বসন্তের আগমন !! লেখাঃ মুশফিকা রহমান মৈথি
বসন্তের আগমন
হঠাৎ ধাক্কায় বই গুলো রাস্তায় ছড়িয়ে পড়ায় মেজাজ বিগড়ে গেলো। ভাবলাম দু কথা শুনিয়ে দিলে মন্দ হবে না। মাথা তুলে তাকাতেই যেন মাথাটা একেবারে ফাঁকা হয়ে গেলো। সামনে দাঁড়ানো ব্যক্তির চোখ আমার দিকে। সেই চোখের অথৈ মায়ার সাগরে গা ভাসিয়েছিলাম একবার। সেই চোখ আজ আবার দিকে তাকিয়েছে,সেই একই রকম মায়া নিয়ে। হাটু ভেংগে বসে বই তুলে দিতে দিতে বললো,
– মৈথি না? কেমন আছিস? কত দিন পর দেখা বলতো!!
আসলেই কতদিন পর দেখা, সময়ের হিসেবটাও জানা নেই শুধু জানা আছে আজ আমরা সেই আগের ন্যায় নেই। বদলে গেছি, সময় আমাদের আবার এভাবে দাঁড়া করাবে কে জানতো!!
– কিরে বসেই থাকবি নাকি রাস্তায়??
তার কথায় আমি ভাবনার জগৎ থেকে বের হই। তার সাথে কি দিয়ে কথা শুরু করবো বুঝতে পারছি না। ভাবনাচিন্তা বাদ দিয়ে জিজ্ঞেস করে উঠলাম,
– তুমি এখানে? কবে আসলে আকিফ ভাই?
– তোর ভাই বলাটা গেলো না তাই না! এইতো গত মাসে, এখানে ট্রান্সফার হলো। তবে কেমন চলছে জীবন?
– চলছে আর কি!! আমি যাই তবে,দেখা হয়ে ভালো লাগলো।
বলেই ছুট লাগালাম, আর কিছুক্ষণ থাকলে হয়তো দম বন্ধ হয়ে যেত। রাস্তার মোড়ে এসে রিক্সার জন্য দাঁড়িয়ে রইলাম। এই এক সমস্যা, দুপুর বেলা রিক্সা পাওয়া ভার এখানে। রোদের ভেতরে দাঁড়িয়ে ছিলাম, পাশ থেকে আকিফ ভাইয়ের ভুবন ভুলানো হাসি কানে এলো,
– তোর ছুট ছুট পালাই পালাই স্বভাবটা গেলো না তাই না?
– সত্যি কাজ ছিলো তাই। (লজ্জায় মিশে যেতে ইচ্ছে করছে)
– থাক আর লজ্জা পেতে হবে না, চল হাটি এখানে রিক্সা পাবি না।
উপায়ন্তর না দেখে তার পাশেই হাটা শুরু করলাম, আজ এতো দিন পর তাকে দেখছি। বহুত পাল্টে গেছে, তবে মন মাতাল করা স্বভাবটা রয়ে গেছে, সেই হাসি, সেই দৃষ্টি যেন আমার মায়ায় ফেলবে বলে বারবার মনে হানা দিচ্ছে।
– কতদিন পর তোকে দেখছি রে, বেশ গিন্নি গিন্নি লাগছে তোকে। তবে চোখের ভয়টা এখনো কাটলো না, সেই ভয়ার্ত চোখেই আমার দিকে তাকাস। ( হেসে বলে উঠলেন)
– কতোদিন হবে তুমিই বলো!
– ছয় বছর সাত মাস তের দিন।
বলেই একটা উদাস হাসি দিয়ে রাস্তার দিকে তাকিয়ে রইলেন। আমি যেন স্তব্ধ হয়ে রইলাম, কি বলা উচিত ছিল আমার জানা নেই। মূহুর্তেই একটা অস্বস্তিকর পরিস্থিতিতে পড়ে গেলাম, সেটা কাঁটাতেই বলে উঠলাম,
– কোথায় থাকা হয়?
– কোম্পানির ডর্মেই আছি। পরে বাসা টাসা নিবো ক্ষন
– তা বিয়ে শাদী করলে? বউ কেমন হয়েছে?
আমার কোথায় মুচকি হেসে দীপ্ত ভাই হাটা শুরু করলো। কিছুদুর যেয়েই রিক্সা পেলাম, আমার হাতে বই গুলো দিয়ে বললো,
– দেখার সময়টা এতো কম হবে জানলে…, থাক যা, কি জানি আবার কোনো সময় দেখা হলেও হতে পারে।
মিনিট বিশেক পর বাড়ি পৌছে গেলাম। যে বাড়িতে থাকি সেটা দোতালা। নিচের তালায় ভাড়া থাকি, মফস্বল শহরে দোতালা বাড়ি খুব বেশি দেখা যায়। সামনে ফুলের বাগান, একটা উঠোনের মত খেলার জায়গা। বড় শহরে এগুলো দেখা ভার। কারণ শহরে ধুলো মাখা কুয়াশায় একবিন্দু শ্বাস নিতে ও বুক ভারী লাগে। ছোটখাটো সিমসাম বাসা, বেশি সাজসজ্জা, বিলাসিতা করার সামর্থ্য বা রুচি আমার নেই। ছোট একটা প্রাইমারি স্কুলে শিক্ষকতা করি, মেয়ে নিয়ে আমার বেশ ভালোই চলে। আমার মেয়ে চার বছর হতে চললো, নাম নিতু। নিতুকে ছাড়া আমি যেন অচল। বাসায় ঢুকতে না ঢুকতেই পাগলীটা আমায় জড়িয়ে ধরলো,
– মা, এতো দেরী করলা তুমি। আমার খিদা লাগছিলো।
– সেকি আম্মু, নানুকে বললে না কেন?
– নানুর কাছে খাবো না
– বেশ চলো, আম্মু খাইয়ে দিচ্ছি। নানুকে জ্বালাও নিতো মা
– উহু, জিজ্ঞেস করো।
মেয়ে আমার পাকা বুড়ি, মাঝে মাঝে মনে হয় আমি তার মা, না সে আমার মা। বাড়িতে আমরা তিন জন প্রাণী ই থাকি; মা, আমি আর নিতু। রাতে খাবার পর মেয়েকে ঘুম পাড়িয়ে দিলাম। এখন আমি একা, কোনো কাজ নেই চাপ নেই। এই সময়টা নিতান্ত একার, এই সময় বই পড়েই কাটাই। একটা পছন্দের বই হাতে নিলাম, “একা একা” – হুমায়ুন আহমেদ।
বইটা খুলে পড়া শুরু করলেও কেন যানে মন বসাতে পারছিলাম না। চোখের সামনে অতীত ভাসছে যেন আমি সিনেমার পর্দার সামনে বসে আছি।
সবে ইন্টার পাশ করে অনার্সে ভর্তি হয়েছি, আমার বিষয় ছিলো ফাইন্যান্স। আমাদের কলেজের সিস্টেম ছিলো যখনই কোনো নতুন ব্যাচ আসবে তাদের বিভিন্ন ক্লাবে ইনভাইট করতে বড় ভাইরা আসতেন যারা ক্লাবের মেম্বার। আমাদের ক্ষেত্রেও ব্যতিক্রম হলো না, ক্লাস শেষের দশ মিনিটের ব্রেকে কিছু ভাই আর আপু আসলেন আমাদের ক্লাসে। তাদের মধ্যে পাঁচ ফুট ১০ এর কাছাকাছি একজন ছিলো, পরণে কালো টিশার্ট আর ব্লু জিন্স, মুখ ভর্তি দাড়ি, চুল উসখো খুসখো আর উদাসীন চোখ। আমি অবাক হয়ে তার দিকেই তাকিয়ে রইলাম। সেখানে কোনো নির্দিষ্ট ব্যাচ ছিলো না, তাই তার ব্যাচ আন্দাজ করতে পারছিলাম না। মনে মনে ভাবছিলাম, আচ্ছা অনার্সে উঠলে বুঝি মানুষ এমন হয়ে যায়। আফসারার ধাক্কায় হুশ ফিরলো,
– কিরে জয়েন করবি নাকি??
– আব্বু দিবে তোর মনে হয়?
– তুই তো ভালো গান গাস, চল না একটা ভালো স্টেজ পাবি।
– থাক না হুদাই কেন?
আফসারা আর ঘ্যান ঘ্যান করলো না। ক্লাস শেষে যখন বের হবো, কিছু ভাই আবার এলেন আমাদের নবীন বরণে আমন্ত্রণ করতে। বুঝতে পারলাম উনি আমাদের ই ডিপার্টমেন্ট এর। একটা ফাইন্যান্স এর ছেলে আমার থিয়েটার ও করে এটা যেন অবাক করছিলো আমায়। অনুষ্ঠানে আমি আর আফসারা সবার আগে হাজির নিজের প্রথম নবীন বরণ বলে কথা। ওমা উপস্থাপনায় যে আছেন সে আর কেউ না উনিই, কিন্তু এখন আর তাকে জংলী লাগছে না, ক্লিন সেভ, আকাশী পাঞ্জাবী যার হাতা কনুই অবধি তোলা,ব্লু জিন্স, চুল গুলা কপালে ফেলে রেখেছে। আমার বুকে বারবার বারবার টিপ টিপ করছে। বুঝতে পারছি প্রেমে পড়েছি। তখন তার নাম জানতে পারলাম, আকিফ। আমাদের ডিপার্টমেন্টে ৩য় বর্ষে। পুরা চার ঘন্টার অনুষ্ঠানে আমি শুধু তাকেই দেখে গেসি। যখন আমাকে ফুলের তোড়া দেওয়ার জন্য ডাকা হলো আমার কানে যেন নাম ঢুকছিলোই না। আফসারার ধাক্কায় হুশ ফিরে। স্টেজে উঠতে গেলে আকিফ ভাই আমাকে দেখে মুচকি হেসে তোড়াটা এগিয়ে দিলো। উনার হাসিটা যেন তীরের মত বুকে যেয়ে লেগেছিলো। এর পর থেকে শুরু হলো আমার উনাকে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখা। উনার সাথে প্রতি শুক্রবার দেখা হবে বিধায় থিয়েটারেও যোগ দিলাম, বাবার কাছে বকুনি কম খেতে হয় নি। ক্লাস শেষে উনাকে দেখা, উনার ক্লাসে সামনে ঘুরঘুর করা, কোনো কাজে জুনিয়র ডাকলেই দৌড়ে যাওয়া। এগুলো যেন নিত্যদিনের কাজ ছিলো। এইটা আফসারার চোখ এড়ালো না। আমাকে শুধু খোচা দিতো উনার সামনে আর বলতো,
– দেখ তোর হিরো চলে এসেছে।
দেখতে দেখতে দুটা বছর কেটে গেলো, উনার প্রতি একপাক্ষিক প্রেম আমার রয়েই গেলো। সাহস করে কখনো বলা হলো না। আমি তখন ৩য় বর্ষে কিছুদিন পর আকিফ ভাইরা বের হয়ে যাবেন। আমার মন এমনি খারাপ থাকতো। সেদিন দিনটা ছিলো ১২ জুলাই, শনিবার থাকায় কলেজে যেতে হয় নি। সকাল সকাল আফসারা এসে হাজির, আমাকে বললো,
– মৈথি তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নে, আকিফ ভাই আমাদের খেতে নিয়ে যাবে।
– বাবা যেতে দিবে নারে।
– দেখ, উনি কিন্তু বেশিদিন থাকবেন না এই সুযোগ মনের কথাটা বলে দে। নাহলে পরে পস্তাবি।
ভেবে দেখলাম আসলেই, উনি চলে গেলে আর ফিরে পাবো না তাকে। অমনি উঠে একটা নীল শাড়ি বের করলাম। চুল আমার বরাবরি ছোট তাই অহেতুক আটকাতে গেলাম না। রেডি হয়ে যখন জিজ্ঞেস করলাম আফসারাকে কেমন লাগছে আমায়, উত্তরে বললো,
– আজকে আকিফ ভাই চোখ ফিরাতে পারবে না দেখিস।
ওখানে আমরা একা ছিলাম না, প্রায় ছয় সাত জনের একটা টিম নিয়ে এসেছিলো আকিফ ভাই। পরণে সাদা পাঞ্জাবী, কালো জিন্স, শ্যামলা রং এ এতো মানিয়েছে। আমাকে দেখে মুচকি হাসি দিয়ে এগিয়ে আসলেন। ওখানে সবাই তার প্রিয় জুনিয়র। খাওয়া দাওয়া শেষে গেলাম নদীর পাড়ে ঘুরতে। নদীর পাড়ে বেশ ভালো লাগছিলো বাতাসে চুল উড়ছিলো, মনে একটা ভয় ও ছিলো। এতো মানুষের মাঝে কিভাবে তাকে বলি। সন্ধ্যার দিকে যখন সবাই বাড়ি যেতে লাগলাম মনটা খারাপ লাগছিলো, বারবার মনে হচ্ছিলো ইশ আমার প্রেমটা অসম্পূর্ণ থেকে যাবে। যতবার বলতে চেয়েছি, বলা হয়ে উঠেনি। চলেই যাচ্ছিলাম,
– মৈথি, একটু দাঁড়াবি?
– হুম বলেন ভাই।
– কবে থেকে জানি না, তবে যেদিন প্রথম দেখছিলাম সেদিন তোর গোল গোল চোখে হারিয়েছিলাম। ক্লাসে শুধু তোর দিকেই চোখ আটকে ছিলো। হার্ট বিট যে এতো জোরেও হয় সেদিন বুঝেছিলাম। সেদিন দ্বিতীয়বার তোকে দেখার জন্য আবার তোদের ক্লাসে যাই। তুই যখন থিয়েটারে জয়েন করেছিলি, আমি যেন চাঁদ পাবার মতো খুশি হয়েছিলাম, বুঝতে পারলাম এই পিচ্চির প্রেমে পড়েছি। একে ছাড়া আমার চলবে না। কাজ শেষে তোর প্রাক্টিসে বসে থাকতাম যাতে তোর গান শুনতে পারি। অন্য অনেকে থাকলেও তোর সাথে আবৃত্তি করতে চাইতাম। বারবার তোকে বলতে চাইলাম, ভয় হতো তুই যদি মানা করে দিস। আমায় দেখলেই তো ছুট ছুট পালাই পালাই করতি। তবে আজ না বলে পারলাম না। মৈথি ভালোবাসি তোকে, খুব ভালোবাসি।
আমার বুকে যেন কেউ ঢোল তবলা বাজাচ্ছিলো, মাথাটা ফাকা হয়ে গিয়েছিলো। যাকে আমি ভালোবাসি সেও আমাকে ভালোবাসে। সাত পাঁচ না ভেবে দৌড়ে জড়িয়ে ধরলাম, যেন ছেড়ে দিলে হারিয়ে যাবে। উনি কিছুক্ষণ ভেবলার মতো তাকিয়ে ছিলো। পিছনের শিসের আওয়াজে আমার হুশ ফিরলো। উনাকে ছেড়ে দুরে দাঁড়িয়ে পড়লাম। সারা রাস্তা আমাদের কোনো কথাই হয় নি। বাসার সামনে এসে, যখন ভেতরে যাচ্ছিলাম উনি হাতটা টেনে ধরলেন। পেছনে ফিরতেই উনি কাছে টেনে নিলেন আমায়,
– পরশু চলে যাচ্ছি, একটা চাকরির ব্যবস্থা না করে এখানে আসা হবে না। জানি না কতোদিন লাগবে, তবে আমি খুব তাড়াতাড়ি ফিরে আসবো।
উনার কথাটা শুনে চোখ থেকে যেন পানি থামছেই না, মুখটা তুলে কপালে ঠোঁট ছুয়ে পানি মুছে দিলেন। উনার উষ্ণছোয়ায় আমার শরীর যেন জমে গেলো। মনে যেন হাজারো বসন্ত চলে এসেছিলো। নিজেকে কিছুতেই ধরে রাখতে পারছিলাম না। পকেট থেকে চুড়ির থোকা হাতে পরিয়ে দিতে দিতে বললেন,
– আমার জন্য অপেক্ষায় থাকিস, খুব তাড়াতাড়ি তোর কাছে চলে আসবো। তারপর একেবারে তোকে নিয়ে যাবো।
তার ঠোঁটের উষ্ণ ছোয়াটাই ছিল তার প্রথম এবং শেষ ছোয়া। তার ছোয়ায় যেন মাতাল হয়ে গিয়েছিলো আমার মন। তার দেয়া চুড়ি গুলো এখনো সামলে রেখেছি। একদিন পর ঢাকা পাড়ি দেয় আকিফ ভাই, স্বপ্ন কুড়াতে আর আমার কাছে থেকে যায় তার স্মৃতি। মাঝে মাঝে যোগাযোগ হত। সময় যেতে থাকে; বেচারা তোড়জোড় শুরু করে দেয় চাকরির। সাথে এম.বি.এ এর পড়াশোনা ও চালিয়ে যায়। তিন-চার মাস যেতে না যেতেই বিয়ের তোড়জোড় শুরু করেন বাবা। তার মুখের উপর কথা বলার সাহস না আমার ছিলো না মায়ের। আকিফ ভাইকে জানালাম তিনি জানালেন,
– মৈথি আমাকে একটু সময় দে, এই সময় আমার হাত দুটো বাধা। একটা চাকরির ব্যবস্থা হলেই আমি তোর বাবার কাছে সম্বন্ধ নিয়ে যাচ্ছি।
– আকিফ ভাই বাবা শুনবেন না।
– একটু চেষ্টা কর।
বাবাকে অনেক সাহস করে বলেছিলাম, বিনিময়ে আমার ঘর থেকে বের হওয়া বন্ধ করে দিলেন। এক প্রখ্যাত ডাক্তার, টাকা পয়সার অভাব নেই এমন ছেলেকে বেছে নিলেন আমার জন্য। আকিফ ভাইকে যে জানাবো সেটাও হয়ে উঠলো না। খুব দ্রুত আমার বিয়ে দিয়ে দিলেন। আফসারাকে বলেছিলাম যাতে আকিফ ভাইকে জানিয়ে দেয়। আকিফ ভাই আফসারার মাধ্যমে জানিয়েছিলো আমি কি তার সাথে পালিয়ে যাবো কিনা। বাবার সম্মানের খাতিরে ফিরিয়ে দিয়েছিলাম। লোকটা সেদিন কেঁদেছিলো প্রচুর। পুরুষ মানুষ নাকি সহজে কাদে না কিন্তু কষ্ট পেলে নাকি খুব কাঁদে।
বিয়ের পর আমার নতুন জীবন শুরু হলো। আমার স্বামী, নিতুর বাবা ছিলেন প্রখ্যাত ডাক্তার। টাকা পয়সার কোনো অভাব রাখেন নি তিনি। অভাব ছিলো সম্মানের, নিজেকে যেন কোনো পতিতালয়ের প্রস্টেটিউট মনে হতো। আমার শরীরের দাম আমার মনের চেয়ে ঢের বেশি ছিলো তার কাছে। শরীরের দাগ গুলো তার প্রমাণ দিত। দুই বছর হয়ে যাবার পর ও বাচ্চা হচ্ছে না বলে উনার আর উনার পরিবারের মানুষের ক্ষোভ বাড়তে থাকে। তারা আমাকে বাজা বলে সম্বোধন করতে থাকেন। এক সময়ে জানতে পারলাম উনার নার্সের সাথেও অবৈধ সম্পর্ক আছে। আর মাটি আকড়ে থাকতে পারলাম না। দুই পরিবারের সাথে কথা বলে ডিভোর্স ফাইল করলাম। যেদিন ডিভোর্স ফাইল করলাম সেদিন জানতে পারলাম আমি একা নই, একটা জান আমার ভেতরে আছে। উনাদের জানালাম না, হয়তো জানলে ডিভোর্স হতো না। তবে ওই লোকটার সাথে আমার সংসার করার ইচ্ছে ছিলো না। বাচ্চাটাকে আমি শেষ করতে পারলাম না সে তো আমার ই অংশ তাই বাবার কাছে চলে এলাম। এখানেই ডিলেভারী হলো। বাবা মারা গেছেন এক বছর হতে চললো। এখন আমি,মা আর নিতুই এখানে থাকি। ওই বাসাটা ছেড়ে নতুন বাসায় নতুন জীবন।
মায়ের ডাকে ঘুম ভাঙ্গলো, নিজেকে বারান্দার চেয়ারে পেলাম। তার মানে এখানেই ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। স্কুলে যেতে হবে, তাই তাড়াতাড়ি উঠে রেডি হয়ে নিলাম। নিতু বায়না করতে লাগলো ও সাথে যাবে। মা ও সায় দিলো, অগত্যা। এই দুই জন এমন যে তাদের কথা আমার শুনতেই হয়। স্কুলে যাওয়ার জন্য মা মেয়ে বাড়ি থেকে বের হলাম। কি অবস্থা রিক্সা নেই। আমার ক্লাস নয়টা থেকে, আট টা পয়তাল্লিশ বাজে। হঠাৎ হর্ণের আওয়াজে ধ্যান ভাঙ্গলো, চেয়ে দেখি আকিফ ভাই গাড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। আমরা এগুচ্ছি না দেখে বেরিয়ে এলেন। মেয়েকে সাথে দেখেই বললেন,
– তোর মেয়ে? নাম কি বাবু তোমার?
– নিতু, বাবু সালাম দেও আংকেলকে।
– আসসালামু আলাইকুম (নিতু)
– বাহ মেয়েটা পুরো তোর মত রে নিতু।
– তাই নাকি!!
– কোথাও যাচ্ছিস তোরা?
– স্কুলে যাচ্ছি, আজকে উনিও সাথে যাবে বায়না করছে।
– চল আমি নিয়ে যাই।
– তুমি বাসা খুজে পেলে কি করে?
– খুঁজলে গুপ্তধন পাওয়া যায়। চল চল দেরি হচ্ছে না তোর!!
গাড়িতে উঠলাম, নিতু সামনে বসলো আর আমি পেছনে। নিতু যে প্রচুর মিশুক তা নয়, অপরিচিতদের সাথে একদম মিশে না। অথচ আকিফ ভাই এর সাথে যেন পুরো মিশে গেছে। কোনো পাকা পাকা কথা।
– আংকেল তুমি কে?
– আমি তোমার আম্মুর একটা বন্ধু।
– বন্ধু কি?
– উম্ম, বন্ধু মানে যে তোমার ভালো চায়।
– তাহলে তুমি আমার বন্ধু হবে?
– কেন হবো না সোনা।
– তাহলে আজকে তুমি আমার সাথে খেলবে
– নিতু শোনা, আংকেলের কাজ আছে। (আমি)
– তুমি আসবে না আংকেল?
– কেনো আসবো না বাবা, বিকালে তোমাকে আর তোমার আম্মুকে নিতে আসবো।
– আকিফ ভাই, ও বাচ্চা
– তো? বাচ্চার ইচ্ছে কি পূরণ করতে নেই? তবে বড় মানুষের ইচ্ছে পূরণ করি?
– আমার স্কুল এসে গেছে, চলো নিতু
আমি নিতুকে নিয়ে নেমে পড়লাম, একে মফোস্বল তারপর ডিভোর্সি মানুষ নানা কথা রটাবে। আকিফ ভাই এর জেদটা অনেক, উনার সাথে কথার প্যাচ এ পারবো না তাই কথা না বাড়িয়ে চলে আসতে লাগলাম। ওমা নিতু দৌড়ে যেয়ে ওকে জড়িয়ে ধরলো। আকিফ ভাই ও পরম যত্নে ওকে আগলে ধরলো। ক্লাস শেষে বাড়ি যাবো, দেখি গেটের বাইরে আকিফ ভাই দাঁড়িয়ে আসে। নিতু অমনি দৌড়ে ওর কাছে চলে গেলো। একটা রেস্টুরেন্টে নিয়ে গেলো আমাদের। আমি মানা করলাম কিন্তু কে শুনে কার কথা, উনি এখন মহারাজা যে। নিতু প্লেজোনে খেলতে লাগলো, এই ফাঁকে আমি কথা পাড়লাম,
– আকিফ ভাই, আমি কিন্তু বিবাহিত; একটা মেয়ে আছে।
– তো? ডিভোর্স হয়ে গেছে। সময় সবাইকে দ্বিতীয় সুযোগ দেয় না মৈথি। আমাকে দিয়েছে এতো সহজে এবার হার মানছি না।
উনার কথার সাথে পেরে উঠবো না,জানি তাই চুপ করে গেলাম।
– নিতুর বাবা জানে?
– হুম, জানে কিন্তু ততোদিনে সে বিয়ে করে ফেলেছিলেন। তাই চাইলেও মেয়েকে নিতে পারেন নি। আর সত্যি বলতে সেও আমার প্রতি মোহ হারিয়েছিলো।
কথা বলতে বলতে খাবার চলে আসলো। আকিফ ভাই পরম যত্নে নিতুকে খাইয়ে দিচ্ছে। আমার কেনো জানি না খুব আনন্দ হচ্ছিলো। আমাদের একটা পরিবার মনে হচ্ছিলো। আকিফ ভাই আমাদের বাড়ি পৌছে দিলেন। বাসার ভেতরে ঢুকবো অমনি নিতু বায়না ধরলো আকিফ ভাই কে বাসায় যেতে হবে। আকিফ ভাই ওকে মানাও করতে পারছে না। আবার হ্যা ও বলতে পারছে না আমি যে কিছু বলছি না। আমি আর না পেরে বললাম,
– খেয়ে যাও তবে
মুচকি হাসি হেসে নিতুকে কোলে নিয়ে বাসার দিকে রওনা হলো আকিফ ভাই। দরজা খুলতেই মা হা, আকিফ ভাই এর সাথে পরিচিত করিয়ে বসার ঘরে ভাইকে বসতে বললাম। চলে গেলাম রান্না ঘরে, খোপাটা বেধেই আলু, ডাল চরিয়ে দিলাম। আকিফ ভাই একে বারে মাছে ভাতে বাঙালি, তার ভর্তা ডাল খুবই পছন্দ। তাই দেরি না করে রান্না করতে লাগলাম। কিছুক্ষণ পর মা এলো, বুঝতে পারছিলাম তার মনে অনেক প্রশ্ন।
– ছেলেটাকি ওই ছেলেটাই?
– কোন ছেলে মা?
– যাকে তুই ভালোবাসতি?
– হ্যা মা, সে।
– তুই কি আবার?
– মা রান্না করছি, আকাশ কুসুম চিন্তা বাদ দেও
বলেই আমি রান্নায় মনোযোগ দিলাম। মা আর কিছু বললো না, সে তো মা সেও চায় যাতে আমি সুখী হই কিন্তু সুখী হওয়া যে খুব কঠিন। রান্না শেষে বসার ঘরে যেয়ে দেখলাম আকিফ ভাই দিব্যি নিতুর সাথে খেলছেন।
– শুধু কি খেলবে? নাকি খাওয়া দাওয়া ও করা হবে?
– চলো মামুণি, নয়তো তোমার আম্মু আবার রেগে যাবে
কি এমন বললো, মেয়ে আমার হেসেই খুন। আজ এতো দিন পর মানুষটাকে নিজ হাতে রান্না করে খাওয়াচ্ছি ভেবে যেন তৃপ্তি লাগছে। সে তৃপ্তি করে খাচ্ছে আর আমাকে খেতে ইশারা করছে। আমার উনাকে খেতে দেখেই পেট ভরে গেছে। খাওয়া দাওয়ার পর আকিফ ভাই ডর্মে ফিরে যান। নিতুর সাথে উনার বেশ খাতির হয়েছে। প্রায় উনি এসে নিতুর সাথে দেখা করে যেতেন, আমার ও ভালো লাগতো উনার সাথে সময় কাটাতে। মার সাথে ও তার বেশ ভালো খাতির হয়েছে। মা অবশ্য আমাকে আবার নতুন করে সব সাজাতে বলছে। কিন্তু আমি চাই না, মানুষটার জীবন আমার জন্য থেমে থাকুক। উনি উনার জীবনে সুখী হোন এটাই আমার চাওয়া।
কয়েকদিন পর এক রাতে হঠাৎ ঘুম ভাঙ্গলে খেয়াল করলাম নিতু কাঁপছে, মাথায় হাত দিতেই আৎকে উঠলাম। প্রচুর জ্বর নিয়ে মেয়ে আমার পরে রয়েছে। ঘড়ির দিকে তাকাতেই দেখি দুইটা একচল্লিশ বাজে, এতো রাতে আমি কি করবো মাথা কাজ করছিলো না। মা আমাকে চিন্তিত দেখে বললো,
– আকিফ কে একটা ফোন দে
– এতো রাতে উনাকে জ্বালানোর মানে নেই।
– মেয়েটার জ্বর, কাঁপছে। তোর বাবাও নেই এই রাতে তুই কি করে।
ঠিকই তো শত হোক আমি একা এই রাতে কিভাবে কি করবো। তাই ভাবনা চিন্তার জ্বলাঞ্জলি দিয়ে আকিফ ভাই কে ফোন করলাম। বুঝাই যাচ্ছিলো গভীর ঘুমে ছিলো বেচারা। পনেরো মিনিটের মধ্যে গাড়ি নিয়ে চলে আসলেন। নিতুর নিউমোনিয়া হয়েছিলো। পাক্কা পনেরোটা দিন মেয়ে আমার হাসপাতালে ছিলো, এই পনেরো দিন আকিফ ভাই হাসপাতালে ছিলেন আমার সাথে৷ একজন বাবার মতো নিতুকে আগলে রেখেছিলেন। আমার ও কেন জানি না খুব স্বার্থপর হতে ইচ্ছে করছিলো। কিন্তু মস্তিষ্ক মনকে হারিয়ে দেয় সব সময়।
নিতু এখন সুস্থ; বাড়ি নিয়ে এসেছি, আজ স্কুলে আসলাম অনেক দিন পর৷ ভালো লাগছে, সকাল থেকে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি, কখন যে ঝুম করে নামবে তার ঠিক নেই। বর্ষাকাল মফস্বল শহরে সত্যি খুব ভালো লাগে, গাড়ি ঘোড়া কম। মাটির উষ্ণ গন্ধ মাতাল করে দেয়। ক্লাস শেষে বের হতেই ঝুম বৃষ্টি। কোথায় একটা রিক্সা পাবো, তাও হচ্ছে না। অগত্যা ছাতিটা নিয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম। খুব ইচ্ছে করছিল আজ মন খুলে বৃষ্টি জড়িয়ে নিবো। এই সুযোগ না জানি আর পাই কিনা? ছাতাটা ফেলে ভিজতে লাগলাম। যেন কৈশোরে ফিরে যাচ্ছি আমি। “আজই ঝড় ঝড় মুখরো বাদলো দিনে” গানটা যেন একদম মিলে যায়। মুখে বৃষ্টি না পড়ায় চোখ খুলে তাকাই; আকিফ ভাই ছাতা আমার উপর দিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। ভেজা কাকের মতো লাগছে তাকে।
– জ্বর আসবে তো
– আমার এতো সহজে কিছু হবে না
– হয়েছে আর ভিজতে হবে না, অনেক ভিজছো চলো বাড়ি।
অনেক জিদ করেও হার মেনে নিলাম; লোক যা বলে তাই। বাড়িতে কাক ভেজা হয়ে পৌছালাম। উপায়ন্তর না পেয়ে আকিফ ভাই কে বাসায় আসতে বললাম, কারণ বৃষ্টি এখনো কমে নি আর বেচারা পুরো কাক ভেজা। তাকে গেস্ট রুমে টাওয়াল আর বাবার পুরোনো পাঞ্জাবি-পায়জামা দিয়ে বললাম যাতে গোসল করে নেয়। নিতু ঘুমোচ্ছে আর মা তার সাথে শুয়ে আছে বলে আর তাদের ডাকলাম না। আলমারি থেকে সাদা কালো শাড়িটা বের করে পড়ে ফ্রেশ হয়ে নিলাম। উনার রুমে যেতেই দেখি মাত্র শাওয়ার নিয়ে বের হলেন; মাথা থেকে এখনো পানি পড়ছে। আমি ইশারা করলাম যাতে সে বসে, আর টাওয়াল দিয়ে তার মাথা মুছতে লাগলাম।
– একটা বিয়ে করলে তো পারো আকিফ ভাই।
মুচকি হেসে উত্তর দিলেন,
– মন তো কবেই কাউকে দিয়ে দিয়েছি। এখন শরীরটা অন্য কাউকে দিয়ে কি লাভ বল? আমি যে কবেই তার হয়ে গেছি, যে জ্যোৎস্না হয়ে আমার জীবনে এসেছিলো।
বলেই উঠে দাঁড়ালেন, ব্যাগ থেকে একটা শাড়ি বের করে আমার হাতে দিয়ে আবার বললেন,
– এ শাড়িটা আমার প্রথম বেতন দিয়ে কিনেছিলাম, কিন্তু দেওয়ার মানুষটা তখন অন্য কারো হয়ে গিয়েছিলো। আজ আবার তাকে পেলাম, এবার আর হারাতে দিচ্ছি না।
বলেই আমার জড়িয়ে ধরলেন। আমার ভেতরে তোলপাড় হচ্ছিলো, খুব ইচ্ছে করছিলো তাকে কাছে টেনে নেই। কিন্তু আমার আমি সত্ত্বা যেটাকে নিয়ে আমার অভিমান, সেটা বাদ সাধলো। ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলাম। আকিফ ভাই কিছুক্ষণ আমার দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন, যেনো মানতেই পারছেন না। আমি মাথা নিচু করে বললাম,
– যা চলে যায় তা আর ফিরে আসে না।
আকিফ ভাই কোনো কথা বললেন না, মাথাটা নিচু করে বেরিয়ে গেলেন। বাইরে ঝড় হচ্ছে, আমার মনের ভেতর ও ঝড় চলছে। কিন্তু বাইরের ঝড় সব তোলপাড় করতে সক্ষম; অথচ আমার ভেতরের ঝড় শুধু আমাকেই তোলপাড় করছে। দিন সাতেক হয়ে গেছে আকিফ ভাই এর কোনো খবর নেই। না নিতুর সাথে দেখা করে না আমার সাথে। আমিও খোঁজ নেই নি, থাকুক না উনি আমার থেকে দুরে। আবার সেই মরীচিকার জালে তাকে আমি আটকাতে চাই না। বারান্দায় বসে ভাবছিলাম, দেখি মা আর নিতু দাঁড়িয়ে আছে। আমি তাকাতেই নিতু আমার কাছে দৌড়ে এলো।
– মা আংকেল আর আসবেন না?
– কেনো মা?
– আংকেলকে আমার খুব ভালো লাগে, আমার সাথে খেলে, আমাকে খেলনা কিনে দেয়। আমি সব সময় আংকেলের কাছে থাকতে চাই। উনি কেন আসেন না?
– উনি আর আসবেন না মা, আম্মু মানা করে দিয়েছি।
– না আমি আংকেলের কাছে যাবো, কেনো মানা করলে তুমি।
নিতুকে বুঝানো যেন দায় হয়ে পড়লো, কান্নাকাটি করে একসার। ওর কান্না দেখে মাও বলতে লাগলেন,
– ও বাচ্চা মানুষ, আকিফ কে কয়দিনে ভালোবেসে ফেলেছে। ওর ও তো বাবার ছায়া দরকার। কেন ওকে বঞ্চিত করতেছিস। নিজেকে আর এই ভাবে আটকে রাখিস না মৈথি। সবাইকে জীবন দ্বিতীয় সুযোগ দেয় না কিন্তু।
মার কথা শুনে আমার ও মনে হতে লাগলো, ভুল করছি নাতো। নিতুর কাছে যেয়ে বললাম
– আম্মু আংকেল এবার আনলে কিন্তু একেবারে রেখে দিতে হবে। বাবাই বলে ডাকতে হবে, তুমি রাজি তো?
– হুম হুম, কি মজা আংকেল আসবে!! কি মজা!!!
দেরি না করে ছুট লাগালাম ওর ডর্মে কি জানি আমার উপর অভিমান করে কি করছে বান্দা। ওর দেওয়া নীল শাড়িটা পড়েনিলাম,সাথে ওর দেওয়া চুড়ি গুলো। নিতুও সাথে যাবে বলে বায়না করায় ওকেও নিয়ে আসলাম। ডর্মে যেয়ে ওর কথা জিজ্ঞেস করতেই শুনলাম, তার বদলির কাজ চলে। মনটা বসে গেলো, তার রুমে যেয়ে দেখি সে কিছু ফাইল পত্র গুছাচ্ছে। আমাকে দেখেই মুচকি হেসে বললো,
– তোকে আর জ্বালাবো নারে মৈথি। আমি চলে যাচ্ছি, এই সপ্তাহে সব গুছিয়ে আগামী শনিবার রাজশাহী চলে যাচ্ছি।
– তাহলে আমাদের মা মেয়ের কি হবে! আমরা যে বড় আশা করে এসেছিলাম। আমাদের আবার একা করে চলে যাচ্ছো আকিফ ভাই? বড্ড দেরি করে ফেললাম বুঝি।
নিতু দৌড়ে গিয়ে আকিফ ভাইয়ের আঙ্গুল ধরে বললো,
– আমি তো তোমাকে বাবা বলার কোন চেষ্টা করছি। তুমি শুনবে না বাবাই।
আকিফ ভাই কিছু না বলে নিতুকে কোলে তুলে নিলেন। তার চোখ টলমল করছিলো, যেনো এখনি অশ্রু গুলো চোখ জোড়াকে মুক্ত করে বেয়ে পড়বে। আমার কাছে এসে বললেন,
– এবার কিন্তু কোনো ছাড় দিবো না, তুই কিন্তু নিজে ফিরে এসেছিস। এবার আর হারাতে দিবো না।
আমি মুচকি হেসে উনাকে জড়িয়ে ধরলাম। আমার জীবনেও বসন্ত এলো। যার অপেক্ষায় না জানি কতো বছর ছিলাম।
-সমাপ্ত