের পানি বলে দিচ্ছে তুমি কিছু না কিছু ভাবতেছ সেটা অনেক কষ্টের।।। আমাকে বলা যাবে না

উনি অনেকটা অসহায় দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন

আমিঃ এই যে পাগল মসাই আমার কিছু হয়নি এটা সুখের কান্না দুঃখের না বুঝছেন।।।।

মাহিনঃ তাই বলে চোখ থেকে পানি বের করতে হবে???

আমিঃ সব প্রশ্নের উত্তর বাসর রাতে দেব আজকের মত উঠি চলুন কারণ সন্ধ্যা হয়ে গেছে এখন বাসায় না গেলে আম্মু বকা দিবে।।।

মাহিনঃ আর কিছুক্ষণ থাকি সন্ধ্যা টা উপভোগ করে তারপর যাই???

আমিঃ দেখেন কালকে গায়ে হলুদ আপনি ছেলেমানুষ হয়তো আপনার কোন কথা কেউ বলবে না কিন্তু আমি একটা মেয়ে সমাজে আমার নানা রকম কথা হতে পারে তাই আমাকে যেতে হবে আর আপনি কি চান আপনার বউয়ের কটুক্তি কেউ করুক????

মাহিনঃ আমি তোমার জিব্বা কেটে ফেলব

আমিঃ কতজনের জিব্বা কেটে ফেলবেন এর থেকে ভালো হবে আমরা এখন বাসায় চলে যাই।।।

মাহিনঃ আর কিছুক্ষণ থাকি প্লিজ

আমিঃ এইসব আজাইরা কথা বাদ দেন কারণ অনেক সময় পড়ে আছে এইরকম উপভোগ করার মতো কিন্তু আজকে যদি আমি একটু লেট করে বাসায় যাই তো নানা রকম কথা বলবে সে কথাগুলো আমার আম্মুকে শুনতে হবে আমি চাইনা আমার কারনে আমার আম্মু কারো কাছ থেকে কটু কথা শুনুক

তারপর উনি আর কিছু বললেন না চুপচাপ আমার সাথে হাঁটতে লাগলেন।।।

বেশ ভালই লাগতেছে প্রিয় মানুষটার সাথে এই সন্ধ্যা বেলা হাটার মজাই আলাদা অন্যরকম একটা ফিলিংস জাগে মনের ভিতর

মন চায় সব সময় তার সাথে এই ভাবেই পাশাপাশি হেঁটে চলি যতদিন এ দেহে প্রাণ আছে।।।

তারপর আপনি আমাকে রিকশায় তুলে দিয়ে

ওইখানে দাঁড়িয়ে আছে রিকশা চলতে লাগল কিন্তু উনি যাচ্ছেন না ওইখানেই দাড়িয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে,,,

আমিঃ এই যে এই ভাবে দাঁড়িয়ে না থেকে তাড়াতাড়ি বাসায় চলে যান নয়তো বাসায় টেনশন করবে আপনার জন্য ( কিছুটা দূর থেকে)

কেন জানি আজকে ওনাকে ছেড়ে যাইতে মন চাচ্ছে না ইচ্ছে করতেছে ওনার সাথে চলে যাই কিন্তু সমাজের একটা রীতিনীতি আছে সেটা আমাদেরকে মানতে হয়…

যতক্ষণ ওনাকে দেখা যায় আমি উনার দিকে পিছন ফিরে তাকিয়ে আছি আমি লক্ষ্য করলাম উনি ও ততক্ষণ পর্যন্ত আমার দিকে তাকিয়ে ছিলাম ততক্ষণ আমাকে দেখা যায় কিন্তু যখন আড়াল হয়ে গেলাম তখন জানি না উনি হয়তো চলে গেছেন সেখানে থেকে

পরের দিন সকাল বেলা,,,,,,

ঘুম ভেঙে গেল বাইরে অনেক চেঁচামেচি কারণে,

আর চেঁচামেচি হবে না বা কেন বিয়ের বাড়ি বলে কথা।।।

চলবে..