বউ অফিসের বস
গল্প লিখেছেন : টুনির আব্বু
– মৃনাল ওঠ বাবা সকাল ৯:৪৫ বাজে অফিসে যাবি না, আজকেও তোর অফিসের দেরি হবে আমি জানি (মা)
– কিইইইইইইই ৯:৪৫ বাজে আগে ডাকবে না। আমি গেলাম ( আমি)
– আরে নাস্তা টা করে যা
– লাগবে না মা, আমি গেলাম!!
অফিসের উদ্দেশ্যে দিলাম দৌড়, সোজা বসের সামনে। অল্পের জন্য ধাক্কা খেলাম না।
– আপনি কে ( বস)
– ম্যাডাম উনি মৃনাল আমাদের অফিসে ডিজাইনের কাজ করে (ম্যানেজার)
– এটা অফিস না গোয়াল ঘর, কি পরে এসেছেন এগুলা,, আর এতো লেইট কেনো অফিসে আসতে (বস)
– না মানে ম্যাডাম ঘুম থেকে উঠতে একটু দেড়ি হয়েছে তো তাই আসতে লেইট হয়েছে (আমি)
– আর যেন এরকম কোন দিন না হয়? মনে রাখবেন।(বস)
– জি আচ্ছা (আমি)
– যান নিজের কাজে যান (বস)
আসলে ঘুম থেকে আমি প্রতিদিন লেট করে উঠি আর অফিস আসতেও লেইট হয়, কিন্তু আজ একটু বেশিই লেইট হয়েছে, তাই এই শীতের দিনে দাঁত ব্রাশ না করে, জার্সির প্যান্ট পরে, পায়ে মুজো ছিলো আর চটি জুতো পরেই অফিসে চলে আসছি। আর তারপর দেখলেন ই তো কি হলো। তারপর আমার চেয়ারে এসে বসে পরলাম আর ভাবতেছি, অফিসের নতুন বস তাও আবার এক মেয়ে। দেখতে তো সেইইই সুন্দর কিন্তু এতো মেজাজ খারাপ কেন। জাগগে কে কি বলে বলুক,, ।
কিচুক্ষন পর নতুন বসের কল, তার রুমে জেতে বলল, তারপর সোজা বসের রুমে চলে গিয়ে, সামনের চেয়ার টা বসে পড়লাম,
– কি হচ্ছে এসব (বস)
– মানে?? (আমি)
– আপনি সোজা আমার রুমে চলে আসলেন, আমাকে জিজ্ঞেস করবেন না যে আসতে পারি। আর চেয়ারে বসতে না বলতেই বসে পড়লেন কেনো,,,
– আশ্চর্য, আপনিই তো আমায় ডেকেছেন আবার নতুন করে জিজ্ঞেস করার কি আছে।
– এটা অফিস আর এখানকার কিছু নিয়ম আছে, আপনি তো দেখছি কোনকিছুই মানেন না । এই ফাইল টা রাখুন, সব ডিটেইলস দেওয়া আছে তিন দিনের মধ্যে ডিজাইন করে দিন??
– আমি সময় নিয়ে কাজ করি না।
– মানে কি??
– আপনি জে সময় দিচ্ছেন তা আমি পারব না। আমি সময় নিয়ে ঠান্ডা মাথায় কাজ করি,
– তাহলে কবে পাবো এই ফাইল??
– জানিনা,
– আপনি এখন আসুন
তারপর অফিসে এসে বসলাম, কি রে ভাই ডিজাইন কি গাছের মোয়া, বল্ল তিন দিনের মধ্যে ডিজাইন করে দিন। আজকেই নতুন জয়েন করেছে আর আজকেই এমন করছে। তারপর বাসায় চলে আসলাম।
তারপরের দিন আবারো লেইট করে গেলাম, চেয়ারে বসতেই একজন বলল, আপনাকে মিস্টি ম্যাডাম ডাকে।
– কি ব্যাপার আজকেও লেইট কেনো (বস)
– না মানে ম্যাডাম আজকেও ঘুম থেকে উঠতে দে ……….. (আমি) পুরোটা না বলতেই।
– শাট আপ, এখানে আসছেন কাজ করতে তামাশা করতে নয়। আপনার যে ফাইল টা দিলাম সেটার কি অবস্থা?
– আপনাকে তো বলেছি আমি ধীরে সময় নিয়ে কাজ করি।
– আপনি তাহলে কি সারা মাস লাগাবেন একটা ফাইল ডিজাইন করতে। কাজে এতো অমনোযোগী কেন?? যান গিয়ে কাজ করুন ।
কি রে ভাই, এতো রাগ কেন রে এই নতুন বসের। নাম তো মিস্টি কিন্তু, নামের সাথে কোন মিলই নেই । দেখতে তো পরীর মত সুন্দর, মেজাজ এমন কেনো। কাজ না করে, অফিসেই আবার নাক ডেকে ডেকে ঘুমিয়ে পরলাম।
– কি হচ্ছে কি? আপনাকে কাজ করতে বললাম আর আপনি এখানে ঘুমোচ্ছেন কেনো। এটা কি আপনার বাসা, যে এখানে ঘুমাবেন,
– আসলে ম্যাডাম……
– আপনি কিন্তু সিমানা পার করে ফেলছেন। এভাবে চলতে থাকলে আমি আপনাকে ফায়ার করতে বাধ্য হবো।
এই বলে চলে গেল, আমিও বাসায় চলে আসলাম।
তিন দিন পর,
– ফাইল কোথায়? (বস)
– এই যে ফাইল। (আমি)
– ডিজাইন করেছেন?
– না
– তাহলে কি করেছেন, বসে বসে ঘোড়ার ঘাস কাটছেন, কি জন্য অফিস আসেন, কাজ করতে না, ঘুমাতে। আপনাকে কেন যে এই অফিসে এখন ও রাখছে কিছু বুঝিনা, এমন করলে আমি আপনাকে ফায়ার করতে বাধ্য হবো।
– কিছু না বলেই চলে আসলাম । আর এসেই ঠাসসস, ঠাসসস, ঠিসসসস ঠিসসসস ঠিসসসস ঠুসসসস।
– কি হচ্ছে কি এসব, আপনি এখানে কাজ না করে কম্পিউটারে বসে বসে যুদ্ধের গেম খেলছেন কেনো?
– ভাল লাগছে না তাই খেলছি।
– আচ্ছা তাহলে বাসায় গিয়ে খেলুন, আপনাকে এখনি অফিস থেকে ফায়ার করা হলো।
– আপনি ভেবে শুনে ফায়ার করছেন তো?
– জাস্ট শাট আপ। গেইট আউট।
তারপর অফিসে সবাইকে মিস্টি খাইয়ে চলে আসলাম। কি ভাবছেন অফিস থেকে বের করে দিয়েছে তাও মিস্টি খাওয়ালাম কেন।
আসলে এর আগে আমি নিজেই সাত সাতবার অফিস থেকে চলে এসেছি, অফিসের বস আমায় বার বার নিয়ে গেছেন ওখানে কাজ করতে। আমার কাজ নাকি খুবই ভালো হয়। তাই আমি যা কিছু করি কেউ কিচ্ছু বলে না, কিন্তু নতুন বস, আমাকে ফায়ার করেছেন আমিই খুবই খুশি। এতোদিনের পরে রেহাই পেলাম একটু ঘুরতে হবে।
বাসায় এসে মাকেও মিস্টি খাওয়ালাম।
– মা আমাকে অফিস থেকে ফায়ার করেছে (আমি)
– কি বাজে বকছিস এসব, তোকে ফায়ার করবে। তুই নিজে থেকেই তো চলে আসলে আবার তোকে জোর করে অফিসে নিয়ে যায় আর সেই কিনা, তোকে ফায়ার করবে। (মা)
খুশিতে মায়ের সাথে একটু নাচানাচি করে, ঘুরতে গেলাম। তিন দিন পর বাসায় ফিরলাম। তখনি
– বাবা একটা কথা রাখবি আমার (মা)
– এমন ভাবে বলছ কেন মা। আমি কি কোন কথা না রেখেছি তোমার। বল কি কথা? (আমি)
– বাবা তুই কাল থেকে আবার অফিসে জয়েন কর।
– কি বলছ এসব তুমি মা। আমাকে তো অফিস থেকে বের করে দিয়েছে, আবার জয়েন করব মানে!
– আসলে বাবা তুই তো ঘুরতে গেছিলি। তোর নতুন বস মিস্টি এসে আমাকে অনেক অনুরোধ করেছে, তোকে আবার জয়েন করার জন্য।
তুই নাকি অফিসের কোন নিয়ম মেনে চলিস না। তাই সে তোকে ফায়ার করেছে। বাবা তুই আবার জয়েন কর। মেয়েটা অনেক ভালো ।
– ও ওই মেয়ে অনেক ভালো আর আমি অনেক খারাপ তাই না ।
– কোন কথা নয় কাল থেকে আবার অফিস জাবি।
তারপর আর কি করা মায়ের কথা তো আর ফেলতে পারি না। তাই আবারো অফিস গেলাম আর গিয়েই ম্যাডামের রুমে
– সরি (বস)
– সরি কেন (আমি)
– আসলে সেদিন রাগের মাথায় আপনাকে….
– আচ্ছা আপনি আমার মাকে কি করেছেন বলুনতো, বান মেরেছেন নাকি যে আপনার কথা সবসময় বলে।
– আপনার মা অনেক ভালো মানুষ!
– হা হা জানি । সেদিন ফাইল টা আপনার টেবিলের উপর রাখা ছিলো আপনি লক্ষ্য করেন নি । ওখানে সব ডিজাইন করা আছে দেখে নিয়েন। বলেই চলেই আসলাম।
কিছুদিন পর ।
– মা আমি বিয়ে করব না (আমি)
– কেন বিয়ে করবি না। সারা জীবন কি এভাবেই থাকবি নাকি আমি তোর বিয়ে ঠিক করেছি । আমার বান্ধবীর মেয়ের সাথে আজকেই তোর বিয়ে । অতপর বিয়ের সানাই বাজল, বিয়ে হলো ধুমধাম করে কিন্তু এখন ও বউ দেখিনি। ফুলসজ্জার ঘরে ঢুকে, বিছানায় বসলাম, দেখি বউ ঘোমটা দিয়ে বসে আছে। আমি আস্তে আস্তে ঘোমটা টা সরাতেই লাফ দিয়ে বিছানা থেকে নিচে নামলাম, আর বললাম,
– তু তু তুমি
– হা লেইট বাবু আমি (মিস্টি)
– তোমাকে বিয়ে করছি আমি!
– জি আমাকেই বিয়ে করছেন। কি অবাক হচ্ছেন তাই না।
– হা তা তো অবশ্যই । শেষ পর্যন্ত এমন একটা গুন্ডি কে বিয়ে করলাম
– কি বললি?
– না কিছু না
– এখন থেকে বুঝাবো মজা আপনাকে?
– কি করবেন আমাকে। খেয়ে ফেলবেন নাকি?
– সেটা সময় হলে বুঝতে পারবেন।
চলুন এবার শোয়া যাক??
– না আমি ঘুমাবো না আপনি ঘুমান?
– কি বল্লি তুই??
– কই কি বললাম ঘুমাবো তো চলো।
– এইতো গুড বয়।
তারপর মিস্টি আমার বুকে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পরল আর আমিও ওকে জরিয়ে ধরে ঘুমালাম।
– এই যে উঠো সকাল ৮ টা বাজে (মিস্টি)
– মাত্র ৮ টা এখন উঠব না যাওতো (আমি)
– ওকে! দেখাচ্ছি মজা
– ও মা গো করে চিতকার দিলাম। কি ঠান্ডা রে বাবা। এক বালতি পানি আমার গায়ে ঢেলে দিয়ে হাসতেসে গুন্ডিটা । এই – – পানি দিলে কেন (আমি)
– এখন থেকে প্রতিদিনইই এমন হবে যদি সময় মত না উঠো।
– কিইইইইইই
– হ্যা।
– তাই বলে এই শীতের সময় পানি ঢেলে দিবে গায়ে।
– আমার কথা না শুনলে আরো কতকিছুই যে করব। অফিসের বস ছিলাম বলে বেশি কিছু করিনি । এখন বুঝবে মজা।
– আমি কিছু না বলে হা করে তাকিয়ে আছি ওর দিকে
– ও মুচকি মুচকি হাসতেছে। ফ্রেস হয়ে নাস্তার টেবিলে আসো। অফিস জেতে হবে। দেখি কেমন তুমি এখন থেকে লেইট করে অফিসে যাও। হিহিহি
…………………………………………….সমাপ্ত………………………………………..