1. নতুন গল্পঃ2. ছোট গল্প গুলোঃলেখাঃ মিহিয়া মিহি (মেঘলা)

ভালোবাসার নেশা তুই !! লেখাঃ মিহিয়া মিহি (মেঘলা)

ভালোবাসার নেশা তুই

আমাকে মেরে মেঝেতে ফেলে রেখেছে। অঝোরে পানি পড়ছে আমার দু’চোখ বেয়ে।
~নিশান-একদম আমার সামনে নেকা কাঁদবিনা,আমি ছুয়ে দিলে তোর ভালোলাগেনা তাইনা, আমার ছোয়া তোর অসহ্য লাগে, কিন্তু ওই আরিয়ান তোকে ছুয়ে দিলে তোর খুব মজা লাগে তাইনা,চিৎকার দিয়ে,,,,
~আমি-আপনার কোথাও ভুল হচ্ছে,আমার থ্রিপিসে জুস পরে গিয়েছিলো,আরিয়ান ভাইয়ার সাথে ধাক্কা লেগে।তাই উনি তা পরিস্কার করে দিচ্ছিলেন হিচকি তুলে,,,,
~নিশান-চুপ,নিলাশা আমাকে একদম মিথ্যা কথা বলবিনা,কই দেখি দেখি কোথায় কোথায় হাত দিয়েছিলো বলে পাগলের মতো সারা শরিরে আঁচড় কাঁটতে লাগলো।
আমি চিৎকার দিয়ে কান্না করতে লাগলাম।আমি নিলাশা খান,এইবার ইন্টার ফাস্ট ইয়ারে পড়ি বাবা মায়ের একমাত্র আদরের মেয়ে।আর যে আমার সাথে অসভ্যতামি করছিল ওটা আমার মামাতো ভাই নিশান খান।এইবার অনার্স 4th ইয়ারে পড়ে।

আমরা মূলত আমার মামাতো বোন দিশার জম্নদিন উপলক্ষে এখানে এসেছি।আজ দিশার জম্নদিন ছিলো, সবকিছু ভালো ভাবেই চলছিলো।হঠাৎ নিশান ভাইয়ার বন্ধু আরিয়ান ভাইয়ার সাথে আমার ধাক্কা লেগে তার হাতের জুসের গ্লাসটি আমার থ্রিপিসের ওপর পড়ে।
~আরিয়ান-আরে তোমার ড্রেসটাতো খারাপ হয়ে গেলো।সরি,আমি বুঝতে পারিনি,এখুনি ঠিক করে দিচ্ছি বলে,আমার থ্রিপিসটা পরিস্কার করে দেওয়ার জন্য এগিয়ে আসলেন।
~আমি-থাক লাগবেনা ভাইয়া, আমি ড্রেসটা চেন্জ করে নিচ্ছি।তারপর দ্রুত দিশার রুমে চেন্জ করতে চলে এলাম।কিন্তু হঠাৎ রুমে নিশান ভাইয়া ঢুকে দরজাটা লাগিয়ে দিলো,তার চোখ মুখ লাল হয়ে আছে,ঠোট জোড়া কাঁপছে,তাকে অনেক হিংস্র লাগছে।
যদিও আমি মামার বাড়িতে খুব একটা আসিনা।আর আসলেও কেন জানিনা নিশান ভাইয়া আমাকে ইগনোর করেন,কথাও বলেন না।আমি মামার বাড়ি আসলে ওনি সারাদিন নিজের রুম থেকে বের হন না। তাই আমি ঠিক বুঝতে পেরেছিলাম,আমার আসাতে নিশান ভাইয়া অনেক বিরক্ত হন। তাই যেটুকু আসতাম সেটাও বন্ধ করে দিয়েছিলাম।
তাই ওতোটা তাকে চিনিনা,আমি অবাক চোখে তার দিকে চেয়ে আছি,যে মানুষটা আমাকে না দেখার জন্য আমি আসলে রুম থেকে বের হতো না।সে আমার রুমে কেমনে কী ভেবে পাচ্ছিলামনা।তাকে কোনো কিছু জিঙ্গাসা করতে যাব,তার আগেই যা ঘটলো তা তো আপনারা জানেনেই।নিশান ভাইয়া বিছানা থেকে উঠে বলতে লাগলো,,,
~নিশান-তোকে যেন আর ওই আরিয়ানের সাথে ডলাডলি করতে না দেখি,নাহলে কতটা খারাপ হয়ে যাবে তুই কল্পনাও করতে পারবিনা।আজকে তোর সাথে যা যা হয়েছে সেটা যেন কেউ না জানতে পারে।চিৎকার দিয়ে বলে সে দ্রুত রুম থেকে বের হয়ে গেল।আমি বিছানার চাদরটা শরিরে ঢেকে নিয়ে জোরে জোরে চিৎকার দিয়ে কান্না করতে লাগলাম।


কান্না করার কারণে চোখমুখ জ্বালা করছে, আর বড় বড় হিচকি উঠছে।জম্নদিন হওয়ার কারনে,নিচে সাউন্ড বক্স বাঁজছে,যার কারনে কেউ হয়তো আমার কান্নার শব্দ শুনতেই পাচ্ছেনা।অনেকক্ষন টানা কান্না করে বিছানার চাদরটা শরিরে জড়িয়ে রেখেই ওয়াশরুমে চলে গেলাম।আয়নার সামনে নিজেকে দেখছি,চুলগুলো এলোমেলো, পরনের থ্রিপিসটা অনেক জায়গায় ছিড়ে গেছে, নখের আচরের ফলে চামড়া ছিলে রক্ত বের হচ্ছে।
প্রায় 1ঘন্টা সাওয়ার নিয়ে বের হয়ে বিছানায় চোখ বুজে সুয়ে রইলাম।চোখের সামনে বারবার কিছুক্ষন আগে ঘটা ঘটনাগুলো বারবার ভেসে উঠছে।
মনে শুধু একটাই প্রশ্ন,নিশান এরকম কেন করলো।কিছুক্ষনের মধ্য রুমে নিঝুম খান (আমার মা)আর শাওনখান প্রবেশ করল।তারপর দ্রুত গতিতে এসে আমার পাশে বসলো।শাওনখান পরম যত্নে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলতে লাগলো,,,,
~শাওন খান-( আমার বাবা)আমার আম্মুটা এই অবেলায় এইভাবে সুয়ে আছে কেন?আমি খারাপ লাগছে নাকি।
আমি উঠে আব্বুকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে লাগলাম।
আমার এইরকম আচরনে নিঝুম খান আর শাওন খান আৎকতিত হয়ে উঠলো
~শাওনখান-কি হয়েছে আম্মু,এভাবে কান্না করছো কেন? তোমাকে কেউ কি কিছু বলেছে।তার নাম বলো দেখি কার এতো সাহস যে আমার পিচ্চি রাজকন্যাটাকে বকেছে।
~আমি-না আমাকে কেউ কিছু বলেনি,আব্বু আমার বাড়ির কথা অনেক মনে পড়ছে।এখানে একদম ভালো লাগছেনা তাই,অভিমানি স্বরে,,,
~শাওন খান-হাহাহা পাগলি এইটুকু কারনের জন্য কেউ কান্না করে।ঠিক আছে,আমরা খুব শীঘ্রই এখান থেকে চলে যাব।এখন ঘুমিয়ে পর,আমার কপালে চুমো একে তারা চলে গেলো।


অন্ধকার রুমে আরিয়ান হাত পা বাধা অবস্থায় চেয়ারে বসে আছে। তার কপাল ফেটে রক্ত পড়ছে,আর তার সামনে নিশান অগ্নিদৃষ্টিতে তাকিয়ে পায়ের উপর পা দিয়ে বসে আছে।
~আরিয়ান-নিশান তুই এসব কি করছিস,ছাড় আমাকে,আর এখানে আমাকে এভাবে তুলে আনলি কেন?ছোটার চেষ্টা করে,,,,
কিন্তু আরিয়ান নিশানের চোখের দিকে তাকিয়ে ভয় পেয়ে গেল।
~নিশান-নিলাশার সাথে তখন তুই কি করছিলি,তোকে যেন আর কোনদিন নিলাশার আশেপাশে ও না দেখি, না হলে আমি ভুলে যাব তুই আমার বেস্ট ফেন্ড। ~আরিয়ান-আমি নিলাশার সাথে যাই করে থাকি না কেন,সেটা তোকে কইফিওত দিতে যাব কেন।
আর তুই নিলাশাকে নিয়ে কবে থেকে এতো মাথা ঘামতে শিখলিরে,ভুলে যাসনা তোর সাথে কিয়ারার বিয়ে ঠিক করা আছে।কিছুদিন এর মধ্য তোদের বিয়ে, আর কিয়ারাকে প্রপোজটা তুই নিজেই করছিলি, তাই নিলাশা না ভেবে কিয়ারাকে নিয়ে ভাব তুচ্ছ হাসি দিয়ে।
আরিয়ানের কথা শুনে নিশানের বুকটা ধক করে উঠলো।আরিয়ানতো ঠিকি বলছে,সে তো কিয়ারাকে ভালোবাসে,আর তাদের খুব শীঘ্রই বিয়ে হবে।
তাহলে নিলাশাকে আরিয়ানের সাথে দেখে তার কেন সয্য হচ্ছেনা। কেন তার কলিজা জ্বলে পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছে।আর আজকে কোন অধিকারে সে নিলাশার সাথে এসব করেছে,নিলাশা কি ভাববে।
কেন বারবার তার বুকটা নিলাশার জন্য কেঁপে উঠছে। শুধু এটাই মনে হচ্ছে, নিলাশা শুধু আমার সাথেই কথা বলবে, হাসবে কাঁদবে,কিন্তু কেন?

~আরিয়ান -নিশান যা করবি তা ভেবে করবি, যেন তোর একটা ভুল সিধান্ত কারো জিবন নষ্ট না করে দেয়।
নিশান যেন পাথরের মতো বসে আছে,কিছুই আজ তার মাথায় ঢুকছে না।পরের দিন সকালে সবাই ঘুম থেকে উঠে নিচে ড্র্রয়িং রুমে বসে আছে।আমি ফ্রেস হয়ে নিচে নেমে রেখা চৌধুরি আর সাহারিয়ার চৌধুরিকে সালাম দিলাম। এরা আমার মামা মামি।
~সাহারিয়ার-বসো আম্মু,কালকে অনেক ঝামেলার জন্য তোমাকে টাইম দিতে পারিনি।
তার কথাশুনে মুচকি হেসে তারপাশে বসে পড়লাম,আমার পাশে দিশা ও দৌড়ে এসে বসলো।~দিশা-আব্বু জানো নিলাশার কি ঘুমরে বাবা,আমি কালকে রাতে কত করে ডাকলাম,তবুও ঘুমথেকে উঠাইতে পারিনি।
~নিঝুম খান-দিশা তুমি হয়তো জানোনা,নিলাশা একবার ঘুমাইলে ওকে যদি কেউ কিডন্যাপ ও করে তাহলেও বলতে পারবেনা।
তার কথাশুনে সবাই হাসতে লাগলো,আমি লজ্জা পেয়ে মাথানিচু করে রাখলাম।
নিশান সিড়ি দিয়ে নেমে চলে যেতে লাগলে,সাহারিয়ার চৌধুরি তাকে পেছন থেকে ডাকলো,,,,
~সাহারিয়ার-নিশান আমি চাই তুমি আর দিশা মিলে আজকে নিলাশাকে আশেপাশে কোথাও থেকে ঘুরিয়ে নিয়ে আসো।
~নিশান-ঠিক আছে আব্বু।
আমি অবাক হয়ে তাকে দেখছি এমনভাব করছে যেন কালকে কিছুই হয়নি,আর আমাকেও চিনেনা।
আমি রুমে গিয়ে রেডি হয়ে নিচে নেমে গাড়িতে গিয়ে বসলাম,আমার পাশে দিশা বসেছে।আর নিশান সামনে বসে ড্রাইভ করছে।
রেস্টুরেন্টের সামনে গাড়িটা থামালো, ধির গতিতে রেস্টুরেন্টের ভিতর ঢুকলাম, হঠাৎ করে একটা মেয়ে দৌড়ে এসে নিশানকে জড়িয়ে ধরলো।
আর নিশান ও মেয়েটাকে জড়িয়ে ধরলো,আমি অবাক চোখে তাদের দেখতে লাগলাম।

দিশা আমাকে বললো,মেয়েটার নাম কিয়ারা।নিশানের সাথে পড়ে আর তাদের বিয়ে ঠিক করা আছে।
তার কথাশুনে বুকে চিনচিন ব্যাথা অনুভব করলাম।দিশার কোনো একটা কাজ ছিলো তাই সে চলে গেলো।আমি চুপ করে বসে আছি,নিশান কিয়ারা নিজেদের মতো কথা বলছে।
~কিয়ারা-নিশান বেবি চলো আমরা কথাও ঘুরে আসি, এখানে বোর লাগছে।আর তুমি দিশাকে ফোন করে এই মেয়েটাকে নিয়ে যেতে বইলো।
তারা দুজনে চলে গেল,সারাদিন রেস্টুরেন্টে দিশার জন্য অপেক্ষা করলাম।কেউ এলোনা,রাত 11টায় লেমপোস্টের নিচে বসে আছি,চারদিকে অন্ধকার এখানকার রাস্তাঘাট ও চিনিনা যে আমি বাসায় যাব।তাই রাস্তায় চুপটি করে বসে রইলাম, হঠাৎ একটা গাড়ি আমার সামনে এসে দাড়ালো।গাড়ি থেকে একটা পরিচিত মুখ নেমে এসে বলতে লাগলো,,
নিজের শরীর বিক্রি করার জন্য রাস্তায় দারিয়ে আছিস,আমাকেই বলতে পারতিস আমি মিটিয়ে দিতাম……….

to be continue………..

👉বিঃ দ্রঃ ” লেখাঃ মিহিয়া মিহি (মেঘলা) ” লেখকের লেখা অন্য গল্প গুলো পড়তে এখানে ক্লিক করুন…

👉 আমাদের ফেসবুক পেজ